সাশ্রয়ী দামে মোটরবাইক কেনার টিপস

মোটরবাইক বর্তমানে দৈনন্দিন জীবনের একটি অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। নিত্যদিনের যানজট এবং অনিরাপদ গণপরিবহন সমস্যা এড়াতে অনেকেই এখন মোটরবাইক ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন। দেশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেলের বিভিন্ন ফিচার বিশিষ্ট মোটরবাইক পাওয়া যায়। এর মধ্যে সাধ্যের মধ্যে পারফেক্ট ম্যাচিং বাইক পাওয়াটা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং বটে। সাশ্রয়ী মূল্যে বাইক কেনার মানে এই নয় যে, পারফরম্যান্স এবং কোয়ালিটির সাথে আপস করতে হবে। বরং কিছু স্মার্ট স্টেপ এবং টিপস ফলো করলে বাজেটের মধ্যেই আপনার প্রয়োজন মাফিক নিখুঁত মোটরসাইকেল পেতে পারেন।
রেগুলার যোগাযোগের প্রয়োজনে মোটরবাইক কেনা অনেকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে যখন সীমিত বা নির্দিষ্ট বাজেট থাকে। এই ব্লগে সাশ্রয়ী দামে মোটরবাইক কেনার টিপস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই টিপসগুলো নির্দিষ্ট বাজেটের মধ্যে আপনার চাহিদা পূরণ এবং দীর্ঘদিন ব্যবহার উপযোগী সেরা একটি মোটরবাইকটি খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।
(১) আপনার কি ধরণের বাইক প্রয়োজন তা বিবেচনা করুন
আপনার প্রয়োজনের উপর মোটরসাইকেলের ধরণ নির্ধারণ করুন। আপনি কি রেগুলার ব্যবহারের জন্য বাইক খুঁজছেন। বাইকটি যে সব রাস্তায় চালাবেন, সে সব রাস্তার অবস্থা কেমন। ফুয়েল এফিসিয়েন্ট নাকি স্পিডি বাইক প্রেফার করেন। হাইওয়ে নাকি সিটি রোডে ব্যবহার করবেন। এসব বিষয় মাথায় রেখে মোটরবাইক নির্বাচন করুন।
হাই-পারফর্মিং থেকে সরে এসে লং-লাস্টিং সাসপেনশন, টায়ার, ইঞ্জিনের দিকে ফোকাস করুন। ছোট সিলিন্ডার বিশিষ্ট সাধারণ ফিচারের বাইক বেঁছে নিন। সাধারণত কমিউটার এবং স্ট্যান্ডার্ড বাইকগুলোতে আপনি সাশ্রয়ী দামের মধ্যে সকল সুবিধা পাবেন। এই বাইকগুলো লং-লাস্টিং সাপোর্ট দিতে পারে। তবে স্পিড কিছুটা কম এবং হাইওয়ে রোডে অনিরাপদ হতে পারে।
(২) বাজেট সেট করুন
আপনার জীবনধারা, প্রয়োজন এবং বাজেটের সাথে মানানসই বাইক বাছাই করুন। একটি বাস্তব সম্মত বাজেট সেট করুন। বাইকের দামের সাথে রেজিস্ট্রেশন, বীমা, ট্যাক্স, ইত্যাদি খরচ যোগ করুন। ভবিষ্যতের রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত, ইত্যাদি চলমান খরচের বিষয়গুলো বিবেচনা করুন। পুরানো মডেলগুলোর দাম অনেকটা কম হতে পারে। কিস্তিতে কিনতে চাইলে, শর্তগুলো বাজেট বান্ধব কিনা বুঝে নিন।
(৩) বাজার গবেষণা করুন
ভালো ডিল কোথায় পাবেন তা গবেষণা করুন। ডিলারশিপ, শোরুম, অনলাইন মার্কেটপ্লেস, কোথায় পারফেক্ট ডিল হবে যাচাই করুন। বিক্রয় ডট কম, ক্রেইগলিস্ট, ফেসবুক মার্কেটপ্লেসের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলোতে নিয়মিত খোঁজ রাখুন। এই প্লাটফর্মগুলোতে সাশ্রয়ী মূল্যের মধ্যে অনেক অপশন পাবেন। এখানে বিভিন্ন ছাড় এবং অফারে নতুন বাইক পাবেন। তবে অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে সেকেন্ডহ্যান্ড বাইক কেনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রতারণা এড়াতে বিক্রেতার সাথে সরাসরি দেখা করে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিদর্শন করে মোটরবাইক কিনুন। অর্থ সাশ্রয়ের জন্য আগের বছরের পুরানো মডেল কেনার কথা বিবেচনা করতে পারেন।
(৪) ব্ল্যাক ফ্রাইডে, ক্লিয়ারেন্স সেল, ইত্যাদি বিশেষ ইভেন্টে নজর রাখুন
ব্ল্যাক ফ্রাইডে, ফ্ল্যাশ সেল, স্টক ক্লিয়ারেন্স, ইত্যাদি বিশেষ ইভেন্টের দিকে নজর রাখুন। এলাকাভিত্তিক সিজনাল সেল কিংবা জাতীয় পর্যায়ের ডিলারশিপ ইভেন্টগুলোতে নজর রাখুন। নির্দিষ্ট কিছু আউটলেটে, নির্দিষ্ট কিছু বাইক মডেলে সারা বছরই ডিসকাউন্ট থাকে। এছাড়াও ডিলারশিপ ইভেন্টগুলোতে নির্দিষ্ট এবং পুরানো মডেলগুলোতে বেশ ছাড় দেয়, বিশেষ করে ক্লোজআউট মডেলগুলোতে। এছাড়াও মাঝে মাঝে পোর্ট, বর্ডার এবং কিছু অকশন সেন্টারে অনেক কম দামে বাইক বিক্রি হয়। মোটরসাইকেল এক্সপো কিংবা প্রমোশনাল ইভেন্টগুলোতে নজর রাখুন।
(৫) পারফেক্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করুন
যেকোনো বাইকের আপগ্রেড মডেল বাজারে আসলে, পূর্ববর্তী মডেলের দাম কিছুটা হলেও কমে যায়। ডিলাররা পূর্ববর্তী বছরের মডেলগুলোতে ছাড় দেন। এখানকার ব্র্যান্ডগুলো প্রতি বছরই নতুম কিংবা আপগ্রেড মডেলের বাইক লঞ্চ করে। এছাড়াও প্রতিযোগী কোম্পানি বাড়ার ফলে, বাইকের দাম দেড়-দুই বছরের মধ্যেই অনেকটা কমে যায়। শীতের সিজন, ডিলারদের প্রণোদনার সুবিধা, ইত্যাদি সময়েও বেশ কিছু মডেলের বাইকের দাম কমে যায়। এছাড়াও বিক্রেতারা বিভিন্ন ফেস্টিভ সিজনে অফার ও ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকেন।
(৬) ইএমআই (EMI) কিংবা ক্রেডিট কার্ড পেমেন্ট সুবিধা বিবেচনা করুন
অনেক শোরুম এবং বিক্রেতা ইএমআই (EMI) সুবিধা দিয়ে থাকে। যা গ্রাহকের জন্য বেশিরভাগ সময়ই সুবিধাজনক হয়ে থাকে। অনেক ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পেমেন্টে ডিসকাউন্ট অফার করে। এরকম সুবিধাগুলো গ্রহণ করতে পারেন। ব্যাঙ্ক বা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাইক লোন অফারগুলো বিবেচনা করতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে সুদের হার এবং শর্ত ভালোভাবে যাচাই করে নেবেন।
আরো কিছু সাধারণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে
(১) সেকেন্ড-হ্যান্ড কিংবা পুরোনো বাইকে বেশ ভালো ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে বাইকের কন্ডিশন ভালোভাবে পরীক্ষা করতে হবে।
(২) যে মোটরবাইকটি কিনতে চাচ্ছেন, সেটির দাম এবং যন্ত্রাংশ এভেইলেবল কিনা যাচাই করুন।
(৩) লং-লাস্টিং পারফরম্যান্স, রেগুলার ব্যবহার উপযোগী এবং কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বিশিষ্ট মোটরবাইকগুলোর লিস্ট তৈরী করে কম্পেয়ার করুন।
(৪) বীমা, রেজিস্ট্রেশন, ট্যাক্স, ইকুইপমেন্ট, ফুয়েল এফিসিয়েন্সি এবং রেগুলার রক্ষণাবেক্ষণের মতো অতিরিক্ত খরচের বিষয়গুলো মাথায় রাখুন।
(৫) বাইক নির্মাতা কোম্পানির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট এবং ফেইসবুক পেজে অফার চেক করুন।
(৬) প্রথম সারির ব্র্যান্ডের বাইক কিনুন, এসব বাইকের রিসেল ভ্যালু ভালো।
(৭) সম্পূর্ণ ক্যাশ পেমেন্টে বিক্রেতার সাথে দর কষাকষি করে মূল্য কিছুটা কমানোর চেষ্টা করুন।
সাশ্রয়ী দামে মোটরবাইক কিনতে সঠিক পরিকল্পনা এবং গবেষণা জরুরি। যেহেতু সীমিত বাজেট, তাই আপনাকে লং-লাস্টিং, ফুয়েল এফিসিয়েন্ট, এবং সাধারণ স্পেসিফিকেশনের মধ্যে হাই পারফর্মিং মোটরবাইকটি খুঁজে বের করতে হবে। আশা করা যায়, উপরে উল্লেখিত টিপসগুলো আপনাকে বাজেটের সাথে মানানসই সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাশিত প্রশ্নাবলী
(১) সাশ্রয়ী দামে মোটরবাইক কেনার ক্ষেত্রে কি ধরণের মোটরবাইক বেছে নেওয়া উচিত?
সাশ্রয়ী দামে মোটরবাইক কেনার ক্ষেত্রে ছোট সিলিন্ডার বিশিষ্ট সাধারণ ফিচারের কমিউটার এবং স্ট্যান্ডার্ড টাইপ বাইকগুলো বেছে নেওয়া উচিত। এই বাইকগুলো লং-লাস্টিং সাপোর্ট দিতে পারে।
(২) সিম্পল স্পেসিফিকেশনের নতুন বাইক, নাকি সেকেন্ডহ্যান্ড বাইক কেনা বেশি সাশ্রয়ী হবে?
নতুন বাইক কেনাটা পারফরম্যান্সের দিক থেকে সুবিধাজনক। এতে গ্যারান্টি-ওয়ারেন্টি থাকে। আর্থিক দিক থেকে সেকেন্ডহ্যান্ড বাইক বেশি সাশ্রয়ী। তবে কোনো খুঁত থাকলে, হিতে-বিপরীত হতে পারে।
(৩) শো-রুম থেকে কিভাবে সাশ্রয়ী দামে বাইক কেনা যাবে?
বিভিন্ন শো-রুমে বাইকের দাম তুলনা করুন, ডিসকাউন্ট বা অফারের বিষয়ে জানুন, এবং বিশেষ ইভেন্টে ছাড় সম্পর্কে জেনে নিন। এভাবে আপনার বাজেট অনুযায়ী উপযুক্ত বাইক নির্বাচন করুন।
(৪) মোটরবাইকের ফুয়েল ইকোনমি কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
সাশ্রয়ী দামে বাইক কেনার ক্ষেত্রে ফুয়েল ইকোনমির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এতে দীর্ঘমেয়াদী খরচ কম হবে। কেনার সময় ফুয়েল এফিসিয়েন্ট ফিচারের বাইকের দিকে নজর দিতে হবে।
(৫) সাশ্রয়ী দামে মোটরবাইক পেতে কি কি কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে?
বাইক শো-রুমে ডিসকাউন্ট, অফার বা ক্যাশ ব্যাক সুবিধা, ব্ল্যাক ফ্রাইডে, ক্লিয়ারেন্স সেল, ইএমআই (EMI), ক্রেডিট কার্ড পেমেন্ট সুবিধা, ইত্যাদি কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে।