মধ্যমমানের ডিভাইস বনাম ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন
বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখেছি, স্মার্টফোনের বাজারে তার মানের জন্য যে প্রতিবন্ধকতা ছিল তা অতিক্রম করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে এটি অ্যান্ড্রয়েড জগতে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। যেখানে নতুন বছর মানেই বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট এবং কার্যক্ষমতা সম্পন্ন নির্দিষ্ট ডিভাইসের আচমকা উদ্ভাবন। ২০১৫ সালেও আমরা এর কিছু দারুন ট্রেন্ড লক্ষ্য করেছি। বিশেষ করে, অধিক ব্যয়বহুল ফ্ল্যাগশিপের স্মার্টফোনের তুলনায় মিডরেইঞ্জ (মধ্যম মানের) স্মার্টফোনের ফিচারের ক্ষেত্রে কিছুটা আপোষ করা হয়েছে। তাছাড়া গত বছর আমরা বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্মার্টফোন দেখেছি যা স্মার্টফোনের বাজারকে খুব বেশি প্রভাবিত না করলেও সার্বিকভাবে এগুলো চমৎকার ফিচার এবং কার্যক্ষমতা সম্পন্ন। তাই এখন আসল প্রশ্ন হলো, স্মার্টফোনের কোন অপশনটি ২০১৬ সালে গ্রাহকদের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে?
বৈশিষ্ট্যসমূহ:
আপনি যদি সম্প্রতি মধ্যম স্তরের স্মার্টফোনগুলোর পর্যালোচনা দেখে থাকেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় খেয়াল করছেন এক জেনারেশন আগে থেকেই ফ্ল্যাগশিপের বৈশিষ্ট্য ও ফিচারগুলো যুক্ত ছিল। এই ডিভাইসটিতে রয়েছে অক্টা-কোর প্রসেসর প্যাক, ফুল এইচডি ডিসপ্লে এবং ৩জিবি র্যাম। কোন কিছু নিয়ে খুব বেশি আলোচনা না করে আমরা এটুকু বলতে পারি, বর্তমান সময়ের অধিকাংশ মধ্যমমানের স্মার্টফোনগুলোর হার্ডওয়্যার খুব কার্যকর ও দক্ষতাসম্পন্ন। যদি সবকিছু নিবিড়ভাবে কাজ না করে তারপরও এটি খুব ভালো হ্যান্ডল করতে সক্ষম। যখন আমরা ফোনগুলো পর্যালোচনা করেছি, তখন দেখেছি কিভাবে ডিভাইসটি প্রচন্ড খেলাকেও হ্যান্ডল করে এবং এর মাল্টিটাস্কিং কার্যক্ষমতা মূল্যয়ন করে। কিন্তু সম্প্রতি ৪০০ মার্কিন ডলারের ফোনের কার্যক্ষমতা এবং ৮০০ মার্কিন ডলারের ফোনের কার্যক্ষমতার মধ্যে পার্থক্য করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কারিগরি দক্ষতা:
আপনি হয়তো বলতে পারেন যে, গতানুগতিক ফ্ল্যাগশিপের চেয়ে মিড রেইঞ্জ ডিভাইসগুলো সাধারণত সস্তা এবং কম সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু হুয়াওয়ের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে আপনাকে দুইবার চিন্তা করতে হবে। হুয়াওয়ে তাদের ডিভাইসের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্য, মানের নতুন মানদন্ড এবং চমৎকার ডিজাইন তৈরি করেছে। হুয়াওয়ের মতো অন্যান্য কোম্পানিগুলোও তাদের পণ্যের ক্ষেত্রে একইরকম সচেতনভাবে চেষ্টা করেছে মান এবং চমৎকার ডিজাইন তৈরি করতে। এসব ডিভাইস যখন গ্রাহকদের হাতে পৌছায় তখন তার মূল্য হয়তো ৭০০ ডলার থেকে ৮০০ ডলার মনে করা হয়, কিন্তু বাস্তবে তা আরও বেশি সাশ্রয়ী মূল্যে। মধ্যমমানের এসব ডিভাইস সাধারণত তৈরি করা হয় ইউনিবডি মেটাল দিয়ে এবং কোম্পানিগুলো ক্রেজি মূল্যে প্রিমিয়াম ডিজাইন অফার করছে। এমনকি আমরা ডিভাইসগুলোতে সিরামিকস এবং কার্ভড গ্লাসের ব্যবহার শুরু করতে দেখেছি। যা তাদের বর্তমান ফ্ল্যাগশিপের ক্ষেত্রে সাম্যবস্থা রাখে।
পার্থক্যকারী:
যে কেউ একজন হয়তো যুক্তি দিতে পারেন যে, এসব ডিভাইসের গঠনগত মান, কার্যক্ষমতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা একটা পর্যায়ে পৌছে গেছে। যার ফলে সাধারণ গ্রহকরা বা ব্যবহারকারীরা মধ্যমমানের ডিভাইস এবং ফ্ল্যাগশিপের মধ্যে সাধারণ কোন পার্থক্য লক্ষ্য করবে না। কিন্তু একটা বিষয়ে ফ্ল্যাগশিপ এখনো অন্যদের চেয়ে শতগুনে উন্নত বা এগিয়ে রয়েছে, আর তা হলো ক্যামেরা। স্মার্টফোনে ক্যামেরা প্রযুক্তিটি অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এখন একটা পর্যায়ে এসে পৌছেছে। যেখানে এখন তারা খুব সহজেই ট্রাডিশনাল পয়েন্ট এবং সুট ক্যামেরা রিপ্লেস করতে পারেন। স্যামসাং এবং এলজি’র মতো পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো তাদের নতুন নতুন পণ্যে অসাধারণ সব ক্যামেরা প্রযুক্তি ব্যবহার করছে এবং সত্যি স্মার্টাফোনের ক্যামেরা কি করতে পারে বা কি করতে সক্ষম সে বিষয়ে পুনরায় বিবেচনা করা হচ্ছে। মধ্যমমানের ডিভাইসগুলোকে তাদের ক্যামেরা সবচেয়ে ভালো করতে হবে। কারণ এখনকার কোন মধ্যমমানের ডিভাইসের পক্ষে এই দাবি করা যাবে না যে, তাদের ক্যামেরাগুলো ফ্ল্যাগশিপের ক্যামেরার সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে পারে, এমনকি ফ্ল্যাগশিপের আগের জেনারেশনের সাথেও প্রতিদ্বন্ধিতা করতে পারে। যদিও এখন আপনি দেখতে পাবেন ডিভাইসগুলোতে খুব বেশি মেগাপিক্সেলের হিসেব করা হচ্ছে। কিন্তু ভালো মানের ছবির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এর উন্নতমানের লেন্স এবং পোস্ট করার পদ্ধতি। মধ্যমানের ক্যামেরাগুলোকে খারাপ বলা হচ্ছে না তবে অভিজাতদের বিপক্ষে এসব ক্যামেরা আকর্ষণহীন বলেই মনে হচ্ছে।
ফলাফল:
যে উত্তরের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি এবার সেই ফলাফল ঘোষণার পালা। এটা কি মূল্যহীন নয়, যে আপনি ৮০০ ডলারের বেশি ব্যয় করছেন একটি নতুন ব্র্যান্ডের অর্ধেক ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনের জন্য, যখন একটি ডিভাইসের দাম অর্ধেক হবে তখন কি এটি খুব ভালোভাবে কাজ করবে? এটি নির্ভর করছে আপনাদের উপরেই যারা এসব ব্যবহার করছেন। অনেক ক্ষেত্রেই একটি ভালো মধ্যমমানের ডিভাইসে এমন অফার দেয়া হয় যা আপনি চান এমন সকল ফিচারই রয়েছে। যদি আপনার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা পর্যন্তই শেষ হয়ে যায়, তাহলে খুব বেশি ব্যয়বহুল ডিভাইস নেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। যা হোক আজকের দিনে ফ্ল্যাগশিপগুলো তাদের নিজেদের মধ্যে মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ। তারা এমন একটা অবস্থানে গিয়ে পৌছেছে যেখান থেকে চাইলেই কেউ আর তাদের কার্যক্ষমতার ক্ষেত্রে ধীরে চলতে পারবে না, পিছিয়ে পড়তে পারবে না অথবা ড্রপ করতে পারবে না। আপনি একটি নিশ্চয়তা অবশ্যই পাবেন যে,আপনার ডিভাইস সব কিছুই করতে পারে এবং করতে পারবে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো সেরা কোম্পানিগুলো যেসব অফার দিচ্ছে আপনি সেগুলো দেখার সুযোগ পাবেন।ফ্ল্যাগশিপ সম্পর্কে এগুলো ছিল খুবই অল্প বিষয় বা বিবরণ যা এটিকে অন্যগুলো থেকে ব্যতিক্রমী করে তুলেছে। চুড়ান্তভাবে বলা যায়, যদি আপনি কোন ধরণের আপোষ ছাড়াই সবচেয়ে ভালো অভিজ্ঞতা পেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে ফ্ল্যাগশিপের জন্য ব্যয় করতে হবে।