ব্লাকবেরি কি-ওয়ান : স্মার্টফোনের সাথে এবার কীবোর্ড
ব্লাকবেরির কথা মনে আছে? তখনকার দিনের একটি কোম্পানি যাদের তৈরি ফোন প্রত্যেক ব্যবসায়ীর কাছে থাকতো? এই কোম্পানিটি এবছর একটি নতুন স্মার্টফোন বাজারে আনতে যাচ্ছে যার নাম ব্লাকবেরি কি-ওয়ান। নামের মতই এই নতুন ব্লাকবেরি ফোনটি কীবোর্ডসহ একটি স্মার্টফোন কিন্তু এটি গুগলের লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড ৭.১ নোগাট দ্বারা চালিত। কি-ওয়ান এর মূল্য $৫৪৯ এবং এটি ইতোমধ্যেই ইংল্যান্ডের বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
স্পেসিফিকেশন অনুসারে কি-ওয়ান ততটা আকর্ষণীয় নয়। এটির স্ন্যাপড্রাগন ৬২৫ প্রসেসর, ৩ জিবি র্যাম, ৩২ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ (সম্প্রসারণযোগ্য মাইক্রো এসডি কার্ড) এবং বড় ৩,৫০০ এমএএইচ ব্যাটারী আছে। যখন এই দামে একটি মিড রেঞ্জের সিপিইউ পাওয়া যায়, আমরা অন্তত এটা ভেবে খুশি থাকতে পারি যে ৬২৫ একটি কার্যকরী এবং নির্ভরযোগ্য চিপ যা কিনা ব্যাটারী লাইফ পারফরম্যান্সের জন্য সেরা। তা ছাড়াও ফোনটি কুইক চার্জ ৩.০ সাপোর্ট করে এবং ব্লাকবেরির ভাষ্য অনুসারে ডিভাইসটি ০% থেকে ৫০% চার্জ হতে পারে মাত্র ৩৬ মিনিটে।
স্ক্রীনটি অদ্ভুতভাবে ১৬২০*১০৮০ রেশিও আইপিএস এর একটি ডিসপ্লে এবং আড়াআড়ি মাপে মাত্র ৪.৫ ইঞ্চি। এ বছর আমরা স্যামসাং এবং এলজি-এর কাছ থেকে অদ্ভুত রেশিও এর ডিসপ্লে দেখেছি তবে ব্লাকবেরি তাদের নতুন মোবাইল ফোনে সবচেয়ে ছোট আকারের ডিসপ্লে সংযোজন করেছে।
ফোনের মেইন ক্যামেরাটি এফ/২.০ ১২ মেগাপিক্সেল সনি আইএমএক্স ৩৭৮। যারা ছবি তোলাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন তাদের জেনে রাখা ভালো যে ফোনটিতে ঠিক গুগল পিক্সেল এবং পিক্সেল এক্সএল স্মার্টফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে যে কারণে এই ফোনে আপনি বেশ ভাল ছবি তুলতে পারবেন। সেলফি ক্যামেরাটিতেও রয়েছে ওয়াইড ৮ মেগাপিক্সেল সেন্সর।
ব্লাকবেরি কি-ওয়ান মূলত ডিজাইন করা হয়েছে ব্যবসায়ীদের জন্য অথবা সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য। ফোনটির বডি অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি এবং এর কিনারগুলো কার্ভ করা, যা ফোনটির ব্যবহারযোগ্যতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। যদিও এর কাঠামো মেটালের তৈরি, এটির পেছনে গ্রিপ-যোগ্য নরম ম্যাটেরিয়াল আছে। ফোনটি ডিজাইন করার সময় ব্লাকবেরির একটা পরিকল্পনা ছিল। তাদের উদ্দেশ্য হল ফোনটি যাতে আগের ফোনগুলোর মতই খুব সহজে এক হাতে ব্যবহার করা যায়। কী-বোর্ড এবং ছোট ডিসপ্লের কারণেই মূলত এমনটি সম্ভব হয়েছে।
কোয়ার্টি কীবোর্ডটিতে এমন অনেক ধরণের ট্রিক আছে যেগুলো টাইপিং এর সুবাদে ফোনটির ব্যবহারযোগ্যতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে এবং এগুলো পুরনো প্রতিরূপ গুলোর চেয়ে আরও বেশি ব্যবহার উপযোগী। কী-বোর্ডটি টাচ-সেন্সিটিভ যা স্ক্রীনে টাচ করা ছাড়াই আপনাকে সোয়াইপ এবং স্ক্রল করতে সাহায্য করবে। ব্লাকবেরি এই সুবিধাটি কাজে লাগিয়ে কিছু টাইপ করার পর সোয়াইপ করে অটো ওয়ার্ড কমপ্লিশন ব্যবহার করেছে। কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখলে কীগুলো কোন প্রোগ্রাম বা অ্যাপের শর্টকাট হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। স্পেসবারের ভিতরেও একটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার রয়েছে।
এতক্ষন আমি শুধুমাত্র ফোনটি নিয়ে কথা বলেছি। এই প্রবন্ধটির উদ্দেশ্য হল – ২০১৭ সালে কীবোর্ডওয়ালা স্মার্টফোন ব্যবহার করা কতটা যোগ্য সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলা। আমার মতে কি-ওয়ান শুধু তাদেরকেই আকর্ষণ করবে যারা পুরনো ধাঁচের ফোনগুলোর অনুরাগী। ব্যবহারের সুবিধা, দ্রুততা, নির্ভুলতা, এবং অসাধারণ কার্যকারিতার বিবেচনায় ফোনটির ডিজিটাল কীবোর্ড ফিজিক্যাল কীবোর্ডের চেয়ে অনেক বেশি উন্নতমানের। কিন্তু ব্লাকবেরি কি-ওয়ান এর বিশেষত্ব শুধুমাত্র এর কীবোর্ডেই সীমাবদ্ধ নয়। যেহেতু কর্পোরেট জগতের কোথা বিবেচনা করে ফোনটি তৈরি করা হয়েছে সেহেতু এর হার্ডওয়্যার এনক্রিপশনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে এবং শক্তিশালী ডিটিইকে সিকিউরিটি টুল ব্যবহার করা হয়েছে। ব্লাকবেরি দাবি করছে যে এটিই বাজারের সবচেয়ে নিরাপদ অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন তবে এই দাবিটির পক্ষে কোন যৌক্তিক প্রমাণ নেই। ব্লাকবেরির এই নতুন স্মার্টফোনটি কি কোম্পানির ভাগ্য ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হবে? সক্ষম হবে স্মার্টফোন বাজারে যথাযোগ্য স্থানটি অধিকার করতে? হয়ত পারবে না। তবে বলা যায়, স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে এখনও যে অনেক নতুনত্ব এবং অভিনব সৃজনশীলতা আনা সম্ভব তার একটি বাস্তব প্রমাণ হল কি-ওয়ান।