পার্সিয়ান বা পারস্য বিড়ালের ইতিহাস ও জনপ্রিয়তা
বাংলাদেশের সকল ধরনের বিড়ালের মধ্যে পার্সিয়ান বিড়ালের মত এতটা প্রচলিত ও আদরণীয় আর কোনোটি নয়। এই প্রজাতির বিড়াল বিচিত্র রংয়ের ও ধরনের নকশাদার লোমবিশিষ্ট হয়ে থাকে এবং এর একটি সুদীর্ঘ মর্যাদাপূর্ণ ইতিহাস রয়েছে। আমাদের দেশের মানুষের পক্ষে একটি এ প্রজাতির বিড়ালের মালিক হওয়া যে কেবল নানাভাবে উপকারি তা ই নয় বরং তা একটি সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক। আমাদের সাতটি বিভাগীয় অঞ্চলের গ্রাম ও শহর উভয় ধরনের বাসযোগ্য এলাকাতেই এই প্রজাতির বিড়াল প্রচুর সংখ্যায় দেখা যায় এবং আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত বিড়াল হিসেবে এটিকে অনলাইনে কিংবা অন্যান্য মাধ্যমে বিক্রি হতে দেখা যায়।
ইতিহাসে পার্সিয়ান বিড়ালের অবস্থান
এ বিড়ালের আদি উৎস কোথায় তা যদিও অনিশ্চিত তবুও এতে কোনো সন্দেহ নেই যে তাদের সাম্প্রতিক উৎস হলো ইরান বা পারস্য। তুরস্কে অবশ্য ইতোমধ্যেই এর সমগোত্রীয় প্রজাতির দেখা পাওয়া গিয়েছে, কিন্তু দীর্ঘ লোমবিশিষ্ট বিড়ালগুলো একদা তুলনামূলকভাবে বিরল ছিল। পারস্য থেকে এই বিড়ালগুলো যে শুধু বাংলাদেশেই এসেছ তা নয় বরং এগুলো আফগানিস্তান, ইউরোপ, আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশেও গিয়েছে। দেখে নিন বাংলাদেশে পোষা-প্রাণী কেনাবেচার সম্পর্কে।
১৬০০ শতকের প্রথম দিকে পার্সিয়ান বিড়ালগুলো ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে ইতালীতে এসেছে এবং ১৮০০ সালের মধ্যে এগুলো পশ্চিম ইউরোপ এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে। গত দুই দশকে বৃটেন এবং ফ্রান্সে এদের জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাঁটা পড়েছে, কিন্তু আমেরিকায় এখনও এখনও বিড়াল উৎপাদনকারীদের সেরা পছন্দের একটি প্রজাতি হিসেবে বহাল তবিয়তে রয়েছে। আমেরিকান, ইউরোপিয় এবং বাংলাদেশি ইত্যাদি সকল ধরনের পার্সিয়ান বিড়ালের কতগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
কিছু পার্সিয়ান বিড়ালকে সমতল মুখাবয়ব প্রদানের জন্য এবং “সৌখিন বিড়ালের” আরও সব বৈশিষ্ট্য প্রদানের জন্য সংকর করা হয়েছে, কিন্তু আমাদের দেশের বেশিরভাগ পার্সিয়ান বিড়াল তাদের আদি ঐতিহ্যগত ধারা বহাল রাখায় তারা অনেক স্বাস্থ্যগত সমস্যা এড়িয়ে উচ্চ উৎপাদনশীল সৌখিন বিড়ালে পরিণত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে এ বিড়ালের আরেকটি নাম হলো সিরাজ বা সিরাজী, যা খুব সম্ভবত আমাদের দেশের কোনো বিড়াল মালিকের কাছেও অপরিচিত কোনো নাম নয়।
এ বিড়ালের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণ
এই বিড়ালগুলো দীর্ঘ লোমযুক্ত এবং গোলাকার মুখমন্ডল বিশিষ্ট, হৃষ্টপুষ্ট কিন্তু খাটো কান বিশিষ্ট হয়ে থাকে ও কানের শেষপ্রান্ত প্রায়শই গোলাকার খাঁজযুক্ত থাকে। এরা শান্ত স্বভাবের হওয়ায় এদেরকে সঙ্গে নিয়ে বসবাস করাটা সহজ। এ বিড়াল সাধারণত একজন বা দুইজন মানুষের সাথে অথবা অন্য কোনো প্রাণীর সাথে জোড় বেঁধে নেয়, কিন্তু পুরো পরিবারের সবাইকে বিরক্ত করে না। এদেরকে শিশুদের সাথে রাখা নিরাপদ এবং এরা গড়পড়তা ১২১/২ বছর বাঁচে। এসব কারণেই পোষাপ্রাণীর মালিকদের কাছে এ বিড়াল একটি প্রিয় পছন্দের প্রাণী, হোক না সেটি সৌখিন প্রজাতির অথবা ঐতিহ্যবাহী গোলাকার মুখাকৃতি প্রজাতির।
এ বিড়ালগুলো বিচিত্র সৃজনশীল সংকরের সুবিধা প্রদান করে থাকে, কারণ এরা নানা বর্ণের হয়ে থাকে। সাধারণভাবে প্রচলিত রংয়ের মধ্যে কয়েকটি হলো: হালকা ছাই রং, ধূসর, রূপালী, সোনালী, একরঙা, বাদামি, দুই রং বিশিষ্ট, ফরসা এবং আরও বিভিন্ন রং। সাদা, কালো, কমলা, বাদামি রংয়ের পার্সিয়ান বিড়াল যেমন রয়েছে, তেমনি আবার ডোরাকাটা নকশাদার পার্সিয়ান বিড়ালও রয়েছে। এসব প্রজাতির আবার অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে, যে কারণে অনেকেই এ প্রজাতির বিড়াল পুষতে আকৃষ্ট হয়ে থাকেন।
পার্সিয়ান বিড়াল ক্রয়, বিক্রয় অথবা লালন পালন
এ বিড়াল ক্রয়-বিক্রয় করার একটি উত্তম মাধ্যম হলো ইন্টারনেট। এখানে ঢোকা মাত্রই লক্ষ লক্ষ এদেশি ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতার দেখা মিলবে। অনলাইনে বিড়াল কেনার সময় এর দাম, বয়স, প্রশিক্ষণের স্তর এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থানিশ্চিত হয়ে নেবেন। পার্সিয়ান বিড়ালের এত সব ভিন্ন ভিন্ন চেহারা রয়েছে যে, একজন ক্রেতা একটু খোঁজাখুঁজি করলেই তার চোখে মানানসই কাঙ্খিত রং এবং নকশাযুক্ত বিড়ালটি পেয়ে যাবেন। আর আপনি যদি অনলাইনে কোনো পার্সিয়ান বিড়াল বিক্রয় করতে চান তবে বিড়ালের সমস্ত শরীর দৃষ্টিগোচর হয় আবার বেশ কাছাকাছি থেকে দেখা যায় এমন একটি ছবি পোস্ট করতে ভুলবেন না। আপনার পোষ্টটিতে সংক্ষিপ্ত কিন্তু সঠিক এমন কোনো শিরোণাম যুক্ত করুন যেন সেটাতে আপনার বিড়ালটির বিবরণ থাকে এবং তা সমজাতীয় অন্যান্য বিবরণ থেকে আলাদা হয়। উদাহরণস্বরূপ, শুধুই “পার্সিয়ান বিড়াল বিক্রয় হবে” না লিখে “বিশুদ্ধ প্রজাতির ধূসর ছাই রংয়ের প্রশিক্ষিত পার্সিয়ান বিড়াল” লিখুন। ক্রেতারা যখন আপনার লিংকে ক্লিক করবেন তখন তারা একটি বা দু’টি অনুচ্ছেদ পড়তে পারবেন যেখানে কীভাবে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে হবে ইত্যাদি সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিস্তারিত লেখা থাকবে।
একটি পার্সিয়ান বিড়াল পুষতে হলে একে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নিয়মিত এর যত্ন নিতে হবে। তাতে করে এর অক্ষিগোলক সুরক্ষিত থাকবে এবং লোমগুলো নেতিয়ে পড়বে না। বিড়ালকে গোসল করানোটাও বেশ উপকারি। বিড়ালের লোম ছেঁটে ছোট করে রাখলে এর যত্ন নেয়াটা সহজ হয়। আর একটি দরকারি কাজ হলো বিড়ালের চোখ থেকে জমাট ধূলোবালি পরিষ্কার করতে এর চোখ ধুয়ে দেয়া। বাড়িতে পোষার জন্য পার্সিয়ান বিড়াল একটি আনন্দদায়ক পোষাপ্রাণী হতে পারে এবং পাশাপাশি সেটি বাড়ির ইঁদুর নিধনের কাজেও লাগতে পারে। আপনি যদি আপনার বিড়ালটির প্রজনন ঘটাতে চান তবে আপনি অনলাইনে খুঁজে দেখতে পারেন এবং এমন কারো সাক্ষাত পেতে পারেন যিনি আপনাকে বিড়াল প্রজননে সাহায্য করতে পারেন, বিশেষ ক্ষেত্রে তা অর্থের বিনিময়ে হতে পারে। আপনি যদি একেবারেই সদ্যজাত কোনো পার্সিয়ান বিড়াল পুষতে চান তবে অনলাইনে মিষ্টি চেহারার এমন কিছু বিড়ালছানা পাবেন যেটিকে আপনার সন্তানেরা একনজরেই পছন্দ করে ফেলবে। এমনকি অনলাইন মার্কেটগুলোতে আপনি বিড়ালের খাবার, বিড়ালের খেলনা, যত্নআত্তির সরঞ্জাম এবং আনুষাঙ্গিক অন্যান্য যন্ত্রপাতি বেশ সস্তায় কিনতে পারবেন। আরও বিস্তারিত জানতে দেখুন ক্রেতা এবং বিক্রেতার জন্য বিড়ালের যত্ন সংক্রান্ত টিপস।
উপসংহার
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্বজুড়ে বিড়ালপ্রেমীদের জীবনে ও হৃদয়কোঠরে পার্সিয়ান বিড়াল এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে। এর বহুল পরিচিত মিষ্টি স্বভাব এবং আকর্ষণীয় রং ও নকশাদার গঠনের কারণে গৃহপালিত বিড়াল হিসেবে এটি মানুষের প্রিয় পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এরা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী হয়েছে এবং এরা যেখানেই গিয়েছে সেখানেই নতুন একটি স্থানীয় প্রজাতির জন্ম দিয়েছে। নতুন প্রজাতির বিড়াল উৎপাদনের উদ্দেশ্যে এদেরকে বার্মিজ এবং টার্কিস প্রজাতির মত অন্যান্য প্রজাতির সাথে সংকর করা হয়েছে। বিভিন্ন বিড়াল প্রদশর্নীতে এরা বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছে এবং পৃথিবীজুড়ে বিড়ালপ্রেমীদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
অনলাইনে শ্রেণিগত বিজ্ঞাপনগুলোতে একটু খুঁজলেই দেখা যাবে আমাদের দেশের মানুষের জন্য সুলভ মূল্যে ভালো জাতের পার্সিয়ান বিড়াল কেনা বেশ সহজ। এসব বিড়াল বিক্রি করার জন্য বিজ্ঞাপন পোস্ট করাটাও কঠিন নয় এবং ক্রেতা খুঁজে পেতে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না। এ বিড়ালগুলোর যত্ন একটু বেশি নিতে হয় একথা ঠিক, তবে সেগুলোর লোম ছেঁটে ছোট করে রাখলে তাতে যত্নআত্তির কাজ অনেকটা কমে যায়। তাছাড়া এই বিড়ালগুলো এতটাই আদরণীয় যে, যে কেউই এর প্রতি একটু বেশি মনোযোগ না দিয়েই পারবেন না। এ জাতের বিড়ালছানাগুলোই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বিড়ালছানা এবং তা হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আপনি যদি এখন একটি বিড়াল কেনার কথা চিন্তা করে থাকেন তাহলে দেখে নিন আপনার পোষা বিড়ালের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুলো সম্পর্কে।