ইলেকট্রনিক্স

আপনার প্রথম গেমিং পিসি কেনার জন্য আমাদের ৫ ধাপের গাইডলাইন

আপনি যদি গেমিং জগতে একদম নতুন এসে থাকেন, তাহলে হয়ত ভাবছেন যেকোনো ধরণের সেট-আপ আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। আপনি কি এক্স-বক্স কিংবা প্লে-স্টেশনের মত একটি কনসোল সিস্টেম কিনতে চান? নাকি আপনি বিশেষ ধাঁচের একটা ভালো গেমিং ল্যাপটপের পেছনে বিনিয়োগ করবেন? নাকি এটাও ভাবছেন আপনার যাবতীয় সব রকম চাহিদা মেটানোর জন্য সম্পূর্ণ কাস্টমাইজ করা একটা গেমিং ডেস্কটপ কম্পিউটারই কিনে ফেলবেন?

এত রকম প্রশ্নের উত্তর বের করে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সত্যি বেশ কঠিন একটা কাজ। তাই আজ আমরা আপানাকে জন্য নিয়ে এসেছি, আপনার জীবনের প্রথম গেমিং পিসি কেনার ব্যাপারে সাহায্য করবে এমন ৫টি সহজ ধাপ!

১. আপনার বাজেট নির্ধারণ করুন

প্রথমেই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনি ঠিক কি পরিমাণ খরচ করতে চান। ফিচারের উপর নির্ভর করে গেমিং সেট-আপ গুলোর দাম বিভিন্ন রকমের হতে পারে। সহজ ভাবে বলতে গেলে এই সেট-আপ গুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় – সাশ্রয়ী, মধ্য এবং উচ্চ সারির দামি সেট-আপ।

সাশ্রয়ী একটি গেমিং পিসি সেট-আপ করতে বাংলাদেশে ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। এই ধরণের পিসিতে রয়েছে একটি স্ট্যান্ডার্ড মানের সেট-আপ। যেসব গেমাররা কম স্পেসিফিকেশন বা হালকা ধাঁচের গেম খেলে থাকেন, তাদের জন্য এই ধরণের পিসি আদর্শ।

একটি মাঝারি বা মধ্য সারির গেমিং সেট-আপের দাম বাংলাদেশে ৭০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত, এমনকি তার চেয়েও বেশি হতে পারে। আপনি যদি একজন সিরিয়াস গেমার হতে চান তাহলে আপনার শুরুর দিকের বাজেট অন্ততপক্ষে এরকম হওয়া উচিত। এই ধরনের সেট-আপ সাধারণের চেয়ে বেশ ভালো মানের পারফরম্যান্স দিতে পারবে এবং ভবিষ্যতে আপগ্রেড করার মতও অনেক সুযোগ এখানে আপনি পাবেন।

আরও দামি বা উচ্চ সারির গেমিং পিসিগুলোর দাম সাধারণত বাংলাদেশে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার উপরে হয়ে থাকে এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন গেমারদের জন্য এই সেট-আপ সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করতে পারে। এই ধরণের সেট-আপগুলোতে মূলত বিশেষ কিছু সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি থাকে, যেগুলো উচ্চ মান ও স্পেসিফিকেশনের গেম খেলেন এমন গেমারদের জন্য পারফেক্ট। কেননা এই ধরণের সেট-আপে আপনি পাবেন সবচেয়ে মসৃণ, পরিস্কার এবং সেরা মানের পারফরম্যান্স।

২. কেমন সেট-আপ চাচ্ছেন সেই সিদ্ধান্ত নিন

প্রযুক্তিগত ডিটেইলে যাওয়ার আগে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনি কোন ধরণের সেট-আপে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন। বেছে নেয়ার জন্য আপনার হাতে রয়েছে মূলত ৩ ধরণের অপশন – কনসোল সিস্টেম, গেমিং ল্যাপটপ অথবা গেমিং ডেস্কটপ। আপনার প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে এদের মধ্যে প্রত্যেকটি অপশনেই রয়েছে বিভিন্ন রকম সুবিধা এবং অসুবিধা।

গেমিং কনসোল

যদিও এটি প্রযুক্তিগত দিক থেকে কোনো পিসি বা কম্পিউটার নয়, তবুও গেমারদের মধ্যে এই ডিভাইসটির  জনপ্রিয়তা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। কনসোল ডিভাইসটি শুধুমাত্র গেমিং এর জন্যই নিবেদিত। সারা পৃথিবী জুড়ে প্রধাণত দু’টি কনসোল রাজত্ব করে আসছে, আর আপনিও এদের নাম অবশ্যই শুনে থাকবেন – এক্স-বক্স এবং প্লে-স্টেশন। এই সিস্টেমগুলোতে রয়েছে তাদের বিশ্ব বিখ্যাত গেমিং প্ল্যাটফর্ম, যেগুলোর উপর ভিত্তি করে আজ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী বহু ধরণের গেইমস ডেভেলপ হয়ে আসছে। আর এই গেমগুলো হাতের কন্ট্রোল এবং হেডসেট ইত্যাদির সাহায্যে খেলা হয়ে থাকে।

সুবিধাঃ

  • সেট-আপ করা বেশ সহজ ও দ্রুততর। কেননা একে ডিজাইন করে হয়েছে সরাসরি প্লাগ ইন করে খেলার জন্য।
  • অটোম্যাটিক আপডেট।
  • এমন সব এক্সক্লুসিভ গেইমস খেলার সুযোগ রয়েছে, যেগুলো পিসিতে খেলা সম্ভব নয়।

অসুবিধাঃ

  • ক্রমশ বেশি আপডেট নেয়া সত্ত্বেও ডিভাইসে তেমন কোনো লক্ষণীয় পরিবর্তন বা সুবিধা তৈরি হয় না।
  • মাউস এবং কীবোর্ড কিংবা ভিআর (ভার্চুয়াল রিয়েলিটি) ব্যবহার করে গেইমস খেলার কোনো অপশন এখনও আসেনি।
  • সময়ের সাথে একে আরও উন্নত করা বা পরিবর্তন করা যায় না, সম্পূর্ণ নতুন ডিভাইস কিনতে হয়।

গেমিং ল্যাপটপ

কিছুদিন আগে আমরা দেখেছি মার্কেটের জনপ্রিয় কিছু গেমিং ল্যাপটপের মডেল। পারফরম্যান্সের দিক থেকে ল্যাপটপ ডিভাইসটি বেশ বহুমুখী গুণসম্পন্ন – সত্যি বলতে সবার জন্যই একটি করে আদর্শ টাইপের ল্যাপটপ রয়েছে। বহনযোগ্য হওয়ার পাশাপাশি, আপনার গেমিং সংক্রান্ত সব রকম চাহিদা মেটানোর জন্য একটি পরিপূর্ণ ও কমপ্যাক্ট সমাধান দিতে পারে একটি গেমিং ল্যাপটপ। তবে এরকম একটা ডিভাইসেরও সামান্য কিছু অসুবিধার দিক রয়েছে।

সুবিধাঃ

  • এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ অল-ইন-ওয়ান কম্পিউটার বা পিসি।
  • কনসোল এর তুলনায় যথেষ্ট বহুমুখী গুণ রয়েছে এতে।
  • বহনযোগ্য এবং কমপ্যাক্ট।

অসুবিধাঃ

  • সব গুলো অপশনের মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল অপশন হলো এটি।
  • হার্ডওয়্যারের ধারণ ক্ষমতা বেশ সীমিত।
  • অত্যাধিক মাত্রায় গরম হয়ে যাওয়ার সমস্যা হলে হার্ডওয়্যার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  • দুর্বল ব্যাটারি লাইফ থাকার দরুণ পাওয়ার সাপ্লাই এর সুবিধা বেশ সীমিত কিংবা মোটেই সন্তোষজনক নয়।

গেমিং ডেস্কটপ

এখন পর্যন্ত বিশ্বের যেকোনো গেমারকে যদি প্রশ্ন করেন যে তার পছন্দের গেমিং সেট-আপ কোনটি, তাহলে বেশির ভাগ গেমারই বলবেন একটি ডেস্কটপ কম্পিউটারের কথা। গেমাররা প্রায়ই একটি লেটেস্ট মডেলের গেমিং ডেস্কটপ কেনার পরিকল্পনা করে থাকেন, কেননা এতে থাকে কাস্টমাইজ করার অফুরন্ত অপশন। মডিফাই বা আপগ্রেড করার জন্য এই সেট-আপটি সবচেয়ে সহজ এবং বহুমুখী একটি অপশন। ফলে আপনি পাবেন একটি দীর্ঘমেয়াদী বিরতিহীন গেমিং অভিজ্ঞতা। আপনি বাজার থেকে পূর্ব-নির্মিত কোনো ডিজাইনের পিসি কিনতে পারেন কিংবা আপনার পছন্দের পার্টস গুলো সংযোজন করে মনের মত একটি পিসি তৈরি করতে পারেন। আপনার চাহিদা অনুযায়ী সেরা গেমিং কনফিগারেশন যদি আপনি পেতে চান বা ব্যবহার করতে চান, তাহলে এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ ও আদর্শ পদ্ধতি। তবে ডেস্কটপ কম্পিউটারগুলোতেও কিছু অসুবিধার দিক লক্ষ্য করা যায়।

সুবিধাঃ

  • সম্পূর্ণ কাস্টমাইজ করার অপশন।
  • ল্যাপটপের তুলনায় অনেক বেশি সাশ্রয়ী ও যুক্তিসংগত।
  • খুব বেশি গরম হওয়া ছাড়াই এটি বেশ ভালো পারফরম্যান্স দিতে পারে।

অসুবিধাঃ

  • অতিরিক্ত সরঞ্জাম ও জটিল কনফিগারেশন।
  • অনভিজ্ঞ ইউজাররা সেট-আপ করতে গিয়ে বেশ হিমসিম খান।
  • একেবারেই বহনযোগ্য নয়।

৩. কী ধরণের গেইমস খেলতে চান সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন

এই ধাপটি কিছুটা ছোট কিন্তু আপনার প্রয়োজনের ভিত্তিতে সেরা গেমিং কনফিগারেশনটি বেছে নিতে এই ধাপটি আপনাকে ব্যাপক সাহায্য করবে।

আপনি যদি কম স্পেসিফিকেশনের, যেমন মাইনক্রাফটের মত হালকা ধাঁচের গেম খেলতে চান, তাহলে একট সাশ্রয়ী দামের রেঞ্জ থেকে একটি আদর্শ পিসির সেট-আপ কিনলেই আপনার কাজ চলে যাবে। আবার অন্যদিকে আপনি যদি ভারি ধাঁচের ট্রিপল এ গেইমস যেমন ‘অ্যাসাসিনস ক্রিড’ এর মত উচ্চ কনফিগারেশনের গেইমস খেলতে চান, তাহলে আপনার প্রয়োজন হবে সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স, সেরা গ্রাফিক্স এবং পরিপূর্ণ গেমিং অভিজ্ঞতা লাভ করার জন্য উত্তম অডিও সহ একটি সেরা গেমিং সেট-আপ।

আপনার গেমিং এর চাহিদা ও পছন্দের উপর নির্ভর করে আপনার সেট-আপের সাথে বাহ্যিক কিছু ডিভাইসের চাহিদাও পরিবর্তন হতে পারে। যদি আপনি বেশি পরিমাণে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা ভিআর গেইমস খেলতে ভালোবাসেন, তাহলে আপনাকে একটি ভালো ভিআর হেডসেটের পেছনে বিনিয়োগ করতে হবে, আবার একই সাথে সেটা চালানো যায় এমন সেট-আপও তৈরি করে নিতে হবে। ভিআরের কথা যদি বাদও দেই, তবুও আপনার সামনে থেকে যায় হাতে চালিত কনট্রোলার অথবা একটি সাধারণ কীবোর্ড ও মাউসের কম্বিনেশন সহ সেট-আপ। আর যদি আপনি অনলাইনে মাল্টি-প্লেয়ার গেইমস খেলতে ভালোবাসেন, তাহলে একটি ভালো মাইক্রোফোন এবং স্পিকার তো আপনাকে খরচ করে কিনতেই হবে।

সত্যি বলতে, একটি গেমিং ডিভাইস কেনার আগে আপনাকে আরও অনেক রকম সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো হয়, যদি আপনি শুরুতেই আপনার চাহিদা ও পছন্দগুলোর তালিকা তৈরি করে ফেলতে পারেন। এরপর বাকি ধাপগুলো পার করা আপনার জন্য বেশ সহজ হয়ে উঠবে।

৪. যেকোনো সেট-আপের জন্য অপরিহার্য অংশগুলোকে চিনুন

আপনি যদি একটি ভালো মানের দামি গেমিং ডেস্কটপ কিংবা ল্যাপটপ হয়, তাহলে আপনাকে অবশ্যই নিচের যন্ত্রাংশ গুলো সম্পর্কে সব রকম তথ্য ও তাদের যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবেঃ 

প্রসেসর এবং মাদার বোর্ড

একটি ভালো প্রসেসর আপনার পুরো সেট-আপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট অর্থাৎ সিপিইউ একটি কম্পিউটারের সব রকম প্রোগ্রাম চালাতে ও সচল রাখার পেছনে কাজ করে। এটা ছাড়া আপনার সেট-আপ একদম কাজই করবে না।

একটি ভালো গেমিং পিসির জন্য আপনার সেট-আপে ইনটেল কোর আই৭ এর মত শক্তিশালী একটি প্রসেসর থাকতেই হবে। আর তার সাথে আপনার প্রয়োজন হবে একটি ভালো মাদারবোর্ড, যা প্রসেসরটির পারফরম্যান্সের দক্ষতাগুলোকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে সক্ষম। মূলত মাদারবোর্ড হচ্ছে একটি প্রিন্ট করা লে-আউট, যেখানে একটি পারসোনাল কম্পিউটারের সব রকম অত্যাবশ্যকীয় উপাদানগুলো একসাথে থাকে, যেমন সিপিইউ এবং মেমোরি। আর এটা এই সব রকম যন্ত্রাংশের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংযোগ ধরে রাখে, যাতে এগুলো একটি আরেকটির সাথে মিলে ঠিক ভাবে কাজ করতে পারে। গেমিং এর জন্য সেরা মানের মাদার বোর্ড আপনি পাবেন নিচের ব্র্যান্ডগুলোর কাছেঃ

  • আসুস
  • গিগাবাইট
  • এমএসআই

গ্রাফিক্স কার্ড

গেমিং এর জন্য এটি আরও খুবই প্রয়োজনীয় অংশ। যথাযথ মানের ভিজ্যুয়াল আউটপুট পাওয়ার জন্য একটি ভালো মানসম্মত গ্রাফিক্স কার্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি ডিসপ্লেতে যা কিছু দেখতে পান, সেগুলো গ্রাফিক্স কার্ড বা ভিডিও কার্ড নামক এই জিনিসটির কারণেই সম্ভব হয়। যখন আপনি একটি স্ট্যান্ডার্ড মানের পূর্ব-নির্মিত পিসি কেনার সিদ্ধান্ত নেন, তখন এতে একটি সাধারণ মানের ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্স কার্ড দেয়া থাকে, যা নিত্য দিনের ব্যবহারের জন্য ভালোই কাজে আসে। তবে এই ধরণের কার্ডগুলো গেমিং এর জন্য তেমন একটা ভালো কাজ করতে পারে না এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গেইমস এ ল্যাগ দেখা দেয়, নয়ত মারাত্মক রকম গরম হওয়ার সমস্যা শুরু হয়। একটি গেমিং পিসির জন্য আপনার উচিত একটি ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ডের পেছনে বিনিয়োগ করা, যেগুলো বিশেষভাবে গেমিং এবং ভিডিও এডিটিং এর মত ভারি ভারি কাজ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। একজন নতুন গেমার হিসেবে আমরা আপনাকে পরামর্শ দেব এনভিডিয়া জি ফোর্স আরটিএক্স ২০৬০ কিংবা ২০৭০ এই দু’টির যেকোনো একটি গ্রাফিক্স কার্ড বেছে নিন। এটি একটি দারুণ মাঝারি মানের অপশন, যাতে আপনি বেশির ভাগ গেইমসই কোনো ধরণের সমস্যা ছাড়াই চালাতে পারবেন এবং এগুলো ৩ থেকে ৪ বছর অনায়াসে টিকে যাবে।

এনভিডিয়া জি ফোর্স এরটিএক্স ২০৮০ টিআই এর মত একটি সত্যিকারের ভাল ভিডিও কার্ডের অসাধারণ মানের ফোর কে গ্রাফিক্স তৈরি করতে পারে, কিন্তু এর দাম বাংলাদেশে ১ লাখ থেকে ১.৫ লাখ টাকার মধ্যে পড়ে, যা আসলে অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই এত দাম দিয়ে গ্রাফিক্স কার্ড তখনই কেনা উচিত, যখন আপনার গেমিং নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক বেশি অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে এবং এটা যে আসলেই আপনার দরকার সে ব্যাপারে আপনি ১০০ ভাগ নিশ্চিত!

এসএসডি

আজকাল যেকোনো গেমিং কম্পিউটারের জন্য একটি সলিড স্টেট ড্রাইভ অর্থাৎ এসএসডি অত্যন্ত আবশ্যক একটি অংশে পরিণত হয়েছে। এটি হচ্ছে একটি ম্যাস স্টোরেজ ডিভাইস, যা এর প্রচলিত অন্যধরণ হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ অর্থাৎ এইচডিডির মত ডাটা রিড ও রাইট করার জন্য কোনো চলমান মেকানিক্যাল আর্মের উপর নির্ভর করে না। আর এই কারণে এসএসডি তুলনামূলক ভাবে ডাটা রিড ও রাইট করার ক্ষেত্রে অনেক বেশি দ্রুততর কাজ করতে পারে। আর এর থেকেই আপনার পিসিতে সব রকম প্রোগ্রাম অত্যন্ত দ্রুততার সাথে স্টার্ট নিতে পারে। এসএসডি আপানাকে দেবে একটি “ইনস্ট্যান্ট অন” পারফরম্যান্স, যা আপনি পিসি অন করার সাথে সাথেই গেম খেলা শুরু করার সুবিধা তৈরি করে দিয়েছে। পিসি স্টার্ট নেয়ার পর পুরো সিস্টেম লোড হওয়ার জন্য আপনাকে আর লম্বা সময় বসে থাকতে হবে না।

পাওয়ার সাপ্লাই

আপনার সেট-আপ এবং এতে থাকা সব রকম সিস্টেম ও উপাদান চালানোর জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি পর্যাপ্ত পাওয়ার সাপ্লাই। যত বাড়তি ডিভাইস আপনার থাকবে, তত বেশি পাওয়ার আপনার প্রয়োজন হবে। 

আর তাছাড়া বিদ্যুৎ শক্তির খরচ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার জন্য এবং শক্তির অপচয় রোধ করার জন্য একটি ৮০ প্লাস পাওয়ার সিস্টেমে বিনিয়োগ করাই সবচেয়ে স্মার্ট সিদ্ধান্ত।

ডিসপ্লে

আপনার পুরো সেট-আপটির সর্বোচ্চ সুবিধা ও পারফরম্যান্স পাওয়ার জন্য একটি ভালো ডিসপ্লে মনিটরের ভূমিকা অপরিসীম। উজ্জ্বল, রঙিন ও সুস্পষ্ট পরিস্কার ছবি উৎপন্ন করতে পারে এমন একটি ডিসপ্লে যদি আপনার সেট-আপে না থাকে, সেক্ষেত্রে অনেক দারুণ গেমিং সরঞ্জাম আপনার হাতে এনে দিলেও সেগুলো আপনার কাছে অর্থহীন হয়ে পড়বে। একটি ডিসপ্লে ভালো বা খারাপ হওয়ার উপর আপনার সম্পূর্ণ গেমিং অভিজ্ঞতা নির্ভর করে। অতএব এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার সময় একটু ভালো দেখে অগ্রসর হওয়া সবচেয়ে উত্তম। 

আমাদের পরামর্শ হবে যে আপনি অন্তত পক্ষে ১৪৪ হার্জ ১০৮০ পিক্সেলের একটি ডিসপ্লে কেনার চেষ্টা করুন, কেননা এই কনফিগারেশনে বেশ ভালো মানের ভিজ্যুয়াল পাওয়া সম্ভব। আপনার গেইমের মধ্যে উজ্জ্বল ও রঙিন সব ডিটেইল তুলে ধরার জন্য এই ডিসপ্লেটি বেশ দারুণ কাজ করতে পারে। তাছাড়া যেসব ইউজাররা এনিমেশন ও গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে কাজ করেন, তাদের জন্যও  এই ডিসপ্লেটি দারুণ পারফরম্যান্স দিতে সক্ষম! 

বিবিধ

উপরে উল্লেখিত সবগুলো সরঞ্জামই বলতে গেলে যেকোনো ধরনের পিসিতে থাকা আবশ্যক। ধাপ ৩ থেকে শুরু করে আপনার চাহিদার উপর নির্ভর করে আপনার গেমিং অভিজ্ঞতাকে আনন্দময় করার জন্য মাউস থেকে শুরু করে কীবোর্ড, এমনকি ওয়েব ক্যাম এবং হেডসেট পর্যন্ত বেশ কিছু বাহ্যিক সরঞ্জাম আপনার কেনার প্রয়োজন হতে পারে।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম হচ্ছে ডিভাইসটির জন্য একটি যথাযথ কুলিং সিস্টেম। ফ্যান কিংবা লিকুইড কুলিং এ দু’টি অপশনের মধ্যে যেকোনো একটি পছন্দ করে নিতে পারবেন। লম্বা সময় ধরে গেইম খেলার দরুণ আপনার পিসিতে যে অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে এই কুলিং সিস্টেম গুলো ব্যাপক সাহায্য করতে পারে। একটি ভালো কুলিং সিস্টেম না রাখলে আপনার এত শখের দামি সব হার্ডওয়্যার গুলো বরবাদ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।

এলইডি ব্যাকলিট কী-বোর্ড কিংবা সিপিউ ইউনিটের মত আরও বাড়তি কিছু বিবিধ সরঞ্জাম আসলে তেমন আহামরি প্রয়োজনের কোনো জিনিস নয়। তবে আপনার দারুণ বিলাসবহুল গেমিং সেট-আপের সাথে এই বাড়তি জিনিসগুলো নিঃসন্দেহে একটা দারুণ স্টাইলের ছোয়া এনে দেবে।

৫. গেমিং পিসি কেনা

উপযুক্ত পরিমাণ রিসার্চ শেষ করার পর, আপনি যখন একেবারে নিশ্চিত যে আপনার ঠিক কী কী লাগবে, তখনই সময় আসে অবশেষে আপনার গেমিং পিসিটি সত্যি সত্যি ঘরে নিয়ে আসার!

একটি কনসোল অথবা গেমিং ল্যাপটপ কেনা তুলনামূলক ভাবে বেশ সহজ, কেননা এগুলো একেকটা অল ইন ওয়ান সিস্টেম। যেকোনো শো-রুম কিংবা সরাসরি দোকান থেকে এগুলো কেনা যায়, অথবা অনলাইন থেকেও কিনে ফেলতে পারবেন। পরের অপশনটির ক্ষেত্রে আপনি বাংলাদেশে যেকোনো ধরণের পিসি কেনার জন্য ভরসা করতে পারেন Bikroy.com । আমাদের সাইট থেকে আপনি সহজেই খুঁজে পেতে পারেন নতুন কিংবা ব্যবহৃত গেমিং সিস্টেম এবং সারা দেশব্যাপী বিভিন্ন বিক্রেতাদের অফার করা দামের মধ্যে তুলনা করে বেছে নিতে পারবেন আপনার জন্য সেরা ডিলটি! 

অন্যদিকে আপনি যদি একটি ডেস্কটপ কিনতে যান, তাহলে কিছুটা বাড়তি পরিশ্রম আপনাকে করতে হবে। একেকটি ডেস্কটপে অগণিত ছোট বড়  সরঞ্জাম থাকে এবং এদের প্রত্যেকটিরই নিজ নিজ বিশেষত্ব রয়েছে। যদি আপনি ডেস্কটপ কেনার ব্যাপারে একদম নতুন হন, তাহলে একটি প্রি-বিল্ট পিসি কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা এগুলোর মধ্যে সব রকম উপাদান ও সরঞ্জাম ঠিকমত ইনস্টল করা থাকে। যদি আপনার ডেস্কটপের ব্যাপারে একটু হলেও অভিজ্ঞতা থাকে, আর সেগুলো সেট-আপ করার পদ্ধতি আপনার জানা থাকে, তাহলে আপনি আপনার মনের মত কাস্টম গেমিং সেট-আপ বানানোর চেষ্টা করতে পারেন। Bikroy-এ রয়েছে সব ধরণের বিক্রির জন্য ডেস্কটপ এবং সেকেন্ড হ্যান্ড গেমিং পিসির উপরও আপনি খুঁজে পাবেন বেশ ভালো কিছু ডিলস। এই অপশনগুলোর মধ্যে একদিকে যেমন আপনি কিছু ভালো প্রি-বিল্ট পিসির সুবিধা পাচ্ছেন, অন্যদিকে অভিজ্ঞ গেমারদের ইনস্টল করা কাস্টম সরঞ্জাম সহ সেট-আপও নিজের করে নেয়ার সুযোগ এখানে পাবেন!

আশা করি আমাদের আজকের প্রতিবেদনটি আপনার পারফেক্ট গেমিং পিসিটি খুঁজে পেতে এবং সেটা কেনার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবে। গেমিং হোক আনন্দের!

গ্রাহকদের নিয়মিত কিছু প্রশ্নের উত্তর:

পিসি গেমিং এর খরচ বেশি নাকি কনসোল গেমিং এর?

এটা নির্ভর করে আপনি কি ধরণের হার্ডওয়্যার ব্যবহার করছেন তার উপর। যদি আপনি মোটামুটি গেমিং সরঞ্জাম সহ একটি পিসি কিনেন তাহলে সেটার দাম কনসোলের চেয়ে খুব একটা বেশি হওয়ার কথা না। এছাড়া যেকোনো কনসোলের সাথে আপনাকে একটা ডিসপ্লে মনিটরও কিনতে হবে। আর সেজন্যই সচরাচর কনসোল সিস্টেম কিনতে গেলে আপনার সামগ্রিক খরচ একটু বেশিই পড়ে যায়।

একটি গেমিং ডেস্কটপ তৈরি করতে কি পরিমাণ সময় লাগতে পারে?

তুলনামূলকভাবে আপনার অভিজ্ঞতা যদি খুব একটা বেশি না থাকে, তাহলে গড়ে আপনার ৩-৪ ঘন্টা লাগতে পারে। তবে অভিজ্ঞ কোনো বন্ধুর সাহায্য নিলে কিংবা ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে করলে এক ঘন্টার ভিতর পুরো সেট-আপ শেষ করা সম্ভব। গেমিং ডেস্কটপ তৈরি করার ক্ষেত্রে আসলে সবগুলো সরঞ্জাম আগে থেকে গুছিয়ে তৈরি রাখা ভাল।

ডেস্কটপ তৈরি করার জন্য কী কী যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হতে পারে?

ঠিক ঠিক জায়গামত সবগুলো পার্টস বসানোর জন্য সচরাচর একটা সাধারন স্ক্রু ড্রাইভারই যথেষ্ট। কিছু পার্টস বসাতে কোনো যন্ত্রই লাগে না, কেননা সেগুলোতে বিল্ট-ইন স্ক্রু দেওয়া থাকে।

একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে বিভিন্ন পার্টস নিয়ে কাজ করার সময় যে ঘর্ষ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, তা পার্টসগুলোকে নষ্ট করতে পারে। পার্টসগুলো লাগানোর সময় ঘর্ষ বিদ্যুৎ এর শক এড়ানোর জন্য উত্তম উপায় হল বিদ্যুৎ প্রতিরোধী মাদুর অথবা হাতের বেল্ট ব্যবহার করা। এতে করে ইন্সটল করার সময় সবগুলো পার্টস আর আপনি নিজেও নিরাপদে থাকবেন।

ওভার ক্লকিং কী?

গেমিং পিসি নিয়ে রিসার্চ করার সময় আপনি নিশ্চয়ই ওভারক্লকিং টার্মটা কমবেশি কয়েকবার শুনেছেন। ইন্টারনাল ক্লক রেট ও অপারেটিং ভোল্টেজ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রক্রিয়াই হল ওভারক্লকিং। এই প্রক্রিয়ায় আপনি আপনার সিপিইউ ও মেমোরিকে অফিসিয়াল স্পিড গ্রেডের চেয়ে বেশি স্পিডে চালাতে পারবেন। এতে করে সিপিইউ এর পারফরম্যান্স আরও বেড়ে যায়। 

তবে আমাদের মতে ওভারক্লকিং না করাই উত্তম, কেননা এটা নানা রকম সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং একটা সময় ইন্টারনাল হার্ডওয়্যারও নষ্ট করে দিতে পারে। আর তাই ম্যানুফেকচাররা যেই অবস্থায় এই জিনিসগুলো জুড়ে দেন, ঠিক সেভাবেই রেখে এদের ব্যবহার করা উত্তম।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close