স্মার্টফোনে স্টোরেজ খালি করার সহজ পদ্ধতি
স্মার্টফোনের স্টোরেজ পূর্ণ হয়ে যাওয়া আজকাল আমাদের সবার জন্যই এক পরিচিত বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানান ধরণের অ্যাপ ও অসংখ্য ছবি জমতে জমতে কখন যে স্টোরেজ শেষ হয়ে যায় তা আর খেয়াল করা হয় না। এতে করে প্রয়োজনের সময় ফোন হ্যাং করে, ফোনের সাধারণ ফাংশনগুলোর গতি কমে যায় ও অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়।
এই সমস্যার সমাধান একটি: স্টোরেজ খালি করা। স্টোরেজ খালি করার কিছু সহজ পদ্ধতি রয়েছে। এগুলো ব্যবহার করে নিয়মিত স্টোরেজ খালি করলে ফোনে কোনো সমস্যা হবে না। আবার প্রয়োজনীয় ফাইল, ছবি ও অ্যাপগুলোও রাখতে পারবেন নিশ্চিন্তে। আজকে আমরা এই সহজ পদ্ধতিগুলো বিস্তারিত আলোচনা করবো।
কীভাবে সহজে স্মার্টফোনের স্টোরেজ খালি করবেন?
স্টোরেজ খালি করার আগে আপনার ফোনের অ্যাপ, অডিও, ভিডিও ও ছবির ফাইলগুলো কতটুকু জায়গা দখল করে আছে তা জানতে হবে। এজন্য প্রথমে সেটিংসে ঢুকুন। এরপর স্টোরেজ থেকে ‘ব্যাটারি অ্যান্ড ডিভাইস কেয়ার’ অপশনটি খুঁজে তাতে প্রবেশ করুন। এখন স্টোরেজ অপশনটিতে প্রবেশ করে ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজের কতটুকু ব্যবহৃত হয়েছে আর কতটুকু খালি আছে তা দেখুন।
আইফোনের ক্ষেত্রে প্রথমে সেটিংসে গিয়ে জেনারেল থেকে ‘আইফোন স্টোরেজ’ নির্বাচন করে স্টোরেজ চেক করতে হবে।
উভয়ক্ষেত্রে কিছু কিছু সময় আপনাকে স্টোরেজ খালি করার জন্য বাছাইকৃত কিছু বড় বড় ফাইল দেখানো হবে। এগুলো মুছে ফেললে তৎক্ষণাৎ স্টোরেজে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জায়গা খালি হবে। এরপরেও যদি আরো স্টোরেজ খালি করতে হয়, তাহলে নিচে আলোচিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করুন।
ক্লাউড ব্যবহার করা শুরু করুন
বিভিন্ন উৎসবে ও অনুষ্ঠানে আমরা অনেক হাই রেজোলিউশনের ছবি তুলি ও ভিডিও করি। এই ছবি ও ভিডিও-র ফাইলগুলো সাধারণত বেশ বড় হয় ও স্টোরেজে অনেক জায়গা নিয়ে থাকে। এগুলো আপনি গুগল ড্রাইভ ও গুগল ফটোজের মতো ক্লাউড স্টোরেজে সংরক্ষণ করতে পারেন। এরপর ফোনের গ্যালারি থেকে ফাইলগুলো ডিলিট করে দিলে ইন্টারনাল স্টোরেজ বেড়ে যাবে অনেকটুকু।
গুগল ড্রাইভের মতো আরো কিছু জনপ্রিয় ক্লাউড স্টোরেজ রয়েছে, যেমন: মেগা, ড্রপবক্স, ওয়ানড্রাইভ প্রভৃতি। প্রয়োজনে এগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।
উল্লেখ্য, অ্যাপলের আইক্লাউড স্টোরেজের ৫ গিগাবাইট স্টোরেজ থাকে, যা আপনি বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। গুগল ড্রাইভে ও মেগায় ফ্রি স্টোরেজ যথাক্রমে ১৫ গিগাবাইট ও ২০ গিগাবাইট। ফ্রি স্টোরেজ শেষ হয়ে গেলে মাসিক বা বাৎসরিক ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে অতিরিক্ত স্টোরেজ ক্রয় করতে হবে।
অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো মুছে ফেলুন
ফোনের সবগুলো অ্যাপ আমরা নিয়মিত ব্যবহার করি না। কিছু অ্যাপ থাকে কোনো নির্দিষ্ট কাজের জন্য দুই-একবার ব্যবহার করা হয়; কাজ শেষে এগুলোর প্রয়োজন থাকে না। কিন্তু এই অ্যাপগুলো কাজে না লাগলেও আমাদের আনইন্সটল করা হয় না। ফলে এরা ফোনের স্পেস দখল করে।
তাই এই অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো খুঁজে মুছে ফেলুন। দেখবেন, বেশ ভালো পরিমাণের স্টোরেজ খালি হয়ে গেছে।
স্টোরেজ অপ্টিমাইজ করুন
বর্তমানে প্রায় সব স্মার্টফোনে ‘স্টোরেজ অপ্টিমাইজেশন’ নামে একটি ফিচার থাকে। এই ফিচারটির কাজ হলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফোনের অব্যবহৃত ফাইলগুলো সরিয়ে স্টোরেজ খালি রাখা। আপনার ফোনে এই ফিচারটি থাকলে তা ব্যবহার করে স্টোরেজ অপ্টিমাইজ করতে পারেন।
পুরোনো ফাইল মুছে ফেলুন
ফোনের ডাউনলোড ফোল্ডারে পুরোনো অনেক ফাইল পাবেন, যেগুলো এখন আর প্রয়োজন নেই। এগুলো চেক করে দেখুন। প্রয়োজনীয় ফাইওগুলো রেখে বাকিগুলো মুছে ফেলুন। নিমেষেই স্টোরেজের জায়গা খালি হবে।
দরকারি ফাইলের জন্য ই-মেইল ব্যবহার করুন
প্রয়োজনীয় ফাইল, যেমন: অফিশিয়াল কাগজপত্র, ছবি ইত্যাদি আপনার ই-মেইল অ্যাকাউন্টে সংরক্ষণ করুন। প্রয়োজনের সময় ওখান থেকে ফাইল নিয়ে ব্যবহার করবেন। তাহলে এগুলো ফোনের স্টোরেজে রাখার দরকার হবে না।
ফোন রিস্টার্ট/রিবুট করুন
মাঝে মাঝে ফোন রিস্টার্ট/রিবুট করুন। এতে করে ফোনের সিস্টেম ক্যাশ ও অস্থায়ী ফাইলগুলো মুছে যাবে। ফলে স্টোরেজ খালি হওয়ার পাশাপাশি ফোনের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।
ছবির রেজোলিউশন কমিয়ে রাখুন
অনেক সময় আমাদের ফোনে তোলা ছবিগুলোর রেজোলিউশন বেশি থাকে। এজন্য ছবির ফাইলগুলো জায়গা নেয় বেশি। তাই যে ছবিগুলো তেমন গুরুত্বপূর্ণ না, সেগুলোর রেজোলিউশন কমিয়ে গ্যালারিতে সংরক্ষণ করুন। এতে স্টোরেজের স্পেস বাঁচবে।
চ্যাট অ্যাপ থেকে মিডিয়া ফাইল মুছে ফেলুন
মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও অনুরূপ চ্যাট অ্যাপগুলোর মিডিয়াতে অনেক ছবি, অডিও, ভিডিও ও ডকুমেন্ট ফাইল থাকে। এগুলোর জন্য ফোনের স্টোরেজে চ্যাট অ্যাপগুলো অনেক জায়গা দখল করে থাকে। সেটিংস থেকে মিডিয়া ক্লিয়ার করে দিলে স্টোরেজের জায়গা বেড়ে যাবে।
অটোমেটিক ডাউনলোড বন্ধ রাখুন
টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো অ্যাপগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিডিয়া ফাইল ডাউনলোড করে। এর ফলে আমাদের অজান্তেই গ্যালারি ও ডাউনলোড ফোল্ডারগুলোতে অনেক অপ্রয়োজনীয় ফাইল পড়ে থাকে। তাই অ্যাপগুলো থেকে এই অপশন বন্ধ রাখলে অদরকারি ফাইল দিয়ে স্টোরেজের জায়গা পূর্ণ থাকবে না।
নিয়মিত ক্যাশ মেমোরি মুছুন
প্রতিবার আপনি যখন কোনো অ্যাপ ব্যবহার করেন, তখন কিছু তথ্য সংরক্ষিত হয়। একে বলা হয় ক্যাশ মেমোরি। কিছুদিন পর পর নিয়মিত ফোনের সেটিংস থেকে সবগুলো অ্যাপের ক্যাশ মেমোরি মুছে ফেলতে পারেন। এতে করে স্টোরেজ খালি হবে।
স্ট্রিমিং সার্ভিস ব্যবহার করুন
আমরা যারা গান শুনতে ভালোবাসি, তাদের ফোনের স্টোরেজের বড় একটি অংশ জুড়ে থাকে অজস্র প্রিয় গানের ফাইল। এক্ষেত্রে গান ডাউনলোড করে ফোনে সংরক্ষণ করার বদলে স্পটিফাই বা গানা-র মতো স্ট্রিমিং সার্ভিস ব্যবহার করা যায়।
এর ফলে গানের ফাইল ফোনে রাখতে হবে না। স্টোরেজের জায়গা দরকারি ফাইল সংরক্ষণে ব্যবহার করা যাবে।
ট্র্যাশ ফোল্ডার পরিষ্কার করুন
কোনো ফাইল মুছে ফেলার সাথে সাথেই সেটি স্থায়ীভাবে ফোন থেকে মুছে যায় না। এটি ট্র্যাশ ফোল্ডারে সাধারণত ৩০ দিনের জন্য জমা থাকে। এর ফলে ফাইল মুছে ফেললেও স্টোরেজ খালি হয় না। তাই তৎক্ষণাৎ স্থায়ীভাবে ফাইল মুছে ফেলার জন্য এটি ট্র্যাশ ফোল্ডার থেকেও মুছে দিন।
গুগল ফাইলস অ্যাপ ব্যবহার করুন
দ্রুত স্টোরেজ খালি করার একটি সহজ পদ্ধতি হলো গুগল ফাইলস অ্যাপটি ব্যবহার করা। এই অ্যাপে প্রবেশ করে ‘ক্লিন’ অপশনে চাপুন। এর মাধ্যমে খুব তাড়াতাড়ি ফোনের বড় বড় ফাইল, পুরোনো স্ক্রিনশট ও জাংক ফাইলগুলো মুছতে পারবেন।
পুরোনো মেসেজ মুছে ফেলুন
প্রতিদিন সিম কোম্পানিগুলো থেকে অহরহ মেসেজ আসে আমাদের ফোনে। এই মেসেজগুলো জমতে জমতে স্টোরেজের জায়গা নিয়ে নেয়। এ কারণে স্টোরেজ পূর্ণ হয়ে গেলে আমরা অনেক সময় ফোনে দরকারি মেসেজগুলো পাই না।
এই পরিস্থিতি এড়াতে নিয়মিত পুরোনো মেসেজগুলো মুছে ফেলুন এবং ফোনের স্টোরেজ সংরক্ষণ করুন।
ডুপ্লিকেট ও ঘোলা ছবি মুছে ফেলুন
আমাদের গ্যালারিতে অসংখ্য ছবি আছে যেগুলো অন্য ছবির ডুপ্লিকেট। অনেক ছবি আছে ঘোলা; এগুলোতে আমাদের চেহারা বোঝা যায় না। কিন্তু খেয়াল না করার কারণে ভালো ছবিগুলোর সাথে এই ছবিগুলোও গ্যালারিতে রয়ে যায় ও জায়গা দখল করে থাকে।
সময় করে এগুলো নিয়মিত মুছে ফেলুন ও স্টোরেজ খালি রাখুন। এভাবে সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে স্টোরেজ ব্যবহার করলে ফোনের কর্মক্ষমতাও ভালো থাকবে।
ফোনের অ্যাপগুলো নিয়মিত আপডেট করুন
কিছুদিন পরপরই আমাদের ফোনে ব্যবহৃত অ্যাপগুলোর নতুন আপডেটের নোটিফিকেশন আসে। এগুলো সাথে সাথে আপডেট করে নিবেন। কারণ আপডেটের ফলে ফোনের স্টোরেজ অপ্টিমাইজেশন পূর্বাপেক্ষা উন্নত হয়। এটি ফোনের কর্মক্ষমতা ভালো রাখতে সহায়ক হয়।
একই সাথে অ্যাপগুলোর পাশাপাশি ফোনের অপারেটিং সিস্টেমের আপডেটও আসে প্রতিনিয়ত। এক্ষেত্রে নিশ্চিত করবেন আপনি সর্বশেষ আপডেটটি ব্যবহার করছেন। এই আপডেটগুলো ফোনের স্টোরেজ পরিচালনা আরো কার্যকর করতে সাহায্য করে।
উপসংহার
ওপরে আলোচিত স্মার্টফোনে স্টোরেজ খালি করার সহজ পদ্ধতিগুলো নিয়মিত অনুসরণ করুন। সবগুলো একসাথে প্রয়োগ না করে ধীরে ধীরে একেকবার একেকটি প্রয়োগ করুন। এতে করে দক্ষভাবে স্টোরেজ রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবেন। স্টোরেজ অনেকদিন ব্যবহার করতে পারবেন, আবার ফোন যখন-তখন হ্যাং করবে না।
ফোন যদি অনেকদিন ধরে ব্যবহার করে থাকলে এই পদ্ধতিগুলো খুব বেশি ফলপ্রসূ নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ফোন আপগ্রেড করার কথা বিবেচনা করতে পারেন। আপগ্রেড করে ১২৮ গিগাবাইট বা ২৫৬ গিগাবাইটের ইন্টার্নাল স্টোরেজ ক্যাপাসিটি আছে এমন ফোন ব্যবহার করলে দীর্ঘ সময় নিশ্চিন্তে স্টোরেজ ব্যবহার করতে পারবেন।