এসি কেনার আগে যে ৫টি বিষয় অবশ্যই বিবেচনা করবেন

এসি (এয়ার কন্ডিশনার) এখন শুধু বিলাসবহুল নয়, বরং গরম আবহাওয়ায় একটি অত্যাবশ্যকীয় ইলেকট্রনিক পণ্য হয়ে উঠেছে। তবে একটি এসি কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন, যাতে এটি আপনার প্রয়োজন মেটাতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে ভালো পারফরম্যান্স দেয়। আজকের এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো এসি কেনার আগে যে ৫টি বিষয় অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত।
১। এসির ধরণ নির্বাচন করুন (Split, Window, Portable)
বাজারে বিভিন্ন ধরণের এসি পাওয়া যায়, তবে কোনটি আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে তা নির্ভর করে আপনার প্রয়োজন ও ঘরের অবস্থানের উপর।
Split AC (স্প্লিট এসি)
- ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট না করে ইনডোর ইউনিট ও আউটডোর ইউনিটের মাধ্যমে ঠান্ডা বাতাস সরবরাহ করে।
- শক্তিশালী কুলিং ক্ষমতা এবং কম শব্দ করে।
- উচ্চ মূল্যের হলেও দীর্ঘমেয়াদে ভালো পারফরম্যান্স দেয়।
Window AC (উইন্ডো এসি)
- একক ইউনিটের এসি যা জানালায় ইনস্টল করা হয়।
- তুলনামূলকভাবে সস্তা, তবে ইনস্টলেশন ঝামেলাপূর্ণ।
- ছোট ঘরের জন্য ভালো, তবে শব্দ বেশি হয়।
Portable AC (পোর্টেবল এসি)
- সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়া যায়, স্থায়ী ইনস্টলেশনের দরকার হয় না।
- ছোট রুম বা ভাড়া বাসার জন্য উপজোগী।
- দীর্ঘমেয়াদে কার্যকারিতা তুলনামূলক কম।
টিপঃ সঠিক এসি নির্বাচন করতে আপনার রুমের আকার, স্থাপনার সুবিধা এবং বাজেট বিবেচনা করুন।
২। রুমের আকার অনুযায়ী এসির ক্ষমতা (BTU রেটিং)
একটি এসির ক্ষমতা BTU (British Thermal Unit) দ্বারা পরিমাপ করা হয়। এটি বোঝায় এসি প্রতি ঘন্টায় কতটা তাপ অপসারণ করতে পারে।
কোন রুমের জন্য কত BTU দরকার?
রুমের আকার (বর্গফুট) | প্রস্তাবিত BTU |
১০০-১৫০ | ৫০০০-৬০০০ |
১৫০-২৫০ | ৭০০০-৮০০০ |
২৫০-৩৫০ | ৯০০০-১০০০০ |
৩৫০-৪৫০ | ১২০০০ |
৪৫০-৫৫০ | ১৪০০০ |
৫৫০+ | ১৮০০০+ |
- যদি রুমে প্রচুর সূর্যের আলো প্রবেশ করে, তাহলে ১০-১৫% বেশি BTU নিন।
- যদি রুমে ৩-৪ জনের বেশি থাকে, তবে অতিরিক্ত ১০০০ BTU প্রয়োজন হবে।
টিপঃ সঠিক ক্ষমতার এসি না হলে বিদ্যুৎ খরচ বাড়বে ও কুলিং কম হবে।
৩। ইনভার্টার ও নন-ইনভার্টার এসি, কোনটি ভালো?
বর্তমানে বাজারে ইনভার্টার ও নন-ইনভার্টার এসি পাওয়া যায়। তবে কোনটি আপনার জন্য ভালো হবে?
ইনভার্টার এসিঃ
- বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী (৪০-৫০% কম বিদ্যুৎ খরচ হয়)।
- কম শব্দ করে এবং দীর্ঘস্থায়ী।
- ধীরে ধীরে কুলিং করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
নন-ইনভার্টার এসিঃ
- অন-অফ মেকানিজমের কারণে বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়।
- দীর্ঘমেয়াদে কম কার্যকর।
- মূল্য কম, তাই বাজেটের মধ্যে কিনতে সুবিধা।
টিপঃ যদি আপনি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে চান, তবে ইনভার্টার এসি ভালো বিকল্প।
৪। বিদ্যুৎ খরচ ও এনার্জি এফিশিয়েন্সি রেটিং (EER)
বিদ্যুৎ বিল কম রাখতে এনার্জি এফিশিয়েন্সি রেটিং (EER) চেক করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
EER স্কোর দেখে কীভাবে বুঝবেন কোন এসি ভালো?
EER রেটিং | বিদ্যুৎ সাশ্রয় ক্ষমতা |
৮-১০ | গড় মানের |
১০-১২ | ভালো মানের |
১২+ | অত্যন্ত ভালো মানের |
- যত বেশি EER রেটিং হবে, তত কম বিদ্যুৎ বিল আসবে।
- স্টার রেটিং (***/****/*****) দেখে এসি কিনুন।
- ইনভার্টার এসিগুলোতে উচ্চ EER থাকে।
টিপঃ সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ খরচের জন্য ৪ বা ৫ স্টার রেটিং দেখে এসি কিনুন।
৫। ব্র্যান্ড ও বিক্রয়োত্তর সেবা (After-Sales Service)
একটি ভালো ব্র্যান্ডের এসি কেনা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে দীর্ঘমেয়াদে কম সমস্যা হয় এবং ভালো বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় এসি ব্র্যান্ডসমূহঃ
- General – দীর্ঘস্থায়ী, কিন্তু দাম বেশি।
- LG – উন্নত প্রযুক্তি, এনার্জি এফিশিয়েন্ট।
- Samsung – ইনভার্টার ও স্মার্ট ফিচার সমৃদ্ধ।
- Gree – চীনা ব্র্যান্ড, ভালো কুলিং ও এনার্জি এফিশিয়েন্ট।
- Walton – দেশীয় ব্র্যান্ড, তুলনামূলক সাশ্রয়ী।
টিপঃ কোন ব্র্যান্ড বেছে নিবেন তা ঠিক করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করুন-
- ওয়ারেন্টি ও বিক্রয়োত্তর সেবা ভালো কিনা চেক করুন।
- স্পেয়ার পার্টস সহজে পাওয়া যায় কি না দেখুন।
- টেকনিশিয়ান সার্ভিস দ্রুত পাওয়া যায় কি না নিশ্চিত করুন।
উপসংহার
একটি এসি কেনা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ, তাই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। যদি আপনি রুমের আকার, ইনভার্টার বা নন-ইনভার্টার, বিদ্যুৎ খরচ, ব্র্যান্ড ও বিক্রয়োত্তর সেবা বিবেচনা করেন, তাহলে সহজেই একটি ভালো এসি কিনতে পারবেন।