কৃষি এবং খাদ্যদ্রব্য

বাংলাদেশে অনলাইনে আম কেনাঃ আপনার যা জানা প্রয়োজন

বর্তমানে বাংলাদেশে অনলাইনে আম কেনা অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ বাগান থেকে কেমিক্যালমুক্ত আম সরাসরি চলে আসছে বাড়িতে, কোনো ঝামেলা ছাড়াই। গ্রীষ্মকাল আমের মৌসুম। এই মৌসুমে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা ইত্যাদি অঞ্চলের বিভিন্ন জাতের সুস্বাদু আম বাজারে দেখা যায়। রাজশাহী অঞ্চলের ল্যাংড়া, ফজলি, এবং আম্রপালি আম সারা দেশে জনপ্রিয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের হিমসাগর, ফজলি, এবং ল্যাংড়া আম জনপ্রিয়। এছাড়াও নওগাঁ, দিনাজপুর, এবং সাতক্ষীরা অঞ্চলের হিমসাগর, গোপালভোগ এবং আম্রপালি স্বাদে উৎকৃষ্ট।

প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে আম কেনার পদ্ধতিও বদলে গেছে। এখন ঘরে বসেই অনলাইনে অর্ডার দিয়ে আম কিনে ফেলা যায়। অনেক উদ্যোক্তা এবং প্রতিষ্ঠান একেবারে খেত-খামার এবং কৃষক পর্যায় থেকে আম সংগ্রহ করে গ্রাহকের দাড়গোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন। তবে অনলাইনে আম কেনার ক্ষেত্রে আমের জাত, সময়কাল, রিভিউ, রেটিং সহ আরো কিছু বিষয়ে ধারণা থাকা জরুরি। এতে প্রতারণা থেকে রক্ষা এবং সঠিক মানের আম হাতে পাওয়া যায়। এই ব্লগে বাংলাদেশের অনলাইনে আম কেনার সুবিধা, ঝুঁকি এবং কীভাবে নিরাপদ ও নিশ্চিন্তভাবে ক্রয় করা যায়, ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

(১) বিশ্বাসযোগ্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে আম কিনবেন

বিশ্বস্ত ই-কমার্স ওয়েবসাইট এবং কৃষক ভিত্তিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গুলো যাচাই বাছাই করুন। রিভিউ ও রেটিং দেখে কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স যাচাই করুন। বিশেষায়িত ফল বিক্রেতারা Bikroy-এর মাধ্যমে এবং ফেসবুক পেইজে কৃষক ও উদ্যোক্তারা সরাসরি অর্ডার নিচ্ছেন।

(২) আমের জাত এবং মৌসুম সম্পর্কে ধারণা রাখুন

বাংলাদেশে দেশি-বিদেশী বিভিন্ন জাতের আম পাওয়া যায়। গোপালভোগ, ল্যাংড়া, হিমসাগর, আম্রপালি, ফজলি ও আশ্বিনা, সবচেয়ে জনপ্রিয় জাত। গোপালভোগ আম মে মাসের শেষ থেকে শুরু হয়ে জুলাই মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। লক্ষণভোগ বা ল্যাংড়া আম জুন-জুলাই মাসে পরিপক্ক হয়। হিমসাগর বা ক্ষিরসাপাত আম মে-জুন মাসে পাওয়া যায়। আম্রপালি আম জুন-জুলাই মাসে পাওয়া যায়। ফজলি ও আশ্বিনা আম জুলাই-আগস্ট মাসে পাওয়া যায়। এই সময়কালে পরিপক্ব ও কার্বাইড-মুক্ত আম পাওয়া যায়।

(৩) আমের মূল্য এবং ডেলিভারি চার্জ তুলনা করুন

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটার ক্ষেত্রে মূল্য, ডেলিভারি চার্জ এবং শর্তসমূহ যাচাই বাছাই করা জরুরি। বাংলাদেশে আমের দাম, জাত ও মৌসুম অনুযায়ী কেজিপ্রতি ৮০–২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এবং ডেলিভারি চার্জ ঢাকার ভেতরে ৫০–১০০ টাকা; ঢাকার বাইরে হলে সাধারণত কুরিয়ারে বাড়তি চার্জ প্রযোজ্য হয়। আম পেরিশেবল প্রোডাক্ট, তাই ডেলিভারির সময় ভালোভাবে বিবেচনা করুন। মৌসুম অনুযায়ী মূল্য যাচাই বাছাই করুন।

(৪) আম ভেজালমুক্ত কিনা যাচাই করুন

বিশ্বস্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কিংবা সরবরাহকারী বেছে নিন, যাঁরা ভেজালমুক্ত আম বিক্রয় করে সুনাম অর্জন করেছেন এবং কার্বাইড-মুক্ত সার্টিফিকেট আছে। পরিপক্ব অবস্থায় পাকা আম সরবরাহ করা হবে কিনা নিশ্চিত হোন। প্রি-অর্ডারে, বাগানের গাছ থেকে পেড়ে পাঠানো হবে, এমন অফারের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করবেন।

(৫) প্যাকেজিং, কোয়ালিটি এবং পেমেন্ট অপশন বিবেচনা করুন

আম ঠিকভাবে প্যাকেজ করা হয় কিনা, তাজা থাকে কিনা, এবং কোয়ালিটি ঠিকঠাক মেইনটেইন করে কিনা যাচাইয়ের চেষ্টা করুন। রিফান্ড বা রিটার্ন পলিসি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। ক্যাশ অন ডেলিভারি অফার প্রেফার করুন। নিরাপদ পেমেন্ট গেটওয়ে অপশন থাকা গুরুত্বপূর্ণ, যেমন, বিকাশ, নগদ, ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড, ইত্যাদি।

বাংলাদেশের অনলাইনে আম কেনার ক্ষেত্রে প্রতারণা এড়াতে কিছু টিপস মাথায় রাখুন –

(১) অজানা ফেসবুক পেজে অগ্রীম টাকা পাঠাবেন না।

(২) কাস্টমার রিভিউ এবং ফিডব্যাক দেখুন।

(৩) ক্যাশ অন ডেলিভারি প্রেফার করুন।

(৪) ছোট এমাউন্ট অর্ডার করে মান যাচাই করুন।

(৫) আমের স্পষ্ট ছবি এবং বিবরণ দেখুন।

(৬) রিটার্ন বা রিফান্ড পলিসি চেক করুন।

(৭) লাইভ ট্র্যাকিং বা ডেলিভারি আপডেট চেক করুন।

অনলাইনে আম কেনার সুবিধাসমূহ

(১) ফর্মালিনমুক্ত আম পাওয়া যায়।

(২) সহজ ও সময় সাশ্রয়ী।

(৩) বিভিন্ন জাতের আমের সহজলভ্যতা।

(৪) সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কেনার সুযোগ।

(৫) হোম ডেলিভারি সুবিধা।

(৬) সুবিধাজনক পেমেন্ট অপশন।

অনলাইনে আম কেনার অসুবিধাসমূহ

(১) বাজার মূল্যের চেয়ে দাম এবং ডেলিভারি ফি বেশি হয়ে থাকে।

(২) কিছু অসাধু বিক্রেতা কম ওজন, এবং খারাপ আম সরবরাহ করে প্রতারণা করেন।

(৩) ডেলিভারি বিলম্ব হলে, আম পঁচে যেতে পারে।

(৪) রিটার্ন, রিফান্ড এবং অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল এবং সময় সাপেক্ষ।

(৫) সাধারণত অল্প পরিমান অর্ডার করা যায়না।

পরিশেষে, বাংলাদেশে অনলাইনে আম কেনা এখন অনেক সহজ এবং নির্ভরযোগ্য। তবে প্রতারণা এড়াতে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন বিশ্বাসযোগ্য ও পরিচিত প্ল্যাটফর্ম বেছে নেওয়া, পেমেন্ট সিস্টেম, এবং ডেলিভারির সময়সূচী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা। আমের জাত ও মৌসুম সম্পর্কে জ্ঞান এবং কিছু সাধারণ টিপস বিবেচনা করলে আপনি তাজা, ভেজালমুক্ত, সুস্বাদু আম, সরাসরি কৃষকের বাগান থেকে আপনার টেবিলে পেতে পারেন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

(১) অনলাইনে আম কেনা কি নিরাপদ?

হ্যাঁ, বাংলাদেশের অনেক নির্ভরযোগ্য ই-কমার্স এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আম বিক্রি করে। যাঁরা ভালো মানের ফর্মালিনমুক্ত আম বিক্রয় করে থাকে।

(২) অনলাইনে আমের দাম কি বেশি হয়?

অনলাইনে আমের দাম কিছুটা বেশি হয়, সাথে ডেলিভারি চার্জও থাকে। তবে সুবিধাজনক ও সময় সাশ্রয়ী হওয়ায় এটি আপনার জন্য ভালো একটি অপশন হতে পারে।

(৩) অনলাইনে ডেলিভারি কতদিনে হয়ে থাকে?

সাধারণত ২-৩ কার্যদিবসের মধ্যে ডেলিভারি দেওয়া হয়, তবে স্থান ও সেবার ওপর নির্ভর করে সময় একটু বেশি হতে পারে।

(৪) আম পচা, নষ্ট কিংবা পছন্দমতো না হলে রিটার্ন এবং রিফান্ড করা যাবে?

প্রায় সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পণ্য নষ্ট বা সমস্যা থাকলে বদলে বা রিপ্লেসমেন্ট দেয়। এক্ষেত্রে শর্তাবলী ভালো করে দেখে নিন।

(৫) অনলাইনে আম কিভাবে অর্ডার করতে হয়?

সাইট বা অ্যাপে গিয়ে পছন্দের আম বাছাই করে অর্ডার ফর্ম পূরণ ও পেমেন্ট অপশন সিলেক্ট করুন। পরবর্তীতে ডেলিভারির জন্য ঠিকানা দিন।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close