ব্যবহৃত ক্যামেরা কেনার আগে যে বিষয়গুলো মনে রাখা জরুরি

নতুন ক্যামেরার তুলনায় অনেকেই ব্যবহৃত ক্যামেরা কিনতে বেশি আগ্রহী, কারণ এতে কম বাজেটে ভালো মানের ডিএসএলআর বা মিররলেস ক্যামেরা কেনা সম্ভব। এর প্রধান কারণ হলো কম বাজেটে ভালো মানের ডিএসএলআর ক্যামেরা বা মিররলেস ক্যামেরা কেনার সুযোগ। নতুন ক্যামেরার দাম বেশ চড়া, আর প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি শুরু করতে গেলে একেবারে নতুন ক্যামেরায় বিনিয়োগ করা অনেকের জন্য কঠিন হতে পারে। তাই ক্যামেরা মার্কেট ঘেঁটে ভালো কন্ডিশনের ব্যবহৃত ক্যামেরা কেনা অনেক সময় স্মার্ট সিদ্ধান্ত হতে পারে।
তবে ব্যবহৃত ক্যামেরা কেনার আগে কিছু বিষয় যাচাই করা খুব জরুরি। চলুন জেনে নিই, ব্যবহৃত ক্যামেরা কেনার টিপস, যা আপনার ক্যামেরা কেনার অভিজ্ঞতাকে সহজ করবে-
১. ক্যামেরার অবস্থা যাচাই করুন
ব্যবহৃত ক্যামেরা কেনার সময় প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ক্যামেরার বডি ও কার্যক্ষমতার অবস্থা ভালোভাবে দেখা।
- সেন্সর ও লেন্স পরীক্ষা করুন
সেন্সর নষ্ট থাকলে বা লেন্সে দাগ থাকলে ছবির মান নষ্ট হতে পারে। ক্যামেরার সেন্সরে কোনো দাগ বা স্ক্র্যাচ আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে ক্যামেরা চালু করে কিছু টেস্ট শট নিন এবং ভালোভাবে জুম করে দেখুন।
- বাইরের শরীরের অবস্থা
ব্যবহৃত ক্যামেরার শরীরে ছোটখাটো দাগ বা স্ক্র্যাচ থাকলে তেমন সমস্যা নেই, কিন্তু যদি ক্যামেরার বডি ফাটা বা ভাঙা থাকে, তাহলে সেটি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
- শাটার কাউন্ট চেক করুন
একটি ক্যামেরার মেকানিক্যাল শাটার মোট কতবার অ্যাক্টিভেট করা হয়েছে, তাই হলো শাটার কাউন্ট। ডিএসএলআর ক্যামেরার শাটারের নির্দিষ্ট একটি লাইফস্প্যান থাকে যেমন ১ লাখ বা ২ লাখ শাটার ক্লিক। শাটার কাউন্ট বেশি থাকলে বুঝতে হবে ক্যামেরাটি অনেক বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। আপনি অনলাইনে কিছু টুল দিয়ে খুব সহজেই শাটার কাউন্ট চেক করতে পারেন।
২. ক্যামেরার ফিচার ও মডেল যাচাই
শুধু দাম কম দেখে ক্যামেরা কেনা ঠিক হবে না, কারণ আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ক্যামেরার ফিচার থাকতে হবে। তাই-
- আপনার প্রয়োজনীয় ফিচার আছে কিনা দেখুন
আপনি যদি ভিডিওগ্রাফি করতে চান, তাহলে 4K ভিডিও সাপোর্ট, ভালো অটোফোকাস এবং স্ট্যাবিলাইজেশন দরকার। আর যদি শুধু ফটোগ্রাফির জন্য কেনেন, তাহলে ক্যামেরার ISO রেঞ্জ, মেগাপিক্সেল এবং ডায়নামিক রেঞ্জ কেমন, তা দেখে নিন।
- মডেল ও ব্র্যান্ডের উপর নির্ভরশীলতা
নতুন ক্যামেরার মডেল আসার পর পুরোনো মডেলের দাম কমে যায়, তাই বাজারে কোন কোন ব্যবহৃত ক্যামেরা ভালো অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে, সেটি বুঝতে হবে। ক্যামেরার মডেল এবং ব্র্যান্ড অনুযায়ী পারফরম্যান্সের পার্থক্য হয়। ক্যামেরার বাজার ঘেঁটে দেখুন কোন মডেলগুলো বেশি জনপ্রিয় এবং কোনটি দীর্ঘদিন টেকে।
৩. ব্যাটারি ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র পরীক্ষা করুন
ব্যবহৃত ক্যামেরা কিনতে গেলে ব্যাটারি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ঠিক আছে কিনা, তা চেক করাটা খুব দরকার। কারণ ক্যামেরার পারফরম্যান্সের সাথে ব্যাটারির অবস্থা সরাসরি সম্পর্কিত।
- ব্যাটারির স্থায়িত্ব ও চার্জ ধরে রাখার ক্ষমতা
ব্যবহৃত ক্যামেরার ব্যাটারি অনেক সময় পুরনো হয়ে যায় এবং চার্জ ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়। তাই ক্যামেরা চালু করে কিছুক্ষণ ব্যবহার করে দেখুন, ব্যাটারি দ্রুত ড্রেন হয় কিনা। সম্ভব হলে বিক্রেতার কাছ থেকে ব্যাটারির অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
- চার্জার, ব্যাগ, মেমোরি কার্ডসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিস
ক্যামেরার সাথে চার্জার, ব্যাগ, মেমোরি কার্ড, অতিরিক্ত ব্যাটারি বা লেন্স ক্যাপ থাকলে সেটা অবশ্যই একটি ভালো ডিল। কিন্তু এগুলো না থাকলে পরে কিনতে গেলে আলাদা খরচ হয়ে যাবে। তাই আগে থেকেই নিশ্চিত হয়ে নিন, যা যা দরকার তা ক্যামেরার সাথে দেওয়া হচ্ছে কিনা।
৪. ক্যামেরার দাম ও বাজার যাচাই করুন
ব্যবহৃত ক্যামেরা কেনার আগে বাজার যাচাই করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অনেক সময় কিছু বিক্রেতা অযৌক্তিক দাম চেয়ে বসেন। তাই ক্যামেরা মার্কেট সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- বাজারে বর্তমান মূল্য যাচাই করুন
অনলাইনে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস (যেমন Bikroy, Facebook Marketplace) দেখে নিন, আপনার পছন্দের ব্যবহৃত ক্যামেরার বর্তমান দাম কত চলছে। একই মডেলের নতুন ক্যামেরার দামও দেখে নিন, যাতে বুঝতে পারেন ব্যবহৃত ক্যামেরাটির দাম ঠিকঠাক রাখা হয়েছে কিনা।
- অতিরিক্ত দামে প্রতারিত হওয়ার হাত থেকে বাঁচার উপায়
কিছু বিক্রেতা ক্যামেরার আসল অবস্থা লুকিয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে চান। তাই দাম যদি সন্দেহজনকভাবে বেশি মনে হয়, তাহলে অন্যান্য বিক্রেতার কাছেও জিজ্ঞেস করুন। এছাড়া, যদি সম্ভব হয়, কোনো অভিজ্ঞ বন্ধু বা পরিচিত ফটোগ্রাফারের সাহায্য নিন।
৫. বিশ্বস্ত বিক্রেতা বা সোর্স থেকে কেনা
ক্যামেরার দাম ভালো পেলেও ভুল বিক্রেতার কাছ থেকে কিনলে বিপদে পড়তে পারেন। তাই কেনার আগে অবশ্যই যাচাই করুন যে বিক্রেতা কতটা বিশ্বস্ত।
৫. বিশ্বস্ত বিক্রেতা বা সোর্স থেকে কেনা
ক্যামেরার দাম ভালো পেলেও ভুল বিক্রেতার কাছ থেকে কিনলে বিপদে পড়তে পারেন। তাই কেনার আগে অবশ্যই যাচাই করুন যে বিক্রেতা কতটা বিশ্বস্ত।
- রিটেইলার, অনলাইন মার্কেটপ্লেস, বা ব্যক্তিগত বিক্রেতা থেকে কেনার ক্ষেত্রে সতর্কতা
- দোকান থেকে কিনলে রিসিট এবং ওয়ারেন্টি চেয়ে নিন।
- অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ব্যবহৃত ক্যামেরা কিনতে গেলে বিক্রেতার রেটিং ও রিভিউ দেখুন।
- পরিচিত বা অভিজ্ঞ কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে ক্যামেরা কিনতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।
- রিটার্ন পলিসি ও ওয়ারেন্টি সুবিধা আছে কিনা দেখুন
কিছু দোকান বা বিক্রেতা ব্যবহৃত ক্যামেরার ক্ষেত্রে সীমিত সময়ের জন্য ওয়ারেন্টি দেয়। এটি থাকলে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করে দেখা যায়। আর রিটার্ন পলিসি থাকলে যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে ক্যামেরা ফেরত দিতে পারবেন। তাই এগুলো আগে থেকেই যাচাই করে নিন।
ব্যবহৃত ক্যামেরা কেনা অবশ্যই ভালো একটি সিদ্ধান্ত হতে পারে, কিন্তু সেটা যদি যাচাই-বাছাই না করে করা হয়, তাহলে ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ধৈর্য ধরে ক্যামেরা মার্কেট ঘেঁটে সেরা ডিলটি বের করুন। একটা ভালো ডিএসএলআর ক্যামেরা বা মিররলেস ক্যামেরা পাওয়া মানেই শুধু কম দাম নয়, সেটার পারফরম্যান্স, ব্যাটারি, আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র এবং বিক্রেতার বিশ্বাসযোগ্যতা সবকিছু মিলিয়ে দেখা দরকার। সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে আশা করি আপনি আপনার বাজেটের মধ্যে একটি দুর্দান্ত ক্যামেরা কিনতে পারবেন!
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. ব্যবহৃত ক্যামেরা কেনার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী?
ব্যবহৃত ক্যামেরা কেনার সময় ক্যামেরার শারীরিক অবস্থা, সেন্সর, লেন্স, শাটার কাউন্ট, ব্যাটারি লাইফ, এবং ফিচার ভালোভাবে পরীক্ষা করা উচিত।
২. শাটার কাউন্ট কেন গুরুত্বপূর্ণ?
শাটার কাউন্ট দেখায় ক্যামেরাটি কতবার ব্যবহার হয়েছে। ক্যামেরার শাটারের নির্দিষ্ট একটি লাইফস্প্যান থাকে, তাই বেশি শাটার কাউন্ট থাকলে ক্যামেরার স্থায়িত্ব কমতে পারে।
৩. ব্যবহৃত ক্যামেরার দাম কীভাবে যাচাই করবো?
অনলাইনে Bikroy, Facebook Marketplace এর মতো মার্কেটপ্লেস ঘেঁটে একই মডেলের ব্যবহৃত ক্যামেরার দাম দেখুন এবং নতুন ক্যামেরার দামও যাচাই করুন, যাতে তুলনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
৪. অনলাইনে ব্যবহৃত ক্যামেরা কেনার ক্ষেত্রে কী সতর্কতা নেওয়া উচিত?
বিক্রেতার রেটিং ও রিভিউ চেক করুন, ক্যামেরার অরিজিনাল ছবি দেখতে বলুন, ভিডিও কলের মাধ্যমে লাইভ টেস্ট করতে বলুন, এবং যদি সম্ভব হয়, হাতে পেয়ে ক্যামেরা চেক করার সুযোগ থাকলে তবেই লেনদেন করুন।
৫. ব্যবহৃত ক্যামেরার জন্য ওয়ারেন্টি পাওয়া যায় কি?
কিছু নির্ভরযোগ্য দোকান বা বিক্রেতা সীমিত সময়ের ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকে, যা ক্যামেরাটি নিরাপদে ব্যবহার করার সুযোগ দেয়। কেনার আগে বিক্রেতার কাছ থেকে ওয়ারেন্টি বা রিটার্ন পলিসি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।