ছোট লোমশ প্রাণীকে পোষা প্রাণী হিসেবে রাখার টিপস!
পোষা প্রাণী রাখা একটি চমৎকার শখ। আপনার সেবা যত্নের মধ্যে থেকে যদি একটি পোষা প্রাণী স্বাস্থ্যবান আর খুশি থাকে তবে তা দেখে যে সন্তুষ্টি আসে তা আসলেই প্রচুর। পোষা প্রাণীর খেলাধুলা, খাওয়া-দাওয়া এবং লাফালাফি দেখা একটি আনন্দের বিষয়। ছোট লোমশ পোষা প্রাণীর সাথে একটি বিশেষ বোনাস চলে আসে – তাদের পশম হাত বোলানো এবং ধরে রাখার বিষয়টিকে আনন্দময় করে তুলে। অধিকাংশ ছোট লোমশ পোষা প্রাণী তাদের মালিকের প্রতি খুবই অনুরক্ত হয় এবং খেলা শিখতে পারে এবং তাদের মালিকের গা ঘেঁষে বসে।
বিশেষ করে বিড়াল এবং খরগোশ হলো চমৎকার গৃহপালিত পোষা প্রানী। এই উভয় প্রাণীই ছোট যা বেশি জায়গা নেয় না, খুব অল্প শব্দ করে, এবং যত্ন নেয়া সহজ। এগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যায়াম অথবা প্রশিক্ষিত করানোর প্রয়োজন হয় না, যদিও খুব বেশি কষ্ট ছাড়াই এদেরকে আকর্ষণীয় কৌশল শেখানো যায়। বিড়াল এবং খরগোশ উভয়কেই ঘেরা জায়গা (খাঁচা)-র মধ্যে রাখা যায়, কিন্তু যেহেতু উভয় প্রজাতিই প্রাকৃতিকভাবে বাসায় পরিচ্ছন্ন থাকে এবং সহজে লিটার-বক্স (মল-মূত্র ত্যাগের বাক্স)-এর বিষয়ে প্রশিক্ষিত করা যায়, তাই বাসাটিকে অবাধ চারণক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করতে সমস্যা নেই। অন্যান্য ছোট লোমশ প্রাণী, যেগুলো পোষা প্রাণী হিসেবে রাখা যায়, সেগুলোর মধ্যে গিনি শূকরছানা, নকুল এবং হরেক রকম ছোট রডেন্ট, যেমন জেরবিল (ইঁদুর জাতীয় প্রাণী) এবং হ্যামস্টার অন্যতম।
বিড়াল
পোষা প্রাণী হিসেবে রাখার জন্য বিড়াল হলো একটি সহজতম ছোট লোমশ প্রাণী। একটি লিটারবক্স ব্যবহার করার প্রশিক্ষণের পর তাদের অল্প যত্নের প্রয়োজন হয়। লম্বা চুলবিশিষ্ট বিড়ালগুলোকে নিয়মিতভাবে ব্রাশ করতে হবে কিন্তু অধিকাংশ বিড়ালই নিজেদেরকে পরিচ্ছন্ন রাখে। তবে অবশ্যই এদেরকে দৈনিক খাওয়াতে হবে। এগুলো হলো মাংসাশী প্রাণী এবং এদের জন্য মাংস অথবা মাছের উপর ভিত্তি করে খাবার দেয়া প্রয়োজন। কিছু বিড়াল খেলনা দিয়ে খেলা উপভোগ করে এবং অন্যরা এদের মালিকের গা ঘেঁষে বসে থাকতে পছন্দ করে। বিড়াল প্রতিদিন লম্বা সময়ের জন্য ঘুমায় এবং উঁচু কোনো জায়গায় বসে থেকে কি ঘটছে তা দেখতে পছন্দ করে। নখগুলো ভালো অবস্থায় রাখতে বিড়ালের একটি আঁচড় কাটার খুঁটির প্রয়োজন হয়। সাথে দেখুন আপনার পোষা বিড়ালকে যেভাবে সুস্থ-সবল রাখবেন।
খরগোশ
খরগোশ লালন-পালনও সহজ। এদেরকে খাঁচার মধ্যে রাখা যায় বা লিটার-বক্সের জন্য প্রশিক্ষিত করা যায় এবং বাসায় ঘোরাঘুরি করার সুযোগ দেয়া যায়। এগুলো নিজেদেরকে পরিচ্ছন্ন রাখবে কিন্তু তাদের নখ কেটে দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এগুলো খড়কুটো, ঘাস এবং শাকসবজি খায়। এদের দাঁত ভালো আকৃতিতে রাখতে চিবোনোর জন্য কাঠের প্রয়োজন হবে। খরগোশ শান্ত এবং ভীত প্রাণী।
পোষা প্রাণী কেনা
বিড়াল এবং খরগোশ উভয়ই বিভিন্ন প্রজাতির এবং বিভিন্ন বর্ণের হয়। সাধারণ বিড়াল প্রজাতিগুলোর মধ্যে রয়েছে চমৎকার দীর্ঘ-চুলবিশিষ্ট পার্সিয়ান, বিদেশী ওরিয়েন্টাল, এবং ছোটচুলের মোটাসোটা ব্রিটিশ। সাধারণ খরগোশ প্রজাতিসমূহের মধ্যে রয়েছে ঝুলানো কানবিশিষ্ট পছন্দশীল ক্ষুদ্রাকৃতির খরগোশ, নিউজিল্যান্ডের বড় সাদা খরগোশ, এবং অ্যাঙ্গোরা নরম খরগোশ।
একটি ছোট লোমশ পোষা প্রাণী ক্রয় করার পূর্বে, প্রাণীর প্রয়োজনসমূহ সম্বন্ধে জানুন এবং নিশ্চিত হোন যে, এদের যত্ন নেয়ার কৌশল আপনি বোঝেন। ক্রয় করার পূর্বে আরও নিশ্চিত হোন যে আপনি প্রাণী রাখতে চান। বিড়াল ২০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে এবং খরগোশ বাঁচতে পারে ১২ বছর। বছর বছর খাওয়ানো এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য খরচ বাড়বে। ছোট মায়াবী বাচ্চার জন্য নতুন বাসা খুঁজে বের করা তুলনামূলক সহজ হলেও, বয়স্ক প্রাণীর ক্ষেত্রে আপনি যদি সেটি আর না রাখতে ইচ্ছুক হোন, তবে তা বিক্রি করা বা এমনকি দূরে সরিয়ে দেয়াও কঠিন হতে পারে।
কেনার পূর্বে, প্রজাতি এবং প্রসবকারী সম্বন্ধে ভালোভাবে খোঁজ নিন। কেনার পূর্বে নিশ্চিত করুন যে প্রাণীটি কত বড় হবে তা আপনি ভালোভাবে জানেন। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর একটি নিউজিল্যান্ড সাদা খরগোশের ওজন প্রায় ১০ পাউন্ড হবে, যা ছোট বাচ্চা থেকে পাঁচ পাউন্ড বড়। আপনি প্রজাতিটির মেজাজ বোঝেন সে বিষয়টিও নিশ্চিত করবেন – উদাহরণ স্বরূপ, সিয়ামেস বিড়াল অনেক বেশি হৈচৈ করে, তাই আপনি যদি একটি শান্ত প্রজাতির বিড়াল চান, তবে শুধুমাত্র সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই সিয়ামেস বিড়াল কিনবেন না।
আপনি একটি স্বাস্থ্যবান প্রাণী কিনছেন তা নিশ্চিত করতে প্রসবকারী সম্বন্ধে ভালোভাবে খোঁজ নিন। একটি নতুন চমৎকার পোষা প্রাণী কিনে বাসায় আনার কয়েকদিন পর অসুস্থ মারা যাওয়ার মতো হতাশার আর কিছুই হতে পারে না। যেকোনো প্রাণীই অসুস্থ হতে পারে, তবে যে প্রাণী শুরুতেই সুস্থ থাকে, সে প্রাণীটির সুস্থভাবে দীর্ঘদিন বাঁচার সম্ভাবনা বেশি। যদি আপনি কোনো প্রাণী বিক্রির বিজ্ঞাপনে সাড়া দেন, তবে একই প্রসবকারী থেকে কিনেছেন এমন কোন ক্রেতার নিকট থেকে কোনো সুপারিশ পান কি না তা দেখে নিন। যদি সম্ভব হয়, তবে প্রাণীটি যেখানে রাখা হয়েছে সেখানকার সুবিধাবলী দেখুন। যদি প্রাণীটি একটি পিউরব্রিড (নিয়ন্ত্রিত প্রজননের মাধ্যমে স্বীকৃত প্রজাতি) হিসেবে বিক্রি হয়, তবে এর সাথে নিবন্ধন পত্র এবং একটি বংশতালিকা থাকা উচিত। চাইলে আপনি সহজেই পছন্দের পোষা প্রাণীটি অনলাইনে কিনতে পারেন!
পোষা প্রাণীটিকে বাসায় নিয়ে আসা
মনে রাখবেন আপনার নতুন পোষা প্রাণীটি বাসায় নিয়ে আসার পর প্রাণীটির এবং আপনার উভয়ের জন্যই মানিয়ে নেয়ার একটি সময় প্রয়োজন হবে। প্রাণীটিকে নতুন বাসার নিয়মকানুন শেখার প্রয়োজন হবে এবং লিটার-বক্স ও অন্য প্রশিক্ষণও প্রয়োজন হতে পারে। প্রাণীটির যত্ন নেয়ার বিষয়ে আপনাকে মানিয়ে নিতে হবে এবং বুঝতে হবে যে প্রথমেই এর আচরণ ঠিকঠাক নাও হতে পারে- আপনারা সকলে একত্রে ভালোভাবে জীবনযাপন করার জন্য এর কিছু প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হবে। নতুন পোষা প্রাণী পাওয়ার পর একটি সপ্তাহ বা তার বেশি কিছু সময়ের জন্য অনেক নতুন মালিকের “ক্রেতার অনুশোচনা”-র অভিজ্ঞতা হয়। কিন্তু মনে রাখবেন এটি স্বাভাবিক, এবং আপনি ও প্রাণীটি একত্রে মানিয়ে নেয়ার জন্য আপনি শুধুমাত্র কাজ করে যান। একে আরও কিছু দিন সময় দিন।
যদি আপনি একটি বাচ্চা প্রাণী ক্রয় করে থাকেন, তবে মনে রাখবেন যে একসময় এটি বড় হবে এবং প্রজননক্ষম হবে। যদি প্রজননের বিষয়ে আপনার পরিকল্পনা না থাকে, তবে একজন পশুচিকিৎসা দ্বারা একে বন্ধ্যা করে নিন। বন্ধ্যা না করা খরগোশ এবং বিড়াল বাসায় কিছু “চিহ্ন” দিতে পারে-যেমন আসবাবপত্রের উপর গন্ধযুক্ত প্রস্রাব ছিটানো। বন্ধ্যা না করা স্ত্রী বিড়াল প্রায়শই গরম হয়ে যাবে, যার মানে হলো কিছুক্ষণ পর পর সবচেয়ে বিরক্তিকর উপায়ে এরা গর্জন এবং আর্তনাদ করবে। বন্ধ্যাকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই আচরণসমুহ থেকে মুক্তি মিলবে।
পোষা প্রাণী বিক্রয়
যদি আপনি সিদ্ধান্ত নেন যে ছোট লোমশ প্রাণীকে পোষা প্রাণী হিসেবে রাখাটি আপনি আসলেই উপভোগ করেন, এবং মানসম্পন্ন বংশতালিকাসমৃদ্ধ নিবন্ধিত প্রাণী কিনে থাকেন, তবে সেগুলোর প্রজননের বিষয়ে চেষ্টা করতে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এটি এমন কোনো প্রচেষ্টা নয় যা হালকাভাবে নেয়া যায়। প্রাণী এবং প্রজাতি সম্বন্ধে আপনাকে অবশ্যই ভালোভাবে বুঝতে হবে। প্রজননের পূর্বে আপনাকে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে আপনি সবগুলো শাবক বিক্রি করতে পারবেন অথবা রাখতে পারবেন। যদি আপনি স্বাস্থ্যবান, মানসম্পন্ন পিউরব্রিডের প্রজনন ঘটান তবে তুলনামূলক সহজেই আপনি শাবকগুলো শুধুমাত্র পোষা প্রাণী বিক্রির বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই সম্ভবত বিক্রি করতে পারবেন। আরও দেখে নিন বাংলাদেশে পোষা-প্রাণী কেনাবেচার টিপস।