প্রপার্টি

বিল্ডিং নির্মাণে নিরাপত্তা ও সুরক্ষার গুরুত্ব এবং নির্মাণের সঠিক উপায়

আজ আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ক্রম উন্নয়নের চাকা সচল রাখার পথে সবচেয়ে বড় এক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করবো। আর তা হলো এ দেশের নাগরিকদের জন্য নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং টেকসই অবকাঠামো নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ।

নাগরিকদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কমার্শিয়াল এবং প্রাইভেট হাউজিং সহ সব রকম রিয়েল এস্টেট ইন্ডাস্ট্রি তে অবকাঠামোর উন্নয়ন ও রক্ষনাবেক্ষণের উপর কঠোর আইন প্রয়োগ করাটা এখন সরকারের জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিরাপত্তার গুরুত্ব ও প্রয়োজন উপলব্ধি করা

সম্প্রতি কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট ইন্ডাস্ট্রিকে ঘিরে নানা ধরণের ঘটনা ও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দেশের যেকোনো প্রান্তেই নিরাপদ ও সুরক্ষিত বিল্ডিং নির্মাণ করার প্রয়োজন এখন চূড়ান্ত আকার ধারণ করেছে। পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তার এবং কাঠামোগত সুরক্ষার অভাবের সাথে জড়িত মারাত্মক দুর্ঘটনাগুলো ইতোমধ্যে কেড়ে নিয়েছে শতাধিক প্রাণ।

আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে একেকটি ধ্বংসাত্মক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির পরও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির বিল্ডিং গুলোর নির্মাণ কৌশলে যথাযথ নিরাপত্তার অভাব এবং অনিরাপদ নির্মাণ প্রোটোকল অনুসরণ করার রেকর্ড কোনও ভাবেই কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

দেশের কেন্দ্রীয় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি মেগাসিটি হিসেবে ঢাকা শহরে রিয়েল এস্টেট ইন্ডাস্ট্রি এবং প্রপার্টি নির্মাণের ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত প্রোটোকল আরোপ করাটা এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি বিল্ডিং -এর নিরাপত্তার ত্রুটিগুলো সংশোধন করার জন্য এই প্রোটোকলকে অবশ্যই আরো উন্নত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

শহরগুলোতে জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যস্ত শহরগুলোর মধ্যে ঢাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের জন্য এখনও সেরকম নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং টেকসই প্রপার্টি নিশ্চিত করা হচ্ছে না। অথচ স্বাস্থ্যকর শহুরে জীবনযাপনের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশই হচ্ছে নিরাপদ বাসস্থানের সুবিধা।

সরকারি কর্তৃপক্ষদের দায়িত্ব শুধুমাত্র একটি আধুনিক মেট্রো সিটি এবং দেশ গঠনে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, একই সাথে এর নাগরিকদের নিরাপত্তাও সুনিশ্চিত করতে হবে। বিল্ডিং ও অন্যান্য অবকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে উন্নত মানের কাঁচামাল ব্যবহার, প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষার নিয়মনীতি অনুসরণ এবং ভবিষ্যতের জন্য টেকসই মানের রিয়েল এস্টেট নির্মাণ করতে হবে।

বাংলাদেশের বিল্ডিংগুলোর জন্য অগ্নি নিরাপত্তার গুরুত্ব

শিল্পায়ন এবং আধুনিকীকরণের দ্রুত প্রসারের নানা রকম পরিণতির সাথে অবকাঠামোর সাপোর্টও থাকা জরুরি। যেকোন ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের প্রসার হওয়ার পাশাপাশি এতে আরো বেশি পরিমাণে ফ্যাক্টরি, আরো বেশি সরঞ্জাম এবং অবশ্যই আরো বেশি কর্মীরও প্রয়োজন হয়।

তবে বাড়তে থাকা চাহিদা এবং যোগানে দ্রুত প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। এরকমই কিছু দিক হচ্ছে বিল্ডিং -এর নিরাপত্তা, কার্যকরী রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যথাযথ নিয়মনীতির অভাব। ফলস্বরূপ নতুন প্রপার্টিগুলো একদিকে যেমন নিম্নমানের কোয়ালিটি নিয়ে তৈরি হচ্ছে, তেমনি পুরোনো প্রপার্টিগুলোতেও ঝুঁকির পরিমাণ দিন কে দিন বেড়েই চলেছে।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বরে ‘তাজরিন ফ্যাশনস’ নামক একটি ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগার ঘটনা সবাইকে হতবাক করে দেয়। সেদিনের আগুনে প্রায় ১১২ জন কর্মী তাদের প্রাণ হারান। এই ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক সাড়া পড়ে যায় এবং তাৎক্ষণিক ভাবে অগ্নি নিরাপত্তার সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করা ও প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নেয়ার জন্য একটি স্বতন্ত্র সংস্থাও নিযুক্ত করা হয়।

প্রায় ২৫০-এরও বেশি ফ্যাক্টরিতে চিরুনি অভিযান চালিয়ে অগ্নি নিরাপত্তা নিরীক্ষণের বিস্তারিত চেকলিস্ট, সামাজিক সম্মতি এবং নিরাপত্তা ট্রেনিং এর পর অনেকগুলো ত্রুটি রিপোর্ট করা হয়। খুব শীঘ্রই এটাও পরিষ্কার হয়ে যায় যে শহরের প্রায় সব গুলো বিল্ডিং-এই একই রকম সমস্যা রয়েছে।

প্রায় সব গুলো বিল্ডিং-এই গঠনগত ভাবে নানা রকম নিরাপত্তা সমস্যা খুঁজে পাওয়া যায় এবং এক্ষেত্রে কোনো রকম শর্টকাট বা দ্রুত সমাধান প্রয়োগ করার রাস্তা থাকে না। বরং সমগ্র ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে একটা পরিপূর্ণ সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দেয়। ঢাকা শহরের বেশির ভাগ প্রপার্টিতে সনাক্ত হওয়া ত্রুটিগুলোর মধ্যে বিশেষ কিছু হাইলাইট নিচে তুলে ধরা হলোঃ

  • বাংলাদেশে সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার চর্চা একেবারেই নেই।
  • প্রত্যেকটি লেভেলে দুর্নীতি এবং তার পেছনে অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ও ব্যক্তিগত স্বার্থ রয়েছে।
  • আগুন, বন্যা, ভূমিকম্প ইত্যাদি নিরাপত্তা কোড সম্পর্কে মানুষের টেকনিক্যাল জ্ঞান খুবই কম কিংবা নেই বললেই চলে।
  • একটি কঠোর নিরাপত্তার অবকাঠামো প্রণয়ন করার জন্য কোন ধরণের বিল্ডিং নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ নেই।
  • স্থাপত্যের ডিজাইন ও নির্মাণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল বা একেবারেই অনুপস্থিত।

এর ফলস্বরূপ বৈশ্বিক মানসম্মত ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের করুণ ও নিম্ন মানের নিরাপত্তা ও ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়ে গেলেন। আর প্রতিটি ব্র্যান্ডের হাতে এরপর শুধুমাত্র দু’টো অপশন খোলা রইল – হয় এখানে বিনিয়োগ করা ও পরিস্থিতি শুধরে নেয়া, নতুবা দেশে তাদের কার্যকলাপ ও ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া।

জাতীয় পর্যায়ের উদ্যোগ – দ্যা অ্যাকর্ড

বিল্ডিং-এর গঠনমূলক নিরাপত্তা, আগুন ও দুর্ঘটনা থেকে নিরাপত্তা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রের সমস্যার সাথে জড়িত সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের মে মাসে ‘দ্যা অ্যাকর্ড’ নামক একটি চুক্তি কার্যকর করা হয়।

বাংলাদেশের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে খুচরা উৎপাদন বা রিটেইল ম্যানুফ্যাকচারিং সচল রাখার জন্য দেশের আগুন ও বিল্ডিং নিরাপত্তার সাথে জড়িত বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে একটি পারস্পরিক বৈধ চুক্তির নামই হচ্ছে দ্যা অ্যাকর্ড। বর্তমানে প্রায় ২২০টিরও বেশি বিশ্বমানের ব্র্যান্ড, রিটেইলার এবং ট্রেড ইউনিয়ন কোম্পানি এই চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

এই চুক্তির মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশি গার্মেন্টস কর্মীরা যেন আগুন, বিল্ডিং ধ্বস কিংবা অন্যান্য প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার ভয় মন থেকে দূর করে কাজে যোগ দিতে পারেন। আর এটা তখনই সম্ভব, যখন সব ক্ষেত্রে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিক ভাবে কার্যকর হয়ে যাবে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর বিল্ডিং নিরাপত্তা গাইডলাইন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়েই এই চুক্তিটি শুরু করা হয়েছে।

দ্যা অ্যাকর্ড -এর মূল নিরাপত্তা ফিচারগুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

  • বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যে একটি বৈধ ও কার্যকর চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে।
  • সব রকম পদক্ষেপের অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সবগুলো ব্র্যান্ডই অংশগ্রহন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবেন।
  • নির্দিষ্ট সময় পর পর স্বতন্ত্র ভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিরীক্ষণ করতে হবে।
  • যেকোনো কাজের রিপোর্ট এবং পরিকল্পনাগুলো যথাযথভাবে প্রচার করতে হবে।
  • অবশ্যই একটি নিরাপত্তা কমিটি গঠন করতে হবে।
  • নিরাপত্তা ট্রেনিং প্রোগ্রামগুলো সকলের জন্য আয়োজন করতে হবে।
  • নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর উপর মতামত কিংবা অভিযোগ করার যথাযথ ব্যবস্থা রাখতে হবে। 
  • নিরাপত্তাবোধের অভাবে কাজ প্রত্যাখ্যান করার অধিকার দিয়ে কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
  • ফ্রীডম অব অ্যাসোসিয়েশন (এফওএ) এর অধিকারকে উৎসাহ দিতে হবে।
  • এফওএ অধিকারগুলো রক্ষা করার জন্য ট্রেনিং এবং অভিযোগের প্রোটোকল চালু করতে হবে।
  • জাতীয় নিরাপত্তা বডি বা কর্তৃপক্ষের সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

এ দেশের সরকারের ভূমিকা

চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার চকবাজারে আগুন লাগার ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশে সুরক্ষিত ও নিরাপদ বিল্ডিং নির্মাণের চাহিদা আরো বেশি প্রকট হয়ে আমাদের সামনে উঠে আসে। এই ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে অন্তত ৭০ জন নিরীহ মানুষ তাদের প্রাণ হারান। আর আমাদের সামনে এটাও স্পষ্ট হয়ে যায় যে বাংলাদেশ নিরাপত্তার দিক থেকে এখনও অনেক বেশি পিছিয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলোজি (বুয়েট)-এর একটা রিসার্চ থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা হয়েছে যে শুধুমাত্র বিভিন্ন ফ্যাক্টরি ও কমার্শিয়াল বিল্ডিং-এই না, বরং সমগ্র দেশব্যাপী সবগুলো স্থাপনায় ‘দ্যা অ্যাকর্ড’-এর অনুরূপ কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা এখন বিশেষভাবে প্রয়োজন।

দেশে বিপুল সংখ্যায় যেসব বিল্ডিং নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জাতীয় নির্মাণ কোড অমান্য করে তৈরি করা হয়েছে, এই রিসার্চ অনুযায়ী সে সবগুলো বিল্ডিং-এর বিপক্ষে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-কে অবশ্যই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্পূর্ণ নতুন নির্মাণ হওয়া প্রপার্টি এবং বিভিন্ন পুরোনো রিয়েল এস্টেট প্রপার্টি, যেমন বিক্রির জন্য ফ্ল্যাট ও বাড়ি ইত্যাদি সব প্রপার্টির জন্য সরকারকে অবশ্যই যথাযথ নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা খুব সামান্য কোন ত্রুটি থেকেও এইসব প্রপার্টিতে বসবাসকারী মানুষের জীবনে নেমে আসতে পারে বিরাট ঝুঁকি।

নিরাপদ এবং সুরক্ষিত বিল্ডিং কীভাবে নির্মাণ করা যায়

বিগত ২৫ বছর ধরে আমরা বাংলাদেশে কাঠামোগত নির্মাণে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে যেতে দেখেছি। আবার আমরা এটাও দেখেছি যে এই রিয়েল এস্টেট প্রপার্টি গুলোর মধ্যে বেশির ভাগই নির্মিত হয়েছে কোনো উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা সুরক্ষিত নির্মাণ পদ্ধতি ছাড়া। আবার কর্তৃপক্ষের দিক থেকেও এসব নির্মাণে কোনও ধরণের লিখিত আইন প্রণয়ন বা বাস্তবায়ন করা হয়নি।

নিরাপত্তা ব্যবস্থার সম্পূর্ণ অভাব এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে উপস্থিত নিয়মনীতিগুলোর অক্ষমতার কারণে আমরা এখন পর্যন্ত বার বার এমন সব ভয়াবহ দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছি যেগুলো হয়ত খুব সহজেই প্রতিকার করা সম্ভব ছিলো। এই সব দুর্ঘটনার পেছনে মূল কারণ হিসেবে রয়েছে কাঠামোগত ব্যর্থতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার অনুপস্থিতি।

একটি নতুন প্রপার্টি নির্মাণ করা

ঢাকা কিংবা বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় যারা নতুন প্রপার্টি নির্মাণ করার চিন্তা ভাবনা করছেন, তাদের সবাইকে অবশ্যই জাতীয় নির্মাণ কোড পরিপূর্ণ ভাবে মেনে চলতে হবে। আর এই সব নিয়মনীতি বাস্তবায়ন করার জন্য রাজউক এবং স্ব স্ব অনুমোদিত সংস্থাগুলোকেও অবশ্যই আরো শক্তিশালী ও উপযুক্ত পদক্ষেপও নিতে হবে।

বাড়ি কেনা

যারা বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় বাড়ি কেনা বা ভাড়া নেয়ার পরিকল্পনা করছেন, তারা যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কিছু প্রশ্ন অবশ্যই নিজেকে করে নেবেন। বৈধ মালিকানা লাভ করার পাশাপাশি নিরাপত্তার দিকটাও আপনাদের ভালোভাবে চিন্তা ভাবনা করে দেখতে হবে। ঐ বিল্ডিং-টির নামে কি প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ছাড়পত্র রয়েছে? ব্যবহার উপযোগী ফায়ার এক্সিট বা অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জাম বিল্ডিং-এ ইনস্টল করা আছে কি? কাঠামোগত নিরাপত্তার ব্যাপারে একে সঠিকভাবে নিরীক্ষণ করানো হয়েছে কি? সরকারের কাছ থেকে এই বিল্ডিং-টি বৈধ ভাবে অনুমোদন পেয়েছে কি?

বিক্রির জন্য বাড়ি, ফ্ল্যাট বা জমি

আপনি যদি বাংলাদেশে একটি বাড়ি, ফ্ল্যাট কিংবা জমি বিক্রি করার ব্যাপারে আগ্রহী হন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই সেটাকে নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য দায়িত্বশীল সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। যেখানে পুরো দেশের গার্মেন্টস শিল্প সরাসরি এই সমস্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে, সেখানে সমগ্র জাতির উপর এর ব্যাপক প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক।

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ কমপ্যাক্ট গঠন করা হয়। বাংলাদেশ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের মধ্যে এটি একটি যৌথ উদ্যোগ।

বাংলাদেশ কমপ্যাক্ট তাদের অনুসন্ধানের ফলাফল হিসেবে নিচের কিছু সমস্যার কথা বর্ণনা করেছে, যেগুলো শুধুমার গার্মেন্টস শিল্পের জন্যই না, বরং বাংলাদেশের প্রায় সব গুলো প্রপার্টির ব্যাপারেই প্রযোজ্যঃ

  • নিরাপত্তা পর্যবেক্ষন এবং সুরক্ষা পদক্ষেপগুলো মেনে চলা বা কার্যকর করার ব্যাপারে দায়িত্ববোধের অভাব।
  • ত্রুটিপূর্ণ ফাইলিং এবং অনুসন্ধানের ভুল রিপোর্ট প্রকাশ।  
  • উপস্থিত নিয়মনীতির কোনো রকম বাস্তবায়ন নেই। 
  • কার্যকর হওয়া সংশোধনমূলক ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে ভুল ত্রুটির উপস্থিতি।

এই সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করার জন্য আরো বেশি গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে সত্যিকারের দায়িত্ববোধ, প্রতিশ্রুতি এবং পরিপূর্ণ প্রস্তুতির সাথে কাজ করতে হবে। কার্যকরভাবে সব সমস্যা সমাধান করার জন্য দেশের প্রতিটি জায়গায় বিদ্যমান সবগুলো বিল্ডিং-কেই অবিলম্বে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে সুরক্ষিত করে তুলতে হবে।

এটা শুধুমাত্র স্থানীয় সরকারের দায়িত্বই নয়, বরং সারা বিশ্ব জুড়ে কাজ করা ক্ষমতাবান ব্র্যান্ডগুলোকেও এইসব ঝুঁকিগুলো সনাক্ত করতে এবং তাদের ব্যবসায়িক ডিল নিয়ে কাজ করার সময় এই পরিস্থিতির সংশোধন করার ব্যাপারে দায়িত্বশীল হতে হবে। সর্বোচ্চ কার্যকারিতা এবং সম্ভাব্য ভুলত্রুটিগুলো এড়ানোর জন্য স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যেমন- ফায়ার ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকেও যথাযথ প্রচেষ্টা থাকা প্রয়োজন।

শেষকথা

বন্যা, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়ের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিমাণ ক্রমশ বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ এখন আগের চেয়েও অনেক বেশি অরক্ষিত অবস্থায় চলে এসেছে। যখন আমাদের সামনে এই ধরণের দুর্যোগ চলে আসে, তখন এর থেকে বাঁচার রাস্তা আমাদের জন্য অনেক বেশি সংকীর্ণ হয়ে যায়। তবুও আধুনিক স্থাপত্যবিদ্যার নানা রকম উদ্ভাবন, নির্মাণ কৌশল এবং নিরাপত্তা পদক্ষেপের সাহায্য নিয়ে আমরা এখন সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি ও বিপর্যয়ের পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে পারি।

তবে যদি আমরা এরপরও নিরাপদ ও সুরক্ষিত বিল্ডিং নির্মাণ করার বেসিক কৌশলগুলোকে পুরোপুরি অবজ্ঞা করে চলি, তাহলে আমরা নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরে বসবো এবং দেশের জন্য দুর্ভোগ ডেকে আনবো। আমাদের কোটি কোটি টাকা ঋন নিয়ে তৈরি করা বিল্ডিং, ব্রিজ, আর ফ্লাইওভারগুলো সম্পূর্ণভাবে অক্ষম হয়ে ধ্বসেও পড়তে পারে। ফলস্বরূপ আমাদের হারাতে হবে শত সহস্র নিরীহ প্রাণ।

দ্রুতগতির নগরায়ণের কারণে এই সমস্যাটা উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় ধরণের দেশে আরো বেশি খারাপ আকার ধারণ করেছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য আধুনিক যুগে এসে আমরা বিভিন্ন ধরণের স্থাপনাগুলো স্মার্ট উপায়ে ডিজাইন ও ব্যবস্থাপনা করতে শিখেছি। এখন সেই শিক্ষা কাজে লাগানোর সময় এসে গেছে।

আসুন আমরা উন্নয়নের ভবিষ্যৎ নিয়ে সুন্দর কিছু স্বপ্ন বুনি; যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা দুর্ঘটনার সময় দেশের সবগুলো বিল্ডিং-এর বাসিন্দারা প্রত্যেক বার বিল্ডিং থেকে নিরাপদে বের হয়ে আসতে পারবেন।

আপনি যদি কোন বাড়ি, ফ্ল্যাট কিংবা কমার্শিয়াল স্পেস, এমনকি জমিও কেনা, বিক্রি বা ভাড়া নেয়ার চিন্তা ভাবনা করে থাকেন – তাহলে আজই ভিজিট করুন Bikroy -এর প্রপার্টি পোর্টালে। আর খুঁজে পান নির্ভরযোগ্য বিক্রেতা ও প্রপার্টি মালিকদের পোস্ট করা হাজার হাজার প্রপার্টির বিজ্ঞাপন।

আর সব সময়ের মত আপনার মূল্যবান মতামত এবং পরামর্শগুলো জানান আমাদের কমেন্ট সেকশনে।

Apartments for sale in DhakaApartments for sale in Chattogram
Apartments for sale in Dhaka DivisionApartments for sale in Khulna Division
Apartments for sale in SylhetApartments for sale in Chattogram Division
Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close