বাংলাদেশে পোষা প্রাণীর সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা ও প্রতিরোধের উপায়

বাংলাদেশে পোষা প্রাণী পালনের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে বিড়াল, কুকুর, খরগোশ ও পাখি – এই প্রাণীগুলোর স্থান এখন অনের পরিবারের আপন ঘরে। তারা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং অনেকের কাছে সন্তানতুল্য। তবে ভালোবাসার সাথে চাই সচেতন যত্ন, যাতে তারা সুস্থ ও সুখী থাকে। কারণ, পোষা প্রাণীদের অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, যা সময়মতো না বুঝলে মারাত্নক রূপ নিতে পারে।
এই ব্লগে আমরা জানবো, বাংলাদেশে পোষা প্রাণীর রোগব্যাধি এবং সেগুলোর প্রতিরোধে কার্যকর উপায় কী হতে পারে।
বাংলাদেশে পোষা প্রাণীর রোগব্যাধি
১. পরজীবী সংক্রমণ (Parasites)
পোষা প্রাণীর দেহে সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা হলো বাহ্যিক ও অন্তরদেহীয় পরজীবী। ফ্লি, টিক, মাইট বা ওয়ার্ম – এই পরজীবীরা চামড়া ও হজমে সমস্যা তৈরি করে। অনেক সময় এর কারণে জ্বর, দুর্বলতা ও চুলকানি দেখা যায়।
প্রতিরোধঃ নিয়মিত ডিওয়ার্মিং ও ভ্যাকসিনের পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রাণীর ঘর ও শোবার জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. স্কিন ডিজিজ বা চর্মরোগ
গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে আমাদের দেশে পোষা প্রাণীদের চর্মরোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। র্যাশ, ফাংগাল ইনফেকশন বা এলার্জি প্রায়ই দেখা যায়, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে।
প্রতিরোধঃ সপ্তাহে ১-২ বার গোসল করানো, পরিষ্কার তোয়ালে ব্যবহার করা এবং পশুর জন্য নির্ধারিত শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত। চুলকানি বা ত্বকে র্যাশ দেখলেই দ্রুত ভেটেরিনারির পরামর্শ নেওয়া ভালো।
৩. হিটস্ট্রোক ও ডিহাইড্রেশন
গ্রীষ্মকালে তীব্র গরমে পোষা প্রাণীরা খুব সহজেই হিটস্ট্রোক বা পানিশূন্যতায় ভুগতে পারে। বিশেষ করে সাদা রঙের বা লম্বা লোমওয়ালা প্রাণীরা এই ঝুঁকিতে বেশি থাকে।
প্রতিরোধঃ প্রচন্ড গরমে প্রাণীকে ছায়াযুক্ত ও শীতল স্থানে রাখা উচিত। পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি দেওয়া এবং দিনে বারবার পানি বদলানো জরুরি।
৪. দাঁত ও মুখগহ্বরের সমস্যা
অনেকেই ভুলে যান, পোষা প্রাণীদের দাঁতও পরিষ্কার রাখা জরুরি। দাঁতের ময়লা, মাড়ির সমস্যা বা মুখে দুর্গন্ধ – এসব সমস্যা দীর্ঘমেয়াদে বড় অসুবিধা তৈরি করে।
প্রতিরোধঃ নির্দিষ্ট পোষা প্রাণীর জন্য নির্দিষ্ট দাঁতের ব্রাশ ও পেস্ট দিয়ে সপ্তাহে ২-৩ বার দাঁত পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে ভেটেরিনারি চেকআপ করাতে হবে।
৫. ভাইরাল সংক্রমণ
কুকুর ও বিড়ালের ক্ষেত্রে ভাইরাসজনিত রোগ যেমন পারভোভাইরাস, র্যাবিস বা ক্যাট ফ্লু হতে পারে। এগুলো দ্রুত ছড়ায় ও প্রাণঘাতীও হতে পারে।
প্রতিরোধঃ প্রথম বছর থেকেই নিয়মিত টিকা দেওয়াটা সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা। প্রাণীর বয়স অনুযায়ী ভ্যাকসিন শিডিউল মেনে চললে এসব সমস্যা অনেকাংশে এড়ানো যায়।
৬. স্থুলতা বা ওজন বৃদ্ধি
অনিয়ন্ত্রিত খাবার ও কম মুভমেন্টের কারণে অনেক পোষা প্রাণী মোটা হয়ে পড়ে। এর ফলে হাঁপানি, জয়েন্টের ব্যথা ও ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
প্রতিরোধঃ প্রতিদিন প্রাণীকে নির্দিষ্ট সময় হাঁটানো, খেলানো এবং পুষ্টিকর খাবার দেওয়া উচিত। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভেটেরিনারির পরামর্শ নিয়ে খাবার চার্ট বানানো যেতে পারে।
৭. মানসিক চাপ ও বিষন্নতা
বহু সময় প্রাণীরা মানুষের মতোই মানসিক চাপে ভোগে। মালিকের দীর্ঘ অনুপস্থিতি, একাকীত্ব, পরিবেশ পরিবর্তন কিংবা ভালোবাসার অভাব প্রাণীর মধ্যে বিষন্নতা তৈরি করতে পারে।
প্রতিরোধঃ প্রতিদিন কিছু সময় পোষা প্রাণীর সঙ্গে খেলা করা, আদর করা এবং তাদের সঙ্গে কথা বলাও তাদের মনোবল বাড়াতে সাহায্য করে। প্রয়োজনে পেট থেরাপি বা পেট কাউন্সিলিংও উপকারী হতে পারে।
নিয়মিত চেকআপের প্রয়োজনীয়তা
অনেকেই ভাবেন, শুধু অসুস্থ হলেই প্রাণীকে ডাক্তার দেখাতে হবে। এটা ভুল ধারণা। বছরে অন্তত দুইবার রুটিন চেকআপ করালে শুরুতেই অনেক জটিল রোগের প্রতিকার সম্ভব হয়। একটি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে যারা বছরে অন্তত একবার তাদের পোষা প্রাণীকে চেকআপে নিয়ে যান, তাদের প্রাণী ৭০% কম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে।
শেষ কথা
পোষা প্রাণী পালন শুধুমাত্র ভালোবাসা নয়, বরং এটি একটি দায়িত্বও। তাদের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে আমরা কেবল একটি প্রাণ বাঁচাই না, বরং একটি সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী ও অর্থবহ করি। পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধে সময় মতো ভ্যাকসিন, সঠিক খাবার, পর্যাপ্ত পানি এবং আদরযত্ন – এসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার প্রিয় পোষা প্রাণী সুস্থ থাকুক, আপনিও থাকুক আনন্দে।
এমন দরকারি আরও তথ্য পেতে, Bikroy-ব্লগের সঙ্গেই থাকুন।