মোবাইল

আপনার স্মার্টফোনের গতি বাড়ানোর কার্যকরী উপায়

স্মার্টফোন বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্ত প্রায় সকল কাজেই আমরা স্মার্টফোন নির্ভর হয়ে উঠেছি। ফোন আগে ছিল শুধুই যোগাযোগের মাধ্যম, স্মার্টফোন যোগাযোগ ছাড়িয়ে কর্মস্থল, শিক্ষা, বিনোদন, সবকিছুতেই নির্ভরশীলতা এনে দিয়েছে।

সকল ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মতো, সময়ের সাথে সাথে স্মার্টফোনেও পারফরম্যান্স কমতে থাকে। তবে, মূলত মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এবং সাধারণ কিছু নিয়ম ওভারলুকের কারণে এই ডিভাইসগুলো ধীর গতির হয়ে যায় এবং পারফরম্যান্স হ্রাস পায়। স্মার্টফোনের ধীর গতি বলতে, অ্যাপ ল্যাগিং, লোডিং টাইম, বেশি রেস্পন্স টাইম, ব্যাটারির লাইফ কমে যাওয়া, ইত্যাদি সমস্যাকে বোঝায়। কিছু টেকনিক মেইনটেইন করলে, নতুন ডিভাইসে আপগ্রেড না করেই আপনার ফোনের গতি বাড়াতে পারেন। এই ব্লগে আপনার স্মার্টফোনের গতি বাড়ানোর কার্যকরী উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

স্মার্টফোনের গতি বাড়ানোর কার্যকরী উপায় –

(১) সপ্তাহে অন্তত একবার ক্যাশ ডাটা ক্লিয়ার করুন –

আপনি রেগুলার যেসব অ্যাপ ব্যবহার করেন, সেগুলোর ডাটা ক্যাশ মেমোরিতে জমে যায়। যা সময়ের সাথে সাথে বিশাল আকার ধারণ করে আপনার ফোনকে ধীর করে ফেলে। আপনার স্মার্টফোনের সেটিংস থেকে অ্যাপ স্টোরেজে গিয়ে ক্যাশ ডাটা ক্লিয়ার করতে পারবেন। যেসব অ্যাপ বেশি ব্যবহার করেন, সেগুলো আলাদা আলাদা ক্যাশ ক্লিয়ার করলে ভালো ফল পাবেন।

(২) অপ্রয়োজনীয় এবং অব্যবহৃত অ্যাপ আনইনস্টল করুন –

ফোনে অনেক অ্যাপ ইনস্টল করা থাকে (যাকে ব্লাটওয়্যার বলা হয়), যার বেশ কিছু আপনার জন্য অপ্রয়োজনীয় হতে পারে। অনেকে গেম, এবং অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ইনস্টল করে রাখেন, যা দীর্ঘ সময় অব্যবহৃত থেকে যায়। এই অ্যাপগুলো অনেক স্টোরেজ ধরে রাখে, যা মোবাইলকে ধীর করে দেয়। আবার অনেকে থার্ড পার্টি অ্যাপ ইনস্টল করেন, যা ব্যাকগ্রাউন্ডে রানিং থেকে ব্যাটারি পাওয়ার কমাতে থাকে। এমন অ্যাপগুলো সেটিংস থেকে অ্যাপসে গিয়ে আনইনস্টল করুন।

(৩) ব্যাকগ্রাউন্ডে শুধু প্রয়োজনীয় অ্যাপস চালু রাখুন –

ন্যাভিগেশন, ম্যাপ, ভয়েস কন্ট্রোল, সহ বিভিন্ন অ্যাপস নিজ থেকে অফ না করলে, ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকে। এই অ্যাপগুলো মেমরি এবং সিপিইউ পাওয়ার অ্যাবজর্ব করতে থাকে। এতে ব্যাটারি ড্রেন হয়, অনেক ক্ষেত্রে মোবাইল স্লো হয়ে যায়। স্মার্টফোনের সেটিংস অপশন থেকে ব্যাটারি অপশনে গিয়ে আপনি ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপস অপ্টিমাইজ করতে পারবেন।

(৪) মেমোরি স্টোরেজ স্পেস ৭০% এর নিচে রাখুন –

আপনার ফোনের মেমোরি স্টোরেজ স্পেস প্রায় পূর্ণ হয়ে গেলে, এটি আপনাকে স্লো পারফরম্যান্স দিতে থাকবে। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস ও বড় ফাইল, ছবি, ভিডিও সরিয়ে ফেলুন বা ক্লাউড স্টোরেজে আপলোড করুন।

(৫) যতটা সম্ভব লাইট ভার্সন অ্যাপ ইনস্টল করুন –

স্মার্টফোনের সফটওয়্যার রেগুলার আপডেট হয়। আপনার ফোন ওল্ড ভার্সন হয়ে থাকলে, এই আপডেট গুলো র‍্যাম এবং রমের উপর চাপ তৈরী করবে। যদি আপনার স্মার্টফোনের র‍্যাম এবং স্টোরেজ স্পেস কম থাকে, তবে লাইট ভার্সন অ্যাপ ব্যবহার করা ভালো হবে। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, এক্স (টুইটার), ইউটিউবের মতো অনেক জনপ্রিয় অ্যাপের “লাইট” ভার্সন প্লে-স্টোরে পাওয়া যায়। এই লাইট ভার্সন অ্যাপগুলো কম মেমোরি এবং ডেটা কনজিউম করে।

(৬) অ্যানিমেশন ডিজেবল এবং সফ্টওয়্যার নিয়মিত আপডেট করুন –

অনেকে গর্জিয়াস ডিসপ্লে আউটলুক করতে হাই রেজ্যুলেশন অ্যানিমেশন ব্যবহার করেন, যা ব্যাটারি ড্রেন এবং মোবাইল স্লো করে দেয়। স্মার্টফোনের সেটিংস থেকে ডেভেলপার অপশন গিয়ে অ্যানিমেশন ট্রানজিশন কন্ট্রোল করতে পারবেন।

স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেমের সফ্টওয়্যার আপ টু ডেট না থাকলে মোবাইল ধীর গতির হয়ে যায়। নির্দিষ্ট কিছু সিস্টেম আপডেট খুবই দরকারি, এগুলো বাগ ফিক্স, সিকিউরিটি প্যাচ, ইত্যাদি উন্নত করে।

(৭) শেষ অপশন হিসেবে ফ্যাক্টরি রিসেট করতে পারেন –

উপরের সব টেকনিক অনুসরণ করার পরও যদি ফোন ধীর গতির থাকে, তাহলে শেষ অপশন হিসেবে ফ্যাক্টরি রিসেট করতে পারেন। ফোন ব্যবহারের সময়কাল ২/৩ বছর হয়ে গেলে, ফ্যাক্টরি রিসেটই বেস্ট অপশন। ফ্যাক্টরি রিসেট আপনার স্মার্টফোন অনেকটাই ফাস্ট করে দেবে। রিসেট করার আগে অবশ্যই ডেটা ব্যাকআপ করবেন।

স্মার্টফোনের গতি বাড়ানোর আরো কিছু সাধারণ টেকনিক –

(১) হাই রেজ্যুলেশন ওয়ালপেপার এবং এনিমেটেড উইজেট ইনস্টল থেকে বিরত থাকুন।

(২) অটো-সিঙ্ক প্রয়োজন না হলে বন্ধ করুন। অটো-সিঙ্ক, ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ড এবং ডাটা সবসময় রানিং রাখে।

(৩) স্টার্ট অ্যাপ ম্যানেজার, এবং অটো টাস্ক কিলার ধরণের অ্যাপ ইনস্টল করতে পারেন, এই অ্যাপ পুরনো স্মার্টফোনের জন্য বেশ ভালো।

(৪) সপ্তাহে ১ দিন স্মার্টফোন রিস্টার্ট/রিবুট করুন।

(৫) প্রয়োজন শেষে ভিপিএন এবং থার্ড পার্টি অ্যাপ ডিজেবল করুন।

উপরের কৌশলগুলো ফলো করলে আপনার স্মার্টফোনেই পারফরম্যান্স অনেকটাই ফাস্ট হবে। এছাড়াও মোবাইল থেকে লং-লাস্টিং পারফরম্যান্স পেতে এই টেকনিকগুলো অবলম্বন করা উচিত। মূলত স্টোরেজ স্পেস, ব্যাকগ্রাউন্ড অপ্টিমাইজ, সফ্টওয়্যার আপডেট, চার্জিং টাইম ঠিকঠাক মেইনটেইন করলে স্মার্টফোনের গতি স্বাভাবিক থাকে। এই সহজ কৌশলগুলো মেনে চললে, আশা করা যায় আপনার স্মার্টফোন থেকে স্ট্যান্ডার্ড স্পিড সহ লং-লাস্টিং পারফরম্যান্স পাবেন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

(১) স্মার্টফোনের গতি কেন কমে যায়?

ওভারলোড স্টোরেজ, অত্যধিক ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ, অপ্রয়োজনীয় ফাইল জমে থাকা, মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, ইত্যাদি কারণে এই ডিভাইসগুলো ধীর গতির হয়ে যায় এবং পারফরম্যান্স হ্রাস পায়।

(২) স্মার্টফোনের স্টোরেজ কিভাবে ম্যানেজ করবেন?

ক্যাশ ক্লিয়ার, অব্যবহৃত অ্যাপ আনইনস্টল, এবং ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহার করে স্টোরেজ স্পেস ম্যানেজ করা যায়।

(৩) কীভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপস বন্ধ করবেন?

অ্যাপ সেটিংস থেকে ব্যাকগ্রাউন্ডে চলমান অ্যাপ ম্যানুয়ালি বন্ধ করা যায়। এছাড়াও ব্যাটারি সেভার একটিভ করেও ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপস বন্ধ করা যায়।

(৪) স্মার্টফোনের গতি কমে গেলে কি কি সমস্যা হয়?

অ্যাপ ল্যাগিং, লোডিং টাইম, বেশি রেস্পন্স টাইম, ব্যাটারির লাইফ কমে যাওয়া, ইত্যাদি সমস্যা হয়।

(৫) গতি বাড়ানোর জন্য ফ্যাক্টরি রিসেট কতটা উপযোগী?

ফোন ব্যবহারের সময়কাল ২/৩ বছর হয়ে গেলে, ফ্যাক্টরি রিসেটই বেস্ট অপশন। ফ্যাক্টরি রিসেট আপনার স্মার্টফোন অনেকটাই ফাস্ট করে দেবে। রিসেট করার আগে অবশ্যই ডেটা ব্যাকআপ করবেন।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close