ড্রোন উড়ানোর শখঃ শুরু করার আগে কিছু জরুরি তথ্য

গত এক দশকে ড্রোন কেবল পেশাদারদের টুল নয়, বরং শখের গ্যাজেট হিসেবেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আকাশ থেকে দৃষ্টিনন্দন ছবি তোলা, বন্ধুদের সঙ্গে রেসিং বা কেবল আকাশে উড়ে দেখা – শখ হিসেবে ড্রোন উড়ানো বাংলাদেশে দ্রুতই জনপ্রিয় হচ্ছে। তবে কিনে নেওয়ার আগে জানা জরুরি এর খরচ, নিয়মকানুন, নিরাপত্তা এবং শেখার ধাপগুলো।
এই ব্লগে আলোচনা করা হলো নতুনদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো, যাতে শখের ড্রোন উড়ানো হয় নিরাপদ ও আনন্দময়।
১. প্রথম ড্রোনের বাজেট নির্ধারণ করুন
ড্রোনের দাম বৈচিত্র্যময়। নতুনদের জন্য টয় ড্রোন পাওয়া যায় ৫,০০০-১৫,০০০ টাকায়, যা বেসিক নিয়ন্ত্রণ শেখার জন্য উপযুক্ত। মিড-রেঞ্জ ড্রোন যেমন DJI Mini বা Fimi X8 এর দাম ৪০,০০০-৮০,০০০ টাকা, এতে থাকে এইচডি ক্যামেরা ও জিপিএস স্ট্যাবিলিটি। পেশাদার ড্রোন যেমন চলচ্চিত্র বা সার্ভের কাজে ব্যবহৃত হয়, এগুলোর দাম ১,৫০,০০০ টাকার বেশি। তাই উদ্দেশ্য অনুযায়ী বাজেট ঠিক করাই শ্রেয়।
২. উড়ানোর আগে বেসিক শেখা
ড্রোন চালানো মানে কেবল সুইচ অন নয়। নতুনদের জানতে হবে কন্ট্রোল, বাতাসের প্রভাব, ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট, টেক-অফ ও ল্যান্ডিং কৌশল। গাছ, বৈদ্যুতিক তার বা ভিড় থেকে দূরে খোলা জায়গায় প্র্যাকটিস করুন। এখনকার অনেক ড্রোনেই নবীন মোড ও অটো-রিটার্ন ফিচার থাকে, তবে রিফ্লেক্স ট্রেনিং অপরিহার্য। ইউটিউব ভিডিও দেখা বা ঢাকার ও চট্টগ্রামের ড্রোন ক্লাবে যোগ দিলে শেখা সহজ হয়।
৩. বাংলাদেশে ড্রোন ব্যবহারের নিয়ম
ড্রোন উড়ানোর সঙ্গে দায়িত্বও জড়িত। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (CAAB) নিয়ম অনুযায়ী:
- নির্দিষ্ট ওজনের উপরে ড্রোন উড়াতে অনুমতি প্রয়োজন।
- এয়ারপোর্ট, সরকারি ভবন বা সামরিক এলাকায় ড্রোন ওড়ানো যাবে না।
- ২০০ ফুটের ওপরে উড়াতে হলে অনুমোদন নিতে হবে।
- ছবি বা ভিডিও তোলার সময় সবসময় গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে।
নিয়ম না মানলে জরিমানা বা ড্রোন জব্দ হতে পারে। তাই সর্বশেষ নির্দেশনা দেখে নেওয়া উচিত।
৪. নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ টিপস
ড্রোন উপভোগ্য করতে হলে নিরাপত্তা আগে। উড়ানোর আগে ব্যাটারির চার্জ চেক করুন-বেশিরভাগ ড্রোনে ফ্লাইট টাইম মাত্র ২০-৩০ মিনিট। প্রপেলার ফাটল বা ক্ষতি আছে কিনা দেখুন, এবং সফটওয়্যার আপডেট রাখুন। ঝড়ো বাতাস বা বৃষ্টিতে ড্রোন উড়ানো এড়িয়ে চলুন। দীর্ঘ সেশনের জন্য অতিরিক্ত ব্যাটারি ও প্রপেলার রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
শুরু করার আগে কিছু টিপস
ড্রোন উড়ানোর আগে কিছু ব্যাপার মনে রাখুনঃ
- অনুশীলনের জন্য আগে কম দামি টয় ড্রোন কিনুন।
- ভিড় এড়িয়ে খোলা জায়গায় উড়ান।
- ছবি তুললে অন্যের গোপনীয়তা বজায় রাখুন।
- সবসময় অতিরিক্ত ব্যাটারি রাখুন।
- ড্রোন ক্লাব বা অনলাইন গ্রুপে যুক্ত হয়ে পরামর্শ নিন।
উপসংহার
বাংলাদেশে শখ হিসেবে ড্রোন উড়ানো হতে পারে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা, যদি সচেতনভাবে শুরু করেন। বাজেট নির্ধারণ, বেসিক শেখা, নিয়ম মেনে চলা এবং নিরাপদ উড়ানোর মাধ্যমে আপনি উপভোগ করতে পারবেন প্রতিটি ফ্লাইট। ফটোগ্রাফি, রেসিং বা কেবল আনন্দের জন্য-ড্রোন আপনাকে দেবে এক ভিন্ন আকাশের দৃষ্টিকোণ।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. বাংলাদেশে বিগিনারদের জন্য ড্রোনের দাম কত?
টয় ড্রোন পাওয়া যায় ৫,০০০ টাকা থেকে, আর মিড-রেঞ্জ মডেলের দাম ৪০,০০০ – ৮০,০০০ টাকা।
২. ড্রোন উড়াতে কি অনুমতি লাগে?
হ্যাঁ, নির্দিষ্ট আকার ও উচ্চতার ড্রোনের জন্য CAAB অনুমতি প্রয়োজন।
৩. কোথায় প্র্যাকটিস করা ভালো?
শহরের বাইরে খোলা মাঠ বা ফাঁকা জায়গা সবচেয়ে নিরাপদ।
৪. একটি ব্যাটারিতে কতক্ষণ উড়ানো যায়?
সাধারণত ২০-৩০ মিনিট পর্যন্ত ফ্লাইট টাইম থাকে।
৫. বাংলাদেশে কি ড্রোন বৈধ?
হ্যাঁ, তবে অবশ্যই CAAB এর নিয়ম মেনে চালাতে হবে।