যানবাহন

ব্যবহৃত মোটরবাইক কেনার আগে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ চেকলিস্ট

বর্তমানে ব্যবহৃত মোটরবাইক কেনা একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকরী উপায় হতে পারে, বিশেষ করে আপনি যদি নতুন বাইকের উচ্চমূল্যের কারণে সীমিত বাজেটে থাকেন। তবে ব্যবহৃত মোটরবাইক কেনার আগে কিছু বিষয় যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনাকে ভবিষ্যতে বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতি এবং ঝামেলা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। নিচে ব্যবহৃত মোটরবাইক কেনার আগে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ চেকলিস্ট তুলে ধরা হলোঃ

১। বাইকের সাধারণ অবস্থা যাচাই করুন

বাইকের বাইরের অবস্থা

  • বাইকের শরীর, পেইন্ট এবং প্লাস্টিকের অংশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন।
  • বড় ধরণের স্ক্র্যাচ, ডেন্ট বা মরিচা লাগা আছে কি না দেখুন।

ইঞ্জিনের অবস্থা

  • ইঞ্জিন স্টার্ট করতে বেশি সময় লাগে কিনা বা কোনো অস্বাভাবিক শব্দ হয় কি না।
  • বাইক চলার সময় কালো ধোঁয়া বের হয় কি না, তা লক্ষ্য করুন।

চাকার অবস্থা

  • টায়ারের প্রস্থ ও গ্রিপ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন।
  • টায়ারের ঘর্ষণ বেশি হয়ে গেছে কি না তা নিশ্চিত করুন।

২। মিটার ও বৈদ্যুতিক সিস্টেম পরীক্ষা করুন

মিটার এবং গেজ

  • বাইকের ওডোমিটার দেখে নিশ্চিত হন, এটি মোট কত কিলোমিটার চলেছে।
  • স্পিডোমিটার, ট্যাঙ্ক গেজ এবং অন্য গেজগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে কি না, তা পরীক্ষা করুন। 

লাইট এবং হর্ন

  • হেডলাইট, ব্রেকলাইট এবং ইন্ডিকেটর ভালোভাবে কাজ করছে কি না, তা নিশ্চিত হন।
  • হর্নের আওয়াজ স্বাভাবিক থাকা জরুরি।

ব্যাটারি

  • ব্যাটারির তার ও কানেকশন পরীক্ষা করুন।
  • ব্যাটারি বেশি পুরনো হয়ে গেলে সেটা পরিবর্তনের খরচ নিয়ে আগেই ভেবে রাখুন।

৩। কাগজপত্র যাচাই করা

রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (RC)

  • রেজিস্ট্রেশন নম্বর বাইকের নম্বর প্লেটের সাথে মিল আছে কিনা।
  • রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ এবং অন্যান্য তথ্য সঠিক কি না।

ইনস্যুরেন্স

  • ইনস্যুরেন্সের বৈধতা আছে কিনা।
  • তৃতীয় পক্ষের (থার্ড-পার্টি ) ইনস্যুরেন্স আছে কিনা।

ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট

  • ফিটনেস সার্টিফিকেট এবং ট্যাক্স টোকেন আপডেট আছে কিনা।

বিক্রেতার পরিচয় নিশ্চিত করুন

  • বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) যাচাই করুন।
  • বাইকের বিক্রয়ের জন্য কোনও পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি প্রয়োজন হলে তা যাচাই করুন।

৪। টেস্ট ড্রাইভ নিন

ব্রেকিং সিস্টেম পরীক্ষা করুন

  • সামনের ও পিছনের ব্রেক ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা।
  • ব্রেক নেওয়ার সময় বাইক কাঁপছে বা স্লিপ করছে কিনা।

গিয়ার সিস্টেম

  • গিয়ার পরিবর্তনের সময় কোনো বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছে কিনা।
  • গিয়ার সিস্টেম মসৃণ ও ব্যবহারযোগ্য কিনা। 

সাসপেনশন ও কমফোর্ট 

  • সাসপেনশন ভালো অবস্থায় আছে কিনা।
  • দীর্ঘ সময় বাইক চালালে আরামদায়ক অনুভূত হয় কিনা।

৫। মূল্য যাচাই ও দরাদরি করুন

বাজারদর যাচাই করুন

  • অনলাইনে বা লোকাল মার্কেটে একই মডেলের বাইকের দাম যাচাই করুন।
  • বাইকের অতিরিক্ত যন্ত্রাংশের দাম জানুন।

বিক্রেতার সঙ্গে দরাদরি করুন

  • বাইকের বর্তমান অবস্থা এবং প্রয়োজনীয় মেরামত খরচ হিসাব করে দরাদরি করুন।
  • চুক্তি করার আগে বিক্রেতার কাছ থেকে একটি রশিদ সংগ্রহ করুন।

সচেতনতার জন্য কিছু পরামর্শ 

বিষয় কী করবেন?
বাইকের ইতিহাস যাচাই বাইকটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে কি না বা কোনও বড় মেরামত করা হয়েছে কি না তা জিজ্ঞাসা করুন।
ওয়ারেন্টি এবং সার্ভিস বাইকের কোনো ওয়ারেন্টি বা ফ্রি সার্ভিস অফার আছে কি না তা জানুন।
নির্ভরযোগ্য মেকানিকের সাহায্য বাইকের যান্ত্রিক অবস্থা যাচাই করতে একজন পেশাদার মেকানিক নিয়ে যান। 

চেকলিস্টের সারসংক্ষেপ

চেকলিস্টপরীক্ষা করুন
বাইকের অবস্থা ইঞ্জিন, টায়ার, চ্যাসিস 
বৈদ্যুতিক সিস্টেমলাইট, হর্ন, ব্যাটারি 
কাগজপত্ররেজিস্ট্রেশন, ট্যাক্স, ইনস্যুরেন্স
টেস্ট ড্রাইভব্রেক, গিয়ার, সাসপেনশন 
মূল্য ও দরাদরিবাজারদর 

উপসংহার

ব্যবহৃত মোটরবাইক কেনা সাশ্রয়ী হলেও সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করলে এটা ভবিষ্যতে সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই উপরের চেকলিস্ট অনুসরণ করে বাইক কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন। এতে আপনি একটি ভালো মানের বাইক পেতে পারেন, যা দীর্ঘ সময় ধরে আপনার চাহিদা পূরণ করবে। 

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close