একটি ভালো কভার লেটার যেভাবে লিখবেন
আপনার পরবর্তী চাকরি খোঁজার সময় যেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি মনে রাখবেন তা হচ্ছে, প্রথম পরিচয়ে মনে দাগ কাটতে পারাটাই সবকিছু। কিন্তু সম্ভাব্য নিয়োগকর্তার সাথে সশরীরে বসে চাকরির জন্য আপনার নিজের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ পাওয়ার আগে, আপনার যোগ্যতা দিয়ে তাঁদের সন্তুষ্ট করার আরেকটি উপায় আছে।
একটি কভার লেটার এমন একটি জিনিস যা বাংলাদেশ বা বিশ্বের যেকোনো দেশে চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে অনেক দিন পর্যন্ত কাজে লাগবে। আজকের প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে, অধকাংশ প্রার্থীই ই-মেইল করে সম্ভাব্য চাকরিতে তাঁদের আগ্রহের কথা জানান। কিন্তু যেহেতু একজন নিয়োগকারী ব্যাবস্থাপক এরকম শত শত এমনকি হাজার হাজার ই-মেইল পেতে পারেন, তাই আপনার ই-মেইলের সাথে এমন একটি কভার লেটার সংযুক্ত থাকতে হবে যাতে সেটির কথা তাঁর মনে থাকে। আপনার পরবর্তী চাকরি খোঁজার আগে, একটি ভালো কভার লেটার লেখার জন্য কিছু পরামর্শ।
আপনার নিজের পরিচয় দিন
কভার লেটার লেখার শুরুতেই যেটি করতে হবে তা হচ্ছে নিজের পরিচয় দিতে হবে। কারো সাথে প্রথম দেখায় একটি উষ্ণ করমর্দনের সাথে অন্য কিছুর তুলনা হয় না, কিন্তু কভার লেটার লেখার সময় সেটা সম্ভব নয়। তাই সেই মানুষটিকে জানাতে হবে আপনি কে, যাতে তাঁরা আপনার কথা মনে রাখে। আপনি যদি ঠিক বুঝে উঠতে না পারেন কিভাবে আপনার লেখার মাধ্যমে নিজের পরিচয় দেবেন, তবে আপনি আপনার নামটি এবং যোগাযোগের ঠিকানা পৃষ্ঠার একদম উপরে লিখে দিন। প্রথমে তাঁরা এটাই দেখবেন এবং সাথে সাথেই জানতে পারবেন আপনি কে।
ই-মেইলে আপনার ব্যক্তিগত ঠিকানা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন
চাকরির জন্য আবেদন করার সময় আপনি জানেন না আপনার কভার লেটারটি কার কাছে যাচ্ছে। যদি চাকরির বিজ্ঞাপনটি সরাসরি মালিক বা ব্যবস্থাপক থেকেও আসে, তবুও প্রতিষ্ঠানের হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টর্মেন্ট থাকতে পারে যেখানে অনেক লোকবল নিয়োজিত থাকে। যদি আপনার কভার লেটারটি নির্দিষ্ট কাউকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয় এবং সেটি তাঁর কাছে না পৌঁছে তবে, যার কাছে সেটি পৌঁছাবে সে সেটি অগ্রাহ্য করতে পারে। আপনার কভার লেটারটি কেউ না কেউ পড়ুক, এটাই আপনার চাওয়া, তাই এভাবে শুরু করাই ভালো, “যাহার জন্য প্রযোজ্য” (“To whom it may concern”)।
সংক্ষিপ্ত রাখুন
যখন ঢাকা, বাংলাদেশ বা অন্য কোথাও চাকরির আবেদন করবেন তখন আপনার উচিৎ তা সংক্ষিপ্ত ও যথাযথ হওয়া। মনে রাখবেন, হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টর্মেন্ট প্রতিদিন অগণিত কভার লেটার দেখে। আপনারটি যদি দীর্ঘ হয় তবে তাঁরা তা পুরোপুরি পড়তে অনাগ্রহী হয়ে পড়তে পারেন। তাছাড়া, চাকরির জন্য আবেদনে আপনার পরিচয় দেওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন যেন কোনো ভুল না হয়। আপনার কভার লেটার যত দীর্ঘ হবে, আপনার ভুলের সম্ভাবনা তত বাড়বে।
আপনি যেই পদের জন্য আবেদন করতে চান সেই পদের নাম উল্লেখ করুন
আপনি নতুন চাকরির জন্য আবেদন করলে মনে রাখবেন, যিনি নিয়োগের দায়িত্বে আছেন তিনি অনেকগুলো পদের তত্ত্বাবধানে থাকতে পারেন। তাই, তাঁরা হয়তো মার্কেটিং, দাপ্তরিক, আইটি, এবং অন্যান্য বিভিন্ন পদের জন্য সম্ভাবনাময় প্রার্থী খুঁজতে পারেন। আর এ কারনেই আপনার পছন্দের পদের নাম উল্লখ করতে হবে। এটি আপনার ই-মেইলের শুরুতে উল্লেখ করতে হবে, যা আপনার নামের সাথে থাকবে এবং নিয়োগকারী ব্যবস্থাপক এ দু’টির সংযোগ করতে পারবেন।
আপনার সিভি যা আছে তার পুনরাবৃত্তি করবেন না
আপনার সিভি সিভিই আর আপনার কভার লেটার কভার লেটারই। এটা জানা জরুরী যে এদের উভয়ের আলাদা আলাদা উদ্দেশ্য রয়েছে। রেজ্যুমের উদ্দেশ্য আপনার পূর্ববর্তী যোগ্যতা এবং আপনি কেন সেই পদের জন্য উপযুক্ত তা উল্লেখ করা, অপরদিকে কভার লেটারের উদ্দেশ্য আপনার নিজের পরিচয় দেওয়া এবং আপনাকে চাকরিতে নিলে কেনো ভালো হবে তা বলা। একই বিষয় বার বার উল্লেখ না করার সর্বাত্মক চেষ্টা করুন, কেননা আপনার নিয়োগকারী ব্যবস্থাপক বিরক্ত হতে পারেন। তাছাড়া, আপনার কভার লেটার থেকে রেজ্যুমে আলাদা হওয়ার ফলে তা আপনার কভার লেটারটিকে সংক্ষিপ্ত ও যথাযথ রাখবে, যা আগেই বলা হয়েছে।
স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখুন
আপনি যদি দাপ্তরিক চাকরি খোঁজেন, তবে আপনার প্রতিষ্ঠানকে বলতে হবে কেনো ও কিভাবে আপনি ওই অফিসের সেরা কর্মকর্তা হয়ে উঠবেন। আপনি যদি আইটির চাকরি খুঁজে থাকেন তবে আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করুন এবং বলুন যে তাঁদের প্রযুক্তিকে আপনি কতটা নির্ভরযোগ্য করে গড়ে তুলতে পারবেন। অথবা আপনি যদি মার্কেটিংয়ের চাকরি খোঁজেন তবে আপনি এই ক্ষেত্রে কেনো অসাধারণ তা বুঝিয়ে বলুন। পদ যাই হোক না কেনো, কভার লেটারে আলাদাভাবে আপনার পরিচয় তুলে ধরতে পারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বলিষ্ঠভাবে শুরু করুন এবং দৃঢ়ভাবে শেষ করুন
আপনার কভার লেটারের শুরুতে এমন কিছু থাকতে হবে যাতে নিয়োগকারী ব্যবস্থাপক আগ্রহী হন এবং তাঁদের নজর কাড়ে। শেষের দিকে সমাপ্তি দৃঢ় ও স্পষ্ট হতে হবে। তাঁদের মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ও আপনার কভার লেটারটি পড়ার জন্য তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানান এবং তাঁরা যে আপনার পাঠানো কাগজপত্র হাতে পেয়েছেন তা আপনাকে জানানোর অনুরোধ করুন। পাশাপাশি, আপনি তাঁদেরকে জানিয়ে রাখতে পারেন যে আপনি অচিরেই তাঁদের সাথে যোগাযোগ করবেন, যাতে তাঁরা আপনার ফলো-আপ কলের জন্য প্রস্তুত থাকেন।
সেটি PDF ফরম্যাটে পাঠান
বাংলাদেশ বা বিশ্বের অন্য যেখানেই চাকরির আবেদন করুন না কেন, সবাই আপনার মত একই ধরনের ওয়ার্ড প্রসেসিং প্রোগ্রাম ব্যবহার করবেন না। তাই কভার লেটারটি পাঠানোর আগে তা PDF ফরম্যাটে পরিবর্তন করে নিন। উপরন্তু, ওয়ার্ড প্রসেসিং প্রোগ্রাম আপনার বানান বা ব্যাকরণগত ত্রুটিসমূহ হাইলাইটেড করে রাখবে। আপনার এডিটিংযের সময় কিছু বাদ পড়ে থাকলে, আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন, কারণ PDF ফরমেটে আপনার নিয়োগকারী ব্যবস্থাপকের চোখে তা ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম।
আপনি বাংলাদেশ বা বিশ্বের অন্য যেখানেই চাকরির আবেদন করুন না কেনো, কভার লেটার হচ্ছে এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ সম্পন্ন করার দারুন একটি মাধ্যম। তাঁদের মনে গেঁথে থাকার মতো একটি কভার লেটার লেখার সময় এই পরামর্শগুলো কাজে লাগাতে ভুলবেন না।