বাংলাদেশের গাড়ির বাজার 🚗
বর্তমান যুগে গাড়িকে কেবল মাত্র পরিবহনের মাধ্যম হিসেবেই গণ্য করা হয় না বরং গাড়ি আরও অনেক কিছুর পরিমাপক হিসেবে ভূমিকা পালন করে। গাড়ি আধুনিকতা, সফলতা এবং অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার প্রতীক। একটি নিজস্ব গাড়ি রাখার চর্চা বিশ্বব্যাপী উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আজকের এই দিনে বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল দেশের মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে উচ্চহারে বৃদ্ধি পেয়েছে গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন ব্যবহার।
অবাক না হবার মতই একটি বিষয় এই যে Bikroy–এ গাড়ির লিস্টিঙের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে (৬৯.৪৩%), এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে (১৯.১৯%) এবং তারপর সিলেট বিভাগে (৮%)। এই এলাকাগুলোতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শহরগুলো আছে বলে ধরে নেয়া হয় এবং এই এলাকাগুলোতে ইন্টারনেটের ব্যবহারও সবচেয়ে বেশি। ঢাকার লিস্টিঙের পরিমাণ অন্যান্য সকল এলাকার সম্মিলিত লিস্টিঙের পরিমাণের চেয়েও বেশি। এটি শুধু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ঘনত্বকেই নির্দেশ করে না বরং ঢাকায় বসবাসকারী গাড়ি ব্যবহারকারীদের পুরনো গাড়ি বেঁচে দিয়ে নতুন গাড়ি কেনার প্রবণতাকেও নির্দেশ করে।
লিস্টিং অনুসারে সালুন (৫৪.৮১%) বাংলাদেশের বাজারে সবচেয়ে জনপ্রিয় গাড়ি। গাড়ির এই বিভাগগুলো সাধারণত গাড়ি চালানোর স্বাচ্ছন্দ্য এবং সামগ্রিক সুবিধার উপর ভিত্তি করে করে করা। এমপিভি (১৬.৭৮%) এবং এসইউভি (১০.২৬%) গাড়িগুলো যদিও এখন সালুন গাড়িগুলোর চেয়ে পিছিয়ে আছে, অদূর ভবিষ্যতে লিস্টিঙে এদের এগিয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। এমভিপি গাড়িগুলো সাধারণত ছোট ছোট গ্রুপের লোকজনের পরিবহণের কাজে ব্যবহার করা হয়। এই গাড়িগুলোর সাধারণের চেয়ে বেশি চালন ক্ষমতা বাংলাদেশের প্রতিনিয়ত নির্মাণ কাজ চলতে থাকা রাস্তাঘাটের জন্য খুবই উপযোগী। এসইউভি গাড়িগুলোতে এমভিপি গাড়িগুলোর চেয়ে কম মানুষ বহন করা যায় তবে এই গাড়িগুলো শহর এবং গ্রামের অসমতল এবং রুক্ষ রাস্তায় চলার জন্য খুবই উপযোগী। লিস্টিঙে অল্পসংখ্যক স্পোর্টস এবং কনভারটিবল গাড়ি দেখা যায় যা নির্দেশ করে- এই দেশে বিলাসবহুল এবং উচ্চ মূল্যের গাড়ির একটি ছোট বাজারও রয়েছে।
আমরা যদি গাড়ির ব্র্যান্ডের দিকে লক্ষ্য করি তবে দেখা যাবে সম্পূর্ণ লিস্টিঙের ৮৯.৪৬% অংশই টয়োটা তাদের দখলে নিয়ে পুরো বাজারের উপর আধিপত্য বিস্তার করছে। যদিও বিষয়টি একেবারেই অবাক হবার মত নয়, কেননা যুগ যুগ ধরে বিশ্ব বাজারে টয়োটা তাদের ব্যবহারকারীদের নির্ভরযোগ্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে আসছে এবং তাদের কাছ থেকে এক ধরণের দীর্ঘস্থায়ী আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। গাড়ি এমন একটি পণ্য যা বহু বছর ধরে ব্যবহার করা হয়, যে কারণে ক্রেতারা গাড়ি কেনার সময় ব্র্যান্ডের খ্যাতির উপর বিশেষ নজর দিয়ে থাকেন। টয়োটার পর আধিপত্য বিস্তারকারী তিনটি ব্র্যান্ডও জাপানি বৃহত্তর অটোমোটিভ কোম্পানি – নিশান (৪.০১%), হোন্ডা (৩.২৩%) এবং মিতসুবিসি (২.৪৬%)। সেরা পাঁচ ব্র্যান্ডের মধ্যে সর্বশেষ ব্র্যান্ডটি হল একটি কোরিয়ান মাল্টিন্যাশনাল অটোমোটিভ কোম্পানি হুন্দাই (০.৮৪%)। কোরিয়ান গাড়ি সম্প্রতি বাংলাদেশের বাজারে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এবং এ অঞ্চলের ক্রেতাদের কাছে ভাল সাড়া পাচ্ছে। ব্র্যান্ড নিউ কোরিয়ান গাড়িগুলো তাদের জাপানি প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে আরও বেশি সস্তা এবং তারা তাদের গাড়িতে এমন কিছু বিলাসবহুল ফিচার সংযোজন করে যা সাধারণতই ক্রেতাদের আরও বেশি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়; যেমন: লেদারের তৈরি সিট।
মূল্যের দিক থেকে লিস্টিঙের বেশির ভাগ গাড়িই ২০ লাখ টাকার নিচে। ১০-২০ লাখ টাকা মূল্যের মধ্যে অবস্থিত গাড়িগুলোই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এই মূল্য শ্রেণীর লিস্টিং পরিমাণ ৩৮.৮৮%। ৫-১০ লাখ টাকার গাড়িগুলোর মূল্য শ্রেণীর লিস্টিং ২২.৮২%। টয়োটা গাড়ির জনপ্রিয়তার পাশাপাশি এই মূল্য শ্রেণী বিভাগগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করলে বুঝা যায় যে, অধিকাংশ ক্রেতারাই যুক্তিসঙ্গত মূল্যে নির্ভরযোগ্য এবং ভাল মানের গাড়ি ক্রয় করতে ইচ্ছুক। এই শ্রেণী বিভাগের দিকে লক্ষ্য করলে এটাও যথেষ্ট পরিষ্কার ভাবে লক্ষ্য করা যে বাজারে উচ্চমূল্যের গাড়িরও বেশ চাহিদা রয়েছে, কেননা লিস্টিঙের ২৪.৫২% গাড়ির মূল্য ২০ লাখ টাকার উপরে। আসন্ন বছরগুলোতে মানুষের পুঁজি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে এবং এতে করে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের গাড়ির বাজার অত্যন্ত অনুকুল এবং আশাপ্রদ। ট্রাফিক জ্যামের সমস্যা নিরসন করার লক্ষ্যে প্রধান প্রধান শহরগুলোতে প্রতিনিয়তই নতুন পরিবহণ অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে যা দেশের আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থাকে ভবিষ্যতে করবে আরও অটুট এবং নিরবিচ্ছিন্ন। আশা করা যায় যে, অল্প কিছু বছরের মধ্যেই এদেশের রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। যে বিষয়টি এখন কৌতূহলের উদ্রেক ঘটাবে তা হল- বাংলাদেশের বাজারে নতুন শ্রেণীর গাড়ি যেমন, হাইব্রিড এবং ইভি প্রবেশ করলে ক্রেতারা কিভাবে সেগুলো গ্রহণ করবে এবং এই গাড়িগুলো বাংলাদেশের সামগ্রিক গাড়ির বাজার এবং ব্যবহারিক মনোভাবে কি ধরণের পরিবর্তন আনবে।