প্রপার্টি

ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার জন্য সাশ্রয়ী ১০টি এলাকা (২০২৫ গাইড)

ঢাকার মতো ব্যস্ত শহরে ফ্ল্যাট কেনা এখনো অনেক পরিবারের স্বপ্ন। তবে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দাম, লোকেশন এবং দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা। ২০২৫ সালে ঢাকার কিছু এলাকা এখনো সাশ্রয়ী থেকে গেছে, যেখানে তুলনামূলকভাবে কম দামে ফ্ল্যাট পাওয়া যায়। মিরপুর থেকে শুরু করে শান্ত পরিবেশের বাড্ডা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট কেনার জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে।

এখানে তুলে ধরা হলো ঢাকার সাশ্রয়ী ১০টি এলাকা, যেখানে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো যুক্তিসঙ্গত মূল্যে ফ্ল্যাট কিনতে পারে।

১. মিরপুর

মিরপুর ঢাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় সাশ্রয়ী এলাকায় পরিণত হয়েছে। এখানে গড়ে প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দাম প্রায় ৪,৮০০ টাকা। প্রচুর নতুন প্রকল্প এবং দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে মিরপুরে বাজেট-বান্ধব ফ্ল্যাট সহজে পাওয়া যায়। এলাকায় স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল এবং মেট্রোরেল সুবিধা থাকায় যাতায়াতও সহজ। যদিও যানজট একটি সমস্যা, তবুও সাশ্রয়ী দাম ও প্রয়োজনীয় সুবিধার কারণে মিরপুর মধ্যবিত্তদের শীর্ষ পছন্দের তালিকায় রয়ে গেছে।

২. বাড্ডা

বাড্ডা দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকার বাজেট-বান্ধব আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দাম গড়ে প্রায় ৪,৮০০ টাকা, যা মিরপুরের সমান। এলাকার পরিবেশ তুলনামূলকভাবে শান্ত এবং কম ভিড়, তবে গুলশান ও বনানীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক এলাকার কাছাকাছি হওয়ায় এটি পরিবারের কাছে আকর্ষণীয়। এখানে পর্যাপ্ত স্কুল, ব্যাংক, বাজার ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থাকায় বাসিন্দারা সব সুবিধা কাছেই পান। তাই ঢাকার ভেতরে থেকেও যারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চান, তাদের জন্য বাড্ডা উপযুক্ত।

৩. দক্ষিণখান

দক্ষিণখান ঢাকার নতুন উন্নয়নশীল এলাকার মধ্যে অন্যতম। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে হওয়ায় এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এলাকার ফ্ল্যাটের দাম এখনো ঢাকার প্রিমিয়াম জোনগুলোর তুলনায় অনেক কম। এয়ারপোর্ট রোড দিয়ে সহজ যাতায়াত এবং ক্রমবর্ধমান অবকাঠামো দক্ষিণখানকে প্রথমবার ফ্ল্যাট কেনার জন্য একটি ভালো জায়গায় পরিণত করেছে। যদিও এলাকা এখনো উন্নয়নশীল, তবুও ভবিষ্যতে এর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক।

৪. দিয়াবাড়ি (উত্তরা এক্সটেনশন)

উত্তরার সীমানায় অবস্থিত দিয়াবাড়ি এখন সাশ্রয়ী দামে ফ্ল্যাট কেনার অন্যতম কেন্দ্র। মূল উত্তরা এলাকার তুলনায় এখানে ফ্ল্যাটের দাম অনেক কম, তবে সুবিধা প্রায় একই। মেট্রোরেল চালুর কারণে দিয়াবাড়ির সঙ্গে শহরের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর সংযোগ আরও সহজ হয়েছে। নতুন নতুন ফ্ল্যাট প্রকল্প এবং অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে এটি বাজেট-বান্ধব ক্রেতাদের জন্য একটি আকর্ষণীয় জায়গা হয়ে উঠছে।

৫. বনশ্রী

রামপুরা ও আফতাবনগরের কাছাকাছি বনশ্রী এলাকায় ফ্ল্যাটের দাম এখনো তুলনামূলকভাবে কম। এর বিশেষত্ব হলো, গুলশান ও বনানীর মতো প্রিমিয়াম এলাকার কাছাকাছি হয়েও এখানে দাম অনেক সাশ্রয়ী। এলাকাটিতে স্কুল, শপিংমল, হাসপাতাল এবং প্রশস্ত সড়ক রয়েছে। পরিকল্পিত পরিবেশের কারণে বনশ্রী পরিবারগুলোর কাছে বিশেষ জনপ্রিয়। যারা কম খরচে প্রিমিয়াম এলাকার কাছাকাছি থাকতে চান, তাদের জন্য এটি উপযুক্ত স্থান।

৬. উত্তরা

উত্তরা ঢাকার অন্যতম জনপ্রিয় আবাসিক এলাকা। যদিও কেন্দ্রীয় উত্তরা কিছুটা ব্যয়বহুল, তবে বাইরের সেক্টরগুলোতে এখনো সাশ্রয়ী দামে ফ্ল্যাট পাওয়া যায়। এলাকাটিতে রয়েছে ভালো স্কুল, হাসপাতাল, শপিংমল এবং মেট্রোরেল সুবিধা। পরিকল্পিত অবকাঠামো, নিরাপদ পরিবেশ এবং তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্য মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে উত্তরা’কে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

৭. মোহাম্মদপুর

মোহাম্মদপুর ঢাকার পুরনো কিন্তু সাশ্রয়ী একটি এলাকা। এখানে ফ্ল্যাটের দাম ধীরে ধীরে বাড়ছে, তবে এখনো ধানমন্ডির তুলনায় কম। এলাকায় বাজার, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাসপাতাল সহজলভ্য। মোহাম্মদপুরের প্রতিষ্ঠিত অবকাঠামো এবং প্রাণবন্ত পরিবেশ পরিবারগুলোর কাছে এটি জনপ্রিয় করে তুলেছে। যারা বাজেটের মধ্যে থেকে ভ্যালু চান, তাদের জন্য মোহাম্মদপুর একটি নির্ভরযোগ্য এলাকা।

৮. বসুন্ধরা রেসিডেনশিয়াল এরিয়া

বসুন্ধরা সাধারণত প্রিমিয়াম এলাকা হিসেবে পরিচিত, তবে গুলশান বা বনানীর তুলনায় এখনো এখানে ফ্ল্যাটের দাম তুলনামূলক কম। পরিকল্পিত অবকাঠামো, প্রশস্ত সড়ক, নিরাপত্তা এবং নামী বিশ্ববিদ্যালয় ও শপিংমল থাকার কারণে এটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ভালো জায়গা। যারা সাশ্রয়ী দামে আধুনিক পরিবেশ চান, তাদের জন্য বসুন্ধরা একটি উপযুক্ত বিকল্প।

৯. ধানমন্ডি

ধানমন্ডি ঢাকার অভিজাত এলাকার মধ্যে অন্যতম, তবে পুরনো অ্যাপার্টমেন্টগুলো এখনো তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। নতুন প্রকল্পে দাম বেশি হলেও পুরনো ফ্ল্যাটে বাজেট-বান্ধব অপশন পাওয়া যায়। ধানমন্ডি স্কুল, কলেজ, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং সবুজ পরিবেশের জন্য বিখ্যাত। যারা কেন্দ্রীয় স্থানে থাকতে চান কিন্তু বাজেট সীমিত, তাদের জন্য ধানমন্ডির পুরনো ফ্ল্যাটগুলো ভালো বিকল্প।

১০. মহাখালী ও গ্রিন রোড সংলগ্ন এলাকা

মহাখালী ও গ্রিন রোডের আশপাশ এখনো তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। গুলশান বা বনানীর তুলনায় এখানে দাম অনেক কম, তবে শহরের কেন্দ্রীয় সুবিধা পাওয়া যায়। এলাকাটিতে হাসপাতাল, অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বাজার সবকিছু কাছাকাছি। যানজট একটি সমস্যা হলেও শহরের কেন্দ্রস্থলে কম দামে থাকার সুযোগ পরিবারগুলোর কাছে এটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

কেনার আগে যা দেখবেন

ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার সময় অবশ্যই প্রতি বর্গফুটের দামের দিকে নজর দিন। মেট্রোরেল সুবিধার কারণে উত্তরা ও দিয়াবাড়ির মতো এলাকায় ভবিষ্যতে দাম বাড়বে। দীর্ঘমেয়াদি ভ্যালুর জন্য বসুন্ধরা ও উত্তরা ভালো বিকল্প। পাশাপাশি, স্কুল, হাসপাতাল ও বাজার কাছাকাছি আছে কি না তা বিবেচনা করুন। সবশেষে, প্রকল্পের ডেভেলপারের সুনাম যাচাই করুন যাতে ভবিষ্যতে কোনো আইনি বা মানগত ঝামেলা না হয়।

ঢাকায় ফ্ল্যাট খুঁজছেন? Bikroy-এ ঢুঁ মেরে দেখুন, মিরপুর থেকে শুরু করে উত্তরা ও বসুন্ধরা পর্যন্ত সব সাশ্রয়ী এলাকার ফ্ল্যাট পাবেন এক জায়গায়। দাম তুলনা করুন এবং আপনার বাজেট অনুযায়ী সঠিক ফ্ল্যাট বেছে নিন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১. ঢাকায় সবচেয়ে সস্তা ফ্ল্যাট কোথায় পাওয়া যায়?

মিরপুর ও বাড্ডায় ফ্ল্যাটের দাম সবচেয়ে কম।

২. উত্তরা কি গুলশানের তুলনায় সাশ্রয়ী?

হ্যাঁ, উত্তরা অনেক সাশ্রয়ী এবং অবকাঠামোতেও উন্নত।

৩. যাতায়াতের জন্য কোন এলাকা ভালো?

দিয়াবাড়ি ও উত্তরা, মেট্রোরেল ও এয়ারপোর্ট রোডের কারণে।

৪. পুরনো এলাকা যেমন মোহাম্মদপুর কি এখনো ভ্যালু দেয়?

অবশ্যই, সাশ্রয়ী দাম ও প্রতিষ্ঠিত অবকাঠামোর কারণে।

৫. ফ্ল্যাট কেনার আগে কি যাচাই করা উচিত?

জমির কাগজপত্র ও অনুমোদন অবশ্যই যাচাই করা উচিত।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close