ব্যবহৃত এসি কেনার আগে ১০ টি খেয়াল রাখার বিষয় নিয়ে আলোচনা
গরমে স্বস্তির অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো এয়ার কন্ডিশনার বা এসি। তবে নতুন এসি কেনার খরচ অনেক সময় সবার সাধ্যের বাইরে চলে যায়। তাই বাজেটবান্ধব সমাধান হিসেবে ব্যবহৃত এসি কেনার দিকে ঝোঁক বাড়ছে। তবে ব্যবহৃত এসি কিনতে গিয়ে সঠিকভাবে যাচাই না করলে আপনাকে পরে পোহাতে হতে পারে নানা ভোগান্তি। পুরানো মডেলের এসি হলে হয়তো মেশিনটি হয়তো ঠিকমতো কাজ করবে না, কিংবা অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ করবে। এই সমস্যাগুলো এড়ানোর জন্য কিছু বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি। আজকে আমরা আপনাকে জানাবো ব্যবহৃত এসি কেনার আগে যেসব বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। এই নির্দেশনাগুলো মেনে চললে আপনি নিরাপদ এবং টেকসই পণ্য কিনতে পারবেন, যা আপনার বাজেটেও মানানসই হবে।
১. এসির অবস্থা ভালোভাবে যাচাই করুন
ব্যবহৃত এসি কেনার আগে সেটির বর্তমান অবস্থা ভালোভাবে পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। প্রথমেই কম্প্রেসর, ফ্যান এবং কুলিং সিস্টেম ভালোভাবে কাজ করছে কিনা তা দেখে নিন। কুলিং সিস্টেমে কোনও ত্রুটি থাকলে সেটি পর্যাপ্ত শীতলতা দিতে ব্যর্থ হতে পারে। এছাড়াও এসি থেকে কোনও অস্বাভাবিক শব্দ হচ্ছে কিনা বা কোনও অংশ থেকে গ্যাস বা পানি লিক করছে কিনা তা খেয়াল করুন। লিকেজ বা শব্দের মতো সমস্যা থাকলে মেরামতের জন্য অতিরিক্ত খরচ হতে পারে। এইসব ত্রুটি চিহ্নিত করতে পেশাদার টেকনিশিয়ানের সাহায্য নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
২. এসি-এর ব্র্যান্ড এবং মডেল যাচাই করুন
ব্যবহৃত এসি কেনার সময় ব্র্যান্ড এবং মডেলের দিকে বিশেষ নজর দিন। পরিচিত এবং বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডের এসি বেছে নিন, কারণ এসব ব্র্যান্ডের যন্ত্রাংশ সহজলভ্য এবং সার্ভিসিং সুবিধা পাওয়া যায়। মডেলটি কত বছরের পুরানো তা যাচাই করুন। কারণ পুরানো মডেলের এসির খুচরা যন্ত্রাংশ অনেক সময় বাজারে পাওয়া যায় না, যা ভবিষ্যতে রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। নতুন বা তুলনামূলকভাবে কম পুরানো মডেল বেছে নেওয়া সবসময়ই ভালো।
৩. বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের রেটিং (Energy Efficiency Ratio – EER) দেখুন
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এসি কেনা আপনার দীর্ঘমেয়াদী খরচ কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এসির বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষমতা বুঝতে EER বা Energy Efficiency Ratio চেক করুন। ৫ স্টার রেটিংযুক্ত এসি সাধারণত বিদ্যুৎ খরচ কমায়। এটি শুধুমাত্র আপনার মাসিক বিদ্যুৎ বিল হ্রাস করবে না, পরিবেশের সাথেও মানানসই হবে। কম রেটিংযুক্ত এসি কেনার লোভে পড়বেন না, কারণ এর ফলে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ খরচের বোঝা বেড়ে যাবে।
৪. এসি ব্যবহারের ইতিহাস জানুন
পূর্বের মালিক এসি কীভাবে ব্যবহার করেছেন, এটি জানার চেষ্টা করুন। এসি কি নিয়মিত পরিষ্কার করা হতো? মেইনটেনেন্স ঠিকমতো করা হয়েছে কি না? এসব প্রশ্নের উত্তর আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। যদি মেইনটেনেন্স ঠিকমতো করা না হয়ে থাকে, তাহলে এসি সহজেই নষ্ট হতে পারে। এছাড়া জেনে নিন, এটি কতদিন ধরে ব্যবহৃত হয়েছে এবং কেন বিক্রি করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ব্যবহৃত এসি নিলে তার কর্মক্ষমতা নিয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
৫. ওয়ারেন্টি এবং বিক্রেতার গ্যারান্টি খুঁজুন
অনেক সময় ব্যবহৃত এসি-তেও কিছুদিনের জন্য ওয়ারেন্টি দেওয়া হয়। তাই কেনার আগে এটি যাচাই করে নিন। ওয়ারেন্টি থাকলে পণ্যটি নিয়ে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে। বিক্রেতা কি রিপেয়ার বা এক্সচেঞ্জের কোনও সুবিধা দিচ্ছেন? যদি বিক্রেতা কোনও নিশ্চয়তা দেয়, তাহলে সেটি অবশ্যই বিবেচনায় রাখুন। অনলাইনে কেনাকাটা করলে বিক্রেতার রিভিউ এবং রেটিং যাচাই করা জরুরি।
৬. এসির ইনস্টলেশন ব্যবস্থা
ব্যবহৃত এসি কেনার পর এর এসি ইনস্টলেশন নিয়ে অনেক সময় জটিলতা দেখা দেয়। কেনার আগে নিশ্চিত করুন, ইনস্টলেশন করার জন্য কোনও অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ বা ফিটিং প্রয়োজন কি না। অনেক সময় পুরানো এসির ক্ষেত্রে স্ট্যান্ড, পাইপ বা ইনস্টলেশনের অন্যান্য উপকরণ ক্ষতিগ্রস্ত থাকে বা অনুপস্থিত থাকে। এছাড়া ইনস্টলেশনের খরচ এবং পদ্ধতি সম্পর্কে বিক্রেতার কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে নিন। কিছু বিক্রেতা ইনস্টলেশন সেবা বিনামূল্যে প্রদান করে, আবার কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে আলাদাভাবে এর জন্য খরচ করতে হতে পারে। তাই এসি ইনস্টলেশন সংক্রান্ত বিষয়টি পরিষ্কার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৭. এসির কুলিং ক্ষমতা (Cooling Capacity) যাচাই করুন
একটি এসি কেনার সময় এটি আপনার ঘরের জন্য যথাযথ শীতলতা প্রদান করতে পারবে কিনা তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এসির কুলিং ক্ষমতা পরিমাপ করা হয় BTU (British Thermal Unit) দিয়ে। BTU এর মান যত বেশি, এসি তত বড় স্থান ঠাণ্ডা করতে সক্ষম। আপনার ঘরের মাপ অনুযায়ী এসি বেছে নিন। উদাহরণস্বরূপ, একটি ছোট ঘরের জন্য নিম্ন BTU যুক্ত এসি যথেষ্ট হতে পারে, কিন্তু বড় ঘরের জন্য উচ্চ BTU যুক্ত এসি প্রয়োজন। সঠিক কুলিং ক্ষমতা না থাকলে এসি পর্যাপ্ত শীতলতা দিতে ব্যর্থ হবে এবং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হবে।
৮. এসির দাম এবং বাজার মূল্য তুলনা করুন
ব্যবহৃত এসি কেনার সময় এর দাম এবং বাজার মূল্য যাচাই করা জরুরি। সাধারণত ব্যবহৃত এসির দাম নতুন এসির তুলনায় অনেক কম হয়। তবে দাম কম হওয়ার মানে এই নয় যে সেটি সস্তা মানের হবে। বিভিন্ন বিক্রেতার কাছ থেকে দাম তুলনা করুন এবং সবচেয়ে সাশ্রয়ী এবং মানসম্মত বিকল্পটি বেছে নিন। আপনি চাইলে বিক্রয়ের মতো অনলাইন মার্কেটপ্লেস এবং স্থানীয় দোকান উভয় জায়গা থেকে দাম সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। তবে অতিরিক্ত কম দামের প্রলোভনে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকুন।
৯. যন্ত্রাংশ এবং সার্ভিসিং সুবিধা নিশ্চিত করুন
ব্যবহৃত এসি কেনার আগে নিশ্চিত করুন যে এর যন্ত্রাংশ বাজারে সহজলভ্য। অনেক পুরানো মডেলের এসির ক্ষেত্রে যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় না, যা ভবিষ্যতে মেরামতের সময় বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। এছাড়া এসির সার্ভিসিং সুবিধা সম্পর্কে জেনে নিন। যদি আপনার এলাকায় নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের সার্ভিস সেন্টার না থাকে, তবে সেটি মেরামত করাতে অসুবিধা হতে পারে। সার্ভিসিং খরচও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিছু এসি ব্র্যান্ডের সার্ভিসিং খরচ কম হলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল হতে পারে।
১০. ডকুমেন্টেশন এবং লেনদেন নিশ্চিত করুন
ব্যবহৃত এসি কেনার সময় সব ধরণের ডকুমেন্ট ঠিকমতো গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিক্রেতার কাছ থেকে পণ্যের মালিকানা এবং ক্রয়ের রশিদ নিশ্চিত করুন। ডকুমেন্টেশনে এসির মডেল নাম্বার, সিরিয়াল নাম্বার এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য উল্লেখ থাকা উচিত। এটি ভবিষ্যতে প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে এবং কোনও সমস্যা দেখা দিলে আপনি সহজেই সমাধান পেতে পারবেন।
ব্যবহৃত এসি কেনার আগে সতর্কতার সাথে কিছু বিষয় খেয়াল করলে আপনি টেকসই এবং কার্যকর পণ্য কিনতে পারবেন। এটি শুধু আপনার খরচ কমাবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে আরামের নিশ্চয়তা দেবে।