প্রপার্টি

ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার আগে যেসব বিষয় অবশ্যই যাচাই করবেন

ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনা অনেকেরই স্বপ্ন। তবে এই স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে অনেকেই বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হন। এসব বিষয় না যাচাই করলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের আইনি বা আর্থিক ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তাই, যেকোনো ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই নিম্নলিখিত বিষয়গুলো ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত।

ফ্ল্যাটের কাগজপত্র এবং আইনি দিক

  • জমির মূল দলিল: প্রথমে জমির মূল দলিল, যেমন – বায়না দলিল, সিএস, আরএস, এসএ, বিআরএস খতিয়ান, নামজারি ও জমাখারিজের কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই করুন। নিশ্চিত করুন যে জমির মালিকানা নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই।
  • মিউটেশন (নামজারি): জমির মালিকের নামে মিউটেশন (নামজারি) করা আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। এটি মালিকানা পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।
  • খাজনা ও হোল্ডিং ট্যাক্স: জমির হালনাগাদ খাজনা এবং ফ্ল্যাটের হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করা আছে কিনা, তা যাচাই করে নিন। বকেয়া থাকলে তা পরিশোধের দায়িত্ব কার, তা জেনে নিন।
  • ইনকামব্রেন্স সার্টিফিকেট: সম্পত্তি বন্ধক আছে কিনা, তা জানার জন্য ইনকামব্রেন্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারেন। এটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে পাওয়া যায়।
  • ডেভেলপার এবং ফ্ল্যাটের চুক্তিপত্র: ডেভেলপারের সাথে করা চুক্তিপত্র ভালোভাবে পড়ে নিন। পেমেন্টের শর্তাবলী, ফিনিশিং ম্যাটেরিয়াল, হ্যান্ডওভারের তারিখ, ফ্ল্যাটের মাপ এবং অন্যান্য শর্ত বিস্তারিতভাবে উল্লেখ আছে কিনা, তা নিশ্চিত করুন।
  • ডেভেলপার কোম্পানির নিবন্ধন: ডেভেলপার কোম্পানি REHAB (Real Estate & Housing Association of Bangladesh) এর সদস্য কিনা, তা যাচাই করে নিন। এতে তাদের নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।

অবস্থান সম্পর্কিত বিষয়াদি

  • যোগাযোগ ব্যবস্থা: ফ্ল্যাটের আশেপাশে গণপরিবহন সহজলভ্য কিনা, প্রধান রাস্তা থেকে এর দূরত্ব কত, এসব বিষয় বিবেচনা করুন।
  • জরুরি সেবা: হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ফ্ল্যাটের আশেপাশে আছে কিনা, তা জেনে নিন।
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাজার: স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজারের সুবিধা কেমন, তা দেখে নিন।
  • নিরাপত্তা: এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন, তা স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন।
  • ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা: এলাকার ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা, যেমন – নতুন রাস্তা, ফ্লাইওভার বা বাণিজ্যিক এলাকার সম্ভাবনা থাকলে তা ফ্ল্যাটের মূল্যের ওপর প্রভাব ফেলবে।

বিল্ডিংয়ের মান ও সুযোগ-সুবিধা

  • নির্মাণের মান: বিল্ডিংয়ের কাঠামো, ব্যবহৃত উপকরণ এবং সার্বিক নির্মাণ মান সম্পর্কে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর পরামর্শ নিতে পারেন। এখানে ভূমিকম্প সহনশীলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
  • ফ্ল্যাটের ডিজাইন ও স্পেস: ফ্ল্যাটের ভেতরের ডিজাইন, রুমগুলোর আকার, বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা এবং পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের প্রবেশ নিশ্চিত করুন।
  • অন্যান্য সুবিধা: লিফট, জেনারেটর, পার্কিং সুবিধা, ইন্টারকম, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা, রুফটপ ফ্যাসিলিটিস, সিকিউরিটি সিস্টেম ইত্যাদি সুবিধা আছে কিনা এবং এর জন্য কোনো অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে কিনা, তা জেনে নিন।
  • সার্ভিস চার্জ: মাসিক সার্ভিস চার্জ কত এবং এর মধ্যে কী কী অন্তর্ভুক্ত, তা পরিষ্কারভাবে জেনে নিন।

ডেভেলপার পরিচিতি ও অতীত রেকর্ড

  • প্রতিষ্ঠানের সুনাম: ডেভেলপার কোম্পানির পূর্ববর্তী প্রজেক্টগুলো দেখুন এবং তাদের গ্রাহকদের কাছ থেকে মতামত নিন। তাদের কাজের মান, সময়মতো হ্যান্ডওভার এবং আফটার-সেল সার্ভিস কেমন, তা যাচাই করুন।
  • আইনি জটিলতা: ডেভেলপার কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো আইনি জটিলতা বা মামলা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখুন।

পরিসংহার 

ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনা একটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ। তাই তাড়াহুড়ো না করে প্রতিটি ধাপ ভালোভাবে যাচাই করা বুদ্ধিমানের কাজ। উপরের বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে তবেই ফ্ল্যাট কেনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এতে আপনি ভবিষ্যৎ ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকবেন এবং আপনার স্বপ্নের ফ্ল্যাটে নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারবেন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী 

১. ফ্ল্যাট কেনার জন্য ব্যাংক লোন পেতে কী কী কাগজপত্র লাগে?

সাধারণত ফ্ল্যাটের দলিল, ডেভেলপার ও ক্রেতার মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিপত্র, আয়কর সনদ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং অন্যান্য কিছু ব্যক্তিগত নথি প্রয়োজন হয়।

২. ফ্ল্যাটের সার্ভিস চার্জের মধ্যে কী কী অন্তর্ভুক্ত থাকে?

সাধারণত লিফট ও জেনারেটরের রক্ষণাবেক্ষণ, সিকিউরিটি গার্ডের বেতন, কমন এরিয়ার বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল এবং ক্লিনিং সার্ভিস অন্তর্ভুক্ত থাকে।

৩. ফ্ল্যাট কেনার সময় ডেভেলপারকে কত শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিতে হয়?

এটি ডেভেলপার ও প্রজেক্ট ভেদে ভিন্ন হয়, তবে সাধারণত ২০-৩০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিতে হয়।

৪. ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন খরচ কত হতে পারে?

ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন খরচ স্ট্যাম্প ডিউটি, রেজিস্ট্রেশন ফি, স্থানীয় সরকার ট্যাক্স এবং অন্যান্য কিছু খরচ মিলে মোট ফ্ল্যাটের মূল্যের প্রায় ১০-১৪% হতে পারে।

৫. একটি প্রস্তুত ফ্ল্যাট না কিনে নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট কেনা কি বেশি লাভজনক?

নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট সাধারণত কিছুটা কম দামে পাওয়া যায় এবং নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী পরিবর্তনের সুযোগ থাকে, তবে এতে হ্যান্ডওভারের অনিশ্চয়তা এবং বিলম্বের ঝুঁকি থাকে। প্রস্তুত ফ্ল্যাট কেনা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ, তবে দাম কিছুটা বেশি হতে পারে।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close