যেভাবে বেছে নেবেন আপনার পছন্দের টিভি
ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও ল্যাপটপের এই যুগে এসে বাংলাদেশের তরুন প্রজন্ম যেনো টিভি দেখার আনন্দ ভুলেই যেতে বসেছে। এমনকি ঘরের বয়স্ক সদস্যরা পর্যন্ত তাদের কাজ ও বিনোদনের ক্ষেত্রে নিজ নিজ স্মার্ট ডিভাইস আর ইন্টারনেটে মত্ত। তবুও বিশেষ বিশেষ দিনগুলোয় পুরো পরিবার ও বন্ধুদের দলকে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসার যাদুকরী ক্ষমতার জন্য টেলিভিশনের আবেদন যেনো আজও চির অমলিন। আজও বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেলে বিশেষ কিছু অনুষ্ঠান বাংলাদেশের সকল বয়সের মানুষকে আকর্ষণ করে। আর এর সাথে আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ ও অসাধারন ডিসপ্লে যুক্ত হয়ে টেলিভিশন দেখার এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে। এটা এখন শুধু একটি বিনোদনের যাদুবাক্স নয়, বরং একটি স্মার্ট হোম এর সৌন্দর্য ও আধুনিকীকরণে এক দারুণ সংযোগ।
আপনি যদি আপনার বাসার জন্য নতুন একটি টিভি কেনার কথা ভেবে থাকেন, হোক তা কোন শোরুম থেকে কিংবা কোন বিশ্বস্ত অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেমন bikroy.com, তবে এটাই সেরা সময়। আর যদি আপনি আপনার পরিবারের জন্য কোন টিভিটি ভালো হবে এটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগে থাকেন, তাহলে আপনি সঠিক যায়গাতেই এসেছেন! আজ আমরা টিভি কেনার ব্যাপারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করবো এবং কোন বৈশিষ্ট্যের জন্য কোন টিভিটি সবচেয়ে ভালো সেটাও উল্লেখ করবো। তবে চলুন শুরু করা যাক!
টিভি কেনার কিছু কালজয়ী নিয়ম
সেরা দামের জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষা করুন
আপনি যদি প্রযুক্তির অন্ধ ভক্ত না হয়ে থাকেন বা যেকোনো ডিভাইস মার্কেটে আসা মাত্রই তা কিনে ফেলার মত পাগলামির অভ্যাস না থেকে থাকে, তবে একই ডিভাইস কিছুটা সহনীয় দামে কেনার জন্য কয়েক মাস অপেক্ষা করা ভালো। বাংলাদেশে ঈদ বা বিশেষ সেল চলার সময়গুলোর জন্য অপেক্ষা করা উচিত, কেননা এই সময় কোম্পানিগুলো বিভিন্ন রকম ছাড় ও ফ্রি আনুষঙ্গিক ডিভাইসের অফার দিয়ে থাকে। এতে করে আপনি শুধু যে সেরা দামে পণ্যটি কিনতে পারছেন তা নয়, একই সাথে বিভিন্ন আনুষঙ্গিক ডিভাইস ফ্রি তে পাচ্ছেন, যা হয়ত লেটেস্ট পণ্যের সাথে কিনতে গেলে অতিরিক্ত খরচ হতে পারতো। এই পয়েন্ট এর কথা মাথায় রেখে এইচডি, ইউএইচডি বা ফোর-কে টিভি কেনার এটাই সবচেয়ে ভালো সময়, কেননা এখন বিভিন্ন শোরুমে বা অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোয় দারুণ সব অফার চলছে।
বেশিরভাগ স্পেসিফিকেশনই তেমন কাজের না
ঘটা করে প্রচার করা ফিচার ও স্পেসিফিকেশনসমূহ যা আপনি বিজ্ঞাপনে দেখেন কিংবা হাতে ধরিয়ে দেয়া স্পেসিফিকেশন শীটগুলো ইচ্ছা করেই আপনাকে দেখানো হয়, যাতে আপনি ঘুরেফিরে সবচেয়ে দামী পণ্যটি কেনার কথা ভাবেন। যেই ফিচার বা স্পেসিফিকেশন আপনার জানা দরকার সেগুলো ওজন/মাত্রা ও ইনপুট বিভাগে উল্লেখ করা থাকে, অর্থাৎ টিভির আকার আকৃতি, ডিসপ্লে এর সাইজ, কি কি ডিভাইস বা প্রযুক্তি এর সাথে ব্যবহার করা যাবে ইত্যাদি। আর প্রধানত যেই জিনিসগুলো আপনার ভালোভাবে খেয়াল করা দরকার তা হলো স্ক্রিন বা ডিসপ্লে এর মাপ ও পিকচার কোয়ালিটি। এই বিষয়ে আমরা প্রতিবেদনে কিছুক্ষন পর আলোচনা করবো।
স্ক্রিনের সাইজ বিশাল একটা ব্যাপার
আপনি হয়ত ভাবছেন যে যত বড় স্ক্রিন, দেখতে তত বেশি ভালো লাগবে। এটা আসলেই অনেকটাই সত্যি, কিন্তু অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্তসাপেক্ষে। বড় স্ক্রিনে আপনি সেরা সব ইউএইচডি বা ফোর-কে চ্যানেল দেখতে পারবেন। একটি বড় স্ক্রিন মানে ঘরের প্রতিটি কোনা থেকে ভালো ভিউইং এঙ্গেল বা দেখার স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া। আপনি চাইলেই আপনার পুরো পরিবার বা বন্ধুদের দলকে একই রুমে নিয়ে একসাথে বসে পছন্দের মুভি কিংবা টিভি অনুষ্ঠান দেখতে পারবেন। আর বড় স্ক্রিনে খেলা দেখার আনন্দের সাথে কোনকিছুর তুলনা হয় না। কিন্তু আপনার এটাও মাথায় রাখতে হবে যে সবচেয়ে স্লিম টেলিভিশন সেটটিরও কিছুটা হাওয়া-বাতাস চলাচল প্রয়োজন। টিভির প্রত্যেক পাশে অন্তত ১ থেকে ২ ইঞ্চি যায়গা ফাঁকা রাখতে হয় গরম বাতাস বের হয়ে যাওয়া ও ঠাণ্ডা বাতাসের মুক্ত চলাচলের জন্য।
আপনার রুমের সাইজও একটা বড় ব্যাপার। যদি আপনার রুম যথেষ্ট চওড়া না হয় তখন আপনি চাইলেও একটি বড় টিভি কিনতে পারবেন না, কেননা এটি দেখতে যেমন বেখাপ্পা লাগবে তেমনই খুব বেশি কাছে বসে টিভি দেখতেও ভালো লাগবে না বা চোখে সমস্যা হতে পারে। অতএব আপনার রুমের সাইজ এবং অভ্যন্তরীণ আসবাবপত্রের বিন্যাসকে মাথায় রেখে তবেই সঠিক মাপের একটি ডিসপ্লে বাছাই করতে পারবেন।
এখন স্মার্ট টিভির যুগ
আজকের স্মার্টফোনের যুগে একটি সাধারণ টিভি খুব বেশিক্ষন মানুষের আকর্ষণ ধরে রাখতে পারে না। ঠিক সেই জন্যই স্মার্ট টিভির জনপ্রিয়তা এত বেশি। আপনি আপনার নতুন একটি স্মার্ট টিভির সাথে উপভোগ করতে পারবেন আপনার পছন্দের নেটফ্লিক্স বা আইফ্লিক্স অনুষ্ঠান ও মুভি, কিংবা ইউটিউবে যেয়ে আপনার পছন্দের ভিডিও চ্যানেল বা গানের প্লে-লিস্ট ঘুরে আসতে পারবেন, অথবা আপনার বন্ধুদের সাথে বিশেষ কিছু উপভোগ করতে পারবেন যেমন থ্রিডি মুভি, সবটাই আপনার ফোনের চেয়েও বড় অসাধারণ এক ডিসপ্লে তে।
এই সময়ে স্মার্ট টিভির সাথে দারুণ সব নিয়ন্ত্রনের ডিভাইস ও লুকায়িত তারের সুন্দর সব ডিজাইনে টেলিভিশন সেট পাওয়া যাচ্ছে। যখনই একটি রিমোট কন্ট্রোল কিনবেন অবশ্যই তা যেনো ইউনিভার্সাল বা সার্বজনীন হয়, আর এমন একটি সাইজের হয় যা আপনি নিজের হাতে ধরে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। আবার চাইলে আপনি একটি সাধারণ এইচডি বা ইউএইচডি টিভিকে স্বল্পমূল্যের এইচডিএমআই বক্স বা স্টিক ব্যবহার করে সহজেই স্মার্ট টিভিতে রুপান্তর করে নিতে পারবেন। অতএব একটি নতুন টিভি কেনার সিদ্ধান্ত নেবার সময় আপনার বাজেটের কথা ভেবে নিন ও সেই বাজেটে কিভাবে সব ভালো ভালো জিনিস লুফে নিতে পারেন সেভাবে চিন্তা করে দেখুন। একজন স্মার্ট মানুষ তার প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোন কিছুকে তার মত করে স্মার্ট বানিয়ে নিতে পারে।
পিকচার কোয়ালিটির হাতেখড়ি
পিকচার কোয়ালিটি যেকোন ফ্ল্যাট-স্ক্রিন টিভি কেনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য। প্রায় প্রতিটি টিভি দর্শকেরই পিকচার কোয়ালিটির প্রতি আকর্ষণ রয়েছে, আপনার কাছে যদি এটি তেমন প্রয়োজনীয় না হয়ে থাকে তাহলে আপনি চাইলেই কম দামে বেশ বড় ডিসপ্লের একটি টিভি কিনতে পারেন, তবে তুলনামূলক একটি ছোট স্ক্রিনের টিভিও আপনাকে যেই দারুণ দেখার অভিজ্ঞতা দিতে পারতো তা আপনি মিস করে ফেলবেন।
পিকচার কোয়ালিটি শুধুমাত্র পিক্সেল গুনে বা স্পেসিফিকেশন শীট পড়ে বোঝার মত সহজ নয়। আপনার উচিত সবসময় ভালোমানের রিভিউ বা এই প্রতিবেদনটির মত কোনো গাইডলাইন পড়ে দেখা, তবেই ভালো ডিসপ্লে সম্পর্কে আপনার কিছু ধারণা হতে পারে। এক্সপার্টদের রিভিউ পড়ে ও কোন শো-রুম বা মার্কেটপ্লেসে ভালো মানের একটি টিভি সামনাসামনি দেখার পর আপনি অবশ্যই পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন। যত ভালো পড়াশুনা আপনি টিভি কেনার আগে করবেন, ততই ভালো মানের টিভির পেছনে বেশি খরচ করতে চাইবেন। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে এমন কিছু পয়েন্ট তুলে ধরেছি যা আপনার কাজে আসতে পারে :
- বাজারে বর্তমানে সবচেয়ে ভালো পিকচার কোয়ালিটির টিভি হলো ওএলইডি টিভি, কিন্তু এই টিভিগুলো বেশ উচ্চ দামের। প্রায় প্রতিটি ফ্ল্যাট-স্ক্রিন টিভিতেই এলইডি বা এলসিডি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা ওএলইডির চেয়ে অনেক আলাদা।
- ভালো ছবির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো এর কনট্রাস্ট। কনট্রাস্ট মানে হলো পার্থক্য, যত বেশি কনট্রাস্ট হবে বিভিন্ন রঙের ব্যবধান তত স্পষ্ট করে বোঝা যাবে ও ছবি বা ভিডিও দেখতে দারুণ লাগবে। কালো রঙের একটি গাঢ় শেড তৈরি করতে পারা বা দেখাতে পারার ক্ষমতা থেকেই ছবির কনট্রাস্ট বেশি পাওয়া যায়।
- কালার/স্যাচুরেশন ব্যাপারটা সরাসরি কনট্রাস্টের দ্বারা প্রভাবিত হয়। এটি যেকোনো ভালো ডিসপ্লের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য। এরপর প্রয়োজন কালারের সঠিকতা বা কালার অ্যাকুরেসি।
- একটি উজ্জ্বল রুমে ম্যাট বা চকচকে প্রলেপবিহীন স্ক্রিন সবমিলিয়ে সবচেয়ে ভালো কাজ করে, কেননা এরা স্ক্রিনের ওপর কোন রকম প্রতিফলন ঘটতে দেয় না। গ্লসি বা চকচকে স্ক্রিন কালো রঙের মাত্রাকে ভালভাবে সংরক্ষণ করতে পারে, কিন্তু কোনভাবেই প্রতিফলন ঠেকাতে পারে না, অতএব এ ধরণের স্ক্রিন অন্ধকার ঘরে ব্যবহার করা ভালো।
- কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রেসল্যুশন, কালার গ্যামেট বা স্বরগ্রাম, ভিডিও প্রসেসিং, সর্বোচ্চ লাইট আউটপুট এবং ডিসপ্লে রেসল্যুশন (১০৮০পিক্সেল থেকে ফোর-কে পর্যন্ত) উল্লেখযোগ্য। সিদ্ধান্তে যাবার আগে আপনার লিস্টে থাকা প্রতিটি টিভির মডেলগুলো নিয়ে যত রিভিউ আছে সব দেখে নিন।
- একটি ভালো টিভিতে খারাপ পিকচার সেটিংস একটি সাধারণ টিভিতে ভালো ক্রমাঙ্কের পিকচার সেটিংসের চেয়েও খারাপ পারফরমেন্স দেয়। অতএব শুধু নাম শুনে উত্তেজিত না হয়ে বুঝে শুনে তারপর টিভি কিনুন।
২০১৮ এ কোন বৈশিষ্ট্যের জন্য কোন টিভি সেরা
কোন টিভিতেই একনাগাড়ে সবকিছু নেই। কিছু টিভি ভালো পিকচার কোয়ালিটির জন্য সেরা আবার কিছু টিভিতে দারুণ সব ফিচারের ছড়াছড়ি। অতএব যেমনটা কথা দিয়েছিলাম, চলুন আমরা দেখে নিই ভালোর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য টিভির নাম :
- যেকোনো দামে সেরা পিকচার কোয়ালিটি : এলজি সি৮ সিরিজের ওএলইডি টিভি
- সেরা দামের ওএলইডি টিভি : এলজি বি৭এ সিরিজের ওএলইডি টিভি
- ওএলইডি টিভির সেরা বিকল্প(উচ্চদামের) : স্যামসাং কিউ৮ সিরিজ
- বাজেটের মধ্যে সেরা পিকচার কোয়ালিটি (২০১৮-র এই অবধি) : টিসিএল ৬ সিরিজ
- সেরা বেসিক ছোট টিভি(৪০ইঞ্চি ও এর কম) : টিসিএল এস৩০৫ সিরিজ
- সেরা বেসিক মাঝারি টিভি (৪৩ থেকে ৫৫ ইঞ্চি): টিসিএল এস৪০৫ সিরিজ
প্রতিবেদনটি শেষ করার সাথে সাথে আমরা বলতে পারি যে আপনার জন্য কোন টিভিটি সেরা সেটি আপনার কি প্রয়োজন ও সেই প্রয়োজনের খাতিরে আপনি কতটুকু খরচ করতে পারবেন তার উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। কিন্তু যেকোনো শো-রুমে যাওয়ার আগে একটু গবেষণা করে নেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ। বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেমন bikroy.com-এ আপনার বাজেটের মধ্যে টিভি ও টিভির আনুষঙ্গিক এক্সেসরিজের বিশাল কালেকশন রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু নতুন ও কিছু ব্যবহৃত, এরই মাঝে সেরা জিনিসটি খুঁজে বের করা ও আপনার নতুন টিভিটি কিনে ঘরে আনতে পারাটা পুরোটাই আপনার উপর নির্ভরশীল। শপিং হোক আনন্দের!