Bikroy আপডেট

#ILoveBangladesh প্রতিযোগিতার বিজয়ী গল্প

দেশপ্রেম ও বীরত্বের অজানা উপাখ্যান

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস Bikroy.com আয়োজিত বিজয় দিবস উপলক্ষে #ILoveBangladesh গল্প প্রতিযোগিতায় ২০০ এরও বেশি সংগৃহীত গল্পগুলো থেকে তিনটি গল্প বাছাই করে লেখদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন দিদারুল ইসলাম, দ্বিতীয় হয়েছেন মোঃ সাঈদ-বিন-আজিজ এবং তৃতীয় হয়েছেন মনজুরুল হক। গত ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮-তে Bikroy.com এর হেড অফিসে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয় এবং তাঁদেরকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হয়। বিজয়ীদের এসব গল্পে উঠে এসেছে সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ আর বীরত্বের উপাখ্যান। পাঠকদের সুবিধার্থে এবার তুলে ধরা হলো বিজয়ীদের সেসকল গল্পঃ

১ম বিজয়ী (দিদারুল ইসলাম)নিরবে দেশের জন্য আত্মত্যাগ”: একজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করার জন্য তিন থেকে চারজন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্য দৌড়ে নিয়ে যাচ্ছে। লোকটি দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ রাস্তার বাঁকে তাদের আড়ালে পরে যায় এবং সামনে থাকা একটা পুকুরে ঝাঁপ দেয়। পুকুরে অনেক কচুরিপানা থাকায় লোকটি মাথায় কচুরিপানা দিয়ে দাড়িয়ে থাকে। ঐ সময়ে পুকুরঘাটে বসা ছিল একজন মহিলা যা মুক্তিযোদ্ধা খেয়াল করে নি। মুক্তিযোদ্ধাটি পুকুরে ঝাঁপ দেওয়ার ফলে পানিতে ঢেউ উঠতে থাকে। এই ঢেউ দেখে পাকিস্তানিরা যেন বুঝতে না পারে পুকুরে কেউ ঝাঁপ দিয়েছে তাই মহিলাটি তার দুই পা দিয়ে পুকুরের পানিতে জোরে জোরে ঢেউ তুলতে থাকে।

এক কি দুই মিনিট পর পাকিস্তানিরা এসে ঐ পুকুরপাড়ে দাঁড়ায়। তারা পুকুরের ঢেউ দেখে ভাবলো লোকটি হয়তো পুকুরেই ঝাঁপ দিয়েছে। কিন্তু পরক্ষণেই তারা দেখলো ঢেউটা পুকুরের ঐ পাড়ে বসা ঐ মহিলার কাছে থেকে আসছে। তাই তারা মহিলাটির কাছে গিয়ে জানতে চায় তিনি এদিক দিয়ে কাউকে যেতে দেখেছে কিনা। তিনি ‘না’ জানালে তারা জানতে চায় তিনি পানিতে এভাবে ঢেউ তুলছেন কেন। মহিলাটি ভীত হয়ে যায় এবং চুপ করে বসে থাকে। নিষ্ঠুর-নির্মম পাক বাহিনীর সদস্যরা সেদিন মহিলার চুপ থাকা দেখে রেগে গিয়ে মহিলাটিকে টেনে হিঁচড়ে পুকুরঘাট থেকে উপরে তুলে আনে এবং সেই মুক্তিযোদ্ধার কথা জানতে চায়। মহিলাটি কোনো জবাব না দেওয়ায় তারা সেদিন তাদের বন্দুকের সামনে থাকা ছুরি দিয়ে মহিলাটির পেট চিরে বাচ্চাটিকে বের করে নিয়ে আসে এবং দুইজন চ্যাং দোলা করে বাচ্চাটিকে পানিতে ছুঁড়ে মারে। এরপর তারা চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে মহিলাটিকে হত্যা করে।

গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে সেদিন এমনই নাম না জানা অনেক নারী মুক্তিযুদ্ধের জন্য যে অবদান রেখেছিলেন এটা ছিল তারই একটি উদাহরণ। মহিলাটি যে আত্মত্যাগ দিয়েছিল তা পানিতে থাকা মুক্তিযোদ্ধাটিকে এতোটাই ক্ষিপ্র করেছিল যে তিনি সেদিন প্রতিজ্ঞা করে বলেছিলেন দেশে যতদিন না পর্যন্ত এই বর্বরোচিত বাহিনীর কবর রচনা করতে পারবেন ততদিন পর্যন্ত তিনি বাড়ি ফিরে যাবেন না। একদিন তিনি ঠিকই সফল হয়েছিলেন। কিন্তু তার মন থেকে সেই দৃশ্যটা কোনোদিন মুছে যায় নি!

২য় বিজয়ী (মোঃ সাঈদ-বিন-আজিজ)দেশ স্বাধীনে কিশোর মামুনের শেষ চেষ্টা”: শহীদ ক্যাডেট আবদুল্লাহ আল মামুন। তাঁর বীরত্বের কথা উঠে এসেছে তৎকালীন ৭ নম্বর সেক্টরের প্রধান সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিলের কাছ থেকে। মামুনের বাড়ী নওগাঁ জেলার মান্দা থানায়। সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে। বাবার নাম হলো ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণীতে পড়তেন।

আব্দুল জলিলের ভাষায়, সেই ছেলেকে একটা ক্যাম্পে আমি রিক্রুট করতে বাধ্য হয়েছিলাম ট্রেনিং এর জন্য। আমি প্রথমে ঐ ছেলেকে রিক্রুট করি নাই বা করতে চাইনি। এর মধ্যে ঐ ছেলে আমার কাছে যেয়ে কান্নাকাটি শুরু করেছে। বলে যে, আমি  মুক্তিযুদ্ধে যাবো। মুক্তিযুদ্ধ করার জন্য আমি এসেছি। ট্রেনিং নিয়ে আসার পর ইনডাকটেড হয়ে একদিন সে কিভাবে শুনেছে যে, পাঞ্জাবিরা ফেরিঘাট দিয়ে নদী ক্রস করবে। আত্রাই নদী দিয়ে মান্দা থানার ডিভিশন আছে। এই খবর পেয়ে ওরা ৩/৪ জন ওখানে গ্রেনেড নিয়ে গেছে। তারা দেখলো আর্মি সেখান দিয়ে পার হচ্ছে। তখন মামুন গ্রেনেড ছুড়ে। মামুন তিনটা গ্রেনেডই ছুড়েছিলো। কিন্তু তিনটার একটাও বিস্ফোরণ হয় নাই। পরে আর্মি তাকে ধরে ফেলে। আর্মি তাকে ধরার পরে ট্রাকের পেছনে রশিতে বেধে নওগাঁ শহর পর্যন্ত নিয়ে আসে। শহরে এনে আবার পুরো শহর ঘুরিয়েছে। ততক্ষনে তার শরীরে কোনো মাংস ছিলো না। পরে তারা তাকে ফেলে দিয়ে যায়।

কিন্তু যে উদ্দেশ্যে তুমি এবং তোমরা এভাবে নির্বিচারে, বীভৎসভাবে তোমাদের প্রাণ দিলে, রক্ত দিয়ে ঘাস-মাটি ভেজালে, সত্যিই সেই সোনালী দিনগুলো কবে আসবে বলতে পারো হে চির কিশোর-বয়সের ফ্রেমে আটকে যাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাডেট আবদুল্লাহ আল মামুন?

৩য় বিজয়ী (মনজুরুল হক)স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক আবদুল হক”: আবদুল হক ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নৌবাহিনীর একজন নওজোয়ান সদস্য। যুদ্ধ চলাকালীন সময় তাঁকেসহ সামরিক বাহিনীর সকল সদস্যকে বন্দী করে নিয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানে। একদিন আবদুল হকসহ কয়েকজন সেখান থেকে পালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, পাহাড় অতিক্রম করতে গিয়ে তাঁরা গর্তে পড়ে গিয়ে পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়ে যান। নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায় এবং এক পর্যায়ে তাঁদের বুকের উপর ভারী পাথর তুলে নির্মম নির্যাতন করা হয়। পাথরের ভর সহ্য করতে না পেরে এক পর্যায়ে জ্ঞান হারান আবদুল হক।

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার প্রায় আড়াই বছর পর বন্দীচুক্তির মাধ্যমে আবদুল হক রোগাক্রান্ত অবস্থায় দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরার পর স্ত্রীর ইচ্ছা না থাকায় এই রোগাক্রান্ত শরীর নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগ দিতে চাননি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বিশেষ অনুরোধে বাংলাদেশ পুনর্গঠনে আবারো বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে চাকরি শুরু করেন। অর্পিত হয় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার দায়িত্ব এবং তিনি চলে যান যুগোশ্লাভিয়ার যুদ্ধ জাহাজ আনতে। আবদুল হককে পাক হানাদার বাহিনী যে নির্মম নির্যাতনের কারণে ধীরে ধীরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button
Close
Close