যানবাহন

বাংলাদেশী রাইডারদের জন্য মোটরসাইকেল রক্ষণাবেক্ষণের টিপস

মোটরসাইকেল কেবল যানজট এড়াতে সহজ উপায় হিসেবেই নয় বরং বাজেট ফ্রেন্ডলিভাবে চলাফেরার স্বাধীনতা প্রকাশের হাতিয়ার হিসেবেও বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের দৈনন্দিন রুটিনে স্থান করে নিয়েছে। আপনি কর্মক্ষেত্রে স্কুটার নিয়ে যান এবং সপ্তাহান্তে স্পোর্টবাইকে যান না কেন, বাংলাদেশে বাইক রক্ষণাবেক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘন ঘন মোটরসাইকেল রক্ষণাবেক্ষণ কেবল আপনার অর্থ সাশ্রয় করে না, মসৃণ এবং নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করে, এটি পরে ব্যয়বহুল মেরামত রোধ করে। আজ আমরা কিছু খুব সহজ এবং অনুসরণযোগ্য বাইক সার্ভিসিং টিপস আলোচনা করব যা বিশেষভাবে বাংলাদেশে রাইডারদের জন্য উপযোগী। 

১. মোটরসাইকেলের ম্যানুয়াল পড়ুন

একজন আরোহীর দ্বারা করা সবচেয়ে বুদ্ধিমান কাজগুলোর মধ্যে একটি বাইকের ম্যানুয়ালটি পড়া। এটি বেশ বিরক্তিকর হতে পারে, তবে এটিতে আপনার বাইক মডেলের জন্য দরকারী তথ্য দেওয়া থাকে। মনে রাখবেন যে কমিউটার বাইক, একটি স্পোর্টি বাইক এবং স্কুটারগুলির জন্য আলাদা যত্ন প্রয়োজন। 

২. নিয়মিত ইঞ্জিন তেল পরীক্ষা করুন এবং পরিবর্তন করুন

ইঞ্জিন তেল আপনার বাইকের ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং সর্বদা লুব্রিকেট করে যাতে মসৃণ যাত্রা হয়। ঠান্ডা আবহাওয়ার তুলনায় ইঞ্জিন তেল তাপ এবং ভারী যানবাহনের পরিস্থিতিতে তুলনামূলকভাবে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। মনে রাখবেন, প্রতি ১০০০-১,৫০০ কিমি পর পর তেল পরীক্ষা করা উচিত। তেল পরিবর্তনের কিছু ইঙ্গিত হল, এটি কালো/ঘন হয়ে যাচ্ছে; ইঞ্জিন থেকে অদ্ভুত শব্দ বের হচ্ছে। শেল, বিএনও এবং মবিলের মতো প্রধান তেল ব্র্যান্ডগুলি স্থানীয় বাজারে সহজেই পাওয়া যায় এবং বাংলাদেশের অনেক রাইডারও তাদের উপর আস্থা রাখেন। 

৩. এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার রাখা

বাংলাদেশের রাস্তাঘাট খুব ধুলোময়, বিশেষ করে ঢাকা বা চট্টগ্রামের মতো শহরগুলিতে, এবং এই ধুলো বাইকের এয়ার ফিল্টারে প্রবেশ করে। ব্লক করা এয়ার ফিল্টার ইঞ্জিনে চাপ সৃষ্টি করে এবং এর মাইলেজ কমিয়ে দেয় যার ফলে ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। আপনার প্রতি ২০০০-৩,০০০ কিলোমিটার বা তার বেশি সময় পর পর আপনার এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার করা উচিত, যখনই আপনি ধুলোবালির পরিবেশে গাড়ি চালাবেন। হিরো এবং বাজাজের মতো বেশিরভাগ ব্র্যান্ড স্থানীয় বাজারে কম দামের প্রতিস্থাপন ফিল্টার তৈরি করে।

৪. টায়ার চেকিং এবং রক্ষণাবেক্ষণ

আপনার বাইক এবং রাস্তার মধ্যে একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম হল আপনার চাকা, এবং আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জ্বালানি সাশ্রয় করার জন্য, সেগুলো ভালো অবস্থায় থাকা প্রয়োজন। টায়ারের ট্রেড ডেপথ ১-১.৫ মিমি-এর মধ্যে পৌঁছালে, টায়ার পরিবর্তন করা উচিৎ। MRF, CEAT এবং Apollo হল কমিউটার এবং স্পোর্টস বাইকের জন্য উপযুক্ত ব্র্যান্ড যা বাংলাদেশের রাস্তাগুলোতে ভালো গ্রিপ প্রদান করে।

৫. ব্যাটারির যত্ন

অপ্রত্যাশিত ব্যাটারির নষ্ট রোধ করার জন্য, পরীক্ষা করে নিশ্চিত করুন যে কোনও মরিচা বা আলগা সংযোগ নেই এবং সেগুলি পরিষ্কার রাখুন। যদি আপনার বাইকটি সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে অকার্যকর থাকে বা না চালিত হয়; বিশেষ করে দীর্ঘ ছুটির দিনে, ব্যাটারিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন অথবা আপনার যদি ট্রিকল চার্জার থাকে তবে ব্যবহার করুন। রহিমআফরোজ, জিএস ইউয়াসা, হামকো ইত্যাদির মতো বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডের ব্যাটারি রয়েছে যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্ভরযোগ্য ব্যাটারি বিক্রি করছে।

৬. ব্রেক পরিদর্শন

মাঝে মাঝে আপনার ব্রেক প্যাড চেক করবেন এবং যখন সেগুলো পাতলা হয়ে যায় তখন এটি পরিবর্তন করতে হবে। ডিস্ক ব্রেকযুক্ত বাইকের ক্ষেত্রে, ব্রেক ফ্লুইডের মাত্রা পরীক্ষা করুন এবং আপনার ম্যানুয়াল-এর নির্দেশাবলী অনুসারে, অর্থাৎ বছরে প্রায় একবার, পরিবর্তন করুন।

৭. চেইন রক্ষণাবেক্ষণ

বাংলাদেশের ধুলোবালিপূর্ণ রাস্তাগুলির কারণে চেইনগুলি সহজেই ময়লা জমে এবং জীর্ণ হয়ে যায় এবং মরিচা ধরে। প্রতি ৫০০-৮০০ কিমি অন্তর নরম (হালকা) ডিগ্রিজার এবং ব্রাশ দিয়ে চেইনটি পরিষ্কার করুন। এটি শুকিয়ে নিন এবং তারপরে জরুরি পরিস্থিতিতে উপযুক্ত চেইন লুব বা এমনকি পুরানো ইঞ্জিন তেল প্রয়োগ করুন। নিশ্চিত করুন যে চেইনের টান ঠিক আছে, এটি খুব বেশি টাইট বা খুব বেশি আলগা হওয়া উচিত নয়। খুব বেশি টাইট চেইন স্প্রোকেটগুলিকে নষ্ট করতে পারে যেখানে খুব বেশি আলগা হয়ে গেলে রাইডিংয়ের সময় খুলে যাবে। একটি সাধারণ চেইন রক্ষণাবেক্ষণ আপনার বাইকটিকে মসৃণ এবং শান্তভাবে চালাতে সাহায্য করে।

৮. আলো এবং বৈদ্যুতিক পরীক্ষা

হেডলাইট, ইন্ডিকেটর লাইট এবং ব্রেক লাইট নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। বাল্বগুলো জ্বলে গেলে, অবিলম্বে এটি প্রতিস্থাপন করতে হবে। বেশিরভাগ খুচরা যন্ত্রাংশের দোকানে হোন্ডা সিবি শাইন বা টিভিএস অ্যাপাচির মতো সাধারণ মডেলের বাল্ব বিক্রি হয়। সঠিক আলো সম্ভাব্য দুর্ঘটনা দূর করে এবং আপনাকে রাস্তায় নিরাপদ রাখে। 

৯. মোটরসাইকেল পরিষ্কার রাখুন

ধুলো এবং কাদা কেবল আপনার বাইককে নোংরা করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে বাইকের ধাতব উপাদানগুলোকে ক্ষয় করার ক্ষমতাও রাখে। নিয়মিত আপনার মোটরবাইকটি নিয়মিত ধুয়ে নিন। তবে শক্তিশালী ডিটারজেন্ট এড়িয়ে চলুন যা রঙ বা অন্য কোনও সুরক্ষামূলক আস্তরণ অপসারণ করতে পারে; হালকা সাবান ব্যবহার করতে পারেন।

কখন মেকানিকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন?

যদিও এই রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়াগুলোর বেশিরভাগই বাড়িতে সমাধান করা যেতে পারে, কিছু সমস্যার জন্য পেশাদার যত্ন প্রয়োজন। অদ্ভুত ইঞ্জিনের শব্দ, ধোঁয়া, স্পষ্ট কম্পন, অথবা হঠাৎ করে কর্মক্ষমতা হ্রাস পেলে গাড়িটিকে মেকানিকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। একজন অভিজ্ঞ মেকানিক সমস্যাগুলো সনাক্ত করতে সাহায্য করবে এবং এটি আপনার যাত্রাকে নিরাপদ এবং আরামদায়ক করে তুলবে।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close