পোষা প্রাণী ও জীবজন্তু

পোষা প্রাণীদের জন্য ঘরোয়া যত্ন: সহজ টিপস ও কৌশল

যদি আপনি পোষা প্রাণী লালন-পালন করেন, তাহলে পোষা প্রাণীর যত্ন নেয়া আপনার দায়িত্ব। পোষা প্রাণীর যত্ন বলতে শুধু খাবার নিশ্চিত এবং আশ্রয়দান করাকে বোঝায় না। তাদের সুস্বাস্থ্য এবং সাচ্ছন্দ বজায় রাখাও আপনার দায়িত্ব। কারণ প্রাণী কোনো খেলনা নয়, আপনি একটি জলজ্যান্ত প্রাণের দায়িত্ব নিচ্ছেন। শখের বশে অনেকেই প্রাণী পোষেন, যা অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠে। তাই এসব অবলা প্রাণীদের যত্ন এবং পরিচর্যার বিষয়টিও বুঝতে হবে আপনাকেই।

আপনি যদি নতুন পোষা প্রাণী পালনকারী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার ঘরোয়া ভাবে যত্ন নেবার কিছু সহজ টিপস ও কৌশল অবলম্বন করা উচিত। পোষা প্রাণীকে বাড়িতে কম্ফোর্টেবল এবং নিরাপদ রাখতে বেশ কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে। যেমন – খাওয়ানোর রুটিন, পটি ট্রেনিং, স্বাস্থ্য পরিচর্যা, টিকা প্রদান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, প্রাথমিক চিকিৎসা জ্ঞান, ইত্যাদি। এই ব্লগে পোষা প্রাণীদের জন্য ঘরোয়া যত্ন – সহজ টিপস ও কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

(১) সুষম এবং পরিমিত পরিমাণ খাবার দিন –

পোষা প্রাণীর জাত, বয়স, এবং আকার অনুযায়ী সুষম এবং পরিমিত পরিমাণ খাবার দিন। ঘন-ঘন কিংবা অতিরিক্ত খাবার দেয়া থেকে বরাত থাকুন। বাংলাদেশে বেশকিছু ভালো মানের পেট শপ রয়েছে, সেখানে আপনি বিভিন্ন বয়সী প্রাণীদের উপযুক্ত খাবার এবং পরিচর্যা উপকরণ পাবেন।

কুকুর, বিড়াল, খরগোশ, পাখি, ইত্যাদি যেকোনো প্রাণী পালতে চাইলে প্রথমে প্রাণী চিকিৎসকের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় তথ্য এবং উপদেশ জেনে নেওয়া ভালো। কারণ প্রতিটি প্রাণীর খাবার এবং যত্নের নিয়ম ভিন্ন। যেমন – কুকুর এবং বিড়াল মূলত আমিষ জাতীয় খাবার পছন্দ করে। খরগোশ এবং পাখি সবজি জাতীয় খাবার পছন্দ করে। বিদেশি কিংবা উন্নত জাতের প্রাণীদের বাড়তি প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার দিতে হয়। আবার ভাত খেলে খরগোশের পেটে পীড়া হয়। গুঁড়ো দুধ, চকলেট, চা-কফি, মসলা যুক্ত খাবার, ইত্যাদি পোষা প্রাণীদের খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত নয়।

(২) নিয়মিত পরিচর্যা করুন –

নতুন পোষা প্রাণীর সাথে কিছু সময় খেলা এবং নিজ হাতে খাবার দিলে, খুব দ্রুত পোষ মেনে যায়। পোষা প্রাণীদের সপ্তাহে একবার গোসল করান। শ্যাম্পু ব্যবহার করলে, প্রাণীদের উপযুক্ত বিশেষ শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। প্রাণীদের নখ কাটা এবং লোম ছাঁটাতে সতর্কতা অবলম্বন করুন। কুকুর, বিড়াল, এবং খরগোশকে নিয়মিত ব্রাশিং করা উচিত। এতে পোকামাকড় এবং ময়লা জমবে না। প্রাণীদের থাকা এবং ঘুমানোর জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত। পানি এবং খাবারের পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত। এতে রোগজীবাণু থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

(৩) নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ করানো –

পোষা প্রাণীদের ফিট এবং মানসিকভাবে উদ্দীপিত রাখতে নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ করানো উচিত। বিড়াল, খরগোশ ইত্যাদি প্রাণীকে খেলনা, এবং কুকুরকে নিয়মিত হাঁটাতে হবে। পাখিদের ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব বড় স্পেস, এবং খাঁচার ভিতরে ডালপালা রাখলে ভালো হয়। পোষা প্রাণীরা বল ছুড়ে মারা, লুকোচুরি, ইত্যাদি ইন্টারেক্টিভ খেলা পছন্দ করে, এসব এক্টিভিটি একঘেয়েমি দূর করে, এবং মানসিক উদ্দীপনা বাড়ায়। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ করানো না হলে পোষা প্রাণীদের স্থূলতা বাড়ে, এবং জীবনীশক্তি কমে যায়।

(৪) স্বাস্থ্যসেবা এবং চিকিৎসা –

মানুষের মতো পোষা প্রাণীরাও বিভিন্ন কারণে রোগাক্রান্ত হয়। ওদেরও চিকিৎসাসেবা প্রয়োজন হতে পারে। সারা দেশে বেশ কিছু পেট ক্লিনিক রয়েছে। ঢাকায় টিচিং ও ট্রেনিং পেট হাসপাতাল এবং পেট লাইফ কেয়ার ক্লিনিক রয়েছে। এই হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে রক্ত পরীক্ষা, সার্জারি, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম করানোর সুবিধা রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে জলাতঙ্ক, কৃমির ওষুধ এবং অন্যান্য জীবাণুর সংক্রমণরোধী টিকা দিয়ে নিতে হবে, এতে পরিবারের সদস্যরাও নিরাপদ থাকবেন। বছরে অন্তত দুইবার পশুচিকিৎসক দেখানো উচিত।

(৫) পোষা প্রাণীকে প্রশিক্ষণ দিন –

বিড়াল এবং কুকুরকে প্রশিক্ষণ দেয়া জরুরি। বিশেষ করে কমান্ড, পটি ট্রেনিং, খাবার সময় মেনে চলা, কামড় বা আঁচড় না দেয়া, ভালো আচরণ, ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। পোষা প্রাণীদের বিভিন্ন মানুষ এবং পরিবেশের সাথে পরিচয় করান, এতে তাদের মধ্যে সামাজিকতা বোধ বাড়বে। প্রাণীদের সাথে সময় কাটান, কথা বলুন, খেলাধুলা করুন, এতে তাদের সাথে বন্ধন আরো দৃঢ় হবে।

নতুন প্রাণী কেনা বা পালন করার আগে আরো কিছু বিষয় মাথায় রাখবেন –

(১) কেনার সময় প্রাণীটি সুস্থ আছে কিনা, জাত কেমন, প্রয়োজনীয় টিকা দেয়া আছে কিনা জেনে নিন।

(২) বিষাক্ত গাছপালা, আঙ্গুর, পেঁয়াজ, ইত্যাদি পোষা প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

(৩) বিপজ্জনক জিনিসপত্র, ওষুধ, কেমিক্যাল, বৈদ্যুতিক তার, ভাঙা কাঁচ ইত্যাদি নাগালের বাইরে রাখুন।

(৪) রেজিস্টার্ড পশু চিকিৎসকের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সুষম খাবার চার্ট তৈরী করুন।

(৫) নিয়মিত দাঁতের যত্ন, গোসল করানো, এবং ঘরের খাবারে অভ্যস্থ করুন।

এই সাধারণ ঘরোয়া যত্নের কৌশল গুলো অনুসরণ করলে, আপনার পোষা প্রাণীটি আরামদায়ক, আনন্দময়, এবং নিরাপদ থাকবে। একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলা, সঠিক পুষ্টি প্রদান, এবং নিয়মিত পরিচর্যা করা হলে খুব ভালো ভাবেই পোষা প্রাণী মেইনটেইন করা যায়। স্রষ্টার অপূর্ব সৃষ্টি এই অবলা প্রাণীদের স্নেহ করা কিংবা দায়িত্ব নেয়া, একটি মহৎ গুণ। সামান্য সময়, প্রচেষ্টা এবং ভালোবাসা দিলে পোষা প্রাণীদের সাথে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা পারিবারিক বন্ধনের মতো হয়ে যায়।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

(১) পোষা প্রাণীর ঘরোয়া যত্নে কি কি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে?

পোষা প্রাণীর খাওয়ানোর রুটিন, সুষম খাবার, পটি ট্রেনিং, স্বাস্থ্য পরিচর্যা, টিকা প্রদান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, প্রাথমিক চিকিৎসা জ্ঞান, ইত্যাদি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

(২) পোষা প্রাণীকে কি কি প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত?

পটি ট্রেনিং, খাবার সময় মেনে চলা, কামড় বা আঁচড় না দেয়া, ভালো আচরণ, ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত।

(৩) কীভাবে পোষা প্রাণীর সুষম খাদ্য নির্বাচন করবেন?

পোষা প্রাণীর প্রজাতি, বয়স এবং শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী, পশু চিকিৎসকের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সুষম খাবার চার্ট তৈরী করুন। ঘন-ঘন কিংবা অতিরিক্ত খাবার দেয়া থেকে বরাত থাকুন।

(৪) পোষা প্রাণীর নিয়মিত কি কি পরিচর্যা করা উচিত?

নিয়মিত নখ কাটা, লোম ছাঁটানো, দাঁতের যত্ন, গোসল করানো, ইত্যাদি বিষয় মেনে পরিচর্যা করা উচিত।

(৫) ঢাকায় ভালো মানের কি কি পশু চিকিৎসা কেন্দ্র আছে?

ঢাকায় টিচিং ও ট্রেনিং পেট হাসপাতাল এবং পেট লাইফ কেয়ার ক্লিনিক রয়েছে। এই হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে রক্ত পরীক্ষা, সার্জারি, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম করানোর সুবিধা রয়েছে।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close