ইন্টারভিউতে সফলতা লাভের কৌশল!
পূর্বে চাকরি সংক্রান্ত “পড়ালেখা করার পাশাপাশি কিভাবে চাকরি করবেন” প্রবন্ধটির ধারাবাহিকতায় এই প্রবন্ধের বিষয়বস্তু হতে যাচ্ছে ইন্টারভিউতে সফলতা লাভের কিছু কৌশল। চলুন আলোচনা করা যাক পরবর্তী বিষয়টি, যখন আপনি সম্ভাব্য চাকরিদাতার কাছ থেকে ইন্টারভিউয়ের জন্য আমন্ত্রণ পাবেন। চাকরির আবেদনের পুরো প্রক্রিয়াটির মধ্যে ইন্টারভিউই পারে আপনাকে চাকরি পাবার সম্ভাবনা নিশ্চিত করে দিতে কিংবা ভেস্তে দিতে। ইন্টারভিউতে নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপনার মধ্যে দিয়েই আপনি হয়ে উঠতে পারেন সকল আবেদনকারীর মাঝে অসাধারণ একজন। যেমন ধরুন, আপনি যে কোন পরিস্থিতির জন্যই প্রস্তুত – এটি নিশ্চিত করা আবশ্যক। এখানে আমি সেরা কিছু টিপস সম্পর্কে আলোচনা করব যেগুলো সুনিশ্চিতভাবে আপনাকে সফল হতে সাহায্য করবে।
১. গবেষণা
আমি বিষয়টি সহজভাবেই বলতে চাচ্ছি – আপনি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে এবং আপনার পদ সম্পর্কে আপনি যদি কিছু না জানেন তবে আপনার চাকরি পাবার সম্ভাবনা নেই। ইন্টারভিউতে যাবার পূর্বে আপনি অবশ্যই আপনার সম্ভাব্য পদ এবং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভাল মত খোঁজ খবর জেনে যাবেন। এর অর্থ এই নয় যে আপনাকে তাদের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের লিস্ট মুখস্ত করে যেতে হবে কিংবা প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস মুখস্ত করে যেতে হবে। আপনি জানার চেষ্টা করবেন যে প্রতিষ্ঠানটি কি ধরণের কাজ করে, আপনি যে পদের জন্য আবেদন করেছেন সেই পদের প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো কি কি এবং আপনার দক্ষতাগুলো আপনি কিভাবে সেই পদের সাথে সমন্বয় ঘটাতে পারবেন। গবেষণাই প্রত্যেকটি ইন্টারভিউয়ের ভিত্তি সুতরাং নিশ্চিত হয়ে জেনে নিন আপনি কি ধরণের কাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে যাচ্ছেন।
২. আপনার কথা বলার দক্ষতা বৃদ্ধি করুন
ইন্টারভিউ হচ্ছে দুটি পার্টির মুখোমুখি কথা বলার একটি আলোচনা সভা। সুতরাং ইন্টারভিউতে নিজেকে সুচারুরূপে উপস্থাপন করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যখন আপনি নিজেকে উপস্থাপন করার জন্য কিছু বলবেন অথবা কোন প্রশ্নের উত্তর দিবেন, আপনি অবশ্যই আপনার বক্তব্য সম্পর্কে অবগত থাকবেন। তোতলানো কিংবা আন্দাজের উপর ভিত্তি করে প্রশ্নের উত্তর দিলে তা আপনার সম্পর্কে কোন ইতিবাচক ধারণা দিবে না বরং তা আত্মবিশ্বাসের অভাব বলেই গণ্য করা হবে। একইভাবে আপনি যদি আত্মবিশ্বাস নিয়ে এমন কিছু বলেন যা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক তবে তাতে করে আপনি কেবল হাসির পাত্রই হবেন। ভালভাবে অনুশীলন করার জন্য আপনি যা করতে পারেন তা হল অন্য কোন ব্যক্তির কাছে মক ইন্টারভিউ দিতে পারেন। গুগলে চলে যান, ইন্টারভিউতে সচরাচর কি কি প্রশ্ন করা হয়ে থাকে সেগুলো খুঁজে নিন। এভাবে আপনি আপনার কথা বলার দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারবেন এবং ইন্টারভিউতে কিছু সাধারণ প্রশ্ন সম্পর্কে আপনার ধারণা হয়ে যাবে।
৩. পোশাক দিয়ে সুরুচিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব তুলে ধরুন
আপনি হয়ত অবাক হবেন জেনে যে পোশাক পরিচ্ছদের মাধ্যমে আপনি অবচেতন ভাবে মানুষের মনে কি প্রভাব ফেলতে পারেন। আপনার বাহ্যিক রূপও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা ইন্টারভিউয়াররা গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করেন। প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ এবং সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্য অনুসারে পোশাক পরাটাই মূল বিষয়। বিজনেস ক্যাজুয়াল ধাঁচের পোশাক পরাটা হবে আপনার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। প্রয়োজন বুঝে চুলগুলো পরিপাটি করে কেটে নিন, আপনার দাড়ি কেটে ছোট করে নিন বা ক্লিন শেভ করুন। এমন কোন অতিরিক্ত পোশাক বা এক্সেসরিজ পড়বেন না যা ইন্টারভিয়ারের কাছে দৃষ্টিকটু লাগে।
৪. সময়নিষ্ঠ হন
সবচেয়ে বড় যে ভুল হচ্ছে ইন্টারভিউতে দেরি করে যাওয়া। ইন্টারভিউর বিস্তারিত সম্পর্কে বারবার চেক করে নিন এবং রিমাইন্ডার বা এলার্ম দিয়ে রাখুন যাতে করে ইন্টারভিউয়ের সময় সম্পর্কে আগে থেকেই সতর্ক হতে পারেন। ইন্টারভিউয়ের যায়গাটি সম্পর্কে জেনে নিন, ছক কষে ফেলুন কিভাবে সেখানে পৌঁছাবেন। ইন্টারভিউয়ের সময় খেয়াল রেখে আপনি ট্রাফিক ট্রেন্ডের কথা ভেবে আপনার গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন। শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে ইন্টারভিউর গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি করবেন না যাতে করে নার্ভাস অবস্থায় ইন্টারভিউ দিতে না হয়।
৫. স্মার্ট হন তবে অতিরিক্ত স্মার্ট হবার চেষ্টা করবেন না
এটা বলা সহজ তবে করা কঠিন। ইন্টারভিউর পুরোটা সময়জুড়ে আপনি অবশ্যই মনযোগী থাকবেন। আপনার ইন্টারভিউয়ার কি প্রশ্ন করছেন তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং তৎক্ষণাৎ উত্তর দেবার আগে ভেবে নিন। আপনার ইন্টারভিউয়ারকে এটি দেখাতে হবে যে আপনি তথ্য সংগ্রহ করার, তথ্য প্রক্রিয়া করার এবং একটি অর্থপূর্ণ প্রতিক্রিয়া নিয়ে ফিরে আসার ধৈর্য রাখেন। উদ্ধতপূর্ণ আচরণ বর্জন করাই শ্রেয়। ইন্টারভিউয়ারকে আপনার সমালোচনামূলক চিন্তাধারা বোঝাতে আপনার রসবোধ ব্যবহার করুন, তবে অতিরিক্ত স্মার্ট হয়ে বা দম্ভের সাথে তা বোঝানোর প্রয়োজন নেই। ইন্টারভিউয়ারের যখন প্রশ্ন করা শেষ হয়ে যাবে তখন যদি প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে তবে নিজের কিছু প্রশ্ন করুন। এখানে আপনি আপনার গবেষণাটিকে কাজে লাগাতে পারবেন যে বিষয়ে আমরা কিছুক্ষণ আগে আলোচনা করছিলাম। প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আপনার প্রকৃত কৌতূহল এবং জ্ঞান এসব প্রশ্নের মাধ্যমে ফুটে উঠবে। গুগল থেকে উদাহরণস্বরূপ এ ধরণের কিছু প্রশ্ন আপনি খুঁজে নিতে পারেন তবে একই প্রশ্ন বার বার করবেন না। ইন্টারভিউয়ারকে কোন ধরণের ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকবেন।
৬. ধৈর্য ধরে রাখা
আপনার ইন্তারভিউ গ্রহণ করা হবে, আপনাকে কোন রকম জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না সুতরাং শান্ত থাকুন। আপনার হৃদপিণ্ড হয়ত ইন্টারভিউর সময় দ্রুত গতিতে চলতে থাকবে, কিন্তু তবুও শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। দুশ্চিন্তার লক্ষণগুলো যেমন, অস্থিরতা বা পা নাড়ানো ইত্যাদি করা থেকে বিরত থাকুন। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসবেন না। সোজা হয়ে বসবেন, ঘাড়দুটোকে শিথিল রাখবেন। আপনাকে দেখে যাতে বোঝা না যায় যে আপনি নার্ভাস। হাত ভাজ করে বুকের উপর রাখবেন না। হাত ভাজ করে বুকের উপর রাখা নির্দেশ করে যে আপনি কথা বলতে অনিচ্ছুক।
৭. নিজেকে প্রকাশ করুন
ইন্টারভিউয়ের পুরো বিষয়টিই হল নিজেকে সম্পূর্ণরূপে তুলে ধরা। ইন্টারভিউ আপনার জন্য একটি সুযোগ যার মাধ্যমে আপনি ইন্টারভিউয়ারের কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে পারবেন। সিভি কিংবা রেজিউমিতে আমরা আমাদের অর্জন, দক্ষতা এবং যোগ্যতা সম্পর্কে আলোচনা করে থাকি। ইন্তারভিউতে আমরা সিভি কিংবা রেজিউমিতে উল্লিখিত এই বিষয়গুলোই প্রদর্শন করতে পারি এবং আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলো আলোচনা করতে পারি। ইন্টারভিউয়ারকে বলুন যে কিভাবে আপনার অভিজ্ঞতা আপনাকে বেড়ে উঠতে এবং আরও স্মার্ট হতে সাহায্য করেছে। চাকরির প্রয়োজন অনুসারে আপনার দক্ষতাগুলো মিলিয়ে প্রকাশ করার চেষ্টা করা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে এই পুরো বিষয়টি খুব নিখুঁতভাবে করতে হবে। আপনি যদি কোন কিছু অযৌক্তিকভাবে প্রকাশ করতে থাকেন তবে তা আপনার চাকরি পাবার সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে।
৮. বিনয়ী হন
আপনি যতই দক্ষ হয়ে থাকেন না কেন, আপনি চাকরি পাবেন না যদি কিনা আপনি অশিষ্ট হয়ে থাকেন। সুতরাং বিনয়ী হন। যখন আপনাকে বসতে বলা হবে এবং যখন ইন্টারভিউ শেষে আপনি ফিরে যাবেন তখন ইন্টারভিউয়ারকে ধন্যবাদ দিন। আরেকটি আকর্ষণীয় আচরণ হল ইন্টারভিউ শেষে ইন্টারভিউয়ারকে একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠানো। বার্তার ভাষা হবে শুদ্ধ এবং এই বার্তার উদ্দেশ্য হবে কেবলমাত্র ধন্যবাদ দেয়া। এই বার্তায় কোন প্রকার তোষামোদ করার চেষ্টা করবেন না বা এমন আপনার এমন কোন দক্ষতার কথা বলবেন না যা আপনি ইন্টারভিউয়ের সময় বলতে ভুলে গেছেন। এই বার্তাটি হবে আপনার ইন্টারভিউ সম্পর্কে একটি স্বীকৃতিমূলক বানী এবং ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া ইতিবাচকভাবে সম্পন্ন করার একটি প্রয়াস।
৯. আশা ছাড়বেন না
প্রতিটি চাকরির ইন্টারভিউই যে ভাল হবে সে সম্ভাবনা খুবই কম। আপনি যদি ইন্টারভিউতে ক্রমাগত নিষ্ফল হয়ে আশাহত হয়ে থাকেন তবে নিজের মাঝে উদ্দীপনা জাগিয়ে তুলুন। অনেক সময় খুব ভাল আবেদনকারীরাও কঠিন প্রতিযোগিতার কারণে চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন এবং মাঝে মাঝে কোম্পানিগুলো বৈচিত্র্যময় দল গঠনের উদ্দেশ্যে তারতম্য বজায়ে রেখে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিত্বের মানুষ খুঁজেন এবং নিয়োগ দেন। আপনি যদি ইন্টারভিউতে সফল হতে না পেরে আশাহত হয়ে পড়েন তবে তা আপনার ভবিষ্যৎ ইন্টারভিউগুলোর জন্য বিপদজনক। আপনার লক্ষ্য হবে যে, আপনার বিগত অসফলতাগুলো যাতে আপনার ভবিষ্যতের সুযোগগুলোর উপর কোন রকম নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে না পারে। চেষ্টা করতে থাকুন, আপনি অদূর ভবিষ্যতেই আপনার পছন্দ অনুসারে চাকরি পাবেন।