আপনার পোষা বিড়ালকে যেভাবে সুস্থ-সবল রাখবেন
![পোষা বিড়াল](https://blog.bikroy.com/bn/wp-content/uploads/2014/09/cat4.jpg)
পোষা প্রাণি হিসেবে বিড়াল আপনার কাছে আশ্চর্যজনক মনে হতে পারে। পরিচর্যার কথা ভাবছেন? বিড়াল পুষতে বেশি পরিচর্যা করতে হয় না। আবার কুকুর পালার ক্ষেত্রে কুকুরের প্রতি আপনার যতটা সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে, বিড়ালের ক্ষেত্রে ততোটা দৃষ্টি দিতে হবে না। বিড়াল নিজেই নিজের শরীর, পশম পরিষ্কার রাখে এবং বিড়াল তার শরীর নিয়ন্ত্রণে রেখে খুব সাবধানে বিছানায় নড়াচড়া করে যাতে বিছানা নোংড়া না হয়। তবে নির্দিষ্ট সময় পর পর আপনার বিড়ালের দাঁত ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। এতে সে সুস্থ থাকবে। অনেক ক্ষেত্রে আবার দেখা যায় সঠিক যত্ন-পরিচর্যা নেওয়ার পরও বিড়ালের ওজন অতিরিক্তভাবে বেড়ে যায়, দেহ সৌষ্ঠব অনেক বেড়ে যায় এবং শারীরিক কসরতের ক্ষমতা হারিায়ে ফেলে। আপনার বিড়ালের আয়ু বৃদ্ধি করতে মূল স্বাস্থ্য-নীতিগুলো মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের চেয়ে বিড়াল পাঁচগুণ দ্রুত হারে বৃদ্ধ হয়। আপনার পোষা বিড়ালটিকে সুস্থ রাখতে সাধ্যের মধ্যে থাকা সবই আপনি করবেন নিশ্চই। কিভাবে বিড়ালকে সুস্থ্য রাখা যায়- এই নিবন্ধটি সেটাই আলোচনা করেছে।
বিড়ালের গর্ভাশয় অপসারণ ও খোজাকরণ
অনেকেই তাদের পোষা বিড়ালের গর্ভাশয় অপসারণ ও খোজাকরণ পছন্দ করেনে না। কিন্তু এ প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ ও অনেক সমস্যারই সমাধান করতে পারে এই ব্যবস্থা। বিড়ালের গর্ভাশয় অপসারণ বা খোজা করা হলে প্রাণিটির প্রসাবের গন্ধ শুঁকে পুরুষ বা মেয়ে বিড়াল চেনার যে ক্ষমতা তা কমে যায়। বিড়ালের এই ক্ষমতা থাকার কারণে অন্য বিড়ালের সঙ্গে লড়াই করার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। কারণ দুটি সমলিঙ্গের বিড়ালের মধ্যে লড়াইয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। গর্ভাশয় অপসারণ ও খোজাকরণের ফলে বিশেষ করে মেয়ে বিড়ালের তাপচক্র দূর হয় এবং তারা পুরুষ সঙ্গী সাধারণত কম খোঁজে। তাই এ পদ্ধতি অনেক সমস্যারই সমাধান হিসেবে কাজ করে। এখান থেকে দেখে নিন ক্রেতা এবং বিক্রেতার জন্য বিড়ালের যত্ন সংক্রান্ত টিপস।
পশু চিকিৎসকের কাছে যান
মানুষের যেমন বছরে অন্তত একবার শরীর চেক-আপ করা জরুরি, বিড়ালের ক্ষেত্রেও তা জরুরি। আপনার বিড়ালের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় হয়তো আপনি সর্বোচ্চ সচেষ্ঠ। এর পরও একজন পশুচিকিৎসক সহজেই বিভিন্ন রোগের লক্ষণ আগেই চিহ্নিত করতে পারবেন, যা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। চিকিৎসক আপনার বিড়ালটির খাবারের সঠিক নির্দেশনা দিতে পারবেন। খাবার বিষয়ক ডাক্তারের এই পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই খাদ্যাভ্যাস বিড়ালের আয়ু বাড়িয়ে দিতে পারে।
বিড়ালের বিছানা
বিশ্রাম নেবার সময় বিড়াল সাধারণত সুন্দর, পরিপাটি ও পরিস্কার স্থানে মাথা রাখতে পছন্দ করে। বিশ্রামের স্থান অবশ্যই এমন স্থানে হওয়া চাই যেখানে হইচই বা কোনো শব্দ নেই যা বিড়ালের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। বিড়াল কখনোই ঘুম থেকে জেগে ওঠানো পছন্দ করে না। আপনি নিজের বিছানাতেই আপনার বিড়ালটির শোবার ব্যবস্থা করতে পারেন। এ জন্য একটি আলাদা কম্বল কিনতে পারেন। অথবা আরামদায়ক একটি কম্বল অংশবিশেষ ব্যবহার করতে পারেন বিড়ালের বিছানা হিসেবে।
বিড়ালের পুষ্টি
আপনার বিড়ালের সব চেয়ে উপযুক্ত খাদ্য কি হবে- এ বিষয়ে অবশ্যই পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এটা যদি সম্ভব না হয় তাহলে বিড়ালের জন্য সাধারণত তরল ও শুষ্ক যে সব খাবার পাওয়া যায় তা আপনার বিড়ালটিকে খেতে দিন এবং দেখুন সে কি প্রতিক্রিয়া দেখায়। তবে স্বাভাবিকভাবেই বিড়ালের জন্য সাধারণত প্রচলিত খাদ্যের চেয়ে আধুনিক যুগে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের খাবারগুলো ভালো। আপনার লোমশ এই বন্ধুটির জন্য কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করবেন তা একান্তই আপনার নিজের ব্যাপার। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে পুষ্টিকর খাবার অন্যতম যা আপনার বিড়ালটিকে সুস্থ-সবল রাখবে। বিড়ালের দীর্ঘায়ু ও সুস্থতার ক্ষেত্রে পুষ্টিকর খাবার ভিত্তি হেসেবে কাজ করে।
বিড়ালকে চাপ বা ভীতিমুক্ত রাখুন
প্রতিদিন ভীতিকর পরিস্থিতি বা চাপের সম্মুখীন হওয়ার বিষয়টি বিড়ালের স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। নিরাপদ ও কোলাহলমুক্ত একটু উঁচু জায়গায় বিড়ালের থাকার জায়গা করা হলে তা তাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো হয়। বিড়াল একটি স্বাধীনচেতা প্রাণি। আর এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই বেশিরভাগ বিড়াল প্রেমিক এই প্রাণিকে পছন্দ করে। বিড়াল যখন জরোসড়োক হয়ে ঘরের এক কোণে বসে থাকে তখন সে গোটা পরিবেশটা পর্যবেক্ষণ করতে পছন্দ করে। বিভিন্ন ধরনের খেলনা সামগ্রী বিড়ালের পছন্দ এবং এগুলো নাগালের কাছে থাকলে বিড়াল সাধারণত চিন্তামুক্ত থাকে। বাসায় পোষা বিড়াল ইঁদুর বা কোনো প্রাণি শিকার করার সুযোগ পায় না। তাই খেলনা সামগ্রী পেলে তারা এগুলোর সঙ্গে শিকার ধরার ভান করে খেলা করে। এতে বিড়ালের শারীরিক অনুশীলন হয় এবং এতে সে অনেক মজা পায়।
বিড়ালকে বাসার মধ্যে রাখা
বিড়াল সাধারণত বাসার বাইরে খেলা করতে পছন্দ করে। কিন্তু সমস্যা হলো, বাইরে অনেক ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে আপনার বিড়ালটি। বাইরের বিড়াল, কুকুর, দুষ্ট মানুষ বা বেপরোায়া ড্রাইভারের খপ্পরে পড়তে পারে আপনার বিড়ালটি। অনেক বিড়াল-পালক মনে করেন তাদের বিড়াল একা একা বাইরে ঘুরতে পারবে না। অনেকে আবার ঘরের বাইরে কিছু স্থান জুড়ে ঘের তৈরি করে দেয় তাদের বিড়ালের নিরাপদ চলাফেরার সুবিধার্থে। এর সাথে আপনার পোষা বিড়ালের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুলো কিনে নিন।
বিড়ালের অস্বাভাবিক আচরণ পর্যবেক্ষণ
আপনার বিড়ালের আচরণগত কোনো পরিবর্তন ঘটলো কি না সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। যদি কোনো পরিবর্তন লক্ষ করেন, তাহলে বুঝবেন এটি কোনো রোগের লক্ষণ যার জন্য দ্রট্টু ব্যবস্থা নিতে হবে। অতিরিক্ত ঘুম, ওজন কমা, গোঙানি, দৈহিক ভঙ্গিমায় পরিবর্তন প্রভৃতি বিষয় কোনো রোগের বার্তা বহন করে। আপনি যখন চিকিৎসকের নিকট বিড়ালকে নিয়ে যাবেন, তখন তার সকল আচরণ কিন্তু আপনাকেই ডাক্তারের কাছে বলতে হবে। এ জন্য অবশ্যই ভালভাবে বিড়ালের আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
প্রতিষেধক ব্যবহার
মারাত্মক রোগের হাত থেকে মুক্ত রাখতে আপনার বিড়ালটিকে টিকা দিন। এটি কঠিন কোনো কাজ নয়। পেশাদার কোনো ব্যক্তির সাহায্য নিন ভ্যাকসিন দিতে। কোনো রোগের জন্য বাসার কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করবেন না। বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রনে বাসায় তৈরি কোনো প্রতিষেধকের প্রয়োগে আপনার বিড়ালের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিড়ালকে ভ্যাকসিন দিন।
আকর্ষণীয় বর্জ্যরে বাক্স
বিড়ালের সঠিক পরিচর্যা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি পরিষ্কার বর্জ্য-বাক্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্জ্য-বাক্স যদি আকর্ষণীয় হয় তাহলে বিড়াল সারা ঘর নোংরা করবে না। আবার সুগন্ধযুক্ত বাক্স কিন্তু সব বিড়ালই পছন্দ করে না। যদি বাক্সটি নিয়মিত পরিষ্কার করা না হয় তাহলে বিড়ালটি মলত্যাগের জন্য অন্য জায়গা খুজবে। বর্জ্য-বাক্স রাখার জায়গা নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অত্যন্ত নীরব ও নিরাপদ স্থানে প্রাকৃতিক কাজ সারতে পছন্দ করে বিড়াল। মনে রাখবেন বিড়ালের সংখ্যা যত বেশি হবে, বর্জ্য-বাক্সও ততো বেশি রাখতে হবে।
বাসায় বিড়ালের জন্য নিষিদ্ধ কিছু স্থান
শিশুরা যেমন তাদের জন্য নিষিদ্ধ জায়গায় বেশি ঘুরঘুর করে, বিড়ালও এ কাজে ওস্তাদ। গাছে উঠে খেলা করা আর বিষাক্ত খাবারের আশে পাশে বিড়ালের ঘোরাফেরা করা ঠিক জীবন আর মৃত্যুও মাঝেই খেলা করার সমতুল্য। পাায়খানা, রান্নার চুলা ও বৈদ্যুতিক তার যাতে বিড়ালের নাগালের বাইরে থাকে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
নখর দিয়ে আঁচর কাটা ও ওপরে আরোহণের জন্য থাম
আপনি যদি আপনার বিড়ালের ব্যায়াম নিয়ে চিন্তিত থাকেন, তাহলে একটি আরোহণ-থাম হতে পারে সুন্দর সমাধান। থাম ব্যবহার করে বিড়াল তার মাংসপেশীর প্রসারণ করতে পারে, পায়ের নখরগুলো ধারালো করতে পারে। আপনি যদি আপনার আসবাবপত্রগুলোকে রক্ষা করতে চান, তাহলে পোস্ট বা থাম হতে পারে চমৎকার সমাধান। তা ছাড়া বিড়াল থাম বেয়ে ওপরে উঠতে পছন্দ করে, কারণ এতে বিড়ালের গায়ের মরা ও শুকনো চামড়া ঝরে যায়।
হাজারো বিড়াল এর বিজ্ঞাপন থেকে আপনার পছন্দের বিড়ালটি কিনতে এখনই চলে আসুন bikroy.com -এ।