বাংলাদেশে পুরনো সাইকেল কেনা: টিপস ও কোন বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা জরুরি

সাইকেল দৈনন্দিন যাতায়াতের জন্য খুবই উপকারী এক বাহন। সাইকেল যাতায়াত খরচ কমায় এবং শরীর ফিট রাখতে সাহায্য করে। সাইকেল দীর্ঘ সময় ব্যবহার করা যায়, দামেও সাশ্রয়ী, তাই অনেকেই সেকেন্ডহ্যান্ড কিংবা পুরনো সাইকেল কেনার দিকে ঝুঁকেন। তবে পুরনো সাইকেল কেনার আগে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ, যা আপনাকে বাড়তি খরচ এবং বিভিন্ন ঝামেলা থেকে বাঁচাতে পারে। কারণ, সাইকেল কেনার সিদ্ধান্তটি সাধারণত প্রয়োজনের তাগিদেই নেওয়া হয়।
বাংলাদেশে পুরনো সাইকেল কেনা কিছুটা কঠিন কাজ মনে হতে পারে। কারণ এখানে ব্যবহৃত কিংবা পুরনো সাইকেল মার্কেট কিংবা এরকম উপযুক্ত বাজার নেই বললেই চলে। তাই পুরনো বা সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেল কেনার আগে বাজার যাচাই, সাইকেলের অবস্থা, মূল্য, এবং রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত। এই ব্লগে পুরনো সাইকেল কেনার টিপস ও কোন বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা জরুরি, সেসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যায়, এই টিপসগুলো আপনাকে পছন্দসই একটি ভাল ও টেকসই সাইকেল পেতে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশে পুরনো সাইকেল কেনার টিপস
(১) সাইকেলের ফ্রেম এবং স্ট্রাকচার ভালোভাবে পরীক্ষা করুন
সাইকেলের ফ্রেম, স্ট্রাকচার এবং জয়েন্টগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করুন। ফ্রেমে ফাটল আছে কিনা, স্ট্রাকচারে কোনো ঝালাই আছে কিনা, বাঁকা হয়েছে কিনা, জয়েন্টগুলো মজবুত আছে কিনা, ইত্যাদি দেখে নিন। স্টিল স্ট্রাকচারে মরিচা ধরেছে কি না এবং ডেন্ট বা রঙ উঠে গেছে কিনা খেয়াল করুন। হালকা স্ক্র্যাচ স্বাভাবিক, তবে স্ট্রাকচারে দুর্বলতা থাকা যাবে না।
(২) ব্রেক এবং সাসপেনশন ভালোভাবে পরীক্ষা করুন
ব্রেক লিভারগুলো চেপে দেখুন সব ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা। কেবলগুলো ঠিকঠাক রেসপন্স করছে কিনা চেক করুন। প্যাডগুলো পরীক্ষা করে দেখুন কোনো পুরু আস্তরণ পড়েছে কিনা। ব্রেক প্যাড ক্ষয় হয়ে গেলে সেটা বদলাতে হবে। সাসপেনশনটি ভালোভাবে চেক করে দেখুন। সাসপেনশন জয়েন্ট নড়বড়ে হয়ে গেলে, রিপেয়ার করতে হবে।
(৩) ড্রাইভট্রেন চেক করুন
সাইকেলের ড্রাইভট্রেন অর্থাৎ চেইন, গিয়ার এবং ক্র্যাঙ্কসেট ভালো ভাবে পরীক্ষা করুন। এগুলো রেগুলার পরিষ্কার না রাখলে মরিচা এবং ময়লা জমে যায়। গিয়ার ঠিকভাবে শিফট হচ্ছে কি না দেখে নিন। ডিস্ক ব্রেক, চেইন, ক্যাসেট, এবং ডেরেইলিউর ক্ষয়ে গেছে কিনা দেখুন।
(৪) টায়ার এবং চাকা চেক করুন
টায়ার ক্ষয় হয়েছে কিনা, ফেটে গেছে কিনা, পেরেক ফুটেছে কিনা, ইত্যাদি খেয়াল করুন। চাকায় কোনো জড়তা আছে কিনা পরীক্ষা করুন। টিউবে বাতাস কমে যায় কি না পরীক্ষা করুন। রিমে কোনো ক্র্যাক আছে কি না দেখে নিন। টায়ার এবং চাকা পরিবর্তন করতে বেশ কিছু খরচ হতে পারে।
(৫) হ্যান্ডেলবার এবং সিটিং পজিশন দেখে নিন
সাইকেলের হ্যান্ডেলবার এবং সিটিং পজিশন আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যাডজাস্ট করে নিন। অ্যাডজাস্ট করা না গেলে, তা আপনার জন্য কম্ফোর্টেবল হবে না। কোন কিছু নড়বড়ে কি না খেয়াল করুন। এছাড়াও হ্যান্ডেলবারের গ্রিপ এবং প্যাডেল, স্লিপ করে কি না পরীক্ষা করুন।
(৬) অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে খোঁজ রাখুন
বিভিন্ন ফেসবুক ফোরাম, Bikroy এবং লোকাল বাইসাইকেল গ্রুপ গুলোতে খোঁজ রাখুন। এই প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে, বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে, যাচাই বাছাই এবং দরদাম করে পুরনো কিংবা সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেল কিনতে পারবেন।
পুরনো সাইকেল কেনার আগে যে বিষয়গুলোতে লক্ষ্য রাখা জরুরি
(১) আপনার প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যবহারের ধরণ বিবেচনা করুন
আপনার কেন এবং কি ধরণের সাইকেল দরকার তা বিবেচনা করুন। দৈনন্দিন ব্যবহার, এক্সারসাইজ, অফ-রোড ইত্যাদি বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন সাইকেল বাজারে পাওয়া যায়। যেমন – রোড বাইক, হাইব্রিড, মাউন্টেন বাইক ইত্যাদি। ব্যবহার, দূরত্ব, এবং রাস্তার অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত সাইকেল নির্বাচন করুন।
(২) বাজেট অনুযায়ী সাইকেল নির্বাচন করুন
পুরনো সাইকেল কম দামেই পাবেন, তবে সেটিও আপনার বাজেটের মধ্যে হওয়া দরকার। নামী ব্র্যান্ডের সাইকেলের দাম খুব একটা কমে না। তবে সাধারণ মডেলের বাইক বেশ কম দামেই পেতে পারেন। কেনার আগে বাজার যাচাই করুন।
(৩) সাইকেলের প্রকৃত মালিকানা এবং কাগজপত্র যাচাই করুন
ব্যবহৃত সাইকেল হলে প্রকৃত মালিকানা যাচাই করা উচিত। নিশ্চিত হওয়া উচিত যে এটি চুরি হওয়া নয়। সাইকেলের মূল রশিদ পাওয়া না গেলে, অবশ্যই বিক্রেতার ছবি বা যেকোনো প্রমান রাখবেন।
(৪) সাইকেল চালিয়ে পরীক্ষা করুন
কেনার আগে অবশ্যই সাইকেল চালিয়ে পরীক্ষা করুন। এতে হ্যান্ডেলিং, ব্রেক, গিয়ার, কন্ট্রোল, ব্যালান্স, ইত্যাদি সবকিছু আপনার জন্য সুইটেবল কিনা বুঝতে পারবেন। এছাড়া বেল, লক, মাডগার্ড, কিকস্ট্যান্ড, বিয়ারিং, ইত্যাদি ঠিকঠাক আছে কিনা চেক করুন।
(৫) সাইকেলের দর কষাকষি করুন এবং দাম যাচাই করুন
সাইকেলের কন্ডিশন বুঝে দর কষাকষি করুন। বাজারে একই ধরণের নতুন ও পুরনো সাইকেলের দাম যাচাই করুন। পুরনো সাইকেলের দাম যাচাই করতে Bikroy, ফেসবুক ইত্যাদি অনলাইন মার্কেটপ্লেসের সহায়তা নিতে পারেন। দরদাম করার সময় সার্ভিসিং এবং মেরামত খরচের বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন।
এছাড়াও বিক্রেতার কাছে সাইকেলের ভালো-মন্দ সম্পর্কে ধারণা নিন। বিক্রেতা এটি কেন বিক্রি করছেন, তিনি কতদিন এটি ব্যবহার করেছেন, কোনো পার্টস প্রতিস্থাপন করা হয়েছে কিনা, সার্ভিসিং করা হয়েছে কিনা, ইত্যাদি জেনে নিন।
যানজট এবং ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে সাইকেল দরকারি একটি বাহন। এছাড়াও এটি পরিবেশবান্ধব। পুরনো সাইকেল কেনা একটি সাশ্রয়ী অপশন হতে পারে। যাচাই-বাছাই করে কিনলে টেকসই ও মানসম্মত সাইকেল পাওয়া সম্ভব। সাইকেলের অবস্থা, ফ্রেমের দৃঢ়তা, চাকা এবং ব্রেকিং সিস্টেম ঠিকঠাক থাকলে একটি পুরনো সাইকেল আপনাকে দীর্ঘ সময় সাপোর্ট দিতে পারে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
(১) বাংলাদেশে পুরনো সাইকেল কেনার সময় কি কি বিষয়ে খেয়াল রাখবেন?
সাইকেলের ফ্রেম, স্ট্রাকচার, চাকা, টায়ার, বেকিং সিস্টেম, সাসপেনশন, গিয়ার, চেইন, ক্র্যাঙ্কসেট, হ্যান্ডেলবার, সিটিং পজিশন, প্যাডেল, ইত্যাদি চেক করা প্রয়োজন। এছাড়া সাইকেলের বয়স এবং আগের ব্যবহারও গুরুত্বপূর্ণ।
(২) পুরনো সাইকেল কেনার সময় কি ধরনের স্ক্যাম থেকে সতর্ক থাকবেন?
নিশ্চিত হওয়া উচিত যে এটি চুরি হওয়া নয়। সাইকেলের মূল রশিদ পাওয়া না গেলে, অবশ্যই বিক্রেতার ছবি বা যেকোনো প্রমান রাখবেন। মেরামতের জন্য ব্যয়বহুল সাইকেল কেনা থেকে বিরত থাকুন।
(৩) কিভাবে পুরনো সাইকেলের দরদাম করবেন?
সাইকেলের কন্ডিশন বুঝে দরদাম করুন। বাজারে একই ধরণের নতুন ও পুরনো সাইকেলের দাম যাচাই করুন। পুরনো সাইকেলের দাম যাচাই করতে Bikroy, ফেসবুক ইত্যাদি অনলাইন মার্কেটপ্লেসের সহায়তা নিতে পারেন। দরদাম করার সময় সার্ভিসিং এবং মেরামত খরচের বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন।
(৪) এরকম সাইকেল কেনার ক্ষেত্রে কি কোনো গ্যারান্টি বা রিটার্ন পলিসি থাকে?
এরকম সাইকেল কেনার ক্ষেত্রে গ্যারান্টি বা রিটার্ন পলিসির আশা না করে ভালো। তবে কিছু নির্ভরযোগ্য দোকান বা বিক্রেতার কাছ থেকে পাবার সম্ভাবনা থাকে।
(৫) বাংলাদেশে কোথায় পুরনো সাইকেল কোথায় যেতে পারে?
বাংলাদেশে ব্যবহৃত কিংবা পুরনো সাইকেলের উপযুক্ত বাজার নেই বললেই চলে। তবে বিভিন্ন সাইকেল মার্কেট, এবং অনলাইন মার্কেটপ্লেসে (যেমন ফেইসবুক, বিক্রয় ইত্যাদি) পেতে পারেন। এই প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে, বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে, যাচাই বাছাই এবং দরদাম করে পুরনো সাইকেল কিনতে পারবেন।