২০২৫ সালে ঢাকার আশেপাশে জমি কেনার জন্য সেরা ৫টি সম্ভাবনাময় এলাকা

২০২৫ সালে ঢাকার আশেপাশে জমি বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় সুযোগ নিয়ে এসেছে, কারণ বেশ কয়েকটি এলাকা দ্রুত লাভজনক রিয়েল এস্টেট কেন্দ্রে রূপান্তরিত হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগ, সংযোগ প্রকল্প এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে এই স্থানগুলো দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য মুনাফার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এখানে ঢাকার আশেপাশে জমি কেনার জন্য বিবেচনা করার মতো শীর্ষ ৫টি উদীয়মান এলাকা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. পূর্বাচল নিউ টাউন
পূর্বাচল উদীয়মান রিয়েল এস্টেট হটস্পটগুলোর মধ্যে অগ্রণী অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের বৃহত্তম পরিকল্পিত উপশহর হিসেবে এটি একটি আধুনিক, স্বয়ংসম্পূর্ণ শহর হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে। ৩০০ ফুট পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের চলমান উন্নয়ন ঢাকার সাথে এর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছে।
এই এলাকায় একটি সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট (CBD), কূটনৈতিক জোন, আন্তর্জাতিক স্কুল এবং আইটি হাব গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে, যা এটিকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক উভয় ধরণের প্লটের জন্যই অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
পরিকল্পিত মেট্রোরেল সম্প্রসারণ এই অঞ্চলের প্রধান বিনিয়োগ স্থান হিসেবে এর অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করছে। যদিও বর্তমানে এখানে জমির দাম অন্যান্য উদীয়মান এলাকার চেয়ে বেশি হতে পারে, তবে এর সুপরিকল্পিত অবকাঠামো এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা এই অতিরিক্ত মূল্যের ন্যায্যতা প্রমাণ করে।
২. কেরানীগঞ্জ
বুড়িগঙ্গা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত কেরানীগঞ্জ দ্রুত একটি প্রতিশ্রুতিশীল বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। পুরান ঢাকার সাথে এর নৈকট্য এবং নতুন সেতু নির্মাণের মাধ্যমে রাজধানীর সাথে উন্নত সংযোগ এর আকর্ষণ বাড়িয়েছে।
মূল ঢাকা এবং অন্যান্য উদীয়মান এলাকার তুলনায় কেরানীগঞ্জে তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী মূল্যে জমি পাওয়া যায়, যা কম প্রবেশ মূল্যে দীর্ঘমেয়াদী লাভের সন্ধানকারীদের জন্য এটিকে আদর্শ করে তুলেছে।
সরকার সমর্থিত ঝিলমিল প্রকল্প এবং চলমান নগরায়ন প্রচেষ্টা, যার মধ্যে ভবিষ্যতের মেট্রোরেল সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে, গেটেড কমিউনিটি এবং প্লটেড ল্যান্ড প্রকল্পের চাহিদা বাড়াচ্ছে, যা ভবিষ্যতের শক্তিশালী মূল্যবৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
৩. সাভার
সাভার, ট্রেডিশনালি একটি শিল্পাঞ্চল হলেও, বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক কেন্দ্র হিসেবে রূপান্তরিত হচ্ছে। ঢাকা এবং প্রধান শিল্প এলাকাগুলোর কাছাকাছি এর কৌশলগত অবস্থান এটিকে আবাসন এবং বাণিজ্যিক উভয় উদ্যোগের জন্যই আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো প্রধান অবকাঠামো প্রকল্পগুলো সংযোগ ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে উন্নত করতে চলেছে, যা ঢাকার সাথে ভ্রমণের সময়কে উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেবে।
এই উন্নত সংযোগ, সম্প্রসারিত আবাসিক অঞ্চল এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি জমির চাহিদা বাড়াচ্ছে।
সাভার সাশ্রয়ী মূল্য এবং সহজগম্যতার মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখে, যা এটিকে মধ্যবিত্ত পরিবার এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি কার্যকর বিকল্প করে তুলেছে।
৪. আশুলিয়া
সাভারের পাশেই অবস্থিত আশুলিয়া আরেকটি দ্রুত বর্ধনশীল এলাকা, যা মূলত এর শিল্পাঞ্চল এবং সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা দ্বারা চালিত। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উন্নয়ন এই অঞ্চলের জন্য একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে, যা ঢাকার সাথে উন্নত যোগাযোগ এবং যাতায়াতের সময় কমানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
আশুলিয়ার বিদ্যমান পোশাক কারখানা এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কগুলো প্রচুর কর্মী আকর্ষণ করে, যা আবাসিক প্লটের জন্য একটি স্থিতিশীল চাহিদা তৈরি করে।
তুলনামূলকভাবে কম জমির দামের কারণেও এলাকাটি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, যা এটিকে সাশ্রয়ী মূল্যের প্লট খুঁজছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্প করে তোলে, যেখানে ভবিষ্যতের মূল্যবৃদ্ধির ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।
৫. টঙ্গী/গাজীপুর
ঢাকার উত্তরে অবস্থিত টঙ্গী এবং গাজীপুরের কিছু অংশ গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক ও বাণিজ্যিক অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে। এই এলাকাগুলো রাজধানীর সাথে তাদের নৈকট্য এবং বিদ্যমান প্রধান মহাসড়কগুলো থেকে উপকৃত হয়।
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগগুলো ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং শিল্প সম্প্রসারণের চাহিদা মেটাতে পরিকল্পিত আবাসিক প্রকল্প এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উপর মনোযোগ দিচ্ছে। উন্নত সড়ক নেটওয়ার্ক এবং চলমান বাস র্যাপিড ট্রানজিট (BRT) লাইন ৩-এর উন্নয়ন যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করছে।
যদিও কিছু অংশ ইতোমধ্যে উন্নত, তবে টঙ্গী এবং গাজীপুরের দ্রুত সম্প্রসারিত পেরিফেরাল এলাকাগুলোতে জমি অধিগ্রহণের জন্য এখনও বেশ সুযোগ রয়েছে।
পরিসংহার
ঢাকার আশেপাশে অবস্থিত এলাকাগুলো আর কেবল দূরবর্তী শহরতলী নয়, বরং দ্রুত বর্ধিত নগরীর অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হচ্ছে। অবকাঠামোতে সরকারের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিকেন্দ্রীকরণের সাথে সাথে এই পাঁচটি উদীয়মান এলাকা – পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া এবং টঙ্গী/গাজীপুর, ২০২৫ সালে জমির মূল্য বৃদ্ধির বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। বিচক্ষণ ক্রেতাদের জন্য এই অঞ্চলগুলোতে যত্ন সহকারে গবেষণা এবং সময় মতো বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য মুনাফা বয়ে আনতে পারে।