ইলেকট্রিক বাইক কেনার আগে যা জানা জরুরি
মোটরবাইক শুধুমাত্র জনপ্রিয়ই নয়, এখনকার দিনে এটি প্রয়োজনীয় একটি বাহন। ইলেকট্রিক বাইক, যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে একটি জনপ্রিয় ও পরিবেশবান্ধব অপশন। স্বল্প দূরত্বে যাতায়াত এবং জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য ইলেকট্রিক বাইক খুবই কার্যকর। শহরের যানজট পরিস্থিতি সামলানো এবং সহজ অপারেটিং সিস্টেমের কারণে এই বাইকগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। রেগুলার যাতায়াতের জন্য এই বাইকগুলো অসাধারণ। সকল পেশাজীবী এবং সব বয়সী মানুষের কাছে এই বাইকের চাহিদা রয়েছে।
তবে ইলেকট্রিক বাইক কেনার আগে বেশ কিছু বিষয়ে সচেতন থাকা দরকার। এই বাইকগুলোর ভালো-মন্দ দিক, মেইনটেনেন্স, সার্ভিসিং, ইঞ্জিন পারফরম্যান্স, ব্যাটারি ডিউরেবিলিটি, স্থায়িত্ব, ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করা উচিত। এতে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ই-বাইকটি নির্বাচন করতে পারবেন। এই ব্লগে ইলেকট্রিক বাইক কেনার আগে যা জানা জরুরি, সে সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে বাংলাদেশে উপলব্ধ ইলেকট্রিক বাইক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ইলেকট্রিক বাইক কি
ইলেকট্রিক বাইক দেখতে জ্বালানি চালিত বাইকগুলোর মতোই। এই বাইকগুলোতে প্রপালশনের জন্য বৈদ্যুতিক মোটর ব্যবহার করা হয়। তাই বিদ্যুৎ চার্জ এই সব বাইকের মূল অনুষঙ্গ। জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হয় না। সাধারণ গ্রিপ থ্রোটল ব্যবহার করে এই বাইকগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই বাইকগুলোর স্পিড কিছুটা কম। তবে এভারেজ ৬০-৮০ কিমি মাইলেজ দিতে পারে। মূলত জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং সহজ কন্ট্রোলের কারণে এই বাইকগুলো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
ইলেকট্রিক বাইকের উপকারের পাশাপাশি কিছু দুর্বল দিকও রয়েছে। তাই এই বাইকগুলোর ভালো-মন্দ দিক সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকা উচিত।
ইলেকট্রিক বাইক কেনার আগে যা জানা জরুরি
ব্যাটারি পাওয়ার এবং চার্জ রেঞ্জ যাচাই করুন
উন্নত মানের ব্যাটারি ইলেকট্রিক বাইকের প্রধান এলিমেন্ট। ব্যাটারির পাওয়ার কত এম্পিয়ার (Ah) অথবা ওয়াট (Wh) জেনে নিন। উন্নত ব্যাটারি এক চার্জে ১০০ কিমি-এর বেশি পাড়ি দিতে পারে। ২৫০ ওয়াটের বাইক ফ্ল্যাট রোডে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য ভালো। ৫০০-৭০০ ওয়াটের বাইক অফরোডে চলাচলের উপযোগী। ৭৫০+ ওয়াটের বাইক হাইওয়ে রোডে চলাচলের উপযোগী। আপনার দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য কেমন ব্যাটারি পাওয়ারের বাইক প্রয়োজন তা বুঝুন। ব্যাটারি ফুল চার্জ হতে কেমন সময় লাগে এবং ওয়ারেন্টি পিরিয়ড কত মাস দেখে নিন।
বাইকের মোটর পাওয়ার কেমন যাচাই করুন
ইলেকট্রিক বাইকের মোটর পাওয়ার ২৫০ ওয়াট থেকে ১০০০ ওয়াট পর্যন্ত হয়। মোটর পাওয়ারফুল হলে বাইক থেকে বেশি স্পিড পাওয়া যায়। এছাড়াও ওভারঅল ভালো পারফরম্যান্সের জন্য পাওয়ারফুল মোটরের ইলেকট্রিক বাইক কেনাই ভালো। পাওয়ার কম হলে ঢালু রাস্তায় চলাচল করতে সমস্যা হবে।
সাসপেনশন সিস্টেম কেমন চেক করুন
সাসপেনশন সিস্টেম ভালো না হলে, আপনি রাইডিং-এর সময় কমফোর্ট পাবেন না। সাধারণত ইলেকট্রিক বাইকের সাসপেনশন রুক্ষ রাস্তায় চলাচলের উপযোগী হয় না। আপনার চলাচলের রাস্তা-ঘাটের অবস্থা কেমন সেই অনুযায়ী সাসপেনশন সেটআপ বেছে নিন। শক অ্যাবজর্বার সাসপেনশন হলে সব দিক থেকেই ভালো হবে। এছাড়াও বাইকের সিটিং পজিশন এবং হ্যান্ডেল গ্রিপ কেমন পরীক্ষা করুন।
বাইকের ওজন এবং কন্ট্রোল সিস্টেম কেমন বুঝুন
ইলেকট্রিক বাইকের ওজন সাধারণত কম হয়। তবে ব্যাটারি এবং ইঞ্জিন পাওয়ার বেশি হলে ওজন কিছুটা বেশি হয়। এই ওজন আপনার জন্য ভারসাম্যপূর্ণ কিনা তা যাচাই করুন। ইলেকট্রিক বাইকের ওজন অন্যান্য জ্বালানি চালিত বাইকের মতো সকল দিক থেকে ভারসাম্যপূর্ণ নয়। এসব বাইক থ্রটল সিস্টেমে কন্ট্রোল করা যায়। তাই থ্রটল গ্রিপ এবং থ্রটল সিস্টেম আপনার জন্য কম্ফোর্টেবল কিনা চেক করুন।
ব্রেকিং সিস্টেম চেক করুন
ইলেকট্রিক বাইকের ব্রেকিং সিস্টেমে ডিস্ক এবং ড্রাম ব্রেকের কম্বিনেশন থাকে। সাধারণ মানের গুলোতে শুধু ড্রাম ব্রেক থাকে, তবে আপনি ডিস্ক ব্রেক সেট করে আপগ্রেড করতে পারবেন। এসব বাইকে সাধারণত এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম (ABS) কিংবা কম্বাইন্ড ব্রেকিং সিস্টেম (CBS) ধরণের সেফটি সিস্টেম থাকে না।
লাইটিং সিস্টেম এবং কনসোল প্যানেল চেক করুন
এই সব বাইকে সাধারণ থেকে স্ট্যান্ডার্ড কোয়ালিটির লাইটিং সিস্টেম এবং ইন্ডিকেটর ব্যবহার করা হয়। আপনি প্রয়োজনে উন্নত কোয়ালিটির লাইটিং সিস্টেম ইন্সটল করতে পারবেন। এই বাইকগুলোর কনসোল প্যানেলে খুব বেশি ফিচার থাকে না। তবে প্রয়োজনীয় ফিচারগুলো এখানে পাবেন।
ওয়ারেন্টি, আফটার সেলস সার্ভিস এবং মেইনটেনেন্স কস্ট যাচাই করুন
বাইকের ব্যাটারি এবং মোটরের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড কত বছর দেখে নিন। এসব বাইকে নির্দিষ্ট সময় পর পর বেশ কিছু সার্ভিসিং করতে হয়। তাই সার্ভিসিং সেন্টারের অবস্থান এবং সেলস সার্ভিস কেমন যাচাই করুন। সাধারণ ই-বাইকের ওয়ারেন্টি ১-২ বছরের মধ্যে হয়।
ইলেক্ট্রিক বাইকের যেসব দুর্বল দিকের বিষয়ে মাথায় রাখবেন
(১) ইলেকট্রিক বাইকের ব্যাটারির দাম সব চেয়ে বেশি। ব্যাটারি নষ্ট বা ডাউন হয়ে গেলে আপনার বেশ কিছু খরচ হবে।
(২) এসব বাইক যেখানে সেখানে চার্জ দেয়া সম্ভব নয়। সব বাইকে রিমুভেবল ব্যাটারি থাকে না। এসব বিষয়ে চিন্তা করবেন।
(৩) এভারেজ স্পিড ৫০-৭০ কিমি-এর মধ্যে।
(৪) রেগুলার ব্যবহার করলে, ২-৩ বছর পর পর মোটর চেঞ্জ করতে হয়।
(৫) এসব বাইকের ভরকেন্দ্র পিছনের দিকে থাকে, তাই রাইডিং কম্ফোর্টেবল নাও লাগতে পারে।
(৬) দীর্ঘক্ষণ চালালে মোটর গরম বা ব্রেকডাউনের মতো সমস্যা হতে পারে।
(৭) অথোরাইজড সার্ভিসিং পয়েন্ট এভেইলেবল নয়।
(৮) হাইওয়ে রোডে চলাচলের উপযোগী নয়।
ইলেকট্রিক বাইক প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে। ভবিষ্যতের বাহনগুলো বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল হবে। এখন বাংলাদেশেও উন্নত মানের ইলেকট্রিক বাইক আমদানি এবং এসেম্বল হচ্ছে। সব বয়সী এবং সকল পেশাজীবী মানুষদের মধ্যে এসব বাইকের চাহিদা তৈরী হয়েছে। এছাড়াও লাইসেন্স লাগে না, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ নামমাত্র।
কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা
বাইকের ব্যাটারি, মোটর পাওয়ার, চার্জিং টাইম, সাসপেনশন, মাইলেজ, ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন।
এসব বাইক থেকে আপনি ৬০-৮০ কিমি এভারেজ পেতে পারেন। হাই কনফিগারেশন বাইক থেকে ১২০ কিমি পর্যন্ত মাইলেজ পাবেন।
৪-৬ ঘন্টা লাগে ফুল চার্জ হতে।
স্ট্যান্ডার্ড কোয়ালিটির একটি বাইকের ব্যাটারি লাইফ ৪-৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
ইলেকট্রিক বাইক সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব।