বাংলাদেশে গাড়ির বাজার ২০২০-২১
দেশের অভ্যন্তরে মধ্যবিত্ত মানুষদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে গত এক দশকে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গাড়ি এবং মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য অটোমোবাইলসের চাহিদা। একইসাথে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গত কয়েক বছরের তুলনায় বেড়েছে ৬ শতাংশ, বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যানুযায়ী যা ২০২১ সাল নাগাদ বেড়ে হবে ৭-৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল এবং সম্ভাবনাময় অর্থনীতি। বেশ কিছু পোর্টালের কারণে বর্তমান দিনে সহজেই অটোমোবাইল আমদানীকারকরা তাদের পণ্য সহজেই নিয়ে আসতে পারছেন। গ্রাহকেরা শো-রুমে না গিয়েই, বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস ঘুরে বিভিন্ন গাড়ির মধ্যে পার্থক্য করে বুঝে শুনে কিনতে পারছেন রিকন্ডিশন্ড এবং নতুন গাড়ি।
সর্বোপরি দেশে বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম যেমনঃ পাঠাও, উবার এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠাগুলো ক্রমাগত এই চাহিদা বাড়িয়ে নিয়ে চলেছে। যেহেতু দেশের অভ্যন্তরের অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি এখনো ততখানি উন্নত নয়, তাই এখনো আমাদের বাইরের দেশ থেকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির উপর আস্থা রেখে যেতে হচ্ছে। চলুন Bikroy থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ২০২০ সালের গাড়ির বাজারের ইনফোগ্রাফিক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কোন শহরগুলো থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি গাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন পোস্ট করা হয়?
বর্তমান একটি সমীক্ষা অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে ঢাকা শহরের রাস্তায় গাড়ি চলাচলের হার পূর্বের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। অন্যান্য মেট্রোপলিটন শহরগুলোতেও প্রায় একই অবস্থা। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস Bikroy.com-এর তথ্যানুযায়ী, সমগ্র ২০২০ সাল জুড়ে গাড়ি বিক্রি করার উদ্দেশ্যে পোস্ট হওয়া বিজ্ঞাপনগুলোর ৬৫ শতাংশই রাজধানী কেন্দ্রিক।
দ্রুত ঘটে যাওয়া শহরায়ন এবং দিন দিন শহরমুখী হবার প্রবণতা দেশের বড় শহরগুলোতে গাড়ি বিক্রির হার বেড়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। প্রায় ২৬ শতাংশ বিজ্ঞাপন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম এবং এরপরপরই আছে খুলনা এবং অন্যান্য কিছু শহর যথাক্রমে ৬ এবং ৩ শতাংশ বিজ্ঞাপন নিয়ে।
বাংলাদেশে সর্বাধিক জনপ্রিয় গাড়ির ব্র্যান্ড
বাংলাদেশের গাড়ির বাজারে ভালো অবস্থান ধরে রাখার জন্য বিখ্যাত গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়শই এখানে তাদের নতুন নতুন মডেল লঞ্চ করে থাকে। এটি দেশের অন্যতম প্রবৃদ্ধিশীল এবং দ্রুত বর্ধমান একটি ইন্ডাস্ট্রি, যা ক্রমাগত বৈশ্বিক গাড়ির ব্র্যান্ডগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হচ্ছে।
উপরে দেওয়া ইনফোগ্রাফিকের তথ্যানুযায়ী দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশে গাড়ির বাজারে বড় অংশই জাপানি অটোমোবাইল ব্র্যান্ডগুলোর উপর নির্ভরশীল এবং মানুষ দীর্ঘদিন জাপানি গাড়ির উপর আস্থা রেখে চলেছে। পোস্টকৃত বিজ্ঞাপনের সিংগভাগ জুড়ে আছে টয়োটা যা মোট বিজ্ঞাপনের ৮৫ শতাংশ, এবং এরপরেই আছে নিশান, হোন্ডা এবং অন্যান্য ব্র্যান্ড যথাক্রমে বিজ্ঞাপনের ৭, ৬, এবং ২ শতাংশ জায়গা নিয়ে।
গাড়ি কেনার পেছনে ব্যয় কেমন?
প্রতিবেশী অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের গাড়ির বাজার অপেক্ষাকৃত ছোট। যেহেতু আমাদের দেশের অর্থনীতির বড় অংশ মধ্যবিত্ত আয়ের, তাই বেশিরভাগ মানুষেরাই একটি নির্দিষ্ট মূল্যমানের ভেতর গাড়ি কেনাবেচা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
Bikroy.com-থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ১০ – ২০ লক্ষ টাকা প্রাইস রেঞ্জের মধ্যে গাড়ি কেনাবেচার বিজ্ঞাপন রয়েছে ৩৫ শতাংশ, এবং ২৩ শতাংশ বিজ্ঞাপন রয়েছে ২০ – ৩০ লক্ষ টাকার প্রাইস রেঞ্জে। অন্যদিকে ৩০-৪০ লক্ষ টাকা মূল্যমানের বিজ্ঞাপন রয়েছে ১৬ শতাংশ এবং ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা প্রাইস রেঞ্জের মধ্যে আছে মোট বিজ্ঞাপনের ১৩ শতাংশ।
বাংলাদেশে সর্বাধিক অনুসন্ধানকৃত গাড়ির ব্র্যান্ডগুলো
Bikroy থেকে পাওয়া তথ্যমতে ২০২০ সাল জুড়ে গাড়ির বাজারে সর্বাধিক অনুসন্ধানকৃত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে প্রথম পাঁচটি ছিল যথাক্রমে টয়োটা, হোন্ডা, বিএমডাব্লিউ, নিশান, এবং মাজদা। এই তথ্যটি ২০২০ সালে Bikroy.com-এ গাড়ি কেনাবেচার বিজ্ঞাপনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
সমীক্ষা অনুযায়ী ব্যবহারকারীরা যখন কোনো গাড়ির ব্র্যান্ড লিখে অনুসন্ধান করে তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা তাদের কৌতূহল মেটাতে চায়, অপরদিকে নির্দিষ্ট মডেল উল্লেখ করার মাধ্যমে অনুসন্ধান করলে তাদের নিজেদের জন্য সেই গাড়িটি কেনার সম্ভাবনা অনেকখানি বেশি থাকে।
গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে কোন ধরণের কন্ডিশন এগিয়ে?
বর্তমান মহামারির কারণে দেশের বাজারে নতুন গাড়ি বিক্রি বেশ খানিকটা কমে গেলেও, একই সময় বেড়েছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির চাহিদা, যা বর্তমানে দেশে ব্যবহৃত গাড়ির বাজারকেও ছাড়িয়ে গেছে।
Bikroy-থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, গাড়ি কেনাবেচার প্রায় ৫৩ শতাংশ বিজ্ঞাপনই রিকন্ডশন্ড গাড়ির জন্য, কারণ যারা নতুন বা ব্যবহৃত গাড়ির বদলে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি খুঁজছেন তাদের কাছে সেটা তাদের গাড়ির জন্য ব্যয়কে সঠিক মূল্যায়ন করতে পারবে বলে মনে করছে। অন্যদিকে মোট বিজ্ঞাপনের ৪৬ শতাংশ রয়েছে ব্যবহৃত গাড়ি এবং ১ শতাংশ নতুন গাড়ির প্রেক্ষিতে।
শেষকথা
কোভিড-১৯ এর কারণে দেশের অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রির মত অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। গত বছর ৫,০০০ গাড়ি অবিক্রিত অবস্থায় থেকে যাওয়ার জন্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে এই শিল্পকে।
তবে আশার কথা এই যে, অটোমোবাইল খাত ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, এবং দ্রুত এই খাত সমস্ত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। পরিশেষে, সরকার এবং নীতিনির্ধারকদের দেশের অভ্যন্তরের পণ্য, স্থান ও জনবলকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার মাধ্যমে এবং একটি সুগঠিত স্থানীয় অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় দিকগুলো বিবেচনা করতে হবে।
যার মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগ এবং অটোমোবাইল শিল্পের জন্য দেশের মধ্যেই একটি বিশাল পরিসর উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।