হোম এবং লিভিং

ব্যবহৃত জিনিস দিয়ে বাজেটে আরামদায়ক লিভিং রুম সাজানোর উপায়

একটি সাজানো গোছানো লিভিং রুমের কথা ভাবলে, প্রথমেই মাথায় আসে দামী আসবাবপত্র, এলিগেন্ট ডিজাইন এবং বিশাল বাজেটের ব্যাপারটি। তবে দামি কিংবা ঝকঝকে ফার্নিচার সবক্ষেত্রে একটি আরামদায়ক লিভিং রুম পরিবেশ তৈরী করবে, এমনটি নয়। আবার কম বাজেটে আরামদায়ক, একইসাথে আকর্ষণীয় লিভিং রুম তৈরি করাও বেশ কঠিন। এক্ষেত্রে প্রি-ওন্ড জিনিসপত্র ব্যবহার করে কম বাজেটে একটি দৃষ্টিনন্দন এবং আরামদায়ক লিভিং রুম তৈরি করা সম্ভব। এজন্য দরকার কার্যকর পরিকল্পনা এবং সৃজনশীল চিন্তা।

এখনকার দিনে ঘর সাজানোর খরচ অনেক বেশি। আপনি পুরনো কিংবা ব্যবহৃত ফার্নিচার, এবং হোম ডেকোর আইটেম ব্যবহার করে একটি রুচিসম্মত ও স্বাচ্ছন্দ্যময় লিভিং রুম সাজাতে পারবেন। যেমন, বিভিন্ন ডেকোর আইডিয়া, ডিআইওয়াই (DIY) আইডিয়া, এবং কালারফুল পেইন্টের মাধ্যমে যেকোনো পুরনো জিনিসকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরা সম্ভব। এই ব্লগে প্রি-ওন্ড জিনিসপত্র দিয়ে কম বাজেটে একটি আরামদায়ক লিভিং রুম তৈরি করা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

১. প্রথমে পরিকল্পনামাফিক বাজেট নির্ধারণ করুন

আপনার বাজেট অনুযায়ী পরিকল্পনা করুন। প্রয়োজনীয় যে সব জিনিস আগে প্রয়োজন, তার একটি তালিকা করুন। ঘরের সাইজ এবং স্ট্রাকচার অনুযায়ী কি কি আসবাব লাগবে তা লিখে ফেলুন। যেমন দেশের বিভিন্ন থ্রিফট শপে প্রি-ওন্ড সোফা সেট ৫-১০ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। টেবিল, বুকশেলফ, ল্যাম্প, কুশন, কার্পেট, পর্দা, ইত্যাদি ২-৫ হাজার টাকায় পেতে পারেন। প্রি-ওন্ড জিনিস ব্যবহারে সাধারণত ৫০-৭০% পর্যন্ত সাশ্রয় করা সম্ভব।

২. প্রি-ওন্ড ফার্নিচার খুঁজুন

পান্থপথ, খিলগাঁও, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রি-ওন্ড ফার্নিচার মার্কেট রয়েছে। এসব মার্কেটে সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো মানের সোফা সেট, সেন্টার টেবিল, টিভি ক্যাবিনেট, শোকেস, কফি টেবিল, আরাম চেয়ার, বুকশেলফ, কার্পেট, মিরর, ইত্যাদি পাবেন। এছাড়াও ফেসবুক মার্কেটপ্লেস, Bikroy, ইত্যাদি অনলাইন প্লাটফর্মেও সাধারণ থেকে এক্সসেপশনাল ডিজাইনের প্রি-ওন্ড ফার্নিচার পাবেন।

৩. সাজসজ্জা উপকরণ

ফ্লোর ল্যাম্প, টেবিল ল্যাম্প, কার্পেট, পর্দা, আর্টওয়ার্ক বা পেইন্টিং, আয়না, দেয়াল ঘড়ি, ট্যাপেস্ট্রি, ইনডোর প্ল্যান্ট, ছবির ফ্রেম, আলংকারিক ট্রে, ফুলদানি, ভাস্কর্য, ক্যান্ডেল হোল্ডার, ইত্যাদি ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায়। আপনার ঘরের স্পেস এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সাজসজ্জা উপকরণ বাছাই করুন। কার্পেট, পর্দা, ইত্যাদি সাজসজ্জা উপকরণ ঘরের সৌন্দর্যের পাশাপাশি আপনার রুচিশীলতাও ফুটিয়ে তুলবে। নিউমার্কেট, মৌচাক সহ দেশের বিভিন্ন লোকাল স্টোরে এসব প্রি-ওন্ড সাজসজ্জা উপকরণ সাশ্রয়ী মূল্যে পাবেন।

৪. ডু ইট ইওরসেল্ফ (DIY) ডিজাইন করুন

পুরনো কিন্তু ভালো অবস্থায় থাকা সোফা, চেয়ার এবং ছোট খাটো ফার্ণিচার পালিশ বা বার্ণিশ করে আকর্ষণীয় তুলুন। লোকাল থ্রিফট শপে অল্প দামে মানসম্পন্ন ফার্নিচার পাওয়া যায়। পুরনো পাত্রে ইনডোর গাছ লাগিয়ে ঘরকে প্রাণবন্ত করে তুলুন। ফার্নিচারে নতুন আবরণ বা রঙিন কুশন দিয়ে নতুন রূপ দিতে পারেন। স্মার্ট ডেকোর অ্যারেঞ্জমেন্ট, হালকা রঙ এবং আলোর মিশেলে অল্প বাজেটেই আরামদায়ক ও আকর্ষণীয় লিভিং রুম বানানো সম্ভব।

প্রি-ওন্ড জিনিসপত্র দিয়ে কম বাজেটে আরামদায়ক লিভিং রুম তৈরি করার কিছু টিপস

১. লিভিং রুমের সাইজ অনুযায়ী ফার্নিচার এবং সাজসজ্জার জিনিস কিনুন।

২. প্রি-ওন্ড জিনিস কেনার সময় ভালভাবে দেখে নিন, জিনিসগুলো ব্যবহারযোগ্য ও মজবুত কিনা।

৩. অপ্রয়োজনীয়, ভারী এবং বিশালাকার ফার্নিচার এড়িয়ে চলুন।

৪. আপনার প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী ধাপে ধাপে কিনুন।

৫. লোকাল থ্রিফট শপ এবং অনলাইন প্লাটফর্মে অফার কিংবা ডিসকাউন্টের জন্য অপেক্ষা করুন।

৬. ঘরের স্পেস বাঁচাতে মাল্টি-ফাংশনাল ফার্নিচার খুজুন।

৭. দেয়ালে হালকা রং এবং লাইটিং ব্যবহার করুন, কারণ, সুন্দর রং এবং লাইটিং মনে প্রশান্তি এনে দেয়।

৮. ইউটিউব দেখে পুরনো বোতল, ট্রলি, বাক্স দিয়ে শো-পিস তৈরি করুন।

৯. প্রি-ওন্ড ফার্নিচারে নতুন কুশন ও কভার, এবং মেঝেতে মার্জিত কার্পেট ব্যবহার করুন, যা আপনার রুচিবোধ ফুটিয়ে তুলবে।

পরিশেষে, নির্দিষ্ট বাজেটে প্রি-ওন্ড জিনিসপত্র দিয়ে একটি ক্লাসি এবং কম্ফোর্টেবল লিভিং রুম তৈরি করা খুবই সম্ভব। একটু ধৈর্য, সৃজনশীল চিন্তা, এবং যাচাই বাছাই করে কিনলে আপনি আপনার মনের মতো একটি লিভিং রুম তৈরি করতে পারবেন কম বাজেটের মধ্যেই। প্রি-ওন্ড জিনিসপত্র দিয়ে রুম সাজানোর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো কম খরচে মানসম্পন্ন জিনিস পাওয়া যায়। এছাড়া ভালো ভালো ব্র্যান্ডের ফার্নিচার কম দামে পাওয়া যায়। আপনি ইউনিক এবং ভিন্টেজ লুকিং প্রি-ওন্ড ফার্নিচার দিয়ে আকর্ষণীয় এবং আরামদায়ক লিভিং রুম সাজাতে পারবেন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১. বাংলাদেশে প্রি-ওন্ড ফার্নিচার কেনা কি নিরাপদ?

হ্যাঁ নিরাপদ। তবে আপনাকে ভালোভাবে পরীক্ষা করে কিনতে হবে। কাঠ বা বোর্ডের অবস্থা, ঘূণে ধরেছে কিনা, ফাটল ধরেছে কিনা, দাগ বা গন্ধ আছে কিনা, ইত্যাদি দেখে কিনতে হবে।

২. বাংলাদেশে কোথায় ভালো মানের প্রি-ওন্ড ফার্নিচার পাওয়া যায়?

পান্থপথ, খিলগাঁও, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রি-ওন্ড ফার্নিচার মার্কেট রয়েছে। এছাড়াও ফেসবুক মার্কেটপ্লেস, Bikroy, ইত্যাদি অনলাইন প্লাটফর্মেও সাধারণ থেকে এক্সসেপশনাল ডিজাইনের প্রি-ওন্ড ফার্নিচার পাবেন।

৩. কোন জিনিসগুলো পুনঃব্যবহারের জন্য বেশি উপযোগী?

সোফা সেট, সেন্টার টেবিল, টিভি ক্যাবিনেট, শোকেস, কফি টেবিল, আরাম চেয়ার, বুকশেলফ, কার্পেট, মিরর, ল্যাম্প, ওয়াল ডেকোর, ইত্যাদি আইটেম পুনঃব্যবহারের উপযোগী।

৪. ছোট লিভিং রুমের জন্য কেমন ধরনের ফার্নিচার বেছে নেয়া উচিত?

কমপ্যাক্ট এবং মাল্টিফাংশনাল ফার্নিচার বেঁচে নিন। অপ্রয়োজনীয়, ভারী এবং বিশালাকার ফার্নিচার এড়িয়ে চলুন।

৫. প্রি-ওন্ড জিনিসের ডিউরেবিলিটি কেমন?

মজবুত ফার্নিচার এবং ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে, প্রি-ওন্ড জিনিস অনেক বছর টিকে থাকতে পারে।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close