মৌসুমি আমে প্রয়োজনীয় পুষ্টিচাহিদা
পাকা আমে কামড় বসানোর মতো সুখ আর কিছুতেই নেই।
মিষ্টি, রসালো, এবং নানান জাতের এসব আম শুধু খাওয়াই নয়, এসব দিয়ে করা যেতে পারে বিভিন্ন প্রকার খাবার পদ। যেকোনো কিছুতেই আমের জুড়ি মেলা ভার!
আম সাধারণত এশিয়ান এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশগুলোর একটি অমূল্য সম্পদ। এমনকি ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে আম ভারত, পাকিস্থান, এবং ফিলিপাইন এই তিনটি দেশের জাতীয় ফল!
সারাদেশে এত পরিমাণ আম বাগান থাকার দরুন আম যে আমাদের জাতীয় গাছ হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে আম বিক্রি করার জন্য ফলের বাজার কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এছাড়াও অনেকে ফ্রেশ এবং তাজা আম ঘরে বসে পাওয়ার জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে বেছে নিচ্ছেন।
আম শুধুমাত্র সুস্বাদুই নয়, বরং এতে রয়েছে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ এবং ফাইবারও। আপনি যদি খাবার তালিকায় ডায়েটের ভয়ে আম না রাখেন, তাহলে আম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আমাদের লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
আমঃ গ্রীষ্মের সুপারফ্রুট!
অনেকেই ভাবেন যে আমে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট ও সুগার থাকে, যা ওজন বাড়ানো সহ নানা শারীরিক জটিলতার কারণ। তবে এটি পুরোপুরি ভুল একটি ধারণা।
অনেক পুষ্টিবিদই এতে একমত হবেন যে প্রতিদিন একটি আম আপনাকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে যা এই গ্রীষ্মে আপনার শরীরকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। অতিরিক্ত সবকিছুই খারাপ, তবে প্রতিদিন স্বাভাবিক পরিমাণে খেলে পাওয়া যাবে আমের পুষ্টিগুণ।
আমের নানা পুষ্টিগুণ
- ক্যালোরিঃ ২০১
- মোট ফ্যাটঃ ১.৩ গ্রাম
- স্যাচুরেটেড ফ্যাটঃ ০.৩ গ্রাম
- প্রোটিনঃ ২.৮ গ্রাম
- কোলেস্টেরলঃ ০ মিলিগ্রাম
- সোডিয়ামঃ ৩.৪ মিলিগ্রাম
- পটাসিয়ামঃ ৫৬৪.৫ মিলিগ্রাম
- মোট কার্বোহাইড্রেটঃ ৫০ গ্রাম
- খাদ্যতালিকাগত ফাইবারঃ ৫ গ্রাম
- চিনিঃ ৪৬ গ্রাম
দেখাই যাচ্ছে, আমে ফ্যাটের পরিমাণ খুব কম! যদিও চিনি তুলনামূলকভাবে বেশি, তবে এটি প্রাকৃতিক এবং রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিশোধিত চিনি তুলনায় অনেক ভালো। সাধারণত ফলের মধ্যে থাকা এসব প্রাকৃতিক গ্লুকোজ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কারণ এটি সারা দিন শরীরে স্থিতিশীল এনার্জি সরবরাহ করে এবং আপনার ডাইজেশন নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে।
আমে থাকা প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল
আম বিভিন্ন ধরণের খনিজ এবং ভিটামিনের জন্য একটি দুর্দান্ত উৎস। আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি – যা রোগ থেকে দ্রুত নিরাময় পেতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও আমে থাকা ভিটামিন কে হাড় গঠনে সাহায্য করে এবং দ্রুত ক্ষতস্থান নিরাময়ে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। যাদের রক্তস্বল্পতা রয়েছে ভিটামিন কে তাদের জন্যেও ভালো – যেটি আমাদের দেশে মহিলাদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়।
বিটা-ক্যারোটিন হলো আমের মধ্যে থাকা একটি রঞ্জক পদার্থ যার কারণে আমের ভেতরটা উজ্জ্বল কমলা রঙ দেখায়। এটি মূলত একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং সম্ভাব্য ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়াও আমে বিদ্যমান অন্যান্য ধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে এবং কিডনির কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক।
আমে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম হার্টের জন্য ভালো! এসব উপাদান রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি আমে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট রয়েছে – যা মূলত আমাদের অস্থি মজ্জাতে লোহিত এবং শ্বেত রক্তকণিকা তৈরির জন্য ও কার্বোহাইড্রেটকে শক্তিতে রূপান্তর করার জন্য প্রয়োজনীয় এক ধরণের ভিটামিন বি।
কীভাবে বেছে নিবেন সেরা আম?
অনলাইন হোক কিংবা মুদি দোকান যেখান থকেই আম কিনুন না কেন, পাকা আম খুঁজে নেওয়া বেশ সহজ! শুধু নজর দিতে হবে আমের গন্ধ, হাতে ধরার পড় আমের অবস্থা, এবং আমটি দেখতে কেমন তার উপর।
পাকা আমের গন্ধ কেমন?
পাকা আমের মধ্যে একধরণের মিষ্টি ও গাছপাকা ফলের সৌরভ থাকে যা আপনার মুখে জল এনে দেবে। অন্যদিকে কাঁচা বা সবুজ আমের গন্ধ অনেক তীক্ষ্ণ এবং কিছুটা টক হয়। আবার একটি পাকা আম থেকে পাওয়া টক গন্ধ পাওয়ার কারণ হতে পারে যে এটি খারাপ হয়ে গেছে অর্থাৎ সেটি আর খাওয়ার যোগ্য নেই। আম থেকে রাসায়নিক কোনো গন্ধ পেলে আগেই সতর্ক হয়ে যাওয়া উচিত, কারণ এর অর্থ হতে পারে এখানে রাসায়নিক বা কীটনাশক পদার্থ ব্যবহৃত হয়েছে – এসব থেকে মুক্তি পেতে আম ভালো করে ধুয়ে খেতে হবে অথবা কেনার সময় এড়িয়ে যেতে হবে।
পাকা আম হাতে নিলে কেমন লাগে?
পাকা আম নরম হলেও উপরের অংশে কিছুটা শক্ত হওয়া উচিত। আমের পরিপক্কতা যাচাই করতে আপনার হাতে সেটি ধরুন এবং আলতো করে চেপে দেখুন। যদি এটি বেশ শক্ত মনে হয়, তাহলে এটি এখনও পাকেনি অর্থাৎ পাকার জন্য আরও সময় প্রয়োজন। আবার আমটি যদি খুব নরম মনে হয় এবং আমের খোসা ঢিলা বা বেশ কুঁচকানো বলে মনে হয়, তাহলে হয়তো এটি অতিরিক্ত পেকে গেছে এবং দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে – এরকম আম না কেনাই ভালো।
পাকা আম দেখতে কেমন হয়?
একটি আম কতটা পাকা তা সেটির আমের খোসা দেখে বলা মুশকিল। আমাদের দেশের বেশিরভাগ আম পাকলেও সবুজ থাকে, তাই সেটি পেকেছে কিনা তা হাত দিয়ে ধরে পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো।
আমের উপরিভাগের খোসার কয়েকটি ব্যাপার বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। কিছু কালো এবং বাদামী দাগ থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু ক্ষত বা কুঁচকে যাওয়া খোসা হলে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে আমটি নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও ফুটো বা চামড়া উঠে গেছে এমন আম এড়িয়ে যেতে হবে, কারণ এগুলো খাওয়া অনিরাপদ।
বাংলাদেশে আম চাষের উপযুক্ত সময়
বাংলাদেশে অনেক প্রজাতির আম পাওয়া যায় এবং প্রতিটি জাতের আম-ই ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পাকে। এখানে আমরা জাত ভেদে বিভিন্ন প্রকার আমের বাজার আসার সম্ভাব্য সময় তুলে ধরেছি, যাতে কোনো ভাবেই তাজা আমের এই স্বাদ মিস না হয়ে যায়ঃ
মাস | আমের জাত | বাজারে আসার সম্ভাব্য সময় |
গোবিন্দভোগ | ১৫ মে থেকে ৩০ মে | |
মে | গোপালভোগ | ২৫ মে থেকে ১০ জুন |
গুলাবখাস | ২৭ মে থেকে ১০ জুন | |
রানিপছন্দ | ১ জুন থেকে ১৫ জুন | |
হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাত | ৭ জুন থেকে ৩০ জুন | |
জুন | বোগলাগুটি | ১২ জুন থেকে ৭ জুলাই |
ল্যাংড়া | ১৫ জুন থেকে ১৫ জুলাই | |
লক্ষণভোগ | ১৫ জুন থেকে ১৫ জুলাই | |
হাঁড়িভাঙ্গা | ১৫ জুন থেকে ১৫ জুলাই | |
আম্রপালি | ২৮ জুন থেকে ২৫ জুলাই | |
মল্লিকা | ১ জুলাই থেকে ২০ জুলাই | |
জুলাই | সূর্যপুরী | ৫ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট |
ফজলি | ৭ জুলাই থেকে ৭ সেপ্টেম্বর | |
আশ্বিনা | ২৫ জুলাই থেকে ২০ সেপ্টেম্বর |
অনলাইন থেকে আম কিনুন Bikroy থেকে
আম নিঃসন্দেহে সারা পৃথিবী জুড়ে অন্যতম সেরা একটি ফল। গরমের সময় আমের মিষ্টতা আর প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের কোনো বিকল্প নেই।
আম দীর্ঘদিন ভালো রাখার জন্য বর্তমানে বাজারে রাসায়নিক যুক্ত আম বিক্রি হচ্ছে অহরহ। আর ঠিক এজন্যেই অনেকেই চাইছেন সরাসরি বাগান থেকে ফ্রেশ এবং তাজা আম যাতে তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়।
আপনিও কি ফ্রেশ আম খুঁজছেন? Bikroy হতে পারে আপনার সঠিক গন্তব্য, সারা দেশ থেকে হাজারো আম বিক্রেতার লিস্টিং রয়েছে এখানে। সঠিক দামে আপনার পছন্দের আমের সেরা ডিলগুলো বেছে নিন।
Mangoes for Sale in Dhaka | Mangoes for Sale in Chattogram |
Mangoes for Sale in Dhaka Division | Mangoes for Sale in Khulna Division |
Mangoes for Sale in Sylhet | Mangoes for Sale in Chattogram Division |