লিফান কেপিআর ১৬৫আর এফআই মোটরবাইক রিভিউ
আসসালামু আলাইকুম, আশা করি সবাই ভালো আছেন।
আমি মাসুদ, একজন শৌখিন মোটরসাইকেল আরোহী, ইতোমধ্যে আমি মোটরসাইকেলে বাংলাদেশের অনেক দুর্গম স্থান ভ্রমণ করেছি, বিশেষত আমি পাহড়ে মোটরসাইকেল চালাতে খুবই পছন্দ করি।
আজ আমি কথা বলবো লিফান কেপিআর ১৬৫আর এফআই বাইকটি নিয়ে, এই বাইকটি আমি ২০০০০+ কিমি রাইড করেছি, আশা করি সবাই আমার এই অভিজ্ঞতাকে উপভোগ করবেন।
মূল স্পেসিফিকেশন
- ইঞ্জিন টাইপ – সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ৪ স্ট্রোক
- ডিসপ্লেসমেন্ট – ১৬৫ সিসি
- সর্বোচ্চ পাওয়ার – ১৭ বিএইচপি @ ৮,০০০ আরপিএম
- সর্বোচ্চ টর্ক/ ঘূর্ণন – ১৭ নিউটন-মিটার (N-m)
- সর্বোচ্চ গতি – ১৫০ কিমি
- মাইলেজ – ৪৫ কি.মি. প্রতি লিটার
- মাইলেজ (ব্যবহারকারী) – ৪০ কি.মি. প্রতি লিটার
- কার্বোরেটর – ইএফআই
- কমপ্রেশন রেশিও – ১১.৪ঃ১
- কুলিং – লিকুইড কুলিং
- স্টার্ট করার পদ্ধতি – ইলেকট্রিক স্টার্ট
- গিয়ার – ৬
- ফ্রন্ট সাসপেনশন – টেলেস্কোপিক
- ব্যাক সাসপেনশন – মনো
- ব্রেক করার পদ্ধতি (ফ্রন্ট/ব্যাক) – হাইড্রোলিক সিঙ্গেল ডিস্ক
ডিজাইন
প্রজেকশন হেডল্যাম্পসহ আকর্ষণীয় এই ১৬৫ সিসি সেগমেন্ট এর স্পোর্টস বাইকটি সহজেই যে কারো নজর কাড়বে, এতে বসার ভঙ্গী অত্যন্ত আরামদায়ক, সর্বোচ্চ ৫.৮” উচ্চতার যে কেউ সহজেই আরামদায়ক রাইডের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন।
কোয়ালিটি
লিফানের কেপিআর মোটরবাইকটি অত্যন্ত মজবুত উপকরণ দিয়ে বানানো হয়েছে, ছোটখাটো দুর্ঘটনায় বডি কিটগুলো সম্পূর্ন অক্ষত থেকে যায়, অবশ্য তার জন্য ওজনও কিছুটা বেড়ে গিয়েছে।
পাওয়ার
১৬৫সিসি সেগমেন্ট এ সবচেয়ে এগ্রেসিভ ইঞ্জিন হলো ১৬৫ এফআই এর ইঞ্জিন যেটা কিনা ১৭ নিউটন মিটার টর্ক এবং ১৭ এইচপি শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম আর এটা সহজেই আপনার হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিতে পারে। আমি একা এটার সর্বোচ্চ গতি ১৩০ কিমি পেয়েছি তাও ফুল আরপিএম ব্যবহার না করেই, যদিও আমি টপ স্পিডে চালাতে পছন্দ করি না, আমার কাছে নিরাপত্তার প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি তাছাড়া আমি নিয়ম-কানুন মেনে বাইক চালাতে পছন্দ করি।
কন্ট্রোল
সামনে ৯০/১৭ মাপের টায়ারের সাথে সামনে ৩০০মিমি ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনে ১২/১৭ মাপের টায়ারের সাথে ২২০মিমি এর ডিস্ক ব্রেকে আপনি ভাল ব্রেকিং অভিজ্ঞতা পাবেন, আমি আমার বেশ কয়েকটি ভ্রমণে পাহাড়, সমতল, অফরোড, ভাঙা রাস্তা,পানিতে ডুবন্ত রাস্তায় আল্লাহর রহমতে সবজায়গায়ই চালানোর অভিজ্ঞতা পেয়েছি কিন্তু সত্যি কথা বলতে একটি বারের জন্যেও বাইকটি আমাকে বিপদে ফেলেনি, আমি যখন যেভাবে চেয়েছি তখন ঠিক সেভাবেই আমার এই বাইকটিকে পেয়েছি, আমাকে কখনোই নিরাশ করেনি এই ওয়াইল্ড বিস্ট টি। ১০০+ কিমি/ঘন্টা গতিতে এর স্ট্যাবিলিটি অত্যন্ত চমৎকার যা যে কাউকে মোহে ফেলে দিবে।
তেল খরচ
১৬.৬ লিটার তেলের ট্যাংক টি অনেক উপকারী, আমি আমার ২০০০০+ কিমি রাইডে শহরের সড়কে সর্বনিন্ম ৩২ থেকে সর্বোচ্চ ৩৮ কিমি/লি মাইলেজ এবং মহাসড়কে সর্বনিম্ন ৪২ থেকে ৪৭ পর্যন্ত কিমি/লি মাইলেজ পেয়েছি।
খুচরা পার্টস
খুচরা পার্টসগুলো আমি সবসময়ই হাতের কাছেই পেয়েছি, রাসেল ইন্ডাস্ট্রিস এর সার্ভিস সেন্টারে যেকোনো পার্টস এবং বংশালে কিছু কিছু খুচরা পার্টস পেয়েছি যেগুলো খুবই সাশ্রয়ী এবং আশা করি আপনিও পেয়ে যাবেন।
উপরের লিখাগুলো সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে লেখা, আমার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে আপনার নাও মিলতে পারে, তেলের মাইলেজ অবশ্যই রাইডিং স্টাইলের উপর নির্ভর করে। আমি ২০০০০+ কিমি এর মধ্যে ৩ বার সামনের ব্রেক প্যাড, ১ বার ফ্রন্ট টায়ার এবং চেইন স্পোকেট, ১ বার এয়ার ফিল্টার, ৩ বার ক্লাচ কেবল পাল্টাতে হয়েছে।
আমার অনুরোধ থাকবে সবাই সাবধানে এবং দায়িত্ববোধ নিয়ে রাইড করবেন আর অবশ্যই সবসময় রাইডার এবং পিলিয়নের হেলমেট ব্যবহার করবেন।