প্রপার্টি

বাংলাদেশে গেটেড কমিউনিটিতে বসবাসের সুবিধা এবং অসুবিধা

গেটেড কমিউনিটি হলো এমন একটি পরিকল্পিত এবং নিরাপদ আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক এলাকা যেখানে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত থাকে। এসব কমিউনিটিতে পেশাদার সিকিউরিটি গার্ড, সীমানা প্রাচীর, সিসি ক্যামেরা, নির্দিষ্ট প্রবেশদ্বার, সার্ভিস, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ইত্যাদি থাকে। বাংলাদেশের গেটেড কমিউনিটিগুলোতে পরিকল্পিত নগরায়ন মেইনটেইন করা হয়। বর্তমানে এসব এলাকায় অবস্থাসম্পন্ন বাসিন্দারা বিনিয়োগ এবং বসবাসে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

বাংলাদেশে গেটেড কমিউনিটিগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ এই কমিউনিটিগুলো নিরাপত্তা, গোপনীয়তা এবং আধুনিক লাইফস্টাইলের সংমিশ্রণ অফার করে। এই ধরনের এলাকাগুলোর ইউটিলিটি সার্ভিস, পয়ঃনিস্কাশন, অবকাঠামো এবং পরিবেশ, বেশ উন্নত এবং গোছানো হয়ে থাকে। এই ব্লগে বাংলাদেশে গেটেড কমিউনিটিতে বসবাসের সুবিধা এবং অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশে গেটেড কমিউনিটিতে বসবাসের সুবিধা

(১) সন্তোষজনক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

এই কমিউনিটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এসব এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। এসব কমিউনিটিতে ২৪ ঘন্টা পেশাদার সিকিউরিটি গার্ড থাকে। সিসি ক্যামেরা দ্বারা প্রয়োজনীয় সব কিছু মনিটর করা হয়। এছাড়াও নিয়ন্ত্রিত প্রবেশাধিকারের কারণে চুরি, এবং অনধিকার প্রবেশের ঝুঁকি অনেক কম থাকে।

(২) মানসম্মত আবাসিক পরিবেশ এবং আধুনিক অবকাঠামো

গেটেড কমিউনিটিগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা, ইউটিলিটি এবং অবকাঠামো নির্মাণ, পরিকল্পিত হয়ে থাকে। এসব এলাকায় পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বেশ উন্নত হয়ে থাকে। এছাড়া এসব এলাকায় খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার, ক্লাব, ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা থাকে, যা একটি আধুনিক জীবনধারার পরিবেশ তৈরী করে দেয়। এসব কমিউনিটির বেশির ভাগ বাসিন্দারা শিক্ষিত এবং শান্তি প্রিয় হওয়ায় পরস্পর শ্রদ্ধাশীল থাকেন এবং প্রাইভেসি মেইনটেইন করেন।

(৩) পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং উন্নত সুযোগ-সুবিধা

এই ধরনের কমিউনিটিগুলো প্রতিনিয়ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। নিয়মিত ময়লা পরিষ্কার, এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয়। যতটা সম্ভব পরিকল্পিত সবুজায়ন করা হয়। অনেক কমিউনিটিতে পার্ক, জলাশয়, সুপারশপ, জিমনেসিয়াম, খেলার মাঠ, ইনডোর গেমস, সুইমিং পুল, ক্লাব, কমিউনিটি সেন্টার, এবং মসজিদ থাকে, যা এলাকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা আরো কম্ফোর্টেবল করে। শহরের ঘন বসতির তুলনায় এসব কমিউনিটিতে মানুষজনের চাপ কম।

(৪) প্রাইভেসি এবং সামাজিক বন্ধন

গেটেড কমিউনিটিতে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত থাকে। এছাড়া যানবাহন এবং জনসমাগমও নিয়ন্ত্রিত থাকে। তাই এসব এলাকা, যানজট, শব্দদূষণ, এবং পরিবেশ দূষণ থেকে তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে থাকে। এতে এলাকবাসীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তাও অনেকাংশে রক্ষা পায়। কমিউনিটির বাসিন্দারা নিজেদের উদ্যোগে বিভিন্ন ইভেন্ট এবং উৎসবে, সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেন, যা প্রতিবেশীদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন তৈরী করে। সামাজিক এবং ধর্মীয় উৎসবে একত্রে উদযাপনের ফলে সবার মধ্যে একধরণের আন্তরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী হয়।

(৫) রিসেল ভ্যালু

উন্নত সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন এলাকা হওয়ায়, এসব কমিউনিটির প্রপার্টির রিসেল ভ্যালু স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিই হয়ে থাকে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে এসব এলাকার প্রপার্টির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

বাংলাদেশে গেটেড কমিউনিটিতে বসবাসের অসুবিধা

এই এলাকায় বসবাস নিঃসন্দেহে মানসম্পন্ন। তবে কিছু আর্থিক এবং সামাজিক অবস্থাও মাথায় রাখতে হবে।

(১) অনেক ব্যয়বহুল

এই কমিউনিটিতে বসবাস কিছুটা ব্যয়বহুল। সাথে রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিষেবা ফি মাথায় রাখতে হবে। যেমন, নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা সেবা, পার্কিং, ইত্যাদি। এছাড়াও মাসিক এবং বার্ষিক ফি থাকতে পারে। মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্যও এই ধরনের কমিউনিটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে অনুপযোগী হয়ে থাকে।

(২) অ্যাপার্টমেন্ট, প্লট এবং প্রপার্টির দাম অনেক বেশি

এসব কমিউনিটির অ্যাপার্টমেন্ট বা প্রপার্টির দাম অনেক বেশি হয়ে থাকে, তাই প্রচুর ইনভেস্টমেন্টের প্রয়োজন হয়। বাসা ভাড়াও উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এসব এলাকার প্রপার্টির চাহিদা বাড়ছে, সেই অনুপাতে সকল সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন জায়গা পাওয়া কঠিন। এই অপ্রতুলতা, প্রপার্টির মূল্য অসামঞ্জস্য ভাবে বৃদ্ধি করেছে।

(৩) সীমিত স্বাধীনতা

প্রবেশের নিয়মকানুন, অতিথি প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ, পার্কিং ব্যবস্থা ইত্যাদি কিছুটা অনুশাসনের মধ্যে থাকে, যা অনেকের কাছে অসুবিধাজনক মনে হতে পারে। অনেক সময় মালিক সমিতির সিদ্ধান্তে বাসিন্দার স্বাধীনতা খর্ব হয়। এছাড়াও আপনার কেনা প্রপার্টি হলেও, ইচ্ছে মতো রেনোভেট করতে পারবেন না। সব ক্ষেত্রে কমিউনিটি অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

(৪) সামাজিক বৈষম্য

এই কমিউনিটি মূলত উচ্চবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্তদের টার্গেট করে তৈরী করা হয়। তাই মূলত অবস্থা সম্পন্ন পরিবার, এসব প্রপার্টি কিনতে কিংবা বসবাস করতে চান। কাজেই এধনের কমিউনিটির মাধ্যমে প্রায়ই সমাজে শ্রেণিভিত্তিক বিভাজন বা বৈষম্য তৈরি হতে পারে। সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং অভিজাত বোধ তৈরী হতে পারে।

(৫) লোকেশন

বেশিরভাগ কমিউনিটি শহরের শেষ প্রান্তে কিংবা শহরের প্রশাসনিক কেন্দ্র থেকে দূরে হয়ে থাকে। যেমন – পূর্বাচল, বসুন্ধরা, উত্তরা সেক্টর, ইত্যাদি। মূলত জায়গা সংকুলান না হওয়াই এর প্রধান কারণ। ফলে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মস্থলে যাতায়াত কিছুটা কষ্টকর হতে পারে।

পরিশেষে বলা যায়, গেটেড কমিউনিটি আপনাকে নিরাপত্তা, স্বাচ্ছন্দ্য এবং একটি সম্মানজনক জীবনধারা প্রদান করতে পারে। এখানকার সুযোগ-সুবিধা এবং সার্ভিস, আপনাকে ব্যাক্তিগত লাইফস্টাইলের সাথে মানসিক প্রশান্তি এনে দেবে। তবে এক্ষেত্রে ব্যয়, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এবং বিভিন্ন সীমাবদ্ধতাও বিবেচনায় রাখা জরুরি।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

(১) গেটেড কমিউনিটি বলতে কি বোঝায়?

এটি একটি পরিকল্পিত এবং নিরাপদ আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক এলাকা যেখানে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত থাকে।

(২) গেটেড কমিউনিটিতে বসবাসের প্রধান সুবিধাগুলো কী কী?

উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, মানসম্মত আবাসিক পরিবেশ, আধুনিক অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা, প্রাইভেসি, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, সামাজিক বন্ধন, রিসেল ভ্যালু, ইত্যাদি এই ধরনের কমিউনিটিতে বসবাসের প্রধান সুবিধা।

(৩) এসব কমিউনিটিতে কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে?

এসব এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। এসব কমিউনিটিতে ২৪ ঘন্টা পেশাদার সিকিউরিটি গার্ড থাকে। সিসি ক্যামেরা দ্বারা প্রয়োজনীয় সব কিছু মনিটর করা হয়। এছাড়াও সর্বসাধারণের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত থাকে।

(৪) এই ধরনের কমিউনিটিতে বসবাসে কি ধরণের অসুবিধা হতে পারে?

এই ধরনের কমিউনিটিতে জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলক বেশি। অ্যাপার্টমেন্ট বা প্রপার্টির দাম অনেক বেশি হয়ে থাকে, তাই প্রচুর ইনভেস্টমেন্টের প্রয়োজন হয়। বাসা ভাড়াও উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। অনেক সময় মালিক সমিতির সিদ্ধান্তে বাসিন্দার স্বাধীনতা খর্ব হয়।

(৫) গেটেড কমিউনিটিতে প্রপার্টি কেনা কি নিরাপদ বিনিয়োগ?

অবশ্যই। এই এলাকাগুলো নিরাপত্তা, গোপনীয়তা ও আধুনিক জীবনধারার একত্রিত সুবিধা দেয়। এর ফলে এসব এলাকার প্রপার্টির চাহিদা বেশি। এই ধরনের এলাকাগুলোর ইউটিলিটি সার্ভিস, পয়ঃনিস্কাশন, অবকাঠামো এবং পরিবেশ, বেশ উন্নত এবং গোছানো হয়ে থাকে।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close