বৃষ্টিতে বাইক চালাবেন কিভাবে?
জনসাধারণের জন্য বৃষ্টিতে চলাফেরা করা বেশ কষ্টসাধ্য একটি ব্যাপার। কিন্তু যারা ঝুম বৃষ্টিতে মোটরবাইক চালান তাদের ভোগান্তি হয় আরও বেশি। অনেকেই হয়ত বলে থাকেন যে তারা বৃষ্টি খুব পছন্দ করেন, তবে একজন মোটরবাইকার কখনও এমনটি বলবেন না যে তারা বৃষ্টিতে বাইক চালাতে পছন্দ করেন। সুতরাং আজকে আমরা জানবো বৃষ্টিতে মোটরবাইক চালানোর সময় কি কি বিষয় খেয়াল রাখলে আপনার ভোগান্তি যেমন অনেক কমে আসবে, তেমনই আপনি ও আপনার সহযাত্রী নিরাপদ থাকবেন।
যথাযথ পোশাক
বৃষ্টিতে আপনার পরনের কাপড় নিমিষেই ভিজে যাবে সুতরাং বৃষ্টির মৌসুমে রেইনকোট বা বৃষ্টি প্রতিরোধী কাপড় পড়া আবশ্যক। এমন ধরণের বৃষ্টি প্রতিরোধী কাপড় সংগ্রহ করুন যা একাধারে বৃষ্টির পানি থেকে আপনাকে রক্ষা করবে এবং কাপড়টির ভেতরে যথাযথ বাতাস চলাচলের সুবিধা থাকবে যা আপনার নিঃশ্বাসকে সাবলীল রাখতে সাহায্য করবে। এমন ধরণের রেইনকোট কিনুন যা আপনাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত সমস্ত শরীর বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করবে। নয়ত বৃষ্টিতে ভিজে আপনার ঠাণ্ডা, জ্বর এবং নানা রকমের অসুস্থতা দেখা দিবে।
বৃষ্টির মধ্যে সামনের কিছুই ভালমত দেখা যায় না, তাই চলার পথে আশেপাশের অন্যান্য বাহনের চালকেরা যেন আপনার অবস্থান বুঝতে পারে সে জন্য উজ্জ্বল রঙের বা চকচকে ম্যাটেরিয়ালের রেইনকোট পরুন।
ভিজরওয়ালা হেলমেট পরুন
আপনি বাইকচালক বা যাত্রী যে-ই হন না কেন, চলন্ত মোটরবাইকে চড়ার সময় হেলমেট বাঞ্ছনীয়। কিন্তু বৃষ্টির সময় আপনি হাহাকার করবেন যদি আপনার হেলমেটে ভিজর লাগানো না থাকে। বৃষ্টির মধ্যে প্রতি ঘণ্টা ৫০ কিলো গতিবেগে যদি আপনি গাড়ি চালান তবে বৃষ্টির ফোঁটা আপনার চোখ এবং মুখে আঘাত করবে এবং আপনি ব্যাথা পাবেন। গ্লাস ব্যবহার করে আপনি আপনার চোখকে এই সুচ ফোঁটার মত আঘাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন তবে ভিজর হবে আপনার জন্য সবচেয়ে উপকারী।
টায়ার পরীক্ষা করুন
অনেকেই হয়ত ভেবেছেন যে টায়ারের জিগজ্যাগ আকৃতির খাঁজগুলো কি কাজে আসে? এই খাঁজগুলো চলতি অবস্থায় রাস্তা থেকে পানি সরিয়ে দেয়। এগুলো রাস্তায় জোরালোভাবে গ্রিপ ধরে রেখে বাইককে পিছলে পরে যাবার ঝুঁকি থেকে বাঁচায়। তবে, ব্যবহারের সাথে সাথে এই খাঁজগুলো ক্ষয় হয়ে যায় আর ক্রমশ গ্রিপ হারাতে থাকে; ফলাফল স্বরূপ দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সুতরাং বাইক চালানোর আগে সব সময় অন্যান্য অটো পার্টস এর পাশাপাশি চাকার গ্রিপ ঠিক আছে কিনা তাও পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
ধীরে ব্রেক করুন
বৃষ্টির সময় রাস্তার অবস্থা অনেক পিচ্ছিল থাকে। যদি অনেকদিন শুকনো আবহাওয়ার পর বৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে পিচ্ছিল অবস্থাটি বেশি লক্ষ্য করা যায় অর্থাৎ এ সময় আপনাকে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বৃষ্টির সময় আপনি যদি জোরে ব্রেক কষেন তবে আপনার বাইকের চাকা পিছলে যেয়ে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে পারেন। তবে নিরাপত্তার জন্য আপনি বাইক চালানোর সময় সামনের গাড়ি থেকে একটু বেশি দূরত্ব বজায় রেখে চালাতে পারেন যাতে সামনের গাড়ি ব্রেক করলে আপনিও ধীরে ধীরে ব্রেক করে বাইকটি থামাতে পারেন। তারপরও যদি কখনও তৎক্ষণাৎ ব্রেক করতে হয় তবে পাম্প করে করে ব্রেক করুন।
খানাখন্দ ভরা রাস্তায় বাইক চালানোর সময় সাবধান
রাস্তায় সাবধানে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে এই নূন্যতম বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিৎ। পানি ভরা খানাখন্দের ওপর বাইক চালানো হয়ত বেশ মজার তবে এসবের নিচে অনেক সময় ছোট বা বড় গর্ত থাকতে পারে। জোরে বাইক চালানোর সময় এরকম পানির নিচে লুকানো গর্তে যদি চাকা পরে তবে আপনি বাইক থেকে ছিটকে পড়বেন এবং মারাত্মক ব্যথা পাবেন। আপনি যদি ফেইসবুকে ট্রাফিক-সংক্রান্ত পোস্টগুলো দেখে থাকেন তবে খেয়াল করে থাকবেণ, দুর্ঘটনাবশত পুরো মোটরবাইক পানি-কাদার নিচে গর্তে ডুবে যাওয়ার বহু ঘটনা রয়েছে।
স্পীড ব্রেকার, উচুনিচু যায়গা এবং রেলওয়ে ইত্যাদি অতিক্রম করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এগুলোর উপর যতটা সম্ভব চাকা সোজা রেখে বাইক চালানোর চেষ্টা করবেন, বিশেষ করে ধাতব কোন ম্যাটেরিয়ালের উপর দিয়ে চালানোর সময়। ধীরে ধীরে চালিয়ে আপনার ব্যালেন্স রক্ষা করুন। আরেকটি খেয়াল রাখার মত জায়গা হলো রাস্তায় রংধনুর মত তৈলাক্ত ছোপ বা পানির ডোবা। রাস্তায় তেল পড়ে পানির সংমিশ্রণে এগুলো তৈরি এবং এগুলোর কারণে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে যদি আপনি সাবধানতা অবলম্বন না করেন। বাইক চালানোর সময় এমন তৈলাক্ত তল পরিহার করুন।
বোনাস টিপ: বজ্রপাতের সময় নিরাপদ আশ্রয় নিন
আপনি হয়ত ভাবতে পারেন বাইকের রাবারের টায়ার আপনাকে বজ্রপাতের আঘাত থেকে বাঁচাবে, এটি একটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী, সুতরাং আপনি যখন ভেজা অবস্থায় থাকবেন এবং আশে পাশে বজ্রপাত হতে থাকলে আপনি খুব সহজেই এর সংস্পর্শে এসে ভয়াবহ শক পেতে পারেন। বজ্রপাতের আঘাতে বাইক চালকের মৃত্যু বা আহত হবার খবর খুব একটা শোনা না গেলেও প্রতি বছরই বজ্রপাতের আঘাতে কিছু বাইক চালক মারা যান। সুতরাং এরকম ক্ষেত্রে ঝুঁকি না নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আপনি যদি এরকম বজ্রপাতসহ বৃষ্টির সম্মুখীন হন তবে বাইক না চালিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিন। গাছ এবং ইলেকট্রিক পোলের আশেপাশে আশ্রয় নেয়া পরিহার করুন কেননা এই দুটো বজ্রপাতকে আকর্ষণ করে।