১০,০০০ টাকার ভেতরে বাংলাদেশের সেরা ৫ টি অফিসিয়াল স্মার্টফোন
বর্তমানে বাজারে সহজলভ্য ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনগুলোর প্রযুক্তি এবং গুণগতমান আকর্ষণীয় হলেও সাশ্রয়ী স্মার্টফোনগুলোই মূলত বাজারে একটি বড় অংশ দখল করে রয়েছে। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার সাথে সাথে দেশের ক্রেতারাও ঝুঁকছেন সাশ্রয়ী এসব মডেলের দিকে।
পাশাপাশি দামের দিক থেকে সাশ্রয়ী মূল্যের মুঠোফোনগুলো অনেক ক্ষেত্রেই ফ্ল্যাগশিপ লেভেলের পরিষেবা দিতে পারছে। যার মধ্যে রয়েছে ৪জি মোবাইল নেটওয়ার্কিং, উন্নতমানের ডিসপ্লে, পেশাদার ক্যামেরা ফিচার সহ আরও অনেক কিছু।
বছরের শুরু থেকেই দেশের বাজারে বিভিন্ন মুঠোফোন ব্র্যান্ডগুলো ফ্ল্যাগশিপ, মধ্যম বাজেট ও সাশ্রয়ী বিভিন্ন মডেলের ফোন লঞ্চ করেছে। তবে বর্তমানে দেশের বাজারে দামি ফোনগুলোর থেকে কমদামি বা সাশ্রয়ী স্মার্টফোনগুলোর চাহিদা তুলনামূলক বেশি। সেই অনুযায়ী আপনার বাজেট যদি ১০০০০ টাকার আশেপাশে হয়, তাহলে মোটামুটি ভালো মানের একটি ফোন-ই আপনি পেতে যাচ্ছেন।
চলুন জেনে নেওয়া যাক একাধিক ফিচারসহ দেশের বাজারে যেসমস্ত ১০,০০০ টাকার নিচে নতুন ফোন রয়েছে তাদের তালিকা।
১০,০০০ টাকার মধ্যে সেরা ৫ টি স্মার্টফোনের তালিকা
ব্র্যান্ড | ১০,০০০ টাকার মধ্যে স্মার্টফোন | বাংলাদেশে মূল্য |
শাওমি | রেডমি ৯এ | ৯,৯৯৯ |
স্যামসাং | গ্যালাক্সি এম০১ কোর | ৮,৯৯৯ |
রিয়েলমি | সি১১ | ৮,৯৯০ |
টেকনো | স্পার্ক৬ গো | ৮,৬৯০ |
ইনফিনিক্স | হট৯ প্লে | ৯,৯৯০ |
ফোন কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপর আপনার চাহিদাগুলো লিখে ফেলুন এবং আপনার ব্যক্তিগত কোনো পছন্দের ব্র্যান্ড থাকলে খোঁজ নিন। সম্প্রতি দেশের বাজারে ১০,০০০ টাকার মধ্যে আলোচিত ৫ টি স্মার্টফোন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন-
১. শাওমি রেডমি ৯এ
বছর চারেক আগেও আমাদের মধ্যে অনেকেই শাওমি উচ্চারণ করতে ভিমড়ি খেত। অথচ এখন শাওমির সেই বিখ্যাত রিংটোন প্রায় সবখানেই। সাধ এবং সাধ্যের মধ্যেই মুঠোফোন মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়ার দরুণ দেশের তরুণ/তরুণীদের কাছে অন্যতম ভরসার ব্র্যান্ড এখন শাওমি।
২০২০ সালের জুন মাসে শাওমির পক্ষ থেকে বাজারে আনা হয় শাওমি রেডমি ৯এ। মিডিয়াটেকের হেলিও জি২৫ দিয়ে তৈরি এই স্মার্টফোনটিতে আছে ৬.৫৩ ইঞ্চির ৭২০পি আইপিএস ডিসপ্লে। ১৩ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরার সাথে ৫ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা থাকছে ফোনটিতে।
বাংলাদেশের বাজারে তিনটি আলদা সংস্করণে পাওয়া যাবে ফোনটি- ২/৩২ জিবি, ৩/৩২ জিবি, এবং ৬/১২৮ জিবি। রেডমি ৯এ ফোনটিতে রয়েছে ৫০০০ এমএএইচ সক্ষমতার ব্যাটারি।
শাওমি রেডমি ৯এ | |
র্যাম | ২/৩/৬ জিবি |
স্টোরেজ | ৩২/১২৮ জিবি |
সেলফি ক্যামেরা | ৫ মেগাপিক্সেল |
রিয়ার ক্যামেরা | ১৩ মেগাপিক্সেল |
ডিসপ্লে | ৬.৫৩ ইঞ্চি |
ব্যাটারি | ৫০০০ এমএএইচ |
প্রসেসর | মিডিয়াটেক হেলিও জি২৫ |
২. স্যামসাং গ্যালাক্সি এম০১ কোর
দক্ষিণকোরিয়ার জনপ্রিয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্যামসাং এর পক্ষ থেকে ২০২০ সালের জুন মাসে বাজারে আনা হয়েছে গ্যালাক্সি এম০১ কোর। সাশ্রয়ী অফিসিয়াল ফোনটি চালনা করার জন্য এতে দেওয়া হয়েছে মিডিয়াটেকের এমটি৬৭৩৯ কোয়াড কোর প্রসেসর। পাশাপাশি ৫.৩ ইঞ্চির ৭২০পি আইপিএস ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে স্মার্টফোনটিতে। পাওয়ার ব্যাকআপ হিসেবে থাকছে ৩০০০ এমএএইচ এর লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি।
দেশের বাজারে একেবারে শুরু থেকেই স্যামসাং সকল বাজেটের ক্রেতাদের জন্যই ছিল অন্যতম ভরসার একটি ব্র্যান্ড। বাংলাদেশে স্যামসাং স্মার্টফোনগুলোর দাম, আপনাকে আপনার চাহিদা এবং বাজেটের একটি দুর্দান্ত সম্মেলনের সুযোগ এনে দিতে পারে।
গ্যালাক্সি এম০১ কোর | |
র্যাম | ১/২ জিবি |
স্টোরেজ | ১৬/৩২ জিবি |
সেলফি ক্যামেরা | ৫ মেগাপিক্সেল |
রিয়ার ক্যামেরা | ৮ মেগাপিক্সেল |
ডিসপ্লে | ৫.৩ ইঞ্চি |
ব্যাটারি | ৩০০০ এমএএইচ |
প্রসেসর | মিডিয়াটেক এমটি৬৭৩৯ |
৩.রিয়েলমি সি১১
দেশীয় বাজেটবান্ধব ক্রেতাদের জন্য রিয়েলমি ২০২০ সালের জুলাই মাসে বাজারে নিয়ে এসেছে দুর্দান্ত ফিচার সমৃদ্ধ একটি মডেল রিয়েলমি সি১১। ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে মিডিয়াটেকের জি৩৫ প্রসেসর। ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখে এখানে থাকছে ৬.৫ ইঞ্চির একটি বিশাল ডিসপ্লে।
পাওয়ার ব্যাকআপ হিসেবে থাকছে ৫০০০ এমএএইচ এর লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। মুঠোফোনটির রিয়ার ক্যামেরা হিসেবে থাকছে ১৩ এবং ২ মেগাপিক্সেলের ডুয়াল ক্যামেরা সেটাপ এবং সেলফি ক্যামেরা হিসেবে থাকছে ৫ মেগাপিক্সেলের একটি ওয়াইড (২৭ মিমি) ক্যামেরা।
রিয়েলমি সি১১ | |
র্যাম | ২ জিবি |
স্টোরেজ | ৩২ জিবি |
সেলফি ক্যামেরা | ৫ মেগাপিক্সেল |
রিয়ার ক্যামেরা | ১৩ + ২ মেগাপিক্সেল ডুয়াল ক্যামেরা |
ডিসপ্লে | ৬.৫ ইঞ্চি |
ব্যাটারি | ৫০০০ এমএএইচ |
প্রসেসর | মিডিয়াটেক হেলিও জি৩৫ |
৪. টেকনো স্পার্ক৬ গো
বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে যে সমস্ত সাশ্রয়ী বা বাজেটবান্ধব স্মার্টফোন পাওয়া যাচ্ছে, তাদের মধ্যে টেকনো ব্র্যান্ডের এই মডেলটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। টেকনো স্পার্ক৬ গো ফোনে ব্যবহৃত হয়েছে ৬.৫২ ইঞ্চির ডিসপ্লে। আইপিএস এলসিডি এই উজ্জ্বল স্ক্রিনটির রেজ্যুলেশন ৭২০ বাই ১৬০০ পিক্সেল।
স্মার্টফোনটি তিনটি ভিন্ন সংস্করণে বাজারে পাওয়া যাবে- ২/৩২ জিবি, ৩/৩২ জিবি এবং ৪/৬৪ জিবি। এই তিনটি মডেলকে চালনা করার জন্য এতে রয়েছে দুটি ভিন্ন প্রসেসর। ২/৩২ জিবি ও ৩/৩২ জিবি সংস্করণের জন্য রয়েছে মিডিয়াটেক হেলিও এ২০ প্রসেসর এবং ৪/৬৪ জিবি সংস্করণের জন্য মিডিয়াটেক হেলিও এ২৫ প্রসেসর।
টেকনো স্পার্ক৬ গো | |
র্যাম | ২/৩/৪ জিবি |
স্টোরেজ | ৩২/৬৪ জিবি |
সেলফি ক্যামেরা | ৮ মেগাপিক্সেল |
রিয়ার ক্যামেরা | ১৩ মেগাপিক্সেল |
ডিসপ্লে | ৬.৫২ ইঞ্চি |
ব্যাটারি | ৫০০০ এমএএইচ |
প্রসেসর | মিডিয়াটেক হেলিও এ২০- ২/৩২ জিবি ও ৩/৩২ জিবি মিডিয়াটেক হেলিও এ২৫- ৪/৬৪ জিবি |
৫. ইনফিনিক্স হট৯ প্লে
২০২০ সালের জুন মাসে ইনফিনিক্সের পক্ষ থেকে বাজারে ছাড়া হয় তাদের এই সাশ্রয়ী স্মার্টফোনটি। যারা অধিক ফিচারসহ বাজেটবান্ধব ফোন খুঁজছেন তাদের কথা মাথায় রেখেই ফোনটির আগমন। ৬.৫২ ইঞ্চির বিশাল ডিসপ্লের পাশাপাশি ফোনটিতে থাকছে ৬০০০ এমএএইচ এর বিশাল ব্যাটারি ব্যাকআপ সুবিধা। যা আপনাকে এক চার্জে দীর্ঘ সময় অনায়াসে ফোনটি ব্যবহার করার নিশ্চয়তা দিবে। এছাড়াও এর ট্রিপল ক্যামেরা সেটাপ আপনার ফটোগ্রাফি অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলবে।
ইনফিনিক্স হট৯ প্লে স্মার্টফোনটিতে ব্যবহৃত হয়েছে কর্টেক্স এ৫৩ গেমিং প্রসেসর যা আপনার গেমিং অভিজ্ঞতাকে করে তুলবে আরও প্রাণবন্ত!
ইনিফিনিক্স হট৯ প্লে | |
র্যাম | ২/৩/৪ জিবি |
স্টোরেজ | ৩২/৬৪ জিবি |
সেলফি ক্যামেরা | ৮ মেগাপিক্সেল |
রিয়ার ক্যামেরা | ১৩ মেগাপিক্সেল |
ডিসপ্লে | ৬.৮২ ইঞ্চি |
ব্যাটারি | ৬০০০ এমএএইচ |
প্রসেসর | কর্টেক্স এ৫৩ কোয়াড কোর- ২/৩২ জিবি ও ৩/৩২ জিবি কর্টেক্স এ৫৩ অক্টা কোর- ৪/৬৪ জিবি |
শেষকথা
উপরে উল্লেখিত কয়েকটি ফোন ৪জি নেটওয়ার্ক সমর্থন করে না, সুতরাং আপনি যদি এই জেনারেশনের কো্নো ফোন কিনতে চান তাহলে আগে থেকেই ফোনের ব্যাপারে বিস্তারিত যাচাই করে নিন। নেটওয়ার্কের পাশাপাশি সকল ফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপও সমান না, তবে ৩০০০ এমএএইচ অথবা এর উপরের ক্ষমতার ব্যাটারিগুলো থেকে ভালো পরিষেবা আশা করা যায়।
যদি আপনি একজন গেমার হয়ে থাকেন অথবা ফোনের মাধ্যমে মাল্টিটাস্কিং করে থাকেন তাহলে একেবারে শুরু থেকেই ফোনের প্রসেসরের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। ১০০০০ টাকা বাজেটের মধ্যে যেই মুঠোফোনগুলো বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলোর একটি বড় অংশ মিডিয়াটেক প্রসেসরে চালিত।
অন্যদিকে মুঠোফোনের কার্যক্ষমতা যাচাই করার ক্ষেত্রে ২/৩/৪ জিবি র্যামের ফোনগুলো থেকে আপনি ভালো সেবা উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়াও এই বাজেটের ক্ষেত্রে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এবং এইচডি ডিসপ্লে বাড়তি পাওনা হিসেবে থাকছে।
আশাকরি আমাদের আজকের লেখাটি পরে আপনি ১০০০০ টাকার ভেতরেই আপনার জন্য সঠিক ফোনটি খুঁজে নিতে পারবেন। আজ এ-পর্যন্তই!
হ্যাপী শপিং!