জেনে নিন ফিজেট স্পিনার নিয়ে জানা অজানা কথা
যদি আপনি নিয়মিত ইন্টারনেট ব্রাউজিং করে থাকেন তবে এতদিনে নিশ্চয়ই “ফিজেট স্পিনার” নামটি আপনার চেনা হয়ে গেছে। এটা ঠিক কি আর সবাই কেন এটা নিয়ে এত মেতে আছে তা নিশ্চয়ই আপনার জানার কৌতুহল হচ্ছে? আসলে ফিজেট স্পিনার এক ধরণের খেলনা, যার ঠিক মাঝখানটায় একটা বল বেয়ারিং বসানো থাকে। এই বেয়ারিংটার মাঝখানে ধরে স্পিনারটিকে ঘোরানো যায়। এটা ঘোরাতে ঘোরাতে হাতে একটা মজার অনুভূতি হয়, আর এই অনুভূতি থেকেই সমস্ত পাগলামির শুরু!
প্রাথমিকভাবে ফিজেট স্পিনার এডিএইচডি অথবা অটিসমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উদ্বেগ কমানোর জন্য একটি খেলনা হিসেবে বাজারজাত করা হয়েছিলো। এখন বলা হচ্ছে যে এটা যেকোন ব্যক্তির মানসিক চাপ কমানো ও মনযোগ নিয়ন্ত্রণে আনায় সাহায্য করতে পারে। তবে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস যে এই খেলনা মানুষের মনযোগ বিক্ষিপ্ত করে দেয়। তাদের দাবি, স্পিনারটি যে শব্দ করে এবং এগুলোকে যেভাবে ঘোরাতে হয়, সব মিলিয়ে এটি হাতে থাকলে মানুষ তার আসল কাজ থেকে মনযোগ হারিয়ে বসে। আসলে, এডিএইচডি ও অটিসম আক্রান্ত রোগীদের মনযোগ বাড়াতে সাহায্য করে এমন বেশ কিছু খেলনা বা ডিভাইস রয়েছে। সেগুলো চালানোর জন্য শারীরিক ভাবে তুলনামূলক বেশি পেশীশক্তি খরচ করতে হয়, যেখানে ফিজেট স্পিনার কেবল হাতের তিনটা আঙ্গুল হাল্কাভাবে ব্যবহার করেই চালানো সম্ভব। যদিও ফিজেট স্পিনারের প্রভাব সম্পর্কে এখনও তেমন কোন পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করে দেখা হয় নি, তবে বেশ কিছু ব্যক্তির উপর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ার ঘটনাও শোনা যায়। যেহেতু পক্ষে বিপক্ষে দু’দিকেই যথেষ্ট যুক্তি-তর্ক রয়েছে, সুতরাং আরও গবেষণা না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই জিনিসটার সত্যিকার প্রভাব বুঝতে পারবো না।
২০১৭ সালের শুরুর দিকেও এই খেলনাটি নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে কোন মাথাব্যাথাই ছিলো না। ধারণা করা হয়, যুক্তরাজ্যের একটি স্কুলের ক্লাসে এটা নিষিদ্ধ করে দেয়ার ঘটনার পরপরই এটা লক্ষনীয় মাত্রায় জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এরপর থেকে ফিজেট স্পিনার সর্বত্র বিস্ফোরণের মত ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং শত শত মানুষ এটি চালানোর নানা কৌশল শেখানো, এমনকি কার স্পিনার কত জোরে ঘুরতে পারে এ নিয়ে প্রতিযোগিতা করে ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করা শুরু করে। এই নতুন ট্রেন্ডের সবচেয়ে মজার দিকটি হলো, আজকাল মানুষ গৃহস্থালি জিনিসপত্র থেকে শুরু করে প্রতিদিনের ব্যবহার্য সবকিছুকে ফিজেট স্পিনার বানিয়ে ঘোরাচ্ছে, স্মার্টফোন ঘড়ি কিছুই বাদ নেই এই তালিকায়।
উপকারিতা হোক বা উপকারিতার অভাব, যদি আমরা সমস্ত গল্পগুজবকে উপেক্ষা করি, তাহলে ফিজেট স্পিনার আমাদের ছোটবেলার অন্যসব সাধারণ খেলনার মতই। এটি ঘোরে, মজার শব্দ করে, সাথে স্কুলের টিচারদের বিরক্তও করে─মূলত শিশু কিশোরদের জন্য আনন্দ/মজার সংজ্ঞা ঠিক এমনই। যদিও এই ছোটখাটো সংগ্রহে রাখার মত খেলনাটা পারতপক্ষে বেশ নিরীহ, তবে অসাবধানতা বশত ছোট বাচ্চাদের এর বল বেয়ারিং গুলো খুলে ফেলা এবং মুখে নিয়ে গিলে ফেলার মত দুর্ঘটনাও ঘটার সম্ভাবনা থেকেই যায়। সেই সাথে বেশি কর্মদক্ষতার পাশাপাশি আধুনিক ফিজেট স্পিনারের গুনাগুন দ্রুত উন্নত করা সত্ত্বেও, কিছু কিছু খারাপ মানের স্পিনারে বিপজ্জনক পরিমানে শীসার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তাই এর ব্যবহারে যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
হয়ত আর কয়েক মাসের মধ্যে এই স্পিনার-উন্মাদনা পুরোনো হয়ে যাবে, আবার এমনও হতে পারে যে এর জনপ্রিয়তা এখনকার মতই তুঙ্গে থাকবে। এর সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ বা ধারণা আপনাদের হয়ত থাকতে পারে, তবে আমরা বিশ্বাস করি যে এটি খেলনা, আর একে খেলনা হিসেবেই দেখা উচিত। খারাপ মানের স্পিনার বিষক্রিয়া ও বিপত্তির সৃষ্টি করতে পারে; তাই আপনার ফিজেট স্পিনারটি কোন বিশ্বাসযোগ্য মার্কেটপ্লেস থেকেই কেনা ভালো। দিনশেষে এই দারুণ খেলনাটি নিছক আনন্দের জিনিস, তাই বৈজ্ঞানিক যুক্তিতর্কে না গিয়ে বরং এটি নিয়ে মজার মজার কৌশল করার আর আনন্দ নেবার চেষ্টা করুন। 🙂