হোম এবং লিভিং

ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার এবং যত্নের সহজ পদ্ধতি

প্রযুক্তি ও অটোমেশনের যুগে এখন কাপড় ধোয়ার কাজ সহজেই করা যাচ্ছে ওয়াশিং মেশিনের মাধ্যমে। কিন্তু মেশিনটি ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি পালন করছেন তো? তাছাড়া নিয়মিত এর রক্ষণাবেক্ষণ করাও খুব জরুরি। 

ব্যবহার ও যত্নের সঠিক পদ্ধতি জানা না থাকলে কাপড় ধোয়া সঠিক হবে না; মেশিনেও যেকোনো সময় সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আজকে আমরা ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার ও যত্নের সহজ পদ্ধতিগুলো আলোচনা করবো। 

ওয়াশিং মেশিন ব্যবহারের সহজ পদ্ধতি 

যেসব কাপড় পরিষ্কার করতে চান, সেগুলো একত্র করুন 

প্রথমে কাপড়গুলো একত্র করুন। মনে রাখবেন, প্রতিটি ওয়াশিং মেশিনের নিজস্ব ধারণক্ষমতা রয়েছে। এর বাইরে কাপড় দিলে মেশিনটির কর্মক্ষমতায় ব্যাঘাত ঘটবে। এমনকি বারবার এমন করলে মেশিন নষ্টও হয়ে যেতে পারে।  

এছাড়াও মেশিনে অনেক কাপড় একসাথে দেওয়ার আরেকটি অসুবিধা হলো কাপড় পরিষ্কার হবে না। অতিরিক্ত কাপড় থাকার কারণে তা সাবান পানির সাথে ভালোভাবে মিশতে পারবে না। ফলে কাপড় বের করার পর দেখবেন আশানুরূপ পরিষ্কার হয়নি। 

কাপড় প্রস্তুত করার সময় কোনো বোতাম থাকলে তা খুলে নেবেন; জিপার থাকলে তা বন্ধ করবেন। এর কারণ বোতাম বা জিপারে নকল পাথরের ডিজাইন থাকলে তা মেশিন ধোয়ার সময় নষ্ট হতে পারে। এরপর পকেট চেক করবেন, গুরুত্বপূর্ণ কিছু থাকলে তখনই বের করে নেবেন। 

কোনো কাপড়ে দাগ থাকলে তা মুছে ফেলুন 

কোনো কাপড়ে যদি চা-কফির দাগ, রঙের দাগ অথবা কাদামাটির দাগ থাকে, তাহলে তা মেশিনে দেওয়ার আগে মুছে ফেলুন। এতে করে সেই দাগ অন্য কাপড়ে লাগার সম্ভাবনা থাকবে না। প্রয়োজনে সেই কাপড় মেশিনে আলাদাভাবে দিন। 

কী কাপড় দিচ্ছেন সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন 

ওয়াশিং মেশিনে কাপড় দেওয়ার সময় কিছু ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। যেমন: 

  • সাদা, হালকা রঙ ও গাঢ় রঙের কাপড় আলাদা ধুতে হবে। 
  • ছোট কাপড়, যেমন: মোজা, মাস্ক এগুলো মেশিনে দেবেন না; যেকোনো সময় মেশিনের ভেন্টে এগুলো আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • হালকা কাপড় ও ভারী কাপড় আলাদা করে দিন। শার্ট, জ্যাকেট, পাথরের কাজ করা ভারী ডিজাইনের জামা প্রভৃতি আলাদা করে এরপর মেশিনে দিন। 
  • জিন্সের মতো মোটা কাপড় আলাদা দিন। এর সাথে পাতলা জামা, গেঞ্জি বা স্কার্ফ মিলিয়ে দেবেন না। 
  • জর্জেট কাপড়ের জামা, ওড়না বা শাড়ি খুব সংবেদনশীল হয়ে থাকে। তাই এগুলো কখনোই ওয়াশিং মেশিনে দেবেন না। এগুলে নিজে ধুয়ে ফেললে কাপড় নষ্ট হবার কোনো ঝুঁকি থাকবে না। 
  • কিছু কাপড়ে দৈনন্দিন পরিধানের কাপড়ের চেয়ে বেশি সাবান প্রয়োজন হয়। ওগুলো আলাদা দিন। 

মেশিন ব্যবহারের পর এর দরজা খুলে রাখুন 

কাপড় ধোয়ার পর ওয়াশিং মেশিন স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে থাকে। এই স্যাঁতস্যাঁতে ভাব দূর করতে ব্যবহারের পর এর দরজার কিছুক্ষণের জন্য এর দরজার খুলে রাখুন। এতে করে পানি শুকিয়ে যাবে আর ভেতরে দুর্গন্ধ হবে না। 

প্রয়োজনে সুতি কাপড় দিয়ে মেশিনের ভেতরটা পরিষ্কার করুন। এতে মেশিনের কর্মক্ষমতা ভালো থাকবে। 

মেশিন চালানো শিখুন 

ওয়াশিং মেশিন দুই ধরণের হয়ে থাকে: ফ্রন্ট লোডিং ও টপ লোডিং। দ্বিতীয়টির মধ্যে আছে সেমি অটোমেটিক ও অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিন। এছাড়াও অনেকে ম্যানুয়াল ওয়াশিং মেশিনও ব্যবহার করে থাকে।

আপনার মেশিন কোন ধরণের ও মেশিনের কোন সুইচ কোন কাজ করে তা ভালোভাবে শিখে নিন। মেশিনের কাজ ও রক্ষণাবেক্ষণের অনেকটুকু নির্ভর করে মেশিন দক্ষভাবে চালানোর ওপর। 

ওয়াশিং মেশিন যত্নের সহজ পদ্ধতি 

মেশিনের অবস্থান ঠিক রাখুন

আপনার ওয়াশিং মেশিনের অবস্থান হতে হবে সমান মেঝেতে। অর্থাৎ মেঝের সাথে সমান্তরালভাবে মেশিন বসাতে হবে। এ ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকবেন। কারণ এবড়ো-থেবড়ো বা অসমান জায়গায় মেশিন রাখলে তা এর অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। 

এ ব্যাপারে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, মেশিনটা একটু উঁচু কোথাও রাখলে ভালো হয়। অনেক সময় মেশিনের নিচে পানি জমতে পারে। তাই এটা খোলা জায়গায় রাখার চেষ্টা করবেন। 

প্রতি মাসে মেশিন পরিষ্কার করুন 

আপনার ওয়াশিং মেশিন যেই ধরণেরই হয়ে থাকুক। প্রতি মাসে একবার এটা যথাযথভাবে পরিষ্কার করলে তা মেশিনের জন্য ভালো হয়। এতে করে মেশিনের ভেতর জমে থাকা ময়লা ও সাবান দূর হবে।  

এই মেশিনে সাধারণত হট ওয়াশ ফিচার থাকে, যা ব্যবহার করে এটা পরিষ্কার করা যায়। আপনার মেশিনে যদি এই ফিচার না থাকে, তাহলে গরম পানিতে লেবুর রশ মিশিয়ে এর ভেতরটি পরিষ্কার করতে পারেন। তাহলে ড্রামে ছত্রাক ও দুর্গন্ধ থাকলে সেগুলো চলে যাবে। 

বৈদ্যুতিক সংযোগ নিয়ে সতর্ক থাকুন 

ওয়াশিং মেশিন চালানোর জন্য যে পরিমাণ বৈদ্যুতিক সংযোগ দরকার হয়, তার রেঞ্জ ৮০০ থেকে ১২০০ ওয়াট পর্যন্ত। তাই মেশিন চালাতে সাধারণ সকেট বা মাল্টিপ্লাগ ব্যবহার করবেন না। এতে যেকোনো সময় শর্টসার্কিট হয়ে দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি থাকে। 

চেষ্টা করবেন বিদ্যুতের মূল লাইন থেকে আলাদা একটা সংযোগ নিয়ে সকেট তৈরি করতে। প্রতিবার ব্যবহার শেষে সকেটের সুইচ অফ করে রাখবেন। এর ফলে পুরোপুরি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। 

আজকাল অনেক ওয়াশিং মেশিন কোম্পানি তাদের পণ্যে ১৪০০ বা ১৫০০ আরপিএম-এর ইনভার্টার ব্যবহার করে থাকে। এটা ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। আপনার যদি ইনভার্টারযুক্ত ওয়াশিং মেশিন থাকে, তাহলে সপ্তাহে ৫ দিন বা মাসে ২০-২২ দিন ব্যবহারের পর বিদ্যুৎ বিল আসবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। 

ভোল্টেজ স্টেবিলাইজার ব্যবহার করুন 

মেশিন চলাকালীন ভোল্টেজের রেঞ্জ ওঠা-নামা করতে থাকলে তা মেশিনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই আপনার ওয়াশিং মেশিনের জন্য একটা ভোল্টেজ স্টেবিলাইজার ব্যবহার করুন। এতে করে মেশিন ভালো কাজে দিবে আর টিকবেও অনেকদিন।

ওয়াশিং মেশিন নিয়মিত পরিষ্কার করা জরুরি কেনো? 

ওয়াশিং মেশিন যখন ডিটার্জেন্ট ও পানি দিয়ে অপরিষ্কার জামা-কাপড় কাচে, তখন মেশিন থেকে ময়লা পানি বাইরে বের হয়ে যায়। তবে পানি বেরিয়ে গেলেও জীবাণুগুলো মেশিনের ভেতরে থেকে যায়। এগুলো খালি চোখে আমরা দেখতে পাই না। কিন্তু লম্বা সময় এভাবে মেশিনের মধ্যে জীবাণু জমতে থাকলে তা অস্বাস্থ্যকর হয়ে দাঁড়ায়। 

একই সাথে জামাকাপড় থেকে সুতা ও ধুলাবালিও মেশিনের মধ্যে জমতে থাকে। আপনার বাসার পানিতে যদি আয়রন থাকে, তাহলে মেশিনের ড্রামের মধ্যে আয়রনও জমে থাকবে। বেশি পরিমাণে জমে গেলে এটার কারণে মেশিন থেকে পানি বের হওয়ার ছিদ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে মেশিনের অভ্যন্তরীণ সিস্টেমে সমস্যা তৈরি হবে। 

এমন পরিস্থিতি প্রতিরোধ করার জন্য নিয়মিত ওয়াশিং মেশিনের যত্ন নেওয়া উচিত। মেশিন যখন পরিষ্কার থাকবে, তখন এর কার্যক্রম ঠিক থাকবে আর কাপড় ভালোভাবে পরিষ্কার হবে। 

ওয়াশিং মেশিনে সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় টিপস

  • পানির তাপমাত্রা সঠিকভাবে সেট করুন। এক্ষেত্রে কাপড়ের রঙ, ফেব্রিক ও কাপড় কেমন অপরিষ্কার তা বুঝে তাপমাত্রা ঠিক করতে হবে। অনেক ময়লা কাপড়ের ক্ষেত্রে গরম পানি প্রয়োজন। আবার লিনেন বা উজ্জ্বল রঙের কাপড়ের জন্য ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে হবে। 
  • কাপড়ের ধরণ অনুযায়ী মেশিনের ওয়াশিং টাইমে তারতম্য হবে। এটা কাপড় ধুতে দেওয়ার আগে ঠিক করতে হবে। 
  • ওয়াশিং মেশিনে মোজা বা আন্ডারগার্মেন্টস ধুতে হলে তা একটা নেটের ব্যাগে ভরে মেশিনে দিন। তবে এর আগে অবশ্যই কোনো বোতাম বা হুক থাকলে থাকলে সেগুলো লাগিয়ে দিতে হবে। 
  • আজকাল ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়ার জন্য আলাদা ডিটার্জেন্ট পাওয়া যায়। তবে বেশি টাকা দিয়ে এগুলো কেনার প্রয়োজন নেই। সাধারণ যেসব পাউডার আমরা ব্যবহার করি, সেগুলোই ওয়াশিং মেশিনে ব্যবহার করা যায়। 
  • আপনার মেশিনে ড্রায়ার অপশন না থাকলে ভেজা কাপড় রোদে শুকাতে দিন। জামা উজ্জ্বল রঙের হলে হালকা রোদে শুকান। অনেকে গ্যাসার চুলার ওপর অথবা ফ্যানের নিচে শুকিয়ে থাকেন। কিন্তু রোদে শুকালে কাপড়ের গুণমান ভালো থাকে। উজ্জ্বল রঙের জামা হালকা রোদে শুকাতে দিন। 
  • কাপড় দেওয়ার শুরুতে এর সাথেই সাবান পানির মিশ্রণ মেশিনে দিয়ে দিন। এতে কাপড় পরিষ্কার হবে দ্রুত আর সাবান বা ডিটারজেন্ট পাউডার খরচ হবে কম। 
  • মেশিন চলাকালীন ভেতর থেকে কোনো অস্বাভাবিক আওয়াজ হলে দ্রুত মেশিনের কোম্পানি বা কারিগরের সাথে যোগাযোগ করুন। 

ওয়াশিং মেশিনের সঠিক ব্যবহার এবং নিয়মিত যত্ন নেওয়া এর কার্যকারিতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেশিনের ড্রাম পরিষ্কার রাখা, সঠিক ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা, এবং অতিরিক্ত কাপড় না দেওয়ার মতো সহজ টিপস মেনে চললে আপনার মেশিন দীর্ঘদিন ভালো থাকবে। নিয়মিত যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে শুধু মেশিনের আয়ুষ্কাল বাড়বে না, বরং প্রতিবার আপনার কাপড় হবে নিখুঁতভাবে পরিষ্কার। সঠিকভাবে যত্ন নিন এবং এটি দীর্ঘ সময় ধরে আপনার সঙ্গী হবে!

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close