বাংলাদেশে বাড়িওয়ালাদের জন্য প্রয়োজনীয় ৫টি হোম মেইনটেন্যান্স সেবা (২০২৫ গাইড)

বাংলাদেশে নিজের বাড়ি থাকা অনেকের কাছে গর্বের বিষয়, তবে এর সঙ্গে আসে বড় দায়িত্বও। ভাড়ার বাসার মতো নয়, এখানে প্রতিটি মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বাড়িওয়ালাকেই নিতে হয়। লিকেজ থেকে শুরু করে নষ্ট এসি, ছোট সমস্যা সময়মতো সমাধান না করলে তা বড় খরচে রূপ নিতে পারে।
২০২৫ সালে ঢাকার মতো শহরে শুধু ফ্ল্যাট কেনাই যথেষ্ট নয়, বরং এর দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ আরও জরুরি। নিয়মিত মেরামত ও সার্ভিসিংয়ের মাধ্যমে আপনি শুধু খরচ বাঁচান না, বরং বাড়ির আয়ু বাড়ান এবং পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করেন।
এখানে দেওয়া হলো প্রত্যেক বাড়িওয়ালার জন্য জরুরি ৫টি রিপেয়ার ও মেইনটেন্যান্স সার্ভিস, যা আপনার বাড়িকে নিরাপদ ও আরামদায়ক রাখবে।
১. প্লাম্বিং ও ড্রেনেজ মেইনটেন্যান্স
বাংলাদেশে লিকেজ, ব্লকেজ বা পাইপ ফেটে যাওয়া খুব সাধারণ সমস্যা। বিশেষ করে পুরনো ফ্ল্যাটে পানির লাইন দ্রুত নষ্ট হয়। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে পানি দেয়াল ভিজিয়ে ফেলে, ফাঙ্গাস তৈরি হয় এবং কাঠামোগত ক্ষতি করে।
পেশাদার প্লাম্বিং সার্ভিস এসব সমস্যা প্রতিরোধ করে। তারা নিয়মিত লিকেজ চেক করে, পুরনো পাইপ পাল্টায়, ড্রেন পরিষ্কার করে এবং ওয়াটার পাম্প বা গিজার মেরামত করে। এতে বড় ক্ষতি হওয়ার আগে ছোট সমস্যাই সমাধান হয়ে যায়।
বর্ষায় ড্রেনেজ ঠিক রাখা বিশেষ জরুরি। সময়মতো রক্ষণাবেক্ষণ করলে পানি জমে বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
২. ইলেকট্রিক্যাল রিপেয়ার ও ওয়্যারিং চেক
ঢাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট, সার্জ বা পুরনো তারের সমস্যায় ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে থাকে। অনেক পুরনো ফ্ল্যাট এখনো পুরনো ওয়্যারিং সিস্টেম ব্যবহার করছে, যা আধুনিক যন্ত্রপাতির চাপ নিতে পারে না।
সার্টিফায়েড ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে বছরে অন্তত একবার চেক করানো উচিত। তারা পুরনো তার পরিবর্তন, সার্কিট ব্রেকার ইনস্টল, গ্রাউন্ডিং পরীক্ষা এবং সার্জ প্রোটেকশন ব্যবস্থা করে। এর ফলে আগুন লাগা বা যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করলে একটি ছোট ত্রুটি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পরিণত হতে পারে।
৩. এসি ও এইচভিএসি সার্ভিসিং
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এসি এখন অপরিহার্য। কিন্তু ঠিকমতো সার্ভিস না করলে এসি হঠাৎ গরমে নষ্ট হয়ে যায়। সাধারণ সমস্যা হলো গ্যাস লিক, ফিল্টার নোংরা হওয়া বা কম্প্রেসর নষ্ট হওয়া।
ছয় মাস অন্তর সার্ভিস করলে এসব সমস্যা এড়ানো যায়। সার্ভিসে ফিল্টার পরিষ্কার, গ্যাস চেক, কম্প্রেসর ইনস্পেকশন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে। এতে বিদ্যুৎ বিল কমে এবং এসির আয়ু বাড়ে।
বড় বাসায় HVAC সিস্টেম থাকলে নিয়মিত ডাক্ট পরিষ্কার করাও জরুরি। এতে ঘরের বাতাস পরিষ্কার থাকে এবং অ্যালার্জি কম হয়।
৪. ডিপ ক্লিনিং ও পেস্ট কন্ট্রোল
শহুরে পরিবেশে ধুলো, দূষণ ও পোকামাকড় অবশ্যম্ভাবী। ডিপ ক্লিনিং সার্ভিস কার্পেট, কিচেন হুড, বাথরুম ও দেয়াল ফাঙ্গাস পরিষ্কার করে।
পেস্ট কন্ট্রোলও সমান জরুরি। উই, তেলাপোকা বা মশা শুধু বিরক্তিকর নয়, বরং স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ায়। পেশাদাররা নিরাপদ স্প্রে ও ফিউমিগেশন ব্যবহার করে এসব সমস্যা প্রতিরোধ করে।
এর ফলে ঘর হয় স্বাস্থ্যকর ও আরামদায়ক। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
৫. পেইন্টিং, কার্পেন্ট্রি ও ছোটখাটো মেরামত
সময় গড়ালে দেয়ালে ফাটল ধরে, দরজা বেঁকে যায় বা টালি খুলে যায়। এসব ছোটখাটো সমস্যা সমাধান না করলে বাড়ির সৌন্দর্য ও মান কমে যায়।
নিয়মিত পেইন্ট করলে আর্দ্রতার কারণে দেয়াল ভেজা বা ফাঙ্গাস হওয়ার ঝুঁকি কমে। কার্পেন্ট্রি সার্ভিস আলমারি, দরজা বা ক্যাবিনেট ঠিক রাখে। হ্যান্ডিম্যান সার্ভিস ছোটখাটো ফিক্সচারও ঠিক করে দেয়।
এগুলো বাড়িকে শুধু সুন্দর রাখে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে বড় খরচ বাঁচায়।
কেন রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি
- ছোট সমস্যা বড় হওয়ার আগেই সমাধান হয়।
- পরিবারের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত হয়।
- খরচ কমে যায়, প্রিভেন্টিভ মেইনটেন্যান্স সবসময় সস্তা।
- বাড়ির ভ্যালু ধরে রাখা যায়।
- ঘর হয় আরামদায়ক ও পরিচ্ছন্ন।
বাড়ির মালিকদের জন্য টিপস
- বছরে অন্তত একবার প্লাম্বিং ও ইলেকট্রিক্যাল চেক করান।
- ডিপ ক্লিনিংয়ের সঙ্গে পেস্ট কন্ট্রোল করলে খরচ কমে।
- সবসময় নির্ভরযোগ্য সার্ভিস প্রোভাইডার ব্যবহার করুন।
- মেরামতের রেকর্ড রাখুন, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।
- বাজেট থেকে ১-২% রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা রাখুন।
ঢাকায় বা বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ সার্ভিস খুঁজছেন? Bikroy ভিজিট করুন, এখানে পাবেন প্লাম্বিং, ইলেকট্রিক্যাল, এসি সার্ভিসিং, পেস্ট কন্ট্রোল ও সাধারণ রিপেয়ারের ভেরিফায়েড প্রফেশনাল। দাম তুলনা করুন, রিভিউ দেখুন এবং নিশ্চিন্তে বুক করুন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. এসি কত ঘন ঘন সার্ভিস করা উচিত?
বছরে অন্তত ২ বার, অর্থাৎ প্রতি ৬ মাস অন্তর।
২. পেস্ট কন্ট্রোল কি আগেই করা উচিত?
হ্যাঁ, আগেই করালে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
৩. রুটিন মেইনটেন্যান্সের খরচ কত হতে পারে?
ছোট কাজ ৫০০-১,০০০ টাকা থেকে শুরু, ডিপ ক্লিনিং ৩,০০০-৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
৪. অনলাইনে টেকনিশিয়ান বুক করা কি নিরাপদ?
হ্যাঁ, যদি Bikroy-এর মতো ভেরিফায়েড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন।
৫. বাড়িওয়ালারা সাধারণত সবচেয়ে বড় ভুল কী করেন?
বাড়িওয়ালারা সাধারণত কোনো সমস্যা জরুরি না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন, নিয়মিত মেইনটেন্যান্স করেন না।