এইচটিসি -১০ : এইচটিসি’র সেরা স্মার্টফোনের জন্য প্রচেষ্টা
গত কয়েকবছর ধরেই এইচটিসি কোম্পানিটি তাদের ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে খুব একটা ভালো করতে পারছে না। তারা এইচটিসিতে সিগনেচার ডিজাইন (নামাঙ্কন সংকেত) ফিচার অন্তর্ভূক্ত করেছিল, কিন্তু মূল ক্ষেত্রেই তারা ব্যর্থ হয়েছে। মার্কেটিংয়ে দূর্বল প্রচেষ্টা, বিক্রিতে সফল না হওয়াসহ সবকিছুর সমন্বয়ে এই ব্যর্থতা। ২০১৬ সালে সফলতার জন্য এইচটিসি এসব বিষয় পরিবর্তন করার প্রয়োজন রয়েছে। অন্যত্থায় কোম্পানিটি প্রচন্ড প্রতিযোগিতাপূর্ণ স্মার্টফোনের বাজার থেকে হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। এইচটিসি তাদের এই হুমকীকে খুব হালকাভাবে নিচ্ছে না এবং তাদের নতুন ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন এইচটিসি-১০ কোম্পানিটির জন্য ত্রাণকর্তা বা রক্ষাকর্তা হতে পারে। কোম্পানিটি তাদের নতুন এই পণ্যে দরুণ সব ফিচার এবং একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এইচটিসি- ১০ ফোনটি থেকে তাদের আগের সেই সিগনেচার ডিজাইন বাদ দেয়া হয়েছে।
ডিজাইন:
এইচটিসি-১০ চমৎকার সব হার্ডওয়্যারের খণ্ড বা অংশ দিয়ে তৈরি। যা দেখতে গতবছরের এ৯ স্মার্টফোন এবং ওয়ান এম৯ এর মত চমৎকর এবং কারুকার্যে পরিপূর্ণ। সুন্দর মেটালের তৈরি ফোনের বডিটি দেখতে একেবারে নতুন কিন্তু এইচটিসি’র যে মূল নকশা তা অবিকৃত রাখা হয়েছে।
ফোনটিতে সবচেয়ে বড় আই (চক্ষু) ক্যাচার খুব প্রশস্ত এবং সুন্দর প্রাণবন্ত। এর কোনাগুলো বাকানো যা এইচটিসি-১০’র পরিসীমা এবং পেছনটিকে করেছে আকর্ষণীয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, ফোনটিতে থাকা সিগনেচার, সামনের দিকের ডুয়েল স্পিকার ১০ ফোনটিকে তেমন আকর্ষণীয় করতে পারেনি। এর পরিবর্তে আমরা নতুন ফোনটিতে দেখছি একটি সিঙ্গেল ফ্রন্ট ফেসিং টুইটার যুগল একইসাথে নিচের দিকে রয়েছে একটি মিনি সাবউফার (লাউড স্পিকার কম্পোনেন্ট)। এইচটিসি-১০ এ আরও থাকছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর/হোম বাটন এছাড়াও স্ক্রিনের নিচের দিকে দু’পাশে থাকছে ক্যাপাসিটিভ কী। এইচটিসি দাবি করছে যে, তাদের নতুন এই ফোনে থাকা ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার ডিভাইসটিকে মাত্র শূণ্য দশমিক ২ সেকেন্ডের মধ্যে আনলক করবে।
এইচটিসি আরও দাবি করেছে তাদের ১০ ফোনটির আকৃতি বা গঠনের মান বিস্ময়কর। সেটটির চকচকে, মসৃণ বডিটি তারা যথাযথভাবে (কঠোরভাবে) পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় একটানা ১৬৮ ঘণ্টা প্রচণ্ড তাপমাত্রায় রাখা হয় একই সাথে ১০ হাজারেরও বেশিবার ফোনটিকে ফেলে দেয়া হয়, স্ক্রিন ও বডিতে আঁচড়ের দাগ এবং মরিচা পড়ার বিষয়গুলো কঠোরভাবে পরীক্ষা করা হয়, যতক্ষণ না এইচটিসি কাঙ্ক্ষিত সর্বোচ্চ মানের পণ্যটির দেখা পেয়েছে।
ক্যামেরা:
এইচটিসি’র আগের ফ্ল্যাগশিপের ক্যামেরা অনেকটা হতাশ করেছে। তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে দীপ্তি ছড়াতে ব্যর্থ হয়েছে সেগুলো। এইচটিসি-১০ এ ডিএক্সও মার্ক আগে থেকেই ছিল এবং এর সাথে যোগ করা হয়েছে গ্যালাক্সি এস৭ এর মত বর্তমানে এই শিল্পের সেরা ক্যামেরা। ফোনটির মূল ক্যামেরাটির সাথে ১২ আল্ট্রাপিক্সেল ২ সেন্সরের সাথে স্থিতিশীল অপটিক্যাল ইমেজ, এফ/১.৮ ছিদ্র এবং ১.৫৫ মাইক্রন পিক্সেল। সামনের দিকের ৫ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাটিতেও রয়েছে এফ/১.৮ ছিদ্র এবং বিশ্বে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়েছে স্থিতিশীল অপটিক্যাল ইমেজ। ক্যামেরার অ্যাপ্লিক্যাশন ০.৬ সেকেন্ডের মধ্যে কাজ শুরু করে এবং সেকেন্ড জেনারেশন লেজার অটোফোকাস সিস্টেম এর সাহায্যে খুব দ্রুত ছবি তোলে।
পারফরমেন্স বা সক্ষমতা :
বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে এইচটিসি ফোনটি অনেকটা ২০১৬ সালে বাজারে আসা অন্যান্য স্মার্টফোনগুলোর মতোই। এতে রয়েছে স্ন্যাপড্রাগন ৮২০ প্রসেসর, ৪জিবি র্যাম। ৫.২ ইঞ্চি সুপার এলসিডি ৫ ২কে ডিসপ্লে (২৫৬০*১৪৪০ পিক্সেল, ৫৬৪ পিপিআই), ৩২/৬৪জিবি স্টোরেজ মেমোরি, যা মাইক্রো এসডি কার্ডের মাধ্যমে ২ টেরাবাইট পর্যন্ত বর্ধিত করা যায়। এছাড়াও রয়েছে ইউএসবি টাইপ সি এবং একটি ৩,০০০ এমএএইচ (মিলি অ্যাম্পিয়ার আওয়ার) ব্যাটারি এবং এর সাথে একটি কুইক চার্জার। এইচটিসি তার ফোনে অ্যান্ড্রয়েড ৬.০ মার্শম্যালোর খুব পরিস্কার সংস্করণ ব্যবহার করেছে। যার কারণে এই ফোনে ব্যাটারির কার্যক্ষমতা দুই দিন থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্যাটারিটি চার্জ করার জন্য যখন বান্ডেল ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করা হবে তখন মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে শূণ্য শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ হবে। ১০ সেটটিতে থাকা একটি থিম ইঞ্জিন আপনাকে আপনার পছন্দ থেকে থিম বেছে নেয়ার সুযোগ করে দেবে।
সর্বশেষ ভাবনা:
এইচটিসি’র জন্য ২০১৬ সালে যেরকম প্রয়োজন ছিল ১০ হ্যান্ডসেটটি সত্যিই সেই রকমই। যদিও আমরা দেখতে চেয়েছিলাম এলজি’র মতো এই কোম্পানিটি আমাদের জন্য কিছু ঝুঁকি নেবে এবং আমাদেরকে নতুন কিছু দেখাবে। এইচটিসি-১০ দেখতে খুব সুন্দর, নিরাপদ এবং বর্তমান সময়ের জন্য একটি কার্যকর পণ্য। স্যামসাং এবং এলজি সম্প্রতি যে ফ্ল্যাগশিপ পণ্যগুলো উন্মোচন করেছে তাদের কথা বিবেচনা করেই এইচটিসি নতুন পণ্য তৈরি করেছে যা স্যামসাং এবং এলজি’র সাথে সমানে সমানভাবে চলতে পারে প্রতিদ্বন্ধিতা করবে। যা হোক কোম্পানিটি তাদের ১০ পণ্যটি বিক্রির জন্য নির্ভর করবে চমৎকার ডিজাইনের উপরই। তবে এলজি জি৫ এবং গ্যালাক্সি এস৭ থেকে এইচটিসি ১০ কিছুটা আলাদা, ১০-এ খেলার জন্য খুব বেশি কার্ড নেই। ইতোমধ্যে এইচটিসি ১০ এর প্রি-অর্ডার শুরু হয়েছে এবং এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছেঅত্যন্ত সাশ্রয়ী অর্থ্যাৎ খুচরা মূল্য ৬৯৯ ডলার। এইচটিসি-১০ হ্যান্ডসেটটি পাওয়া যাবে কার্বন গ্রে, গ্লাসিয়ার সিলভার এবং টপাজ গোল্ড এর দারুন কারুকার্যে।