যানবাহন

পুরনো গাড়ি বিক্রি করার সহজ এবং কার্যকর পদ্ধতি

বাংলায় একটি প্রবাদ রয়েছে, “মরা হাতির দামও লাখ টাকা”। গাড়ির ক্ষেত্রেও এই প্রবাদটি মিলে যায়। পুরনো গাড়ি ঘঁষামাজা করে, কিছুটা রিনোভেশন করে বেশ ভালো দামেই বিক্রি করা সম্ভব। তবে পুরনো গাড়ি মনমতো দামে বিক্রি করা অনেক সময়েই কঠিন হতে পারে। বিশেষ করে আপনার যদি দামদর এবং মার্কেট সম্পর্কে ধারণা না থাকে। এছাড়াও অনেকেই জানেনা কিভাবে শুরু করবেন কিংবা কিভাবে স্টেপ বাই স্টেপ এই কাজগুলো করতে হয়।

তবে সাধারণ কিছু বিষয়ে ধারণা এবং কিছু কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করলে, আপনি মনমতো দামে আপনার পুরনো গাড়ি বিক্রি করতে পারবেন। এই ব্লগে আপনার পুরনো গাড়ি বিক্রি করার বিষয়ে কিছু সহজ এবং কার্যকর পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। কন্ডিশন অনুযায়ী গাড়ির বর্তমান মূল্য কেমন হতে পারে, কোথায় গাড়ি বিক্রি করলে ভালো দাম পেতে পারেন, লাইসেন্স এবং অন্যান্য ডকুমেন্টস কিভাবে হাতবদল করবেন ইত্যাদি বেসিক আইডিয়া সহ এখানে বেশ কিছু কার্যকর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যায় এই পদ্ধতিগুলো আপনার উপকারে আসবে।

আপনার পুরনো গাড়ি বিক্রি করার সহজ এবং কার্যকর পদ্ধতি –

(১) বিক্রি করার জন্য গাড়ি প্রস্তুত করুন এবং বর্তমান কন্ডিশন পর্যালোচনা করুন –

বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, ”প্রথমে দর্শনধারী পরে গুণবিচারি”। গাড়িটিকে আকর্ষণীয় দেখাতে এটির ভিতর-বাহির যতটা সম্ভব পরিষ্কার করুন। গাড়িতে ডেন্ট বা স্ক্র্যাচ থাকলে সারিয়ে ফেলুন। কেনার আগে ক্রেতা অবশ্যই টেস্ট ড্রাইভ করবেন। তাই ছোটোখাটো মেকানিক্যাল সমস্যা থাকলে ঠিক করে নিন। যেমন – ব্যাটারি, টায়ার, লাইটিং সিস্টেম, ইত্যাদি। গাড়িটিতে কোনো বড় সার্ভিসিং করা হয়ে থাকলে, সেই ডকুমেন্টসগুলো সংগ্রহে রাখুন। কোনো পার্টস পরিবর্তন করা হলে, তার ওয়ারেন্টি কার্ড সাথে রাখুন। এই কাজগুলো সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে গাড়ির বর্তমান অবস্থা প্রমাণ করতে কাজে লাগবে।

(২) বর্তমান কন্ডিশন অনুযায়ী গাড়ির দাম নির্ধারণ করুন –

গাড়ির বর্তমান অবস্থা বুঝে এটির দাম নির্ধারণ করুন। মডেল অনুযায়ী এটির বর্তমান দাম কত, ওভারঅল কোনো সমস্যা আছে কিনা, কোনো পার্টস পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা কিংবা করতে হবে কিনা, এসব বিষয়ে চিন্তা করে দাম নির্ধারণ করুন। গাড়ি কতটা পুরনো, কত কিমি অতিক্রম করেছে, মডেল ইয়ার, ইঞ্জিন কন্ডিশন, ইত্যাদি অবস্থা অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা উচিত। এছাড়াও ট্রান্সমিশনের ধরন ম্যানুয়াল নাকি স্বয়ংক্রিয়, জ্বালানির ধরন পেট্রোল, ডিজেল নাকি সিএনজি, এবং দুর্ঘটনার ইতিহাস আছে কিনা ইত্যাদি বিষয়ও বিবেচনায় রাখতে হবে। গাড়ির বর্তমান বাজার মূল্য যাচাই করতে, এবং সেকেন্ড হ্যান্ড মার্কেটে এটির দাম যাচাই করতে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম অনুসরণ করতে পারেন। গাড়ির দাম নিয়ে দর কষাকষি করা যাবে কিনা, তা স্পষ্ট করুন।

(৩) অনলাইন মার্কেটপ্লেস এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারেন –

পুরনো গাড়ি বিক্রি করতে অনলাইন মার্কেটপ্লেস এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারেন। Bikroy এবং facebook মার্কেটপ্লেসগুলোতে গাড়ির বিস্তারিত ছবি এবং তথ্য দিয়ে বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। সম্ভাব্য ক্রেতারা এই অনলাইন প্লেসগুলোতেই বেশি সার্চ করে থাকেন। এক্ষেত্রে গাড়ির ভিতর এবং বাইরে বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে ক্লিয়ার ফটো তুলুন। ভাল ভিজ্যুয়াল পিকচার পেলে ক্রেতারা আকৃষ্ট হোন। ডেসক্রিপশন বা স্পেসিফিকেশন বক্সে গাড়ির মডেল, মাইলেজ, বর্তমান অবস্থা নিয়ে একটি বিশদ বিবরণ লিখুন।

(৪) মোটরগাড়ি ডিলারদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন –

ডিলারদের কাছে অনেক রকম গাড়ির চাহিদা থাকে। তারা পুরনো গাড়ি রিনোভেট করে, নতুন করে কালার বার্নিশ করে, বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করে। ডিলারদের সাহায্য নেবার সব চেয়ে বড় সুবিধা হলো, কোনো লিগ্যাল কাগজপত্র এবং টেকনিক্যাল সমস্যা তারা নিজ দায়িত্বেই ঠিক করে নেয়। তবে ডিলারদের কাছে গাড়ি বিক্রি সহজতর হলেও, দাম আশানুরূপ হয় না।

(৫) গাড়ি নিলামে তুলতে পারেন –

ইউনিক বা স্পেশাল ডিজাইনের পুরনো গাড়ি হলে গাড়ি নিলামে তুলতে পারেন। কিছু নিলাম ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এই বিষয়ে আপনাকে সাহায্য করবে। এক্ষেত্রে সকল ডকুমেন্টস আপনাকে ক্লিয়ার রাখতে হবে, এবং নির্দিষ্ট কমিশন দিতে হবে। এই পদ্ধতিতে আপনি  দ্রুত নগদ অর্থ পাবেন, তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী দামের বিষয়ে আপনাকে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিতে হবে। খারাপ কন্ডিশনের গাড়িও নিলামে তুলতে পারেন, তবে এক্ষেত্রে দাম বেশ কম হবে।

(৬) গাড়ির টাইটেল এবং অন্যান্য ডকুমেন্টস প্রস্তুত রাখুন –

পুরনো গাড়ি বিক্রি করা মানে মালিকানাও হস্তান্তর করতে হবে। নিয়ম মেনে মালিকানা হস্তান্তর করা না হলে আইনি জটিলতার মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে। তাই গাড়ির মালিকানা সংক্রান্ত সকল ডকুমেন্টস প্রস্তুত রাখুন। যেমন – রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ইনস্যুরেন্স, পলিউশন সার্টিফিকেট, ট্যাক্স রেকর্ড, ব্যাংকের অনাপত্তি (যদি ঋণে গাড়ি কেনা হয়ে থাকে), ইত্যাদি। এই ডকুমেন্টসগুলো ঠিক থাকলে লেনদেনের প্রক্রিয়া সহজ হবে। বিক্রির পর বিআরটিএ-এর স্থানীয় অফিসে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট স্থানান্তরের জন্যে আবেদন করতে হবে।

(৭) সতর্কতা অবলম্বন করুন –

সন্দেহজনক চেক দিয়ে অর্থপ্রদান, অস্বাভাবিক লেনদেন, ইত্যাদি স্ক্যাম এড়িয়ে চলুন। ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি বিক্রি করতে চাইলে, ক্রেতার অবস্থানে না যাওয়াই নিরাপদ। প্রয়োজনে পরিচিত এলাকায় এবং সর্বজনীন স্থানে দেখা করুন। অবশ্যই ক্রেতার পরিচয়পত্র যাচাই করুন এবং টাকা লেনদেনে বৈধ পদ্ধতি বেছে নেবেন। খারাপ উদ্দেশ্যে গাড়ি কেনা হলে, ভবিষ্যতে বিপদে পরার সমূহ সম্ভবনা রয়েছে।

এছাড়া, পুরনো গাড়ি বিক্রির জন্য ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনার কাছের মানুষজন এবং পরিচিতদের মাধ্যমে বিক্রির চেষ্টা করতে পারেন। এতে আপনি মধ্যস্থতাকারীর কমিশন ছাড়াই গাড়ি বিক্রি করতে পারবেন। পরিশেষে, গাড়িটি সম্পর্কে সিম্পল কথায় এটির ভালো-মন্দ দিক, যেমন মাইলেজ, ইঞ্জিনের ধরন, যান্ত্রিক সমস্যা, ইত্যাদি নিয়ে অনেস্ট অপিনিয়ন তৈরী করুন। এটি গ্রাহক আকৃষ্ট করবে, এবং তাদের সন্দেহ প্রবণতা কমে যাবে।

কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা

পুরনো গাড়ি বিক্রির সময় কিভাবে দাম নির্ধারণ করবেন?

গাড়ি কতটা পুরনো, কত কিমি অতিক্রম করেছে, মডেল ইয়ার, ইঞ্জিন কন্ডিশন, ইত্যাদি অবস্থা অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা উচিত। এছাড়াও ট্রান্সমিশনের ধরন ম্যানুয়াল নাকি স্বয়ংক্রিয়, জ্বালানির ধরন পেট্রোল, ডিজেল নাকি সিএনজি, এবং দুর্ঘটনার ইতিহাস আছে কিনা ইত্যাদি বিষয়ও বিবেচনায় রাখতে হবে।

পুরনো গাড়ি বিক্রি করার জন্য কোথায় বিজ্ঞাপন দিলে ভালো হবে?

পুরনো গাড়ি বিক্রি করার জন্য আপনি বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেমন bikroy এবং facebook মার্কেটপ্লেসগুলোতে গাড়ির বিস্তারিত ছবি এবং তথ্য দিয়ে বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। সম্ভাব্য ক্রেতারা এই অনলাইন প্লেসগুলোতেই বেশি সার্চ করে থাকেন।

পুরনো গাড়ি বিক্রি করার সময় কি কি ডকুমেন্টস ঠিকঠাক রাখবেন?

গাড়ির মালিকানা সংক্রান্ত সকল ডকুমেন্টস প্রস্তুত রাখুন। যেমন – রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ইনস্যুরেন্স, পলিউশন সার্টিফিকেট, ট্যাক্স রেকর্ড, ব্যাংকের অনাপত্তি (যদি ঋণে গাড়ি কেনা হয়ে থাকে), ইত্যাদি।

পুরনো গাড়ি বিক্রি করার সময় কিকি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?

সন্দেহজনক চেক দিয়ে অর্থপ্রদান, অস্বাভাবিক লেনদেন, ইত্যাদি স্ক্যাম এড়িয়ে চলুন। অবশ্যই ক্রেতার পরিচয়পত্র যাচাই করুন এবং টাকা লেনদেনে বৈধ পদ্ধতি বেছে নেবেন। খারাপ উদ্দেশ্যে গাড়ি কেনা হলে, ভবিষ্যতে বিপদে পরার সমূহ সম্ভবনা রয়েছে।

পুরনো গাড়ি বিক্রি করার পারফেক্ট সময় কখন?

সাধারণত যখন গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেড়ে যায় অথবা বাজারে গাড়ির চাহিদা কিংবা দাম বেড়ে যায়, তখন পুরনো গাড়ি বিক্রির পারফেক্ট সময়।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close