নতুন দম্পতির নতুন ঘর সাজাতে শীর্ষ ১০টি আবশ্যক সামগ্রী

বিয়ের পর একটি নতুন জীবনের শুরু মানেই হলো একটি নতুন ঘর সাজানো; যেখানে থাকবে ভালোবাসা, নিরাপত্তা, শান্তি আর স্বপ্নের ছোঁয়া। নতুন দম্পতির ঘর সাজানো শুধু ফার্নিচার বা সামগ্রী দিয়ে জায়গা পূর্ণ করা নয়, বরং এটি জীবনের নতুন অধ্যায়টিকে সুন্দর ও অর্থবহ করে তোলার সুযোগ। তাই কোন জিনিসগুলো একেবারে শুরুতেই দরকার, কোন জিনিসগুলো ধীরে ধীরে যোগ করতে হবে, সেটা বুঝে সাজাতে পারলে অর্থ, সময়, আর ভালো লাগার সবকটিই কাজে লাগবে। নিচে দেওয়া হলো নতুন দম্পতির ফার্নিচার হিসেবে শীর্ষ ১০টি অপরিহার্য সামগ্রী ও কেন এগুলো জরুরি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।
১. বেড ও ম্যাট্রেস
ঘরের জিনিসপত্র এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে খাট। প্রতিদিনের শুরু ও শেষ যেখানে হয়, সেটি যেন হয় আরামের জায়গা। কাঠ বা মেটালের খাট বেছে নেওয়া যেতে পারে, তবে স্টোরেজ সুবিধাসহ খাটগুলো নতুন দম্পতির ফার্নিচার হিসেবে বেশি উপযোগী, কারণ এতে ছোট ঘরেও জায়গা বাঁচে। ম্যাট্রেস কেনার সময় অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে সাপোর্ট, ফার্মনেস এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের উপযোগিতা। অনেকেই ম্যাট্রেস বেছে নেন ঘুমের গুণগত মান বিবেচনায় রেখে; তাই অরথোপেডিক বা মেমোরি ফোম ম্যাট্রেস দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ম্যাট্রেসের জন্য একটি ওয়াটারপ্রুফ কভার ব্যবহার করলে তা দীর্ঘস্থায়ী ও পরিষ্কার রাখা যায়।
২. ওয়ারড্রোব
দুজনের পোশাক, আনুষঙ্গিক জিনিস, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র; সবকিছুর জন্য দরকার একটি ওয়ারড্রোব। আয়না লাগানো স্লাইডিং ডোর ওয়ারড্রোব ঘরকে বড় দেখায় এবং আলাদা ড্রেসিং টেবিলের প্রয়োজন কমায়। একটি ভালো ওয়ারড্রোবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর ইন-বিল্ট স্টোরেজ সিস্টেম; যেখানে রয়েছে ঝুলানোর রড, ইনার শেলফ, ক্যাবিনেট ও হিডেন ড্রয়ার। এতে করে মৌসুমি জামা-কাপড় ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র আলাদা করে রাখা যায় এবং সবসময় হাতের কাছে পাওয়া যায় প্রয়োজনীয় জিনিস।
৩. ডাইনিং টেবিল
যদিও একসাথে বসে খাওয়ার জন্য বড় টেবিল ভালো, তবে নতুন ঘর সাজানোর জন্য ২ থেকে ৪ সিটের কমপ্যাক্ট ডাইনিং টেবিলই যথেষ্ট। কাঠের গাঢ় রঙের টেবিল ঘরের আধুনিকতা বাড়ায়, আবার গ্লাস টপের টেবিল ঘরকে খোলামেলা দেখায়। এই ডাইনিং টেবিল শুধু খাওয়ার জায়গা নয়; প্রয়োজনে এটি কাজের ডেস্ক হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। তাই ঘরের জিনিসপত্র বেছে নেওয়ার সময় এর উচ্চতা, চেয়ারগুলোর আরাম, এবং পরিষ্কারের সুবিধা বিবেচনায় নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
৪. সোফা বা লিভিং সেট
অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে সন্ধ্যার অবসর, সবকিছুতেই একটি সুন্দর সোফা দরকার। ছোট ফ্ল্যাটে এল-শেপড বা লাউঞ্জার টাইপ সোফা ঘরের কোণকে কাজে লাগিয়ে দেয়। আরামের দিক থেকে সোফার কুশনের ঘনত্ব, কাপড়ের টেক্সচার, এবং কাভার খোলা-ধোয়ার সুবিধা দেখা উচিত। যারা বাড়তি অতিথি আসলে ঘুমানোর ব্যবস্থা করতে চান, তাদের জন্য সোফা-কাম-বেড বা পুল-আউট কুশন সুবিধাসম্পন্ন হোম ডেকোর সেট উপযোগী হতে পারে।
৫. কুকওয়্যার
নতুন সংসারের রান্নাঘর সাজাতে গেলে প্রয়োজন পড়ে নন-স্টিক ফ্রাইপ্যান, প্রেসার কুকার, রাইস কুকার, ছুরি সেট, কাটিং বোর্ড ও মশলার বক্সের মতো ঘরের জিনিসপত্র। যেহেতু রান্না প্রতিদিনের কাজ, তাই জিনিসগুলো এমন হতে হবে যা সহজে পরিষ্কার করা যায় এবং কম সময়ে রান্না শেষ করা যায়। স্টেইনলেস স্টিল বা হেভি বটমড পাত্র দীর্ঘদিনের জন্য ভালো হয়। সেইসাথে, কিছু বেসিক ইলেকট্রিক গ্যাজেট যেমন হ্যান্ড ব্লেন্ডার, টোস্টার বা কফি মেকার থাকলে ঘরের কাজ আরও সহজ হয়ে ওঠে।
৬. ঘর পরিষ্কার রাখার সামগ্রী
পরিপাটি ঘর মানেই স্বাস্থ্যকর ও মানসিকভাবে প্রশান্তির জায়গা। তাই নতুন ঘর সাজানোর শুরুতেই ঝাড়ু, মোপ, ওয়াইপার, ডাস্টবিন, বাথরুম ব্রাশ, ও সঠিক ডিটারজেন্ট কিনে রাখা উচিত। শুধু পণ্য থাকলেই হয় না; তাদের সংরক্ষণের ব্যবস্থাও থাকতে হবে। একটি ছোট ক্লিনিং ক্যাডি বা বাথরুম ক্যাবিনেট পরিষ্কার সামগ্রী রাখার জন্য উপযুক্ত। এতে করে ঘরের জিনিসপত্র হাতে পাওয়া সহজ হয় এবং ঘর গুছানো থাকে।
৭. বেডশিট, কুশন কাভার ও পর্দা
ঘরের মূল রঙ বা থিমের সাথে মিল রেখে বেছে নিতে হবে বেডশিট ও পর্দা। হালকা রঙ ও নরম কাপড়ের পর্দা সূর্যালোক নিয়ন্ত্রণ করে ঘরে প্রশান্তির পরিবেশ তৈরি করে। মৌসুমি পরিবর্তনের সাথে পর্দা ও কুশনের কাপড় পরিবর্তন করলে ঘরে নতুনত্ব আসে। কটন, লিনেন বা শিফন কাপড় পর্দার জন্য উপযুক্ত, আর বেডশিটের ক্ষেত্রে মিনিমাল ডিজাইন ও স্কিন-ফ্রেন্ডলি কাপড় বেছে নেওয়া উচিত।
৮. আয়নাযুক্ত ড্রেসিং স্পেস
নিজেকে প্রতিদিন প্রস্তুত করার জন্য একটি সুন্দর ড্রেসিং স্পেস থাকা দরকার। দম্পতির ফার্নিচার হিসেবে এটি হতে পারে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য আয়নাসহ টেবিল, অথবা স্থান সংকুলানে ওয়াল-মাউন্টেড আয়নাসহ শেলফ। যেখানে আলো ভালো পাওয়া যায়, সেখানে ড্রেসিং টেবিল রাখা ভালো। পাশাপাশি একটি ছোট স্টুল বা চেয়ারে বসে প্রস্তুত হতে পারলে প্রতিদিনের সাজগোজ আরামদায়ক হয়ে ওঠে।
৯. ছোট স্টোরেজ বক্স ও অর্গানাইজার
বিচ্ছিন্ন জিনিসপত্র ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। তাই দরকার ছোট ছোট স্টোরেজ বক্স বা অর্গানাইজার; যেগুলো সোফার নিচে, খাটের পাশে বা রান্নাঘরে ব্যবহার করা যায়। এই হোম ডেকোর বক্সগুলোতে রাখা যায় চার্জার, হেয়ার এক্সেসরিজ, ইনভয়েস কপি, চশমা ইত্যাদি। কিছু ট্রান্সপারেন্ট, কিছু লেবেল লাগানো বক্স থাকলে জিনিস খুঁজে পেতে সময় লাগে না।
১০. সাজসজ্জা ও ইনডোর গাছ
ঘরকে শুধুমাত্র বাসযোগ্য নয়, বরং বাসযোগ্য করে তুলতে লাগে কিছু প্রাণ। একটি ছোট মানিপ্ল্যান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট, বা ক্যাকটাস রাখতে পারেন জানালার পাশে। সেইসাথে বিয়ের ছবি, স্মৃতিময় ফ্রেম বা হানিমুনের স্মারকও দেয়ালে টানিয়ে ঘরে ব্যক্তিত্ব ও আবেগের ছোঁয়া আনা যায়। কিছু এলইডি লাইট, আর্ট প্রিন্ট বা হ্যান্ডমেড শোপিস হলে ঘর হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত ও একান্ত নিজের মতো।
নতুন ঘর সাজানো মানেই নতুন জীবনের পরিপূর্ণতা খোঁজা। কোন জিনিস একেবারে শুরুর জন্য জরুরি, কোনটা সময় নিয়ে যোগ করা যাবে, সেই বাছাইটা বুঝেই এগোতে হবে। আপনি ও আপনার সঙ্গীর পছন্দ, বাজেট, ও দৈনন্দিন প্রয়োজন মিলে তৈরি হোক এমন একটি ঘর যেখানে প্রতিটি দিনই ভালোবাসা দিয়ে শুরু হবে আর শেষ হবে তৃপ্তি দিয়ে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. নতুন সংসার শুরু করার জন্য কোন আসবাবগুলো আগে কেনা জরুরি?
খাট ও আরামদায়ক ম্যাট্রেস সবচেয়ে জরুরি। এরপর ওয়ারড্রোব ও রান্নার প্রয়োজনীয় সামগ্রী।
২. বাজেট কম হলে কোন আসবাবগুলো আগে কেনা উচিৎ?
প্রাথমিকভাবে শুধু খাট-ম্যাট্রেস, ওয়ারড্রোব এবং কিছু রান্নার জিনিস কিনুন, বাকিটা পরে।
৩. ঘর সাজানোর সময় কী দেখবেন?
প্রয়োজন, বাজেট, জায়গার পরিমাণ ও দুজনের পছন্দ মিলিয়ে নিন।
৪. নতুন দম্পতির জন্য কোন ধরণের সোফা সবচেয়ে উপযুক্ত?
এল-শেপড বা সোফা-বেড ধরণের সোফা জায়গা বাঁচায়।