হোম এবং লিভিং

কম বাজেটে কীভাবে হোম অফিস সেটআপ করবেন

বর্তমান যুগে প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং কাজের ধরনে পরিবর্তনের কারণে হোম অফিস বা ঘরে বসে কাজ করা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই এখন ফ্রিল্যান্সিং, আইটি সাপোর্ট, কাস্টমার সাপোর্ট, অনলাইন টিউটরিং, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, ছোট-খাটো ব্যবসার কাজ, এবং বিভিন্ন রিমোট জব ঘরে বসেই পরিচালনা করছেন। সঠিক পরিকল্পনা ও সীমিত কিছু উপকরণ দিয়েই আপনি সীমিত বাজেটের মধ্যে একটি সুন্দর এবং কার্যকর হোম অফিস সেটআপ করতে পারবেন।

একটি পারফেক্ট হোম অফিস এনভায়রনমেন্ট শুধু কর্মদক্ষতাই বাড়ায় না, সাথে মানসিক শান্তিও এনে দেয়। এখন ঘরের মধ্যে অফিস সেটআপ কোনো বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজন। আপনার কাজের ধরণ, ঘরের স্পেস, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, এবং আশেপাশের পরিবেশের অবস্থা বিবেচনা করে, পরিকল্পনা মাফিক কার্যকরভাবে অফিস সেটআপ করা সম্ভব। এই ব্লগে কীভাবে সৃজনশীলভাবে সাশ্রয়ী হোম অফিস সেটআপ করা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

কীভাবে কম বাজেটে হোম অফিস সেটআপ করবেন

(১) পরিকল্পনামাফিক প্রয়োজনীয় বিষয় এবং বাজেট নির্ধারণ করুন

আপনার কাজের ধরণ অনুযায়ী কি কি জিনিস এবং ফার্নিচার প্রয়োজন তার একটি তালিকা তৈরী করুন এবং বাজেট নির্ধারণ করুন। যেমন – একটি ডেস্ক, আরামদায়ক চেয়ার, সেলফ, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ, ইন্টারনেট সংযোগ, গেজেটস, লাইটিং সিস্টেম, আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র, ইত্যাদি। আপনার কাজ করার জন্য আসলে কী কী প্রয়োজন তা দিয়ে শুরু করুন।

অর্থ সাশ্রয়ের চেষ্টা করুন, তবে কম দামে বাতিল কিংবা আউটডেটেড জিনিস কেনা থেকে বিরত থাকুন। মোটামুটি একটি বাজেট প্ল্যান করে রাখুন। যেমন – নতুন কিংবা পুরাতন টেবিল এবং চেয়ার (৳৩,০০০ – ৳১০,০০০), ডেস্ক ল্যাম্প এবং টেবিল ফ্যান (৳২,০০০ – ৳৪,০০০), হেডফোন (৳৩৫০ – ৳৫০০), রিফারবিশড কিংবা নতুন ল্যাপটপ/ডেস্কটপ (৳১৫,০০০ – ৳১০০,০০০), পুরনো মনিটর (৳৩,০০০ – ৳৫,০০০), ব্লুটুথ কীবোর্ড এবং মাউস (৳১,০০০ – ৳১,৫০০), এবং বিভিন্ন ক্যাবল ও শোভা সামগ্রী (৳৫০০ – ৳১,০০০) এর মধ্যে।

(২) সাশ্রয়ী অফিস ফার্নিচার বাছাই করুন

স্মার্টলি কেনাকাটা করুন এবং শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়েই অফিস স্পেস সাজান। পুরনো কিন্তু মজবুত কম্পিউটার টেবিল, চেয়ার, টুল, ইত্যাদি বাছাই করুন। ফেসবুক মার্কেটপ্লেস, কিংবা পুরনো ফার্নিচারের দোকান থেকে বেশ দামে এসব আসবাব পাবেন। দীর্ঘসময় বসে কাজ করার উপযোগী আরামদায়ক চেয়ার বেছে নিন। আপনার বাড়ির অতিরিক্ত টেবিল বা চেয়ার সাময়িকভাবে ব্যবহার করতে পারেন। জায়গা স্বল্প হলে, কাঠের পরিবর্তে ফোল্ডেবল প্লাস্টিকের টেবিল এবং চেয়ার ব্যবহার করতে পারেন, এগুলো তুলনামূলকভাবে সস্তা। কাঠের বদলে, অফিস কক্ষের মাপ অনুযায়ী বোর্ডের জিনিস আপনি অর্ডার দিয়ে বানিয়েও নিতে পারেন।

(৩) আলো-বাতাস সমৃদ্ধ একটি স্থান নির্ধারণ করুন

বাড়ির যেকোনো নিরিবিলি জায়গা বেছে নিন। যেমন: শোবার ঘরের একপাশ, বারান্দা বা ড্রয়িং রুমের খালি জায়গা, স্টোর রুম, ইত্যাদি। শান্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে দরজা, কিংবা পর্দা লাগাতে পারেন। মনে রাখবেন, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। বদ্ধ-অন্ধকার জায়গা মানসিক চাপ তৈরী করে। রাতের বেলা কাজ করার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো মানের এলইডি ডেস্ক ল্যাম্প কিনতে পারেন। আপনার অফিস কক্ষে যদি ক্লায়েন্টদের আসার প্রয়োজন হয়, তাহলে তাদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা রাখতে হবে, যেন তারা অস্বস্তি বোধ না করেন। অফিসকক্ষের দেয়ালে ভালো আর্ট ওয়ার্ক রাখতে পারেন।

(৪) প্রয়োজনীয় টেক ডিভাইস এবং ইনটারনেট সংযোগ নিশ্চিত করুন

ঘরে বসে নির্ঝঞ্ঝাট কাজ করতে চাইলে ভালো মানের টেক ডিভাইস এবং ইনটারনেট সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে। ম্যানেজমেন্ট, কাস্টোমার সাপোর্ট, কিংবা যেকোনো ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য এসব জরুরি। ভাল মানের ইন্টারনের সংযোগ এবং ওয়াই-ফাই রাউটার বেছে নিন। ভালো গতির জন্য অপটিক্যাল ফাইবার ইন্টারনেট অপশন রাখা ভালো। মোবাইল-ডাটা আপনার জন্য সাশ্রয়ী হলে, এটিও পরিকল্পনায় রাখুন।

টাইপিং, ডকুমেন্ট, ব্রাউজিং, ডেটা এন্ট্রি, কাস্টমার সাপোর্ট, অনুবাদক ধরণের কাজ হলে, স্ট্যান্ডার্ড কোয়ালিটির রিফারবিশড ল্যাপটপ/ডেস্কটপ হলেই হবে। তবে গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিও এডিটিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ইত্যাদি ভারী কাজের জন্য উন্নত মানের ডিভাইসের প্রয়োজন হবে। সার্টিফাইড রিসেলার কিংবা সেকেন্ড-হ্যান্ড গেজেটস মার্কেট থেকে উন্নতমানের ল্যাপটপ/ডেস্কটপ কম দামে পেতে পারেন।

(৫) ভার্টিক্যালি কিংবা হরিজোনটালি আপনার সেলফ এবং ডেস্ক সাজান

সাধারণত হোম অফিস স্পেস ছোট হয়ে থাকে, তাই স্পেসের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত। ডেস্কে কম্পিউটার, কিবোর্ড, প্রিন্টার, কলমদানি, ইত্যাদি এমনভাবে সাজাবেন যাতে ক্লায়েন্টদের সাথে কথা বলার সময় কোন বাধার সৃষ্টি না হয়। যেমন কম্পিউটারটি ডেস্কের এক সাইডে রাখবেন এতে আপনার সম্মুখভাগ খালি থাকবে। উলম্ব কিংবা আনুভূমিকভাবে সেলফ রাখতে পারেন, সেখানে অফিসের ফাইল, প্রিন্টার, ফটোকপি মেশিন, স্ক্যানার ইত্যাদি রাখুন। এতে সবকিছু হাতের নাগালেই পাবেন।

সাশ্রয়ী হোম অফিস সাজাতে আরো কিছু সাধারণ পরামর্শ –

(১) সব ধরণের কাজে যতটা সম্ভব ফ্রি রিসোর্স ব্যবহার করুন।

(২) কেবল এবং ইলেকট্রিসিটি সেফটির জন্য একটি মাল্টি-আউটলেট পাওয়ার স্ট্রিপ ব্যবহার করুন।

(৩) কিছু ডু ইট ইওরসেল্ফ (DIY) ফার্নিচার তৈরির চেষ্টা করুন।

(৪) সীমিত স্থানের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করুন।

(৫) প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে ধাপে ধাপে বিনিয়োগ করুন।

(৬) ফার্নিচার এবং প্রযুক্তি বাজারের ডিসকাউন্ট অফারের দিকে নজর রাখুন।

(৭) Bikroy, ফেসবুক মার্কেটপ্লেস, ইত্যাদি অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস কম দামে পেতে খোঁজ রাখুন।

পরিশেষে, কার্যকর একটি হোম অফিস সেটআপ করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন নেই – শুধু প্রয়োজন কিছু পরিকল্পনা, সঠিক জিনিসের বাছাই এবং স্মার্ট ব্যবহার। কম বাজেটে সেটআপ করা খুবই সম্ভব যদি আপনি স্মার্টলি পরিকল্পনা করেন। প্রয়োজনীয় আসবাব, প্রযুক্তি ও পরিবেশগত বিষয়গুলো মাথায় রেখে সাজালে আপনি আপনার কাজের জন্য আরামদায়ক এবং কার্যকর একটি অফিস স্পেস তৈরি করতে পারবেন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

(১) কোন জিনিসগুলো হোম অফিসের জন্য অপরিহার্য?

একটি আরামদায়ক চেয়ার, ডেস্ক, ভালো ইন্টারনেট সংযোগ, ল্যাপটপ/কম্পিউটার, রিলেটেড গেজেটস, নিরিবিলি পরিবেশ, ইত্যাদি।

(২) ব্যবহার করা ফার্নিচার এবং রেফার্বিশড ডিভাইস কিনলে কি ভালো হবে?

হ্যাঁ, ভালো কন্ডিশনের রেফার্বিশড ডিভাইস এবং ব্যবহৃত চেয়ার বা ডেস্ক কিনলে অনেক খরচ বাঁচানো সম্ভব।

(৩) কম বাজেটের মধ্যে কীভাবে আরামদায়ক কাজের পরিবেশ তৈরি করা যায়?

প্রপার ভেন্টিলেশন, প্রাকৃতিক আলো, নিরিবিলি পরিবেশ, এবং সাধারণ সাজসজ্জা দিয়ে আরামদায়ক ভাবে কাজের পরিবেশ তৈরি করা যায়।

(৪) কম দামে ভালো মানের ফার্নিচার এবং রেফার্বিশড ডিভাইস কোথায় পাওয়া যায়?

অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেমন – Bikroy, ফেসবুক মার্কেটপ্লেস, ইত্যাদিতে ভালো মানের ফার্নিচার এবং রেফার্বিশড ডিভাইস পেতে পারেন। এছাড়াও লোকাল মার্কেট, সার্টিফাইড রিসেলার কিংবা সেকেন্ড-হ্যান্ড ডিভাইস মার্কেট এবং ফার্নিচারের ডিসকাউন্ট স্টোরগুলোতে খোঁজ রাখতে পারেন।

(৫) একটি মিনিমালিস্ট হোম অফিস সাজাতে কী কী বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত?

অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দিয়ে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস রাখুন। যতটা সম্ভব ফ্রি রিসোর্স ব্যবহার করুন। সীমিত স্থানের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করুন এবং সহজ কিন্তু কার্যকর ডিজাইন বেছে নিন।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close