বাংলাদেশে বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তুলবেন কীভাবে
যারা বাংলাদেশে বাস করেন তাদের কাছে এটা কোনো গোপন রহস্য নয় যে, এখানে বাণিজ্যিক স্থাপনা থেকে প্রচুর আয় করা সম্ভব। এই ক্ষেত্রে যারা স্থাপনা নির্মাণ করছেন এবং যারা সেখানে বিনিয়োগ করছেন উভয়েই লাভবান হয়ে চলেছেন। এমনকি যারা কেবলমাত্র একটি খাবারদাবারের দোকান দিতে আগ্রহী তারাও এতে লাভবান হতে পারেন।
বিনিয়োগকারীদের ব্যাপারে বলতে গেলে বলতে হয় যে, সেখানে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল রয়েছে যা সাফল্যের স্বর্ণদুয়ার খুলে দিতে পারে। সেগুলির সবকয়টি হয়তো এখানে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হবে না, তবে আপনার কাজকর্ম সম্পর্কিত আমাদের দেয়া এই মৌলিক নিদের্শনাটি অনুসরণ করলে আপনি চমৎকার ফল পাবেন।
এখানে দেয়া পরামর্শগুলো একান্তই তাদের জন্য যারা বিনিয়োগকারী হতে চান, যারা ব্যবসা পরিচালনা করতে চান তাদের জন্য নয়। যদিও ব্যবসার স্বত্ত্বাধিকারীদেরকে তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য স্থাপনার পিছনে অর্থব্যয় করতে হয়। তবুও পার্থক্যের বিষয় হলো, যারা বাণিজ্যিক স্থাপনা ভাড়া করেন তারা হয়তোবা পোষাক বিক্রয়, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী প্রস্তুত, এমনকি একটি সংবাদ সংস্থাও চালাতে পারেন, কিন্তু বাণিজ্যিক স্থাপনায় বিনিয়োগকারী একজন ব্যক্তির ব্যবসা হলো বাণিজ্যিক স্থাবর সম্পত্তির মালিক হওয়া এবং তা পরিচালনার মাধ্যমে অর্থ আয় করা।
বাণিজ্যিক স্থাবর সম্পত্তিতে বিনিয়োগকারী হিসেবে একজন ব্যক্তির করণীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটি হলো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে অনেকগুলো সম্পত্তি দেখেশুনে যাচাই বাছাই করা। এর কারণ হলো একটি স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করতে অবিশ্বাস্য পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। তাই কোনোভাবেই সেটি ঝোঁকের মাথায় করা চলবে না, বরং বাস্তববুদ্ধির আলোকে তা করতে হবে। এ কারণেই বহুসংখ্যক বিনিয়োগকারী ড. রবার্ট প্যাসকেল (Dr. Robert Pascale) নামের একজন আমেরিকান লেখকর বইপুস্তক, বিশেষ করে তার লেখা “অবসর জীবনের গোলকধাঁধাঁ” (The Retirement Maze) বইটি পড়ছেন।
অনেকগুলো সম্পত্তি দেখে যাচাই বাছাই করুন
বিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে স্থাবর সম্পত্তিতে বিনিয়োগ বিষয়ে প্রভাবশালী চিন্তাবিদদের একজন ছিলেন “রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড” (Rich Dad, Poor Dad) এবং “রিট্যায়ার ইয়াং, রিট্যায়ার রিচ” (Retire Young, Retire Rich) বই দুটির লেখক রবার্ট কিওয়াসাকি (Robert Kiyosaki)।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মি. কিওয়াসাকিকে যদিও তার বকেয়া বিলপত্র পরিশোধ না করার কৌশল হিসেবে দেউলিয়া ঘোষিত হতে দেখা গেছে তবুও তিনি কমপক্ষে এমন একটি দামী উপদেশ দিয়ে গেছেন যা অবশ্যই অনুসরণ করা উচিত। আর তা হলো: ১০০ টি সম্পত্তির খোঁজখবর নিন, ১০ টির দরদাম করুন আর পরিশেষে ১ থেকে ৩ টির মত ক্রয় করুন।
স্থাবর সম্পত্তির জগতে মাত্রই প্রবেশ করেছেন এমনসব বিনিয়োগকারীর নিকট তাদের দেখা প্রথম সম্পত্তিটি সবসময়ই দারুণ আকর্ষণীয় বলে মনে হয়। এটি দিয়ে আপনি কী কী করবেন, এর থেকে কতটা লাভ আসতে থাকবে এবং আপনাকে এটি কতটা ধনী বানিয়ে দেবে এমন হাজারো স্বপ্নকল্পনায় আপনি ভাসতে থাকবেন। সে যাই হোক, আপনার দেখা প্রথম সম্পত্তিটিকে অন্যান্য অনেকগুলোর সাথে তুলনার মাধ্যমে যাচাই করে নেবেন।
ঠিক বন্ধুত্ব করার মতই, আপনি যা পেলেন তা বিশেষ কিছু কি না, তা আপনি যাচাই করতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপনি অন্যগুলোর সাথে তার তুলনা করবেন। উদাহরণস্বরূপ, একটি সম্পত্তির হয়ত প্রচুর ফ্লোর স্পেস (floor space) রয়েছে এবং দামেও তা সস্তা কিন্তু এটা লোকালয়ের কতটা কাছে? আরেকটি সম্পত্তির নিকটে হয়ত প্রচুর জনসমাগম রয়েছে কিন্তু দামের দিক থেকে এটা আপনার সাধ্যের বাইরে।
যে কোনো সম্পত্তি দেখে সেটিকে আলাদা কিছু বলে মনে করার কারণ নেই। আসল ব্যাপার হলো এটা একেবারে শুরু থেকেই আপনার জন্য মুনাফা বয়ে আনবে কি না, কারণ স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে আপনি আসলে ক্রয় করার সময়ই লাভবান হতে পারবেন, বিক্রয়ের সময় নয়।
এর অর্থ হলো, আপনি ঠিক যে দিনে সম্পত্তিটি কিনলেন সেই দিনেই যেন তা লাভে বিক্রয় করা চলে, যদিও তা করাটা উদ্দেশ্য নয়। এটা মনে রাখা জরুরি যে, আপনি যেহেতু কোনো গাড়ি এর ন্যায্য মূল্যের চাইতে বেশি দামে কিনবেন না তাহলে একটি স্থাবর সম্পত্তি বা ভবন কেনো আপনি ন্যায্য মূল্যের চাইতে বেশি দামে কিনবেন?
আপনি যদি ক্রয়ের সময়ই লাভে ক্রয় করতে পারেন তাহলেই কেবল স্থাবর সম্পত্তির ব্যবসা একটি উত্তম বিনিয়োগ হয়ে উঠতে পারে।
বিনিয়োগের ব্যাপারে ভাবাবেগ ঝেড়ে ফেলুন
বিনিয়োগের ব্যাপারে মানুষের কিছু ভাবাবেগ কাজ করতেই পারে, কিন্তু সিদ্ধান্ত নেয়ার বেলায় আপনাকে ভাবাবেগ ঝেড়ে ফেলতে হবে। আপনার সিদ্ধান্তটি হতে হবে ব্যবসায়িক ভাবনার নিরিখে।
উদাহরণস্বরূপ, অনেক বিনিয়োগকারীই ঢাকায় একটি সম্পত্তি কিনতে চান শুধুই এ কারণে যে, তাতে করে “কাজ একখানা করেছি” জাতীয় ভাব চলে আসে। অথচ আশেপাশের উত্তর রূপসী এবং পাগলার মত জায়গায় আরও সস্তায় এবং বেশি লাভে তা পাওয়া যেতে পারে। এর কারণ হলো সেসব জায়গায় সম্পত্তির ব্যাপারে প্রতিযোগিতা কম থাকলেও বিক্রয়যোগ্য যেসব সম্পত্তি রয়েছে সেগুলোর আবার ব্যাপক চাহিদাও আছে।
তাছাড়া, যখন একটি সম্পত্তির খোঁজখবর নেবেন তখন তা দেখতে কেমন তা দেখার চাইতে বরং ব্যবহারিক বিচারে সেটি কতটা লাভজনক সে বিবেচানই বেশি করবেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনাকে যদি কখনও একটি মলিন চেহারার ফুয়েলিং স্টেশন যেটি ১০% লাভের (profit) উপর রয়েছে এবং একটি কেতাদুরস্ত ফ্যাশন স্টোর যেটি ১০% লোকসানের (loss) উপর রয়েছে- এ দুটির মধ্যে একটিকে বাছাই করে নিতে হয়, তবে হয়ত দর্শনধারী হিসেবে ফ্যাশন স্টোরটিকে বেছে নিতেই ইচ্ছে হবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ফুয়েলিং স্টেশনটি বেছে নেয়াই হবে অতি উত্তম কাজ।
আপনি যখন এমন কোনো সম্পত্তি কিনবেন যেটি আপনাকে ১০% মুনাফা এনে দেবে তখন আপনি ঐ ধরনের আরও বেশি সম্পত্তি কিনতে পারবেন। আপনি যখন এমন কোনো সম্পত্তি কিনবেন যেটিতে আপনাকে ১০% হারে লোকসান গুণতে হবে তখন আপনি আবার পুরোপুরি স্বচ্ছল না হওয়া পর্যন্ত খুব বেশি সম্পত্তি কিনতে পারবেন না।
এতকিছুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটি মনে রাখা দরকার তা হলো, আপনি একটা ব্যবসার পরিকল্পনা করছেন এবং তা এমন এক সময়ে করছেন যখন আপনি জীবনের এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন যেখানে আপনি আর বিশেষ কোনো কাজের চাপ গ্রহণ করতে চান না।
“অবসর জীবনের গোলকধাঁধাঁ” (The Retirement Maze) এর পরামর্শটিকে গুরুত্ব দিন
আপনার যদি প্রচুর সহায় সম্পত্তি থাকে তবে আপনি কাজ করা থেকে বিরত থাকতে পারেন। পরোক্ষ উপার্জন দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করে যারা যথেচ্ছ স্বাধীন জীবন যাপন করতে চান অবসর জীবনের গোলকধাঁধাঁর মধ্যেও তাদের জন্য অনেক বিকল্প পথের ব্যবস্থা রয়েছে।
এ কারনে যতদিন মানুষের বিপনী বিতানের ব্যাবসা বাণিজ্য চালু থাকবে ততদিন স্থাপনা বা সম্পত্তি ভাড়া দেয়াটা এতটা জনপ্রিয় রয়েই যাবে।
যারা এ কাজটা ভালভাবে করতে পারবেন তারা অবসর জীবনে শেষ পর্যন্ত অনেক সুখি হতে পারবেন আর যারা তা করবেন না তাদেরকে ভোগান্তি পোহাতে হবে। “অবসর জীবনের গোলকধাঁধাঁ” (The Retirement Maze) বইটিতে এ বিষয়গুলোই আলোচিত হয়েছে।
স্থাবর সম্পত্তিতে/স্থাপনাতে বিনিয়োগে সফল হওয়ার মূল চাবিকাঠি হলো:
অনেকগুলো সম্পত্তি দেখেশুনে যাচাই বাছাই করুন
অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হবেন না
“অবসর জীবনের গোলকধাঁধাঁ” (The Retirement Maze) এর পরামর্শগুলো অনুসরণ করুন
আপনি যত বেশি সংখ্যক স্থাপনা/সম্পত্তির খোঁজখবর করবেন আপনি ততই ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। একটির ব্যাপারে দামদর করতে হলে আপনাকে ১০ টির খোঁজখবর করে দেখতে হবে। ভাবাবেগজাত সিদ্ধান্ত নিলে হবে না, বরং লাভ লোকসানের হিসাব করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনি যদি বছরের পর বছর ধরে সঠিকভাবে এসব করেন তবেই না আপনি ভালোভাবে অবসর জীবনে প্রবেশ করতে পারবেন এবং সম্ভবতঃ একটু তাড়াতাড়িই পারবেন।