এই মুহূর্তে বিক্রির শীর্ষে থাকা স্মার্টফোনগুলো
প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই সময়ে নিরন্তর পাল্টে যাচ্ছে স্মার্টফোনের প্রযুক্তি। আজ আমরা যে অত্যাধুনিক স্মার্টফোনটি কিনছি, সেই ফোনটিই হয়তো মাস দুয়েক পরে নতুন কোনো হালনাগাদ করা ফোনের কাছে পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে কেনার সময় আমরা সময়ের সবচেয়ে এগিয়ে থাকা ফোনটিই পেতে চাই। প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষ যেমন বাজারের সবচেয়ে ভালো ফোনটি ব্যবহার করতে চান, তেমনি বাজেটের দিকেও খেয়াল না রাখলে চলে না। তাই হিসাবটা করতে হয় ফোনের গুণগত মান আর বাজেট দুটো মিলিয়েই। আজকের লেখাটি সাজানো হয়েছে এই সময়ে বাংলাদেশে আলোচনা কিংবা বিক্রিতে শীর্ষে থাকা দারুণ সব অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন নিয়ে, যেগুলো আপনি কিনে ফেলতে পারেন সাধ্যের মধ্যেই। এই মোবাইল গুলোর ফিচার সম্পর্কে আরও ভালো ভাবে ধারনে নিতে দেখে নিন আসন্ন সব স্মার্টফোনে সেরা যে ফিচারগুলো না থাকলেই নয়।
শাওমি এ-১
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে চায়নার মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘শাওমি কর্পোরেশন’ থেকে বাজারে ছাড়া হয় শাওমি এ-১। মাঝারি বাজেটের এই ফোনটি ভারতের মোবাইল বাজারে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করার পাশাপাশি বাংলাদেশের বাজারেও বিক্রি হচ্ছে সমানতালে। ২ গিগাহার্জের শক্তিশালী অক্টাকোর স্ন্যাপড্রাগন ৬২৫ চিপসেটের সাথে আড্রিনো ৫০৬ জিপিইউ ব্যবহার করা হয়েছে এই ফোনটিতে। ভালো গেমিং পারফর্মেন্সের পাশাপাশি ফোনটির অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে এর ক্যামেরা।
শাওমি এ১ এর রিয়ার ক্যামেরা হিসাবে আছে ১২ মেগাপিক্সেলের দুটি অমনিভিশনের পিওরসেল ক্যামেরা। একটি মূল সেন্সরের পাশাপাশি অন্যটি টেলিফটো সেন্সর। ক্যামেরা দুটি মাইক্রনপিক্সেল সমৃদ্ধ বিধায় দিনের পাশাপাশি রাতেও বেশ ভালো মানের ছবি ধারণে সক্ষম। সেলফি ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে একটি ৫ মেগাপিক্সেল সেন্সর। ৫.৫ ইঞ্চি আকারের স্ক্রিনের এই ফোনটি দিয়ে সর্বোচ্চ ১০৮০পি-তে ভিডিও ধারণ করা সম্ভব। ৩০৮০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারির এই ফোনটি ৩২ জিবি এবং ৬৪ জিবির দুটি আলাদা ধারণক্ষমতায় পাওয়া যাচ্ছে দেশের বাজারে। দারুণ এই ফোনটি অফিশিয়াল ওয়ারেন্টিসহ কিনতে পারবেন মোটামুটি ২২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২৪ হাজার টাকার মধ্যে।
শাওমি রেডমি নোট ৫ প্রো
চলতি বছরের মার্চে শাওমির পক্ষ থেকে বাজারে ছাড়া হয়েছে রেডমি নোট ৫ প্রো। মাঝারি বাজেটের এই ফোনটির যাবতীয় বৈশিষ্ট্য একে শুধু তাদের নিজস্ব ‘মি সিরিজ’ নয়, বরং অন্যান্য অনেক কোম্পানির ফ্ল্যাগশিপ ফোনেরও প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে। ১৮:৯ অনুপাত এবং ৫.৯৯ ইঞ্চি পর্দার এই ফোনটিতে ১.৮ গিগাহার্জের শক্তিশালী অক্টাকোর স্ন্যাপড্রাগন ৬৩৬ চিপসেট এবং জিপিইউ হিসেবে আড্রিনো ৫০৯ ব্যবহার করা হয়েছে। ফোনটির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে এর ক্যামেরা বিভাগ।
ফোনটির রিয়ার ক্যামেরায় ১২ মেগাপিক্সেল এবং ৫ মেগাপিক্সেলের মাইক্রনপিক্সেল সমৃদ্ধ দুটি আলাদা সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। সেলফি ক্যামেরা হিসাবে একটি ২০ মেগাপিক্সেল সেন্সর রয়েছে এতে। উভয়পাশে সনি আইম্যাক্স সেন্সর এবং মাইক্রনপিক্সেল থাকার কারণে দিনের পাশাপাশি রাতের বেলাতেও ফোনটি দিয়ে বেশ ভালো মানের ছবি তোলা সম্ভব। ফোনটি দিয়ে ১০৮০পি-তে বেশ ভালো মানের ভিডিও ধারণ করা যায়। ৪০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের বড় ব্যাটারি, গরিলা গ্লাস সুরক্ষাসহ অন্যান্য বেশ কিছু আকর্ষণীয় সুবিধা রয়েছে এই ফোনটিতে।
ভারতের বাজারে ব্যাপক বিক্রির পরে বাংলাদেশে ফোনটি আনুষ্ঠানিকভাবে বিক্রি শুরু হয়েছে। ফ্ল্যাগশিপ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এই ফোনটির দাম ২০-২২ হাজার টাকার মধ্যেই।
হুয়াওয়ে নোভা ২-আই
২০১৭ সালের নভেম্বরে চীনের বিশ্বখ্যাত মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের তরফ থেকে বাজারে ছাড়া হয় নোভা ২-আই। আন্তর্জাতিক বাজারে ফোনটি ‘হুয়াওয়ে মেট ১০লাইট’ নামে পরিচিত হলেও বাংলাদেশের বাজারে এটি নোভা ২-আই নামেই পরিচিত। ৫.৯ ইঞ্চির এই ফোনে হুয়াওয়ের নিজস্ব অক্টাকোরের হাইসিলিকন কিরিন ৬৫৯ সিরিজের প্রসেসর এবং জিপিইউ হিসেবে মালি- টি৮৩০ এমপি২ সিরিজ ব্যবহার করা হয়েছে। ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ১৮:৯ অনুপাতের উজ্জ্বল আইপিএস পর্দা।
ফোনটির রিয়ার ক্যামেরায় ১৬ এবং ২ মেগাপিক্সেলের দুটি সিএমওএস বিএসআই লেন্স ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া সেলফি ক্যামেরা হিসাবে রয়েছে ১৩ এবং ২ মেগাপিক্সেলের আলাদা দুটি সেন্সর। বিশেষ পট্রেট মোড এই ফোনটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে বলা হচ্ছে। ৩৩৪০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি সুবিধা সম্পন্ন এই ফোনটি দিয়ে ১০৮০ পি-তে বেশ ভালো মানের ভিডিও ধারণ করা সম্ভব।
ফোনটিতে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অ্যান্ড্রয়েড ৭ (নুগ্যাট) ব্যবহার করা হয়েছে। ৬৪ জিবি অভ্যন্তরীণ ধারণ ক্ষমতা এবং ৪ জিবি র্যামের এই ফোনটি বাংলাদেশের বাজারে ২৫ হাজার টাকার আশেপাশে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।
ওয়ানপ্লাস ৫-টি
অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় অপেক্ষাকৃত কমদামে ফ্ল্যাগশিপ ফোনের জন্য ‘ওয়ানপ্লাসের’ সুখ্যাতি পৃথিবী জুড়ে । ২০১৭ এর নভেম্বরে ওয়ানপ্লাসের তরফ থেকে বাজারে ছাড়া হয়েছে তাদের সর্বশেষ ফ্ল্যাগশিপ ফোন ৫-টি। তাদের আগের ফ্ল্যাগশিপের মতোই এই মডেলটি বিশ্ববাজারে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছে। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই তাতে।
ওয়ানপ্লাস ৫-টি ফোনে স্ন্যাপড্রাগনের শক্তিশালী অক্টাকোরের ৮৩৫ ফ্ল্যাগশিপ চিপসেট এবং জিপিইউ হিসেবে আড্রিনো ৫৪০ ব্যবহার করা হয়েছে। ৬.০১ ইঞ্চির পর্দায় ব্যবহার করা হয়েছে অপটিক আম্যোলেড প্রযুক্তি। ফোনটির ক্যামেরা বিভাগ বেশ আকর্ষণীয়। রিয়ার ক্যামেরায় ১৬ এবং ২০ মেগাপিক্সেলের দুটি সনি আইএমএক্স লেন্স ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া সেলফি ক্যামেরায়ও আছে ১৬ মেগাপিক্সেলের সনি সেন্সর। তিনটি সেন্সরেই মাইক্রন পিক্সেল ব্যবহার করার কারণে দিনের পাশাপাশি রাতেও এই ফোন দিয়ে চমৎকার ছবি তোলা সম্ভব। এছাড়া ৩৩০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারির এই ফোনটি দিয়ে ৪কে-তে অত্যন্ত ভালো মানের ভিডিও ধারণ করা যাবে।
ফোনটি ৬৪ জিবি ধারণ ক্ষমতা এবং ৬ জিবি র্যাম/১২৮ জিবি ধারণ ক্ষমতা এবং ৮ জিবি র্যাম; এই দুটি মডেলে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। মডেলভেদে বাংলাদেশে ফোন দুটির দাম ৪২ থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে।
স্যামসাং গালাক্সি জে-৭ সিরিজ
স্যামসাং গালাক্সি জে-৭ সিরিজ বিগত প্রায় দুই বছর ধরেই বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত এবং বিক্রিত ফোন। মাঝারি বাজেটে অনেকেরই আস্থার প্রতীক স্যামসাং এর এই জে-৭ সিরিজের কয়েকটি ফোন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সম্প্রতি বাজারে আসা জে-৭ প্রাইম ২, জে-৭ ম্যাক্স এবং জে-৭ প্রো মডেলগুলো।
ফোন তিনটির আকার-আয়তন এবং বৈশিষ্ট্যগত কিছু পার্থক্য থাকলেও ক্যামেরা বিভাগ মোটামুটিভাবে একই রকম। প্রধান এবং সেলফি, দুপাশের ক্যামেরাতেই ব্যবহার করা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আপ্যারচারের ১৩ মেগাপিক্সেলের সেন্সর। বিশেষ কিছু ফিচারের এই ক্যামেরা দিয়ে ১০৮০পি ভিডিও ধারণ করা সম্ভব।
ভিন্ন ভিন্ন আকারের এই ফোনগুলোতে স্যামসাং এর নিজস্ব অক্টাকোরের এক্সিনস প্রসেসর এবং সাম্প্রতিক মডেলের মালি সিরিজের জিপিইউ ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশের বাজারে জে-৭ প্রাইম ২, জে-৭ ম্যাক্স এবং জে-৭ প্রো এর দাম যথাক্রমে প্রায় ২৩, ২৬ এবং ৩০ হাজার টাকার আশেপাশে।
হুয়াওয়ে ওয়াই ৯ (২০১৮)
চলতি বছরের এপ্রিলে চীনের মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘হুয়াওয়ে’ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে ওয়াই ৯ (২০১৮) ফোনটি বাজারে আনার। দামের বিবেচনায় মাঝারি বাজেটের এই ফোনটি বাংলাদেশের মোবাইল বাজারে ইতিমধ্যেই অনেক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। ফোনটিতে হুয়াওয়ের নিজস্ব অক্টাকোরের হাইসিলিকন কিরিন ৬৫৯ সিরিজের প্রসেসর এবং জিপিইউ হিসেবে মালি- টি৮৩০ এমপি২ সিরিজ ব্যবহার করা হচ্ছে। ফোনটির অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে এর ক্যামেরা বিভাগ।
হুয়াওয়ে ওয়াই ৯ এর রিয়ার ক্যামেরায় ১৬ এবং ২ মেগাপিক্সেলের দুটি সিএমওএস বিএসআই লেন্স ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া সেলফি ক্যামেরা হিসেবেও রয়েছে ১৩ এবং ২ মেগাপিক্সেলের আলাদা দুটি বিএসআই সেন্সর। ফোনটি দিয়ে ১০৮০ পি’তে ভিডিও ধারণ করা যাবে। ১৮:৯ অনুপাতের ৫.৯৩ ইঞ্চির এই ফোনে ৪০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি দেওয়া হয়েছে।
ফোনটিতে অপারেটিং সিস্টেম হিসাবে সাম্প্রতিক অ্যান্ড্রয়েড ৮ (অরিও) ব্যবহার করা হয়েছে। ১২৮/৬৪ গিগাবাইট ধারণ ক্ষমতা ও ৪ গিগাবাইট র্যাম অথবা ৩২ গিগাবাইট ধারণ ক্ষমতা ও ৩ গিগাবাইট র্যাম; এই দুটি সংস্করণে ফোনটি বাজারে আসছে। বাংলাদেশের বাজারে ৩২ গিগাবাইট ধারণ ক্ষমতা ও ৩ গিগাবাইট র্যাম সংস্করণটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা।
শাওমি রেডমি ৫/ ৫ প্লাস
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বাজারে শাওমির আরও দুটি মডেল- রেডমি ৫ এবং রেডমি ৫ প্লাস বেশ বিক্রি হচ্ছে। ফোনগুলোর আকার-আয়তন এবং বৈশিষ্ট্যগত কিছু পার্থক্য থাকলেও ক্যামেরা বিভাগ প্রায় একই বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন।
ফোন দুটির রিয়ার ক্যামেরায় ব্যবহার করা হয়েছে মাইক্রনপিক্সেল সমৃদ্ধ ১২ মেগাপিক্সেলের ওমনিভিশন ক্যামেরা। এছাড়া আছে ৫ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা। মাইক্রনপিক্সেল থাকার কারণে রেডমি ৫ সিরিজের এই ফোনগুলো দিয়ে বেশ ভালো মানের ছবি পাওয়া সম্ভব।
রেডমি ৫ এ স্ন্যাপড্রাগন ৪৫০ এবং আড্রিনো ৫০৬ জিপিইউ, ৫ প্লাসে স্ন্যাপড্রাগন ৬২৫ এবং আড্রিনো ৫০৬ জিপিইউ ব্যবহার করা হয়েছে। ১৮:৯ অনুপাতের এই ফোন দুটির ব্যাটারি ব্যাকআপ বেশ ভালো। এছাড়া দ্রুত চার্জ হবার সুবিধাসহ বেশ কিছু আকর্ষণীয় সুবিধা দেওয়া হয়েছে এগুলোতে। ভিন্ন ভিন্ন র্যাম এবং ধারণ ক্ষমতার বিভিন্ন সংস্করণে এই ফোন দুটি বাংলাদেশের বাজারে ১৩ হাজার থেকে শুরু করে ১৮ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
এর সাথে আমাদের প্রকাশ করা আরও কিছু মোবাইল ফোন রিভিউ দেখে নিনঃ
০১। অ্যাপল ২০১৮: নতুন iPhone XS রিভিউ!
০২। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯-এর কিছু অনন্য ফিচার