ইলেকট্রনিক্স

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সেরা হোম অ্যাপ্লায়েন্সসমূহ

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকট এবং বিদ্যুতের দাম বাড়তে থাকায় অনেক পরিবারই ঘর সাজাতে গিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হোম অ্যাপ্লায়েন্স খুঁজছেন। শুধু মাসিক বিদ্যুৎ বিল কমানোই নয়, পরিবেশ রক্ষা এবং দীর্ঘমেয়াদি সাশ্রয় নিশ্চিত করার জন্য ইনভার্টার প্রযুক্তি হোম অ্যাপ্লায়েন্স বেছে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই লেখায় আমরা আলোচনা করবো ৫টি বহুল ব্যবহৃত সেরা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হোম অ্যাপ্লায়েন্স ২০২৫ ও বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর কথা।

ফ্রিজ/রেফ্রিজারেটর

ফ্রিজ আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ। তবে এটি ২৪ ঘণ্টা চালু থাকায় এটি সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে এমন অ্যাপ্লায়েন্সগুলোর একটি। ইনভার্টার প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ফ্রিজগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ খরচ নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে সাশ্রয় হয় গ্যাস ও বিদ্যুৎ দুই-ই। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইলেকট্রনিক পণ্য এর মাঝে ওয়ালটনের ইনভার্টার সিরিজের ফ্রিজগুলো বেশ জনপ্রিয়, কারণ এগুলোতে রয়েছে ৫ স্টার এনার্জি রেটিং এবং উন্নত কুলিং প্রযুক্তি। এলজি এবং স্যামসাং এর স্মার্ট ইনভার্টার কম্প্রেসর যুক্ত মডেলগুলো বেশ টেকসই এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে অত্যন্ত কার্যকর। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে সিঙ্গার এবং শার্প-এর ফ্রিজগুলোতেও রয়েছে ডুয়াল কুলিং, অটো ডিফ্রস্ট এবং এনার্জি সেভিং ফাংশন যা আধুনিক ঘরের জন্য আদর্শ।

এসি (এয়ার কন্ডিশনার)

বাংলাদেশের গরম আবহাওয়ায় এসি একটি প্রয়োজনীয় কিন্তু বিদ্যুৎ-খরচবহুল যন্ত্র। কিন্তু বর্তমানে ইনভার্টার প্রযুক্তি হোম অ্যাপ্লায়েন্স এর আগমনে এসির বিদ্যুৎ খরচ ৩০-৫০% পর্যন্ত কমানো সম্ভব হচ্ছে। গ্রি ব্র্যান্ডের G10 ইনভার্টার সিরিজ এসি গুলো ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে তাদের কম বিদ্যুৎ খরচ এবং টেকসই পারফরমেন্সের কারণে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ওয়ালটন তাদের স্মার্ট ইনভার্টার সিরিজে এনেছে IoT সমর্থিত মডেল যা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং বিদ্যুৎ খরচ অনেকটাই কমিয়ে দেয়। স্যামসাং এর WindFree সিরিজে রয়েছে মাইক্রো হোল প্রযুক্তি যা কনভেনশনাল এসির তুলনায় অনেক বেশি আরামদায়ক এবং সাশ্রয়ী। মিডিয়া ও জেনারেল ব্র্যান্ডগুলোর এসিও স্থায়িত্ব ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের দিক থেকে এগিয়ে।

মাইক্রোওয়েভ ওভেন

বর্তমান ব্যস্ত জীবনে রান্নার জন্য মাইক্রোওয়েভ ওভেন একটি অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্র। তবে অনেকেই জানেন না যে ওভেনের সঠিক ব্যবহার ও সাশ্রয়ী প্রযুক্তি বিদ্যুৎ বিল অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্যানাসোনিকের ইনভার্টার প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ওভেনগুলো খাবার দ্রুত গরম করায় সময় ও বিদ্যুৎ দুই-ই বাঁচে। স্যামসাং এর HotBlast ও Smart Sensor প্রযুক্তি থাকা মডেলগুলোতে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় কুকিং অপশন, যা খাবার অনুযায়ী সময় ও তাপমাত্রা নির্ধারণ করে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইলেকট্রনিক পণ্য হিসেবে শার্প ব্র্যান্ডের ইকো মোড ফিচারযুক্ত ওভেনগুলোর ব্যবহার অনেকটাই সাশ্রয়ী এবং ঘরের পরিবেশের জন্য নিরাপদ। ওয়ালটনও তাদের মাইক্রোওয়েভ লাইনে উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত করে তুলনামূলক কম দামে ভালো বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী মডেল বাজারে এনেছে।

ওয়াশিং মেশিন

ঘরে ব্যবহৃত অন্যতম দরকারি অ্যাপ্লায়েন্স হলো ওয়াশিং মেশিন। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ইনভার্টার মোটর যুক্ত ওয়াশিং মেশিনগুলো সাধারণ মোটরের তুলনায় ৩০% পর্যন্ত কম বিদ্যুৎ খরচ করে এবং নীরবে কাজ করে। এলজি’র Direct Drive ও Smart Inverter প্রযুক্তি যুক্ত ওয়াশিং মেশিনগুলোতে কম্পন কম, পরিষ্কার দক্ষতা বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী মোটর রয়েছে। স্যামসাং তাদের EcoBubble সিরিজে এমন প্রযুক্তি যুক্ত করেছে যা ঠান্ডা পানিতে সাবান গলিয়ে কার্যকরভাবে কাপড় পরিষ্কার করে—ফলে হিটিং এলিমেন্ট ব্যবহার কম হয় এবং বিদ্যুৎ বাঁচে। হুইরপুলের 6th Sense Technology কাপড়ের ওজন ও ধুলোর মাত্রা বুঝে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ও বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ করে। ওয়ালটনও বাজেট ফ্রেন্ডলি ইনভার্টার ওয়াশিং মেশিন এনে বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্ত করেছে।

এলইডি টিভি

বর্তমানে টিভি শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং স্মার্ট লাইফস্টাইলের একটি অংশ। LED ডিসপ্লে প্রযুক্তি LCD ও CRT টিভির তুলনায় অনেক কম বিদ্যুৎ খরচ করে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইলেকট্রনিক পণ্য হিসেবে সনি ব্রাভিয়া সিরিজের LED টিভিগুলোতে রয়েছে Eco Mode ও Motion Sensor, যা টিভি চালু থাকলেও কেউ না থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিসপ্লে অফ করে দেয়। স্যামসাং এর QLED ও Crystal UHD সিরিজে Eco Sensor প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যা ঘরের আলো বুঝে ব্রাইটনেস কম-বেশি করে। ওয়ালটনের LED স্মার্ট টিভিগুলো স্থানীয়ভাবে তৈরি হওয়ায় তুলনামূলকভাবে কম দামে ভালো বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী অপশন পাওয়া যায়। এলজি’র ThinQ AI স্মার্ট টিভিগুলোতেও রয়েছে এনার্জি সেভিং প্রযুক্তি এবং ভয়েস কন্ট্রোল সুবিধা।

উপসংহার

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হোম অ্যাপ্লায়েন্স ব্যবহার শুধু আর্থিক সাশ্রয়ই নয়, বরং পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীলতারও পরিচায়ক। আজকের প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে ইনভার্টার প্রযুক্তি হোম অ্যাপ্লায়েন্স এর সঠিক ব্যবহার ঘরের বিদ্যুৎ খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে। বাংলাদেশে ওয়ালটন, এলজি, স্যামসাং, শার্প ও প্যানাসোনিকের মতো ব্র্যান্ডগুলো ক্রমাগত উন্নত ও বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী হোম অ্যাপ্লায়েন্স বাজারজাত করছে। তাই নতুন অ্যাপ্লায়েন্স কেনার সময় শুধু দামের দিকে না তাকিয়ে, এনার্জি রেটিং, ফিচার এবং দীর্ঘমেয়াদি সাশ্রয়ের বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১. কিভাবে বুঝবো কোন অ্যাপ্লায়েন্স বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী?

এনার্জি রেটিং (যেমন ৫-তারকা) এবং ইনভার্টার প্রযুক্তির উল্লেখ থাকলে সেটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী অ্যাপ্লায়েন্স।

২. বাংলাদেশে কোন ব্র্যান্ডের ফ্রিজ সবচেয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী?

Walton, LG ও Samsung ব্র্যান্ডের ইনভার্টার ফ্রিজগুলো বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বেশ কার্যকর।

৩. ইনভার্টার প্রযুক্তি কীভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সাহায্য করে?

ইনভার্টার প্রযুক্তি মোটরের গতি নিয়ন্ত্রণ করে প্রয়োজন অনুযায়ী বিদ্যুৎ খরচ করে, ফলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ অপচয় হয় না।

৪. বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী অ্যাপ্লায়েন্স কি বেশি দামি হয়?

প্রাথমিকভাবে কিছুটা বেশি দাম হলেও, দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুৎ বিল বাঁচিয়ে খরচ পুষিয়ে দেয়।

৫. বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী অ্যাপ্লায়েন্স ব্যবহার করে বছরে কতটা খরচ কমানো সম্ভব?

নির্ভর করে ব্যবহারের পরিমাণ ও অ্যাপ্লায়েন্স অনুযায়ী, তবে ইনভার্টার ফ্রিজ বা এসি ব্যবহার করলে মাসে ৩০-৫০% পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় হতে পারে।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close