শাওমি মি৬: ২০১৭ সালের ফ্ল্যাগশিপ কিলার
অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে অবিশ্বাস্য স্পেসিফিকেশন দেবার জন্য শাওমি স্মার্টফোন প্রখ্যাত এবং ২০১৭ সালের মি৬-এর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। গত বছরের মি৫-এর সফলতার পর কোম্পানিটি পুরো মোবাইল বাজারে তাদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে কাজ করা শুরু করেছে। মি৫-এর জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায় মি৬ এমন বিষয়সমূহ মাথায় রেখে বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে করে এটি বাজারের অন্যান্য ফোনের চেয়ে অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয়।
ফোনটির বডি সাম্প্রতিক কিছু স্যামসাং ফ্ল্যাগশিপের অনুরূপ। ফোনের অগ্রভাগ এবং পশ্চাৎভাগ দুটো অংশই গ্লাস দিয়ে ঢাকা এবং অগ্রভাগে থাকা ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানারও গ্লাস দিয়ে ঢাকা। শাওমি মি৬-এর চার দিকের থ্রীডি গ্লাস এমনভাবে স্থাপন করেছে যাতে করে একে অনেক সহজাত মনে হয় এবং হাতে নিলে স্বাচ্ছন্দ্যময় লাগে।
পেছনের ডুয়াল ক্যামেরা ফোনের বডি থেকে বের হওয়া নয়। ফোনটি স্প্ল্যাশ প্রতিরোধী যদিও একটি নির্দিষ্ট আইপি রেটিং এখন পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়নি। প্রধান স্পীকারটি নিচের দিকে ফায়ারিং তবে আইফোন ৭-এর মত এয়ারপিস গুলো সেকেন্ডারি স্পীকারের মত কাজ করে যা ব্যবহারকারীকে স্টেরিও অভিজ্ঞতা দেয়। ৩.৫ মিঃমিঃ হেডফোন জ্যাক এই ফোন থেকে নিখুঁতভাবে বাদ দেয়া হয়েছে। হেডফোন জ্যাক বাদ দেয়াটা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় ছিল, এটি ব্যবহারকারীর জন্য কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত অসুবিধার সৃষ্টি করবে। এই মোবাইলটির একটি প্রিমিয়াম বিল্ড রয়েছে যার পেছনটা সিরামিকের তৈরি এবং ক্যামেরার রিমগুলো তে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের লাইনিং রয়েছে।
বেশিরভাগ মানুষের কাছে স্পেসিফিকেশনটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শাওমি মি৬-এ অক্টা কোর (৪ X ২.৪৫ গিগাহার্টজ ক্রিও এবং ৪ X ১.৯ গিগাহার্টজ ক্রিও) স্ন্যাপড্রাগন ৮৩৫ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। হ্যা, আপনি ঠিকই পড়েছেন, একটি স্ন্যাপড্রাগন ৮৩৫ প্রসেসর। এর মানে হল স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ৮ বাদে মি৬ একমাত্র মোবাইল ফোন যা এই ইপ্সিত প্রসেসর সহ খুব দ্রুত বাজারজাত করা হবে (যা তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে)। সিপিইউকে ব্যাক করছে ৪ জিবি র্যাম, ৬৪ জিবি বিল্ট ইন স্টোরেজ এবং একটি বড় ৩৩৫০ এমএএইচ ব্যাটারী। ৬ জিবি র্যাম এবং ১২৮ জিবি স্টোরেজ সহ একটি ভার্সনও বাজারে পাওয়া যাবে। সিরামিক এবং ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের তৈরি প্রিমিয়াম মডেলটি ৬জিবি র্যাম এবং ১২৮ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ কনফিগারেশন সহ বাজারে পাওয়া যাবে।
শাওমি তাদের নতুন ফ্ল্যাগশিপ ফোনে অ্যাপল, এলজি এবং হুয়াউয়ের মত ডুয়াল ক্যামেরা স্থাপন করেছে। এক্ষেত্রে শাওমির কৌশল অনেকটা অ্যাপল আইফোনের মত যেখানে একটি ক্যামেরার টেলিফটো লেন্স এবং অন্যটির ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স আছে। এই কম্বিনেশনটির সুবাদে ২X-এ এবং বোকেহ মোডে লসলেস জুমিং করা সম্ভবপর। রিয়ার ক্যামেরাটির ৪ এক্সিস ওআইএস আছে কিন্তু শাওমি এখন পর্যন্ত পরিষ্কার করে এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেনি যে এটি দুটি ক্যামেরাতেই আছে কিনা। দুটি ক্যামেরাই ১২ এমপি যার মধ্যে একটি লেন্সে এফ/১.৮ অ্যাপারচার রয়েছে যেখানে অন্যটির রয়েছে এফ/২.৬ অ্যাপারচার। ফ্রন্ট ফেসিং ক্যামেরাটি ৮ এমপি ইউনিট যা ১০৮০ পি ভিডিও করতে সক্ষম।
আইপিএস স্ক্রীন ৫.১৫ ইঞ্চি ১০৮০ পি রেসোলুশন এবং যার স্ট্যান্ডার্ড এসপেক্ট রেশিও ১৬:৯। অনেকেই এই বিষয়টি নিয়ে অবাক হয়েছেন যে শাওমি মি মিক্সের মধ্যে থেকে বেজেলেস ডিজাইন বাস্তবায়ন করেনি কিন্তু আমার মতে একই ডিজাইন রাখার পেছনে কারণ হল খরচ কমানো। এর কারণে মোবাইল ফোনটি দেখতে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৮ এবং এলজি জি৬-এর তুলনায় কম আকর্ষণীয়।
শাওমি মি৬ অ্যান্ড্রয়েড ৭.১.১ নোগাট সহ চীনের বাজারে আসছে ২৮ এপ্রিল। অন্যান্য বাজারেও খুব শীঘ্রই আসতে যাচ্ছে এই ফোনটি। স্ট্যান্ডার্ড ৪ জিবি র্যাম – ৬৪ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ মডেলের মূল্য আন্দাজ ৩৬০ ডলার এবং ৬ জিবি র্যাম – ১২৮ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ মডেলের মূল্য আন্দাজ ৪২০ ডলার। প্রিমিয়াম সিরামিক এবং স্বর্ণের তৈরি মডেলটির মূল্য দাঁড়াবে ৪৩৫ ডলারে। বাংলাদেশের বাজারেও মোবাইলটি এ ধরণের মুল্যেই পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত শাওমির লেটেস্ট স্মার্টফোনটিকে দেখে বেশ আকর্ষণীয় এবং অসাধারণ বলেই মনে হচ্ছে। কোন ব্র্যান্ডের ফোনটি এ বছরের ফ্ল্যাগশিপ কিলার উপাধি লাভ করে তা দেখার জন্য আমি অত্যন্ত অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, কেননা এখন পর্যন্ত মি৬ এই উপাধি অর্জন করার দাবিদার।