২০২১ সালে বাংলাদেশে এসি মার্কেটঃ ফিরে দেখা ২০২০
দেশে মধ্যম আয়ের মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার দরুন এসির বাজার প্রতি বছর আকারে বেড়ে চলেছে। পাশাপাশি শহরাঞ্চলে প্রতিনিয়ত স্থাপিত নতুন বিল্ডিং, অ্যাপার্টমেন্টগুলো এসির চাহিদা আরও বাড়িয়ে নিয়ে চলেছে।
একইসাথে দেশে উৎপাদিত এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর সহাবস্থানের জন্য বর্তমানে এসির বাজার অত্যধিক প্রতিযোগিতাপূর্ণ। যদিও ২০২০ সালের শুরুতে করোনা মহামারির কারণে এসি মার্কেট কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল।
Bikroy.com-থেকে প্রাপ্ত ২০২০ সালে বাংলাদেশে এসি কেনাবেচার তথ্যানুযায়ী আজকের এই রিপোর্টটি উপস্থাপন করা হয়েছে। নিরপেক্ষ এবং তথ্যবহুল এই রিপোর্টের মাধ্যমে আমরা বাজারের বর্তমান ট্রেন্ড, অবস্থান, এবং ভবিষ্যতে দৃষ্টিপাত করার চেষ্টা করেছি যা বর্তমান এবং আগামী দিনের কথা বিবেচনার মাধ্যমে এসি খাতে বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়ক হবে। এছাড়াও বর্তমানে দেশের বাজারে এসির দাম নিয়েও থাকছে বিশদ ধারণা।
এসি কেনাবেচার প্রবণতা
Bikroy.com থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২০ সালে এসির বাজার প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের তাপমাত্রা এবং আদ্রতা অনুযায়ী আগামী দিনে এসির বাজার আরও ব্যাপক ভাবে বেড়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষত যখন প্রায় ৯ মাসই আমাদের দেশে গরম তাপমাত্রা বিরাজ করে।
এছাড়াও এসি তৈরিতে প্রযুক্তির অভাবনীয় আগমন যেমনঃ ইনভার্টার প্রযুক্তি অথবা এয়ার পিউরিফিকেশন প্রযুক্তি বাজারে আসার কারণে ভবিষ্যতে সেগুলো এই মার্কেটের ব্যাপকতায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কোন লোকেশনে এসি বেশি ব্যবহৃত হয়?
গত বছর কোভিড-১৯ যদিও দ্রুত বর্ধমান এসি মার্কেটের রাশ কিছুটা টেনে ধরেছিল তথাপি অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০২০ সালে এসির বাজার বেশ ভালো অবস্থানেই ছিল বলা যেতে পারে।
চাহিদানুযায়ী ঢাকা শহরে এসি বেচাকেনা সর্বাধিক হওয়ার কারণ এই শহরে ক্রমাগত বড় বড় স্থাপনার নির্মাণ এবং দেশের মানুষের রাজধানীমুখী হওয়ার মনোভাব। ইনফোগ্রাফিক্স অনুযায়ী, ঢাকা শহর এসি বেচাকেনার তালিকায় প্রায় ৭৭ শতাংশ বিজ্ঞাপন নিয়ে প্রথম অবস্থানে রয়েছে এবং এর পরপরই ১৬ শতাংশ বিজ্ঞাপন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। সিলেট, খুলনা শহর রয়েছে ক্রমান্বয়ে ৩, ২ শতাংশ এবং অন্যান্য শহর থেকে পোস্ট হয়েছে ২ শতাংশ বিজ্ঞাপন।
কোন ব্র্যান্ডের এসি বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে?
প্রতিবছরই গরমের সময় হাঁসফাঁস অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে অনেকেই এসির দ্বারস্থ হয়ে থাকেন, যা এসির চাহিদা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশ সেই সমস্ত দেশগুলোর মাঝে যেখানে প্রায় সারাবছর গরম আবহাওয়ার কারণে এসির চাহিদা থাকে বাজারে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে।
Bikroy.com-এর রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা দেখতে পাই ২০২০ সালে দেশের বাজারে বেচাকেনার জন্য সর্বাধিক বিজ্ঞাপন রয়েছে মিডিয়া-এর যা প্রায় ৪৩ শতাংশ এছাড়াও অন্যান্য জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলো যেমনঃ জেনারেল, গ্রি, এবং চিগোর দখলে রয়েছে যথাক্রমে ১৮, ১৫, এবং ১৪ শতাংশ অ্যাড।
পাশাপাশি দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোও তাদের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের সহজলভ্যতা এবং সহজ এসির রক্ষণাবেক্ষণের নিয়মকানুন, এবং বিক্রয়োত্তর সেবা ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এসব জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিশন, ওয়ালটন, মিনিস্টার, এবং যমুনার মত নামী কিছু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান।
এসির বাজেট কেমন হওয়া উচিত?
বিগত কয়েক বছরে আমাদের দেশের আধুনিক বাসা এবং কর্পোরেট অফিস সমূহের জন্য এসি একটি নিত্য ব্যবহার্য্য পণ্যের তালিকায় উঠে এসেছে। গরমকালের তীব্র দাবদাহ, বা বর্ষা, এমনকি শীতকালেও এসির প্রয়োজনীয়তা জানান দিয়ে চলেছে দেশের বাজারে।
খুব মনোযোগ সহকারে এসির বাজার বিশ্লেষণ করলে আপনি দেখতে পাবেন ৩০,০০০ – ৪০,০০০ টাকার মধ্যেকার এসির বাজার বেশ জনপ্রিয়। পোস্ট হওয়া বিজ্ঞাপনের প্রায় ২৬ শতাংশই এই মূল্যমানের আওতায় রয়েছে।
অন্যদিকে প্রায় ২৪ শতাংশ বিজ্ঞাপন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ২০,০০০-৩০,০০০ টাকার প্রাইস গ্রুপ। তবে যারা এয়ার পিউরিফিকেশন অথবা ইনভার্টার প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এসি খুঁজছেন তাদের ৫০,০০০ টাকার উপরে বাজেট রাখতে হবে, যা ২২ শতাংশ জায়গা নিয়ে আছে সামগ্রিক এসি কেনাবেচা সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনের।
নতুন এসি কেনার প্রবণতাই বেশি
বর্তমানে বদলে যেতে থাকা জলবায়ুর কারণে অনেকেই এসি কিনতে চাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন এবং বেশিরভাগই এসময় নতুন এসিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। এছাড়াও আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এসি ব্যবহার করার ফলে তা অল্প পাওয়ার বা ইলেক্ট্রিসিটি খরচের নিশ্চয়তা দিতে পারে।
Bikroy.com থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এখানে পোস্ট করা এসি কেনাবেচা সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনের প্রায় ৮১ শতাংশই নতুন এসি, এবং বাকি ১৯ শতাংশ বিজ্ঞাপন সেকেন্ড হ্যান্ড বা ব্যবহৃত এসি বেচাকেনার।
কত টনের এসি বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে?
এসি ইন্সটল করার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রুমের আকার। এই কাজে সহায়তা পেতে আপনি অনলাইনের সাহায্য নিতে পারেন, যেখানে রুম/ঘরের আকার দেওয়ার মাধ্যমে তারাই আপনাকে কত ধারণ ক্ষমতার এসি ব্যবহার করতে হবে তা জানিয়ে দেবে।
রুমের আকার, জানালার সংখ্যা, সূর্য-মুখী জানালার সংখ্যা বিবেচনায় রেখে বেশিরভাগ মানুষই ১.৫ টন এসি ব্যবহার করে থাকেন, যা মোট বিজ্ঞাপনের প্রায় ৮২ শতাংশ জায়গা জুড়ে আছে। এছাড়াও ২ টন এবং ১ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এসির বিজ্ঞাপন রয়েছে যথাক্রমে ১০ এবং ৮ শতাংশ।
পরিশেষ
উল্লেখিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২১ সালে এসি শিল্পে বেশ ভালো উন্নয়নের প্রবণতা রয়েছে। এছাড়াও দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি এই শিল্পকে নিয়ে যেতে পারে এক অনন্য উচ্চতায়।
২০২০ সালে কোভিড মহামারি আমাদের বুঝিয়েছে অনলাইন শপিং কতখানি দ্রুত, নিরাপদ, এবং সহজ, এবং এখান থেকে সহজেই অনুমেয় যে আমাদের দেশের হোম লিভিং ইন্ডাস্ট্রি ই-কমার্সের দিকে ঝুঁকবে। কেনার ধরণ যাই হোক না কেন, এসি আজকের দিনে বিলাস দ্রব্যের চেয়ে প্রয়োজনীয় ডিভাইস হিসেবেই বেশি বিবেচিত হচ্ছে।