কৃষি এবং খাদ্যদ্রব্য

শহুরে বাগানঃ ঢাকায় ঘরেই কীভাবে সবজি চাষ করবেন

শহরের কংক্রিটের জঙ্গলে সবুজের ছোঁয়া পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা এখন অনেকেরই। ঢাকার ব্যস্ত রাস্তাঘাট, যানজট আর যান্ত্রিক জীবনের মাঝেও এক চিলতে সবুজের স্বপ্ন মানুষকে শান্তি দেয়। আপনি জানেন কি? আপনার বাড়ির ছাদ, বারান্দা, কিংবা জানালার পাশে পড়ে থাকা ছোট্ট একটি জায়গা থেকেই শুরু হতে পারে শহুরে বাগান। প্রয়োজন শুধু একটু পরিকল্পনা, যত্ন আর মনের ভেতর থেকে জন্ম নেওয়া ভালোবাসা। চলুন জেনে নিই, ঢাকার মতো শহরে নিজ ঘরে সবজি চাষের টিপস।

জায়গা নির্বাচন করুন

প্রকৃতির নিয়মেই গাছপালা বেড়ে ওঠে সূর্যের আলোয়। তাই প্রথম ধাপই হলো আপনার ঘরে এমন একটি জায়গা খুঁজে বের করা, যেখানে প্রতিদিন অন্তত ৪-৬ ঘণ্টা সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে। ছাদ সবজি চাষের জন্য আদর্শ; তবে যদি ছাদে যাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে বারান্দা কিংবা জানালার পাশে যে অংশে আলো পড়ে, সেখানেও আপনি করতে পারেন আপনার ছোট্ট শহুরে বাগান। সকালে বারান্দায় দাঁড়িয়ে টবভরা টমেটোর গাছ থেকে টসটসে লাল টমেটো কিংবা জানালার পাশে ঝুলছে সতেজ ধনেপাতার ঘ্রাণময় পাতা! এই দৃশ্য বাস্তবায়নের প্রথম চাবিকাঠি হলো উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন।

পাত্র বা টব নির্বাচন

জমিতে নয়, শহুরে বাগান গড়ে ওঠে টবের মধ্যে। কিন্তু টব মানেই শুধু দোকানে কেনা নির্দিষ্ট প্লাস্টিকের পাত্র নয়। একটু সৃজনশীল হলে আপনার রান্নাঘরের পুরনো হাঁড়ি, পানির বালতি, ভাঙ্গা ড্রাম, এমনকি বড় মাপের প্লাস্টিকের বোতল দিয়েও দারুণ সবজি চাষ করতে পারবেন। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো পাত্রের নিচে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকা। যাতে অতিরিক্ত পানি জমে গাছের শিকড় পচে না যায়। প্রয়োজন হলে নিজে হাতে ছোট ছিদ্র করে নিতে পারেন। 

মাটি ও সার প্রস্তুত করুন

উর্বর মাটি ছাড়া গাছের বেড়ে ওঠা অসম্ভব। শহুরে বাগানে মাটি তৈরি করার সময় একটু বাড়তি যত্ন দরকার। একটা আদর্শ মাটির মিশ্রণ হতে পারে ৪০% দোআঁশ মাটি যা পানি ধরে রাখে আবার অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়। ৩০% গোবর সার যা প্রাকৃতিক পুষ্টির উৎস এবং ৩০% কোকোপিট বা কম্পোস্ট যা মাটিকে হালকা ও প্রাণবন্ত রাখে। মনে রাখবেন, আপনার মাটিতে জীবন্ততা থাকলে তবেই চারা সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে। ঢাকার ব্যস্ত বাজারে হয়তো খাঁটি দোআঁশ মাটি খুঁজে পাওয়া একটু কঠিন, কিন্তু মাটি, গোবর সার, কম্পোস্ট আর কোকোপিট মিশিয়ে আপনি নিজেই তৈরি করে নিতে পারেন চমৎকার মাটির মিশ্রণ।

বীজ নির্বাচন ও রোপণ

ঢাকার আবহাওয়ায় সহজে বেড়ে ওঠে এমন সবজির বীজ বাছাই করা জরুরি। ছাদে সবজি বাগান করার কয়েকটি চমৎকার সবজি হলো টমেটো, লাউ ও ঝিঙ্গা, পালং শাক, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, কাঁচামরিচ। বীজ বপনের সময় মাটিতে অল্প গভীরে ছিটিয়ে দিন বা ১-২ ইঞ্চি গভীরে বপন করুন। বীজ বপনের পর মাটির উপর হালকা পানি ছিটিয়ে মাটি ভিজিয়ে রাখুন। অতিরিক্ত পানি দিয়ে মাটি যেন কর্দমাক্ত না হয়।

নিয়মিত যত্ন নিন

একটা ছোট্ট গাছও ঠিক একটা শিশুর মতো। নিয়মিত পরিচর্যা না পেলে সে বেড়ে উঠতে পারে না। তাই প্রতিদিন সময় বের করুন। সকালে অথবা বিকেলে পানি দিন কিন্তু মাটি বেশি কাদায় পরিণত করবেন না। আগাছা পরিষ্কার করুন যেন গাছের পুষ্টি অপচয় না হয়। পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করুন। রাসায়নিক স্প্রের বদলে ব্যবহার করুন প্রাকৃতিক জৈব কীটনাশক। নিয়মিত মাটি হাত দিয়ে নেড়ে দেখুন। শুকনো লাগলে পানি দিন। তবে বেশি পানিও কিন্তু গাছের জন্য ক্ষতিকর। 

শহরের ব্যস্ততা, ক্লান্তি আর ধুলোর ভেতরেও এক টুকরো সবুজ জীবন গড়ে তুলতে পারেন আপনি নিজেই। শুধু একটু মনোযোগ আর ভালোবাসার দরকার। শহুরে বাগান গড়ার মাধ্যমে আপনি শুধু স্বাস্থ্যকর সবজি পাবেন না, পাবেন মানসিক প্রশান্তি, জীবনের প্রতি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। 

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১. ঢাকায় ঘরে কোন কোন সবজি সবচেয়ে ভালো হয়?

ঢাকায় ঘরে টমেটো, লাউ, ঝিঙ্গা, পালং শাক, ধনেপাতা ও কাঁচামরিচ চাষে ভালো ফল পাওয়া যায়।

২. সবজি চাষের জন্য কী ধরণের মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত?

দোআঁশ মাটি, গোবর সার এবং কোকোপিট বা কম্পোস্ট মিশ্রিত মাটি সবজি চাষের জন্য আদর্শ।

৩. ঘরে সবজি চাষ করতে কত ঘণ্টা সূর্যের আলো প্রয়োজন?

প্রতিদিন অন্তত ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা সরাসরি সূর্যের আলো প্রয়োজন।

৪. টব বা পাত্রে কীভাবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করবো?

টবের নিচে ছিদ্র করে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. পুরনো প্লাস্টিকের ড্রাম বা বালতি কি টব হিসেবে ব্যবহার করা যায়?

হ্যাঁ, নিচে ছিদ্র করে পুরনো ড্রাম বা বালতি দারুণ টব হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More
Back to top button
Close
Close