ফ্যাশন, স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য্য

২০২৫ সালের সেরা ৫টি হোম জিম সরঞ্জাম

এখনকার ব্যস্ত জীবনে সময় বাঁচিয়ে ফিটনেস রুটিন বজায় রাখতে, আপনি ঘরেই গড়ে তুলতে পারেন পার্সোনাল ফিটনেস স্টেশন। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং ডিজাইনের উন্নতির ফলে এখনকার হোম জিম সরঞ্জামগুলো আগের চেয়ে আরও কার্যকর এবং ব্যবহার উপযোগী হয়েছে। আপনি যদি ঘরে থেকেই শরীরচর্চা করতে চান, তাহলে ঘরের স্পেস, ফিটনেস লক্ষ্য, এবং পারিপার্শিক অবস্থা অনুযায়ী সঠিক সরঞ্জাম বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্লগে ২০২৫ সালের সেরা ৫টি হোম জিম সরঞ্জাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও বাজেট বান্ধব হোম জিম সেটাপ নিয়েও টিপস দেয়া হয়েছে।

একটি পারফেক্ট হোম জিম সেটআপ করতে, চেষ্টা করুন মাল্টি-ফাংশনাল জিম সরঞ্জাম বেছে নিতে। ঘরের জায়গা, বাজেট, সরঞ্জামের বহুমুখিতা, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, ইত্যাদি বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখতে হবে। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় হোম জিম সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ট্রেডমিল, ফোল্ডেবল এক্সারসাইজ বাইক, অল-ইন-ওয়ান ওয়ার্কআউট স্টেশন, রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড সেট, ডাম্বেল, ইত্যাদি।

(১) K-Power K3001C Home Gym

এটি K-Power ব্রান্ডের মাল্টি-স্টেশন হোম জিম, যা ঘরোয়া ব্যায়ামের জন্য আদর্শ এবং স্পেস সাশ্রয়ী। এটি শক্তিশালী ফ্রেম এবং বিভিন্ন এক্সারসাইজের জন্য উপযোগী। এই মেশিনটির মাধ্যমে আপনি সম্পূর্ণ শরীরের পেশী গঠন করতে পারেন।

ফিচার –

  • চেস্ট ও শোল্ডার পেশী টোনিংয়ের জন্য বাটারফ্লাই প্রেস।
  • ব্যাক পেশী টোনিংয়ের জন্য পুল-ডাউন।
  • বুকের পেশী শক্তিশালি করার জন্য চেস্ট প্রেস।
  • পায়ের পেশী গঠনের জন্য লেগ এক্সটেনশন এবং লেগ প্রেস।
  • বাইসেপস ট্রেনিংয়ের জন্য প্রিচার কার্ল প্যাড।

সুবিধা –

  • সম্পূর্ণ শরীরের পেশী গঠন সম্ভব।
  • দীর্ঘস্থায়ী পারফরম্যান্স।

এটি ম্যাক্সিমাম ১৩৫ কেজি পর্যন্ত লোড নিতে পারে। এটি বাংলাদেশে প্রায় ৭০,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।

(২) American Fitness Premium – Treadmill Series

অ্যামেরিকান ফিটেনেস ব্র্যান্ডের এই মাল্টি-ফাংশনাল মোটরাইজড ট্রেডমিলগুলো হোম জিমের জন্য আদর্শ। এই ট্রেডমিলগুলো স্টাইলিশ ডিজাইন, শক্তিশালী মোটর, এবং উন্নত ফিচার সমৃদ্ধ। এগুলো হাঁটা, দৌড়ানো এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যায়ামের জন্য উপযুক্ত। এই সিরিজের বিভিন্ন মডেল রয়েছে, প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন ফিচার ও পাওয়ার সমৃদ্ধ।

ফিচার –

  • স্পিড, ডিস্ট্যান্স, ক্যালোরি, পালস, হার্ট রেট, ইত্যাদি ডিসপ্লেতে দেখতে পাবেন।
  • অটোম্যাটিক ইনক্লাইন সিস্টেম, যার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ঢালু পথের মতো এক্সারসাইজ করা সম্ভব।
  • পাওয়ারফুল মোটর এবং স্পিড কন্ট্রোল।
  • লার্জ রানিং ডেক ও হাই ওয়েইট ক্যাপাসিটি।
  • ব্লুটুথ, অ্যাপ কন্ট্রোল এবং মাল্টি-ফাংশনাল ফিচার।
  • সেফটি কি ও অটো-স্টপ ফিচার।

সুবিধা –

  • মাল্টি-ফাংশন ডিসপ্লে, যেখানে ওয়ার্কআউট টাইম, স্পিড, দূরত্ব, ক্যালোরি বার্ন, হার্ট রেট ইত্যাদি সহজেই ট্র্যাক করা যায়।
  • শক অ্যাবজরবিং সিস্টেম, ফলে হাঁটা বা দৌড়ানোর সময় হাঁটু ও জয়েন্টে কম চাপ পড়ে।
  • ফোল্ডেবল ও স্পেস-সেভিং ডিজাইন।

সিরিজের বিভিন্ন মডেল ভেদে দাম ৫০ হাজার থেকে ১.৫ লক্ষ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।

(৩) Exercise Bike

Cultsport Smartbike C2 এবং Magnetic Exercise Bike LF-515B, এক্সারসাইজ বাইক বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়। স্মার্ট এক্সারসাইজ বাইকে কানেক্টিভিটি, অ্যাডজাস্টেবল রেজিস্ট্যান্স, এবং বিল্ট-ইন ডিসপ্লে থাকে। কার্ডিও ও এন্ডুরেন্স ট্রেনিংয়ের জন্য এই বাইকগুলো পারফেক্ট। ম্যাগনেটিক ক্সারসাইজ বাইকটি কম্প্যাক্ট ডিজাইন, সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং বাজেট-বান্ধব।

ফিচার –

  • একাধিক রেজিস্ট্যান্স লেভেল সেটিংস।
  • অ্যাডজাস্টেবল সিট ও হ্যান্ডেল।
  • স্মার্ট এক্সারসাইজ বাইকে ডিজিটাল ডিসপ্লে এবং হার্ট রেট সেন্সর থাকে।

সুবিধা –

  • ওজন কমাতে সহায়ক।
  • কার্ডিও এক্সারসাইজ হওয়ায় হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
  • সহজে বহন করা যায়।

Cultsport Smartbike এক্সারসাইজ বাইকটির দাম প্রায় ৩০ হাজার টাকা, এবং ম্যাগনেটিক এক্সারসাইজ বাইকটির দাম প্রায় ১৫ হাজার টাকা।

(৪) JOEREX Dumbbell & Barbell Set

এটি JOEREX ব্রান্ডের একটি বাজেট-ফ্রেন্ডলি ভার্সেটাইল ও হাই-কোয়ালিটি ফিটনেস সরঞ্জাম, যা ঘরোয়া বিভিন্ন এক্সারসাইজের জন্য উপযোগী, এবং স্পেস সাশ্রয়ী। এই সেটাপের মধ্যে ৮-পিস ডাম্বেল সেট থাকে এবং বিভিন্ন ওজনের প্লেট থাকে, যা অ্যাডজাস্টেবল ওয়েট ফিচার বিশিষ্ট। এই সেটটি ডাম্বেল ও বারবেল উভয়ই হিসেবে ব্যবহারযোগ্য, ফলে একাধিক ব্যায়াম করা সম্ভব হয়।

ফিচার –

  • অ্যাডজাস্টেবল ডিজাইন।
  • টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী কাস্ট আয়রন প্লেট।
  • নন-স্লিপ গ্রিপ সেফটি ফিচার।
  • প্লেটগুলো সহজে সংযুক্ত ও বিচ্ছিন্ন করা যায়।
  • সেটটি সহজে সংরক্ষণযোগ্য।

সুবিধা –

  • বহুমুখী ব্যায়াম যেমন বডি বিল্ডিং, স্ট্রেংথ ট্রেনিং, ওয়ার্কআউট ইত্যাদি করা যায়।
  • বাজেট বান্ধব, একাধিক সেট কেনার তুলনায় একটি সেট দিয়েই সব ধরনের ব্যায়াম করা যায়।
  • সেটটি দীর্ঘস্থায়ী ও নিরাপদ।

বিভিন্ন ওজন ভেদে দাম ৪০০০ থেকে ৭০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।

(৫) Resistance Band Set

রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড সেট একটি বাজেট বান্ধব জনপ্রিয় ফিটনেস সরঞ্জাম যা ঘরে বসে ব্যায়াম করার জন্য আদর্শ। এই সেটটি বিভিন্ন রকমের ইলাস্টিক ব্যান্ড নিয়ে গঠিত। এটি মাল্টিপল রেজিস্ট্যান্স লেভেল, লাইটওয়েট, এবং ট্রাভেল-ফ্রেন্ডলি। স্ট্রেংথ ও ফ্লেক্সিবিলিটি ট্রেনিংয়ের জন্য এটি অসাধারণ। এছাড়াও কার্ডিও, স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম এবং রিহ্যাবিলিটেশন এক্সারসাইজে কার্যকর। প্রতিদিন ২০–৩০ মিনিট ব্যায়াম করলেই রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড সেট আপনার ফিটনেসের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।

ব্যবহার পদ্ধতি –

ব্যান্ডের সাথে সাধারণত হ্যান্ডেল, দরজার অ্যাংকর এবং অ্যাঙ্কল স্ট্র্যাপ থাকে। ব্যান্ডের এক প্রান্ত হ্যান্ডেলে বা দরজায় আটকে দিয়ে টানুন। বিভিন্ন ব্যায়াম, যেমন, বাইসেপ কার্ল, স্কোয়াট, শোল্ডার প্রেস ইত্যাদি উন্নতির জন্য ব্যবহার করতে পারেন। নিজের ফিটনেস স্তর অনুযায়ী ব্যান্ড পরিবর্তন করতে পারবেন।

সুবিধা –

  • ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • জিম ছাড়াই সম্পূর্ণ শরীরচর্চা করা যায়।
  • হাড় ও পেশি শক্তিশালী করে।
  • ছোট, হালকা ও বহনযোগ্য।
  • জিম ইকুইপমেন্টের তুলনায় ব্যান্ড সেট অনেক সস্তা।

রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড সেটের মূল্য রেজিস্ট্যান্স লেভেল ভেদে ৫০০ থেকে ১.৫ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।

বর্তমানে জনপ্রিয় আরো কিছু বাজেট বান্ধব হোম জিম সরঞ্জাম –

(১) এক্সারসাইজ ম্যাট, যা ইয়োগা, পিলাটিস ও স্ট্রেচিং এক্সারসাইজের জন্য অসাধারণ।

(২) SPN’s এক্সারসাইজ স্পিনিং সাইক্লিং বাইক, এটি বাড়িতে স্পিনিং ব্যায়ামের জন্য উপযুক্ত।

(৩) মাল্টি-ফাঙ্কশন ক্রস ট্রেইনার, যা ফুল-বডি কার্ডিও ও স্ট্রেংথ ট্রেনিংয়ের জন্য অসাধারণ।

(৪) TRX P3 প্রো সাস্পেনশন ট্রেইনার, এটি বহনযোগ্য এবং ছোট স্থানে ব্যবহার উপযোগী।

(৫) ওয়াল মাউন্টেড জিম সেটাপ, পুলআপ এবং কার্ডিও এক্সারসাইজের জন্য ভালো।

এই হোম জিম সরঞ্জামগুলো ফিটনেস মার্ট, রয়েল ব্লু কর্পোরেশন, স্পোর্টস পারাগন, ইত্যাদি বিভিন্ন ফিটনেস আউটলেটে পাবেন। এছাড়াও Bikroy এবং ফেসবুক মার্কেটপ্লেসেও পেতে পারেন।

বর্তমানে ঘরে থেকে ফিটনেস বজায় রাখার চাহিদা আগের চেয়ে বেড়েছে। এখন সাশ্রয়ী বাজেট থেকে শুরু করে মাঝারি বাজেটের মধ্যে ভালো মানের হোম জিম সরঞ্জাম পাওয়া যায়। আপনার ফিটনেস লক্ষ্য, নিজের প্রয়োজন ও বাজেট অনুযায়ী হোম জিম সেটআপ বেছে নিলে, আপনি ঘরে বসেই একটি পূর্ণাঙ্গ জিম এক্সপেরিয়েন্স পেতে পারেন। হেলথি এবং একটিভ লাইফস্টাইল মেইনটেইন করতে হোম জিম একটি বুদ্ধিদীপ্ত বিনিয়োগ হতে পারে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

(১) ২০২৫ সালে বাংলাদেশে কোন হোম জিম সরঞ্জামগুলো বেশি জনপ্রিয়?

বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় হোম জিম সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে মাল্টি-ফাঙ্কশনাল স্টেশন, ট্রেডমিল, ফোল্ডেবল এক্সারসাইজ বাইক, অল-ইন-ওয়ান ওয়ার্কআউট স্টেশন, রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড সেট, ডাম্বেল, ইত্যাদি।

(২) হোম জিম সরঞ্জাম কেনার সময় কী বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত?

আপনার প্রয়োজনীয়তা, ফিটনেস লক্ষ্য, হোম স্পেস, বাজেট, এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।

(৩) হোম জিম সরঞ্জাম কি সত্যিই জিমের বিকল্প হতে পারে?

হ্যাঁ। সঠিক সরঞ্জাম ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ঘরেই পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্কআউট সম্ভব।

(৪) এই জিম সরঞ্জামগুলো কোথাও পাওয়া যায়?

এই হোম জিম সরঞ্জামগুলো ফিটনেস মার্ট, রয়েল ব্লু কর্পোরেশন, স্পোর্টস পারাগন, ইত্যাদি বিভিন্ন ফিটনেস আউটলেটে পাবেন। এছাড়াও Bikroy এবং ফেসবুক মার্কেটপ্লেসেও পেতে পারেন।

(৫) হোম জিম সেটআপে কেমন খরচ হতে পারে?

এটি নির্ভর করে আপনি কি ধরণের সরঞ্জাম নিচ্ছেন তার উপর। সাধারণত ৪,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকার মধ্যেই একটি ভালো হোম জিম সেটআপ সম্ভব।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close